প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ও করনীয় | প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ও করনীয় | প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে

স্বাস্থ্যের জন্য রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেনোনা রক্তচাপ উচ্চ হক অথবা নিম্ন হক উভয়ই স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অনেকেই ধারনা করেন যে, যাদের শরীরের ওজন বেশি তাদের লো প্রেসার হয় না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। হাই প্রেসারের মত লো প্রেসারেও সৃষ্টি হতে পারে নানা রকম শারীরিক সমস্যা। তাই প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ও করনীয়, প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা রাখা জরুরী।

আপনারা যারা প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ও করনীয় এবং প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে সে সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ গুলো জানার আগে সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নিবো লো প্রেসার কি-

নিম্ন রক্তচাপ কি

নিম্ন রক্তচাপ কি

নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার (ইংরেজিঃ Hypotension) হল মানব দেহের রক্ত সংবাহন তন্ত্রের এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তের সিস্টোলিক চাপ ৯০ মি.মি.পারদ এর নিচে এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৬০ মি.মি. এর নিচে থাকে (বিস্তারঃ ১২০/৮০)। যাই হোক, ক্লিনিক্যালি তখনই নিম্ন রক্তচাপ (Low Blood pressure) বলে। লো প্রেশার নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। তাই মাদের আগে জানতে হবে প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ও কারণ। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই লো প্রেশার তেমন ক্ষতির কারণ হয় না। তবে লো প্রেশার যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তবে এটা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হয়ে দাড়ায়। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক, লো ব্লাড প্রেশারের লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে!

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ

নিম্ন রক্ত চাপ বা লো ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম। প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ আমরা অনেক ভাবে বুঝতে পারি। অনেক সময় প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ বুঝার আগেই আমাদের অনেক সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে তা জানা জরুরী। তবে লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণের জন্য সবার আগে প্রয়োজন একে চিহ্নিত করা। আর লো ব্লাড প্রেসার এর লক্ষণ এর উপর ভিত্তি করেই নিম্ন রক্তচাপের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। নিচে লো ব্লাড প্রেসারের সাধারণ লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো; আসুন জেনে নেই বিস্তারিত-

  • লো ব্লাড-প্রেসার বা প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ হচ্ছে মাথা ঘোরা ও চোখে ঘোলা দেখা।
  • বেশ কিছুদিন ধরে রক্তের সিস্টোলিক চাপ ৯০ মি.মি.পারদ এর নিচে এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৬০ মি.মি. এর নিচে থাকে।
  • শরীরের রক্তচাপ বেশী কমে গেলে মস্তিষ্কে রক্ত এবং অক্সিজেনের অভাব হয়। ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। কখনো প্রচণ্ড বুকে ব্যথার কারণে রোগী হঠাৎ জ্ঞান হারাতে পারে।
  • শরীরে প্রচণ্ড দুর্বল লাগে এবং অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠার প্রবনতা দেখা দেয়। বসা বা শোয়া থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে শরীরে ভারসাম্যহীনতা পরিলক্ষিত হয়।
  • প্রায় সময় শরীরে জ্বর জ্বর ভাব থাকে তবে তা সাধারণত ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইটের বেশী হয়না।
  • কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা হতে পারে।
  • অনিয়মিত হার্টবিট অর্থাৎ হার্টবিট রেট উঠানামা করতে পারে।
  • রোগীর অস্বাভাবিক দ্রুত হূৎস্পন্দন হতে পারে ও তাঁকে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দেখা যায়।
  • দীর্ঘদিন যাবত রোগী ডায়রিয়ার সমস্যায় ভুগতে পারে।

লো প্রেসার হলে করণীয়

লো প্রেসার হলে করণীয়

প্রেসার লো হওয়া মানে রক্তের চাপ নিম্নমুখী হওয়া বা কমে যাওয়া। হাই ব্লাড প্রেসার এর মতো লো ব্লাড প্রেসারও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। যেকোনো বয়সের এবং যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্যের মানুষই লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ এর রোগী হতে পারবেন। তাই প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে বা লক্ষণ দেখার আগে আমাদের করণীয় বিষয় জানতে হবে। নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেসার নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, আপনি চাইলে আর্টিকেলের এই পার্ট থেকে নিম্ন রক্তচাপ হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। আসুন জেনে নেই নিম্ন রক্তচাপ হলে করনীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত-

  • হাইড্রেটেড থাকুনঃ সঠিক রক্তের পরিমাণ বজায় রাখতে সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
  • ধীরে ধীরে দাঁড়ানঃ মাথা ঘোরা রোধ করতে, বসা বা শোয়া অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে উঠুন।
  • ছোট, ঘন ঘন খাবারঃ ছোট, আরও ঘন ঘন খাবার খাওয়া রক্তে শর্করার হ্রাস রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
  • কম্প্রেশন স্টকিংসঃ এগুলি পায়ে রক্ত ​​​​প্রবাহ উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
  • অ্যালকোহল সীমিত করুনঃ অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন রক্তচাপ কমাতে পারে; আপনার গ্রহণ পরিমিত।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করুন, তবে উপযুক্ত ব্যায়ামের জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • ওষুধের সামঞ্জস্যঃ যদি আপনার নিম্ন রক্তচাপ ওষুধ-প্ররোচিত হয়, তাহলে সম্ভাব্য সমন্বয় সম্পর্কে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করুন।

প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে

প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে আর্টিকেলের আগের পার্ট এ আপনাদের জানিয়েছি। এবার খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমে লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করবেন যেভাবে। সে সকল খাদ্যের তালিকা আপনারদের সুবিধার্থে নিচে তুলে ধরা হলো;

  • খাবার স্যালাইনঃ প্রেশার কম হলে প্রথমেই স্যালাইন খেতে হবে। শরীরে পানিশূণ্যতা ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার কারণে প্রেসার যখন কমে যায় তখন শুধু খাবার স্যালাইন খেলেই প্রেসার বেড়ে যায়। খাবার স্যালাইন সবচেয়ে উপকারী ও তাৎক্ষণিক ফলদায়ক।
  • গ্লুকোজঃ নিম্ন রক্তচাপ হলে এসময় গ্লুকোজ খেলেও ভালো উপকার পাওয়া যায়।
  • লবণ জাতীয় খাবারঃ লবণ এবং লবণ জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। সোডিয়াম রক্তচাপ দ্রুত বৃদ্ধি করে। তাই লবণযুক্ত খাবার খেয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারেন। এছাড়া লবণ পানি পান করতে পারেন। এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন দুই গ্লাস করে পান করুন। প্রেসার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
  • দুধ ও ডিমঃ দুধ ও ডিমসহ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। মুরগীর চেয়ে হাঁসের ডিম এক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী।
  • কফিঃ কফি প্রেসার বাড়াতে বেশ কার্যকরী। সকালে নাস্তার পর এক কাপ কফি খেলে প্রেশারটা নরমাল থাকবে। চকোলেট ও ক্যাফেইন জাতীয় খাবার নিরাময় করে।
  • কিশমিশঃ কিশমিশ রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এক কাপ পানিতে ৩০/৪০টা কিশমিশ সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন খালি পেটে খেতে হবে। কিছুদিন নিয়মিত খেলে লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
  • মধু ও বাদামঃ মধু ও বাদাম বেশ কার্যকর ভুমিকা পালন করে। মধু দুধে মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায় এবং কাঠবাদাম ও চিনাবাদাম খেতে পারেন।
  • পুদিনা পাতাঃ আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, পুদিনা পাতা দ্রুত প্রেশার বাড়ায়। তাই প্রেশার কমে গেলে এই পাতা বেঁটে নিয়ে এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • ব্যায়ামঃ প্রেশার স্বাভাবিক রাখতে ব্যায়াম বেশ কার্যকর। ব্যায়াম হার্টে রক্ত চলাচল নিয়মিত করে। লো প্রেশার দেখা দিলে খাবার খাওয়ার সাথে সাথে শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
  • তাজা শাক-সবজিঃ নিম্ন রক্তচাপ রোধে শাক-সবজি অনেক উপকারী। কারণ ভিটামিন ও মিনারেল ঘাটতির জন্য হতে পারে। ফলিক এসিড ব্লাড প্রেশার বৃদ্ধি করে। শাক সবজি প্রচুর ফলিক এসিড থাকে।

শেষ কথা

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ও করনীয় এবং প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে সেই সকল তথ্য আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। যা আপনাদের স্বাস্থ্য ও প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রয়োজনে চিকিৎসক থেকে লো প্রেসারের ঔষধের নাম জেনে ব্যবহার, সঠিক আহার, নির্ধারিত ব্যায়াম, ও নিরাপদ জীবনযাপনই হচ্ছে একটি সুস্বাস্থ্য ও প্রেসার নিয়ন্ত্রণের মৌলিক দিক। স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে কি ভয়ে আছেন? জেনে রাখুন উচ্চ রক্তচাপ কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়