পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ গাইড

পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ গাইড

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল হচ্ছে পঞ্চগড় জেলা। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা। এই জেলা করতোয়া নদীর পাশে অবস্থিত। শহরটি হিমালয়ের এত কাছাকাছি অবস্থিত যে মাঝেমাঝে এ শহরে দাঁড়িয়েই হিমালয় পর্বত দেখা যায়।

এখান থেকেই সেই বহুল আলোচিত হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা চূড়া দেখতে পাওয়া যায়। পঞ্চগড় শহরের পুরো এলাকাই পঞ্চগড় পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয়। আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাবো পঞ্চগড় জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং এই জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ ও ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে। চলুন তবে শুরু করা যাক-

পঞ্চগড় জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

পঞ্চগড় জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

পঞ্চগড় ছিল ব্রিটিশ শাসনামলে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্ভুক্ত একটি থানা। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের সময় এটি দিনাজপুর জেলাভুক্ত হয়। পঞ্চগড় মহকুমা ১৯৮০ সালে পঞ্চগড়, বোদা, দেবীগঞ্জ, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া থানার সমন্বয়ে গঠিত হয়। এবং ১৯৮৪ সালে মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়।

এ জেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে দিনাজপুর জেলা ও ঠাকুরগাঁও জেলা, পূর্বে নীলফামারী জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। অবস্থিত। এ জেলার আয়তন ১৪০৪.৬২ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১১,৭৯,৮৪৩ জন। জেলাটি ঢাকা শহর হতে প্রায় ৪৯৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই জেলার ৫টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা, ৪৩টি ইউনিয়ন, ৪৬৩টি মৌজা, ৮২৫টি গ্রাম ও ২টি সংসদীয় আসন রয়েছে।

পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

পঞ্চগড় জেলা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের একটি জেলা। এটি একটি প্রাচীন জনপদ। জেলাটির একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতি রয়েছে। এই জেলাতে রয়েছে নানা ঐতিহ্য ও দর্শনীয় স্থান। যেমনঃ বার আউলিয়া মাজার, বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির, তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো, ভিতরগড় দুর্গ নগরী ইত্যাদি আরোও অনেক ভ্রমণের স্থান। যা ভ্রমণ পিপাসুদের দৃষ্টি কাড়তে বাধ্য। নিচে সিরাজগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহের নাম লেখা হলো-

  • বার আউলিয়া মাজার
  • বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির
  • তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো
  • ভিতরগড় দুর্গ নগরী
  • মহারাজার দীঘি
  • গোলকধাম মন্দির
  • তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা
  • মির্জাপুর শাহী মসজিদ
  • চা বাগান
  • রকস মিউজিয়াম

বার আউলিয়া মাজার

বার আউলিয়া মাজার

বার আউলিয়া মাজার পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুরে অবস্থিত। প্রচলিত আছে যে, এই এই মাজারটিকে ২টি বাঘ ও ২টি সাপ সবসময় পাহারা দিতো। যখন কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে মাজারে আসলে বাঘ দুটি বের হত। সপ্তদশ শতকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১২ জন ওলী হেমায়েত আলী শাহ্‌ (রঃ), নিয়ামত উল্লাহ শাহ্‌ (রঃ), কেরামত আলী শাহ্‌ (রঃ), আজহার আলী শাহ্‌ (রঃ), হাকিম আলী শাহ্‌ (রঃ), মনসুর আলী শাহ্‌ (রঃ), মমিনুল শাহ্‌ (রঃ), শেখ গরীবুল্লাহ (রঃ), আমজাদ আলী মোল্লা (রঃ), ফরিজউদ্দিন আখতার (রঃ), শাহ্‌ মোক্তার আলী (রঃ) ও শাহ্‌ অলিউল্লাহ (রঃ) চট্টগ্রাম শহরে এসে প্রথম আস্থানা গড়েন।

পরবর্তীতে তারা ইসলাম প্রচার করতে করতে উত্তর বঙ্গের এসে মির্জাপুর ইউনিয়নের আস্থানা গড়ে তুলেন। তাদের মৃত্যুর পর এই বারজন সুফি সাধককে আটোয়ারী উপজেলাতে সমাহিত করা হয়। আর বারজন ওলীর সমাধিকে কেন্দ্র করে বার আউলিয়ার মাজার গড়ে উঠেছে। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে বার আউলিয়া মাজার ১৯৯০ সালে পাকা করা হয়।

বার আউলিয়া মাজারে যেভাবে যাবেন 

ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল কিংবা মিরপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, তানযিলা ট্রাভেল, বরকত ট্রাভেল এ পঞ্চগড় যেতে পারবেন। নন এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০-৭০০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ৮০০-১৬০০ টাকা। ট্রেনে চড়েও পঞ্চগড় যেতে পারবেন।

শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৩৬৫ থেকে ১২৫৪ টাকা পর্যন্ত। পঞ্চগড় থেকে লোকাল বাসে আটোয়ারী উপজেলায় এসে স্থানীয় পরিবহণে বার আউলিয়ার মাজারে যেতে পারবেন।

বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির

বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির

বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের অন্তর্গত করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। এটি একটি প্রাচীন মন্দির। এই মন্দিরের নামানুযায়ী বোদা উপজেলার বোদা নামকরন করা হয়েছে। মন্দিরটি প্রায় ২ দশমিক ৭৮ একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত। মন্দিরটি প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো।

এই মন্দিরে রাজা দক্ষের কন্যা ও ভোলানাথ শিবের স্ত্রী সতীর বাম পায়ের গোড়ালির অংশ রয়েছে। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বড়দেশ্বরী মন্দিরের গুরুত্ব অনেক। সতীর শবদেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত হয়। ৫১ দেহ খণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে ১টি ও পঞ্চগড়ের বদেশ্বরীতে ১টি খণ্ড পতিত হয়। মহামায়ার খণ্ডিত সেই পতিত অংশকে কেন্দ্র করে বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির গড়ে উঠেছে। বর্তমানে মন্দিরটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে একটি সংরক্ষিত প্রত্নতত্ত্ব।

বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরে যেভাবে যাবেন 

ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল কিংবা মিরপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, তানযিলা ট্রাভেল, বরকত ট্রাভেল এ পঞ্চগড় যেতে পারবেন। নন এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০-৭০০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ৮০০-১৬০০ টাকা। ট্রেনে চড়েও পঞ্চগড় যেতে পারবেন।

শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৩৬৫ থেকে ১২৫৪ টাকা পর্যন্ত। আর পঞ্চগড় থেকে সিএনজি বা অটো রিকশা নিয়ে বোদা উপজেলা হয়ে বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির পৌঁছাতে পারবেন।

তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো

তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো

তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে ভারতের সীমান্তবর্তী মহানন্দা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত। এই ডাক বাংলোটি নির্মাণ করেছেন কুচবিহারের রাজা। তিনি ভিক্টোরিয়ান রীতিতে ভূমি থেকে প্রায় ১৫-২০মিটার উঁচু গড়ের উপর এই ডাক বাংলোটি নির্মাণ করেছিলেন। এই স্থান থেকে হেমন্ত ও শীতকালে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখা যায়। বর্তমানে তেতুলিয়া ডাক বাংলোটিতে জেলা পরিষদ একটি পিকনিক কর্ণার নির্মাণ করেছে।

তেঁতুলিয়া ডাক বাংলোতে যেভাবে যাবেন 

ঢাকা থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়া বিভিন্ন পরিবহনের বাস যেয়ে থাকে। তার মধ্যে একটি হলো হানিফ পরিবহনের বাস। এখানে নন এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ১০০০ টাকা। এছাড়া পঞ্চগড় হয়ে তেতুলিয়া যেতে পারবেন। তেঁতুলিয়া বাজারে নেমে সেখান থেকে স্থানীয় পরিবহনে চড়ে তেতুলিয়া ডাক বাংলোতে যেতে পারবেন।

আবার ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকেও যেকোনো পরিবহনের বাসে চড়ে পঞ্চগড় যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া ৮০০-৯৫০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১১০০-১৭০০ টাকা। ট্রেনেও যেতে পারবেন শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ১৯৪২ টাকা পর্যন্ত।

ভিতরগড় দুর্গ নগরী

ভিতরগড় দুর্গ নগরী

ভিতরগড় দুর্গ নগরী অবস্থান পঞ্চগড় জেলা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অমরখানা ইউনিয়নে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায়। এটি মধ্যযুগের অন্যতম এক নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন, এটি ৬ষ্ঠ শতকের দিকে পৃথু রাজা তার রাজধানী হিসেবে ভিতরগড় দুর্গ নির্মাণ করেন। ১২৫৭ সালে পাল বংশীয় সুলতান মুঘিসউদ্দিন কামরূপ রাজ্য আক্রমণ করলে এই দুর্গটি সুলতানী শাসনে চলে আসে।

ধারণা করা হয়, ষষ্ঠ শতকের শেষে বা সপ্তম শতকের শুরুতে ভিতরগড় স্বাধীন রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভিতরগড় দুর্গটি প্রায় ২৫ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এবং দুর্গটি ৪টি ক্ষুদ্র নগরীতে বিভক্ত। প্রতিটি নগরী মাটি ও ইটের মিশ্রণে তৈরি সুউচ্চ দুর্গ প্রাচীর ও বিশাল পরিখা দ্বারা ঘেরা। পরিখাগুলোর প্রস্থ ৫০ ফুট ও গভীরতা ১০-১৫ ফুট। সবচেয়ে ভিতরের গড়ে ছিল রাজার প্রাসাদ এবং বাইরের নগরীর “ছিরৎল” নামক স্থানে নিম্ন বর্গীয় মানুষ বসবাস করতো। (wiki)

ভিতরগড় দুর্গ নগরীতে যেভাবে যাবেন 

ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকেও যেকোনো পরিবহনের বাসে চড়ে পঞ্চগড় যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া ৮০০-৯৫০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১১০০-১৭০০ টাকা। ট্রেনেও যেতে পারবেন শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ১৯৪২ টাকা পর্যন্ত।

পঞ্চগড় বাস টার্মিনাল থেকে তেঁতুলিয়া/বাংলাবান্ধাগামী বাসে বোর্ড বাজার নেমে যেতে পারেন ভিতরগড় দুর্গ নগরী। বোর্ড বাজার থেকে অটো করে ভিতরগড় দুর্গ নগরী যেতে খরচ হবে ২০-২৫ টাকা।

মহারাজার দীঘি

মহারাজার দীঘি

মহারাজার দীঘি পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি একটি ঐতিহাসিক পুকুর। ধারণা করা হয়, ভিতরগড় নামের ১৫০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক এক রাজ্যে মহারাজা পৃথু রাজত্ব করাকালীন এই দীঘিটি খনন করেন। এই পুকুরের পানির গভীরতা প্রায় ৪৫ ফুট।

বিশালায়তনের স্বচ্ছ পানির এই জলাশয়ের পাড় সহ মোট আয়তন প্রায় ৮০০ x ৪০০ গজ। মহারাজার দীঘির চারপাশে প্রায় ১০টি ঘাট রয়েছে। কথিত আছে, পৃথু রাজা তার পরিবার পরিজন ও ধনরত্ন সাথে নিয়ে “কীচক” নামক এক নিম্নশ্রেণী দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে তাদের সংস্পর্শে ধর্মনাশের ভয়ে এই দীঘিতে আত্নহনন করেছিলেন।

মহারাজার দীঘিতে যেভাবে যাবেন 

ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকেও যেকোনো পরিবহনের বাসে চড়ে পঞ্চগড় যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া ৫৫০-৭০০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ৮০০-১৬০০ টাকা। ট্রেনেও যেতে পারবেন শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৩৬৫ থেকে ১২৫৪ টাকা পর্যন্ত। পঞ্চগড় বাস টার্মিনাল থেকে তেঁতুলিয়া/বাংলাবান্ধাগামী বাসে বোর্ড বাজার এ নেমে রিক্সা বা ব্যাটারি চালিত অটো করে যাওয়া যায়।

গোলকধাম মন্দির

গোলকধাম মন্দির

গোলকধাম মন্দির পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাংগা ইউনিয়নে অবস্থিত। মন্দিরটি অষ্টাদশ শতকের চমৎকার একটি নিদর্শন। ১৮৪৬ সালে গোলককৃষ্ণ গোস্বামীর স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত প্রাচীন এই মন্দিরের স্থাপত্য নজরে পড়ার মত। গোলকধাম মন্দিরটি ছয়কোণাকৃতির। মন্দিরটির চারপাশে গাছ-গাছালী দিয়ে ঘেরা এবং এটি গ্রীক পদ্ধতিতে নির্মিত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত মন্দিরের অভ্যন্তরে একটি কক্ষ রয়েছে। মন্দিরটিতে প্রতিদিন অসংখ্য সনাতন ধর্মাবলম্বী পূজা আর্চনা করতে আসেন।

গোলকধাম মন্দিরে যেভাবে যাবেন 

ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইস, তানযিলা ট্রাভেল, বরকত ট্রাভেল এ পঞ্চগড় যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া ৮০০-৯৫০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১১০০-১৭০০ টাকা।

ট্রেনেও যেতে পারবেন শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ১৯৪২ টাকা পর্যন্ত। পঞ্চগড় থেকে লোকাল বাসে দেবীগঞ্জ হয়ে রিক্সা/ইজিবাইক নিয়ে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত গোলকধাম মন্দির পরিদর্শনে যেতে পারবেন।

তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা

তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা

পঞ্চগড় জেলা হচ্ছে বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এর উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার বা ২৮,১৬৯ ফুট। মহানন্দা নদীর তীরে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা ডাকবাংলোর বারান্দা থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে মহানন্দা নদী যখন পানিতে ভরে উঠে তখন কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আরো বেশি অপূর্ব লাগে।

কখন দেখা যায়?

কাঞ্চনজঙ্ঘা সারা বছর দেখা যায় না। এটি সাধারণত অক্টোবরের শুরু থেকে থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আকাশ মেঘহীন থাকলে দূরে বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড়ের চূড়া দেখতে পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে চান তাহলে আপনাকে উপরোক্ত সময়ের ভিতর আসতে হবে।

তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যেভাবে যাবেন 

ঢাকা থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়া বিভিন্ন পরিবহনের বাস যেয়ে থাকে। তার মধ্যে একটি হলো হানিফ পরিবহনের বাস। এখানে নন এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ১১৫০ টাকা। এছাড়া পঞ্চগড় হয়ে তেতুলিয়া যেতে পারবেন। ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইস, তানযিলা ট্রাভেল, বরকত ট্রাভেল এ পঞ্চগড় যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া ৯০০-১,১০০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১,৩০০-১,৯০০ টাকা। ট্রেনেও যেতে পারবেন শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ১৯৪২ টাকা পর্যন্ত।

পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ায় পথে সারাদিন নিয়মিত বিরতিতে লোকাল বাস চলাচল করে। বাসের টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর প্রাইভেট কার ও মাইক্রো রিজার্ভ করতে আনুমানিক ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা ভাড়া লাগবে।

মির্জাপুর শাহী মসজিদ

মির্জাপুর শাহী মসজিদ

মির্জাপুর শাহী মসজিদটি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত। মসজিদটি বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধারণা করা হয়, মসজিদটি প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো। ঢাকায় অবস্থিত হাইকোর্ট মসজিদের নকশার সাথে মির্জাপুর শাহী মসজিদের নকশার অনেক মিল চোখে পড়ে। আয়তকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ২৪ ফুট।

মসজিদের ছাদে পাশাপাশি ৩টি গম্বুজ এবং চারকোণে ৪ টি চিকন মিনার আছে। অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য মসজিদের সামনের দেয়ালে আছে ৩ টি দরজা। মসজিদের রয়েছে ফরাসি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি, যা দেখে মোঘল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে মসজিদটি তৈরী বলে মনে করা হয়। বর্তমানে মসজিদটিকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সার্বিক তত্ত্বাবধান করে।

মির্জাপুর শাহী মসজিদটি দেখতে যেভাবে যাবেন 

ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইস, তানযিলা ট্রাভেল, বরকত ট্রাভেল এ পঞ্চগড় যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া ৮০০-৯৫০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১১০০-১৭০০ টাকা। ট্রেনেও যেতে পারবেন শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ১৯৪২ টাকা পর্যন্ত।

পঞ্চগড় থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মির্জাপুর শাহী মসজিদ। পঞ্চগড় বাস টার্মিনাল থেকে আঁটুয়ারি যাওয়ার বাসে করে মির্জাপুর নামতে হবে, বাস ভাড়া ১৫-২০ টাকা। এখান থেকে ৫-৬ মিনিট পায়ে হেটে অথবা ইজিবাইকে করে চলে আসতে পারেন মির্জাপুর শাহী মসজিদ।

চা বাগান

পঞ্চগড়ের চা বাগান

সিলেটের শ্রীমঙ্গলের পাশাপাশি দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতেও বাণিজ্যিক ভাবে চা চাষ করা হয়। প্রায় ১৫০ বছর আগে বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন শুরু হলেও পঞ্চগড়ে ১৯৯৮ সালে প্রথম চা চাষ শুরু হয়। তৎকালীন সময়ে পঞ্চগড়ের জমি পতিত থাকতে দেখে শিল্পপতি কাজী শাহেদ আহমদ ভারতের চা বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে চায়ের চাষ শুরু করেন।

বর্তমানে পঞ্চগড়ে দুই শতাধিক চা বাগান রয়েছে এবং চা চাষের মোট জমির পরিমাণ ২২৫৫ দশমিক ৫৪ একর। এই চা বাগানটিতে কাজী টি এস্টেট ছাড়াও পঞ্চগড়ে ডাহুক টি এস্টেট, স্যালিলেন টি এস্টেট ও তেঁতুলিয়া চা করপোরেশন লিমিটেড বেশকিছু প্রতিষ্ঠান চা উৎপাদন করছে।

চা বাগান দেখতে যেভাবে যাবেন 

ঢাকা থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়া বিভিন্ন পরিবহনের বাস যেয়ে থাকে। তার মধ্যে একটি হলো হানিফ পরিবহনের বাস। এখানে নন এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ৬৫০-৭০০ টাকা। ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইস, তানযিলা ট্রাভেল, বরকত ট্রাভেল এ পঞ্চগড় যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া ৫৫০-৭০০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১১০০-১৭০০ টাকা। ট্রেনেও যেতে পারবেন শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৩৬৫ থেকে ১২৫৪ টাকা পর্যন্ত।

রকস মিউজিয়াম

রকস মিউজিয়াম

রকস মিউজিয়াম হলো বাংলাদেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর। এটি পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সম্পূর্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে অধ্যক্ষ নাজমুল হক এই পাথরের জাদুঘর গড়ে তোলেন। জাদুঘরে বিভিন্ন রং, আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পাথর সংরক্ষিত আছে।

হাজার বছরের পুরনো পাথর ছাড়াও এখানে প্রাচীন ইমারতের ইট এবং পোড়ামাটির বিভিন্ন মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। এখানে  বিভিন্ন আদিবাসীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র রয়েছে। উন্মুক্তভাবে এখানে বেশ কিছু বড় বড় পাথর এবং একটি শাল গাছ দিয়ে তৈরি ২২ ফুট দৈর্ঘ্যের ৩০০ বছর পুরনো দুইটি নৌকা রয়েছে।

রকস মিউজিয়াম দেখতে যেভাবে যাবেন 

ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইস, তানযিলা ট্রাভেল, বরকত ট্রাভেল এ পঞ্চগড় যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া ৫৫০-৭০০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১১০০-১৭০০ টাকা।

ট্রেনেও যেতে পারবেন শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ১৯৪২ টাকা পর্যন্ত। পঞ্চগড় বাস টার্মিনাল / রেলওয়ে স্টেশন থেকে স্থানীয় পরিবহনে করে যেতে পারেন রকস মিউজিয়াম। ভাড়া লাগবে ২০-২৫ টাকা এবং মিউজিয়াম এর প্রবেশ টিকিট মুল্য ১০ টাকা।

প্রিয় পাঠক আশা করি আপনারা এই আর্টিকেল পড়ে পঞ্চগড় জেলা সম্পর্কে এবং পঞ্চগড় জেলার নানান দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে জেনে অনেক উপকৃত হয়েছেন। আপনি চাইলে আপনার পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এসব দর্শনীয় স্থান থেকে। মাঝে মধ্যে ঘুরে বেড়ানো শরীর ও মনের জন্য ভালো। এতে করে শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি মনও উৎফুল্ল থাকে।

দেশ বিদেশের আরও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে আমাদের সাইট ভিজিট করুন

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ঠাকুরগাঁও এর দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ গাইড

সিলেটের ১০টি দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ গাইড