তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - খালি পেটে তুলসি পাতা খেলে কি হয়

তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা – খালি পেটে তুলসি পাতা খেলে কি হয়?

তুলসি পাতার উপকারিতা প্রায় সবারই জানা। শিশু থেকে থেকে বয়ষ্ক যে কোন বয়সের মানুষের ঠান্ডা, সর্দি-কাশির মতো রোগ বালাইয়ের জন্য তুলসি পাতা মহৌষধ। তুলসি পাতার ওষধি গুণ সত্যিই অসাধারণ। মানবদেহের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে তুলসীর পাতা অনন্য, এতে রয়েছে জীবাণুনাশক ও সংক্রমণ শক্তিনাশক উপাদান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন মাত্র একটি করে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেয়ে নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবেন। এছাড়া বাসার বারান্দায় যেখানে আলো–বাতাস চলাচল করে, সেখানে লাগিয়ে রাখতে পারেন উপকারী তুলসীগাছ। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা উল্লেখ করছি। তাই এই আর্টিকেটি থেকে জেনে নিতে পারেন তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা।

তুলসি গাছ কি?

তুলসি একটি ঔষধি গাছ। এর অর্থ হচ্ছে যার তুলনা নেই। তুলসী একটি ঘন শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট ২/৩ ফুট উঁচু একটি চিরহরিৎ গুল্ম। এর মূল কান্ড কাষ্ঠল, পাতা ২-৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। শীতকালে এর ফুল ও ফল হয়। তুলসী পাতা বিশেষ ধরণের সুগন্ধিযুক্ত, কটু তিক্তরস, উষ্ণবীর্য, উত্তেজক ও রুচিকর। তুলসী গাছের পাতা ও শিকড় বিভিন্ন অসুখে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তুলসি পাতার পুষ্টিগুন

মার্কিন কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী ২.৬ গ্রাম তুলসি পাতায় ৪.৬ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৬.৯ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ, ১০.৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন কে, ১.২ মাইক্রোগ্রাম বেটা ক্রিপ্টোক্সাথিন, ১৪৭ মাইক্রোগ্রাম লুটেইন এবং জেক্সানথিন এবং ৮১.৭ মাইক্রোগ্রাম বেটা ক্যারোটিন রয়েছে।

তুলসি পাতার উপকারিতা

তুলসি পাতার উপকারিতা

তুলসি পাতা প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে বেশ পুরানো। এই পাতায় আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। এগুলো মারাত্মক সব রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যদির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। তুলসি পাতার উপকারিতার কথা মাথায় রেখে অনেকের বাসায় এটি দেখা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসি পাতার কয়েকটি উপকারিতা-

তুলসি পাতা ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখে

তুলসি পাতা ইনসুলিন উৎপাদনে কাজ করে থাকে। প্রতিদিন খাবার খাওয়ার আগে তুলসি পাতা খেলে রক্তে চিনির মাত্রা কমে যায়। তুলসি পাতা অ্যান্টি-বায়াবেটিক ওষুধের কাজ করে। তুলসি পাতাতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েড [wiki] ডায়বেটিস রোধ করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

বাতের ব্যথা দূর করতে তুলসি পাতা

তুলসি গাছের পাতা, শিকড়, কান্ড, বীজ শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে গুড়ের সাথে মিশিয়ে বড়ি বানাতে হবে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পানির সঙ্গে খেলে বাতের ব্যথা অথাবা জয়েন্টের ব্যথা দূর হবে।তুলসি তে থাকা  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বাতের ব্যথায় কার্যকরি।

সর্দি কাশি কমাতে তুলসি পাতা

ঠান্ডা লাগলে অর্থাৎ সর্দি কাশি হলে তুলসি পাতা খাওয়া হয় মূলত ওষুধ হিসেবে। সর্দি ও কাশি সারাতে এটি খুব দ্রুত কাজ করে। কারণ তুলসিতে থাকা অ্যান্টি সেপটিক ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটি থাকে যা সর্দি কাশি দূর করতে সক্ষম।

হার্টের সমস্যায় তুলসি পাতার উপকারিতা

হার্টের রোগ জন্মায় সাধারণত হাইপারটেনশন, উচ্চ রক্তচাপ বা অতিরিক্ত কোলেস্টরলের কারণে।তুলসী পাতার দ্বারা রক্ত জমাট বাধা ও হার্ট অ্যাটাক রোধ করা যায়। কোলেস্টরল ও ফ্যাট এবং ওজন কমাতে তুলসী পাতা ঔষধি রূপে কাজ করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে তুলসি পাতা

ক্যান্সার একটি মারাত্মক মরণঘাতি অসুখের নাম। তুলসি পাতা ক্যান্সার থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এই পাতায় রয়েছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান যা ক্যান্সারের কোষ গুলোকে মেরে ফেলে। এছাড়াও ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক এসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন রয়েছে। এই উপাদান গুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে বেশ কার্যকরি।

গলা ব্যথা উপশম করে তুলসি পাতা

গলা ব্যথা দূর করতে তুলসি পাতার জুরি মেলা ভার। তুলসী পাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে সে পানিতে গড়গড়া করলে মুখ ও গলার ব্যথা দূর হয়, রোগজীবাণু মরে, শ্লেষ্মা দূর হয় ও মুখের দুর্গন্ধও দূর হয়।

তুলসি পাতার অপকারিতা

তুলসি পাতার অপকারিতা

আমাদের সবার স্বাস্থ্য এক নয়, তাই সব খাবার সবার জন্য সমান উপকারি নাও হতে পারে। তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা দুইটি দিকই রয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তুলসি পাতা না খাওয়া বা এড়িয়ে চলাই উত্তম। জেনে নেওয়া যাক তুলসি পাতার অপকারিতা-

নিম্ন রক্তচাপ

তুলসী পাতায় অতিরিক্ত পটাসিয়াম থাকার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তাই আপনার যদি নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো।

রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে

প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে শরীরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। যার ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে সার্জারি বা কাটাছেঁড়া হলে তুলসী পাতা এড়িয়ে চলুন অন্যথা নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হবেন।

গর্ভাবস্থা বা স্তনপান করানোর সময়

গর্ভাবস্থার বা মা হওয়ার পর স্তন্যপান করানোর সময় সামান্য তুলসী পাতা খেলে কোনো ক্ষতি হয় না, কিন্তু অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে নানা রকমের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময় তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো।

খালি পেটে তুলসি পাতা খেলে কি হয়?

প্রতিদিন খালিপেটে তুলসি পাতা খেলে যেসব উপকার হতে পারেঃ-

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম
  • দুশ্চিন্তা কম হবে
  • শরীর ঠান্ডা এবং ফ্লু প্রতিরোধ করতে পারে।
  • শরীর ডিটক্সিফাইড হবে ইত্যাদি

শেষ কথা

আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা সবাই তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কিছু ক্ষতিকর দিক থাকলেও তুলসি পাতার অনেক গুনাগুণ রয়েছে। রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে বা প্রতিষেধক হিসাবে তুলসি পাতা ব্যবহার করতে পারবেন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *