বিট ফল খাওয়ার নিয়ম । বিট রুটের উপকারিতা ও অপকারিতা

বিট ফল খাওয়ার নিয়ম । বিট রুটের উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের দেশে বহু বছর ধরে সকল সবজি বাজারে, এমনকি ঝাঁকা মাথায় ফেরিওয়ালার কাছেও বিট পাওয়া যায়। তবে বিট ফল একটি অপরিচিত সবজি হওয়ায় অনেকেই এই সবজি খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু পুষ্টিবিদদেরন মতে, পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বিট ফল সবার খাওয়া উচিত। বিট রান্না করে খাওয়া যায় আবার সালাদ বানিয়েও খওয়া যায়।

আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাবো বিট ফল সম্পর্কে। এর উপকারিতা, অপকারিতা এবং এই ফল খাওয়ার নিয়ম। তাহলে চলুন শুরু করা যাক:-

বিটরুটের পরিচিত

বিট হলো স্বাস্থ্যকর সবজির মধ্যে অন্যতম। এটি আসলে একধরনের মূলজাতীয় সবজি। অর্থাৎ বিটগাছের মূলই হলো এর প্রধান খাদ্যোপযোগী অংশ। এটি একটি শীতকালীন সবজি তবে বর্তমানে সারা বছর জুড়েই পাওয়া যায়। এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Beetroot এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Beta vulgaris। বিটরুট সাধারণত উত্তর আমেরিকায় বিট নামে পরিচিত।

সাধারণত, এই বিটের মূল গাঢ় বেগুনি-লাল বর্ণের হয়ে থাকে। তবে পৃথিবীতে সাদা, হলুদ এমনকি বহুরঙা বিট পাওয়া যায়। এটি মিষ্টি স্বাদের। সেই সঙ্গে মিষ্টি আলুর মতোই একটা মেটে ফ্লেভার পাওয়া যায়। এছাড়া বিটের পাতা শাকের মতো করে ভেজে খাওয়া যায়। বিট থেকে বিভিন্ন দেশে চিনিও উৎপাদিত হয়।

বিটরুটের পুষ্টিগুণ

দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর বিটরুট। প্রায় এক কাপ বিটরুটে রয়েছে ৪৩ ক্যালোরি, ১.৬ গ্রাম প্রোটিন, ২.৮ গ্রাম ফাইবার, ৮৮ শতাংশ পানি, ৬.৮ গ্রাম চিনি, ০.২ গ্রাম ফ্যাট ও ৯.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট । এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, কপারের মতো প্রয়োজনীয় বেশকিছু উপাদানে ভরপুর এই সবজি।

বিট রুটের উপকারিতা

বিট রুটের উপকারিতা

বিট ফলে আছে অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং আমাদের শরীরকে ডিক্সট করা বা বিশুদ্ধীকরণের পরীক্ষিত ক্ষমতা। এটি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বিট ফল রক্তাল্পতায় রক্ত বাড়াতে খুবই কার্যকরী।

বিটরুট পুষ্টিগুণের দিক থেকে দিন দিন সুপার ফুড হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আপনার খাবারের তালিকায় ভালো কিছু যোগ করতে চাইলে বিটরুট যোগ করতে পারেন। এবার চলুন বিটরুটেরে উপকারিতাগুলো জেনে নেই।

বিটরুট জ্বালা পোড়া বা প্রদাহ কমায়: বিট ফলে রয়েছে নাইট্রেট যা রক্তনালীর প্রদাহ কমিয়ে দেয়। এতে নাইট্রেট ছাড়াও বেটালাইনস আছে। এটি এক ধরনের পিগমেন্ট। এতে বিদ্যমান থাকা বেটালাইনসও রক্তনালীর প্রদাহ কমিয়ে দেয়।

উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: বিটে নাইট্রেটস বিদ্যমান, যা রক্তনালী প্রসারিত করে ও রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।

হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে: বিট আঁশ জাতীয় খাবার। আর এই আঁশ জাতীয় খাবার হজমে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলন ক্যান্সার এমনকি ডাইভার্টিকুলাইটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

বিটরুট মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: বিটরুটে বিদ্যমান পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সহ অনেক পুষ্টিকর উপাদান যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

মাসিকের সমস্যা দূর করে বিটরুট: বিটে থাকা আয়রন নতুন লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে। এর ফলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করে।

হাড় মজবুত করতে বিটরুট: বিটরুতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। হাড় মজবুত করে এবং বেশি বয়সে হাড়ের সমস্যায় ভুগতে হয় না।

বিটরুট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: বিটে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামেটারি উপাদান যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

ত্বকের উন্নতিতে বিটরুট: এক গ্লাস বিটের জুস ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যান্টি-এজিং উপাদান ব্রণ, মেছতা, বলিরেখা দূর করে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে।

চোঁখের যত্নে বিটরুট: পরিপক্ক বা সিদ্ধ অবস্থায় এটিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা লুটেইন যা চোখের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

মানসিক সমস্যায় বিটরুটের উপকারিতা: বিটে থাকা বিটেইন ও ট্রিপটোফোন নামক উপাদান মন ভালো রাখতে কার্যকরী। এর ফলে বিট মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমাতে সসাহায্য করে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে: বিটে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে হাই অ্যান্টি-অক্সিজেন, যা শরীর থেকে টক্সিন উপাদান বের করে দেয় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

পরিপাকতন্ত্রের উপকারে বিটরুট: বিট আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে উন্নত করতে সহায়তা করে। এতে থাকা বেটাইন নামে এক উপাদান যা লিভার ফাংশনকে আরো ভালো করে। এছাড়াও এটি ডায়রিয়া, বদহজম, জন্ডিসসহ অন্যান্য পেটের সমস্যায় অত্যন্ত উপকারী।

বিটরুটের অপকারিতা

বিটরুটের অপকারিতা

বিট ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিট ফল আমরা সবজি, স্যালাদ এবং জুস বানিয়ে খেয়ে থাকি। এতে আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬ এর মতো অনেক উপাদান পাওয়া যায়, যা আমাদের সুস্থ রাখে।

তবে বিট একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হওয়ার শর্তেও শরীরের কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি অপকারী। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু রোগে ভুগছেন তাদের খাদ্যতালিকায় বিট রাখার বদলে এড়িয়ে চলা উচিত।

  • নিম্ন রক্তচাপ আছে এমন ব্যক্তিদের বিট খাওয়া উচিত নয়।
  • অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের বিট খাওয়া উচিত নয়।
  • গলব্লাডারে পাথর হয়েছে এমন রোগীদের জন্য বিট ক্ষতিকর।
  • ডায়াবিটিস রোগীদের বিট খাওয়া উচিত নয়।

বিট ফল খাওয়ার নিয়ম

বিটরুট প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। এটি সবজি, সালাদ এবং জুস আকারে খাওয়া যায়। অনেকে আবার সবজি হিসেবে রান্না করে খেয়ে থাকেন। তবে স্বাস্থ্য সচেতনরা বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে জুস হিসেবে বেশি খেয়ে থাকেন।

বিট ফল খাওয়ার নিয়ম

বিট জুস

যারা নিয়মিত বিট খান তাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই শুধু বিটের জুস খেতে পছন্দ করেন। ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কয়েক রকমের জুস বানিয়ে ফেলা খুব একটা কঠিন কাজ না। নিচে ৪ টি বিটের জুস তৈরি করার উপায় দেওয়া হলো-

গাজর ও বিটের জুস: গাজরে সলিউবল ও ইনসলিউবল- দুই ধরনের খাদ্য আঁশ বা ফাইবার থাকে। এগুলো হজম হতে দেরি হয় ও বেশি সময় পেট ভরা রাখে। তাই বিটের জুসে গাজর যোগ করতে পারেন।

  • ২ কাপ বিট
  • ২ কাপ গাজর
  • আধা কাপ পানি
  • ৫ টেবিল চামচ লেবুর রস
  • এক চিমটি লবণ
  • কয়েকটা পুদিনা পাতা

বিট, গাজর ও পুদিনা পাতা একসাথে ব্লেন্ড করে নিন। এতে পানি, লেবুর রস ও লবণ নেড়ে মিশিয়ে নিন।

আপেল ও বিটের জুস: আপেল ফলটি মিষ্টি হলেও তাতে খুবই কম ক্যালোরি থাকে। তাই স্বাদ বাড়াতে বিটের জুসে এটিকে যোগ করতে পারেন।

  • ২ কাপ বিট
  • ১ কাপ আপেল
  • দারুচিনি গুঁড়ো
  • লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়ো

সব উপকরণ একসাথে ব্লেন্ড করে নিন।

ডালিম ও বিটের জুস: ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও এতে  ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকার কারণে তা হজমে সাহায্য করে। এতে অনেকটা ফাইবারও থাকে।   এছাড়া ফলটি ফ্যাট বার্ন করতে কাজে আসে ও  মেটাবলিজম বাড়ায়।

  • ২ কাপ বিট
  • ১ কাপ ডালিমের বীজ
  • ৩ টেবিল চামচ লেবুর রস
  • বিটলবণ

বিট ফল ও ডালিম ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এতে লেবুর রস ও বিটলবণ দিয়ে নেড়ে নিন।

টমেটো ও বিটের জুস: আপেলের মতো টমেটোতেও অনেক কম ক্যালোরি থাকে। এতে পানির পরিমাণ থাকে বেশি।

  • ২ কাপ বিট
  • দেড় কাপ টমেটো ৩ টেবিল চামচ লেবুর রস
  • পুদিনা পাতা
  • লবণ।

বিট, টমেটো ও পুদিনা পাতা একসাথে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর লেবুর রস ও লবণ দিয়ে নেড়ে নিন।

আজকের এই পুরো আর্টিকেল জুড়ে আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের বিট ফল সম্পর্কে একটা বিশেষ ধারণা দেওয়ার। আপনারা যারা বিটরুট ফলের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম  সম্পর্কে জানতেন না আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য বেশ উপকা্রী হবেন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *