হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত | হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত | হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত

অনেকেই আছেন যারা অনলাইনে হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে চান। তাদের জন্যই আমি আজকের এই আর্টিকেলটি সাজিয়েছি। এই আর্টিকেলে হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত, হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা যারা হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে চান, তারা আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

হজ্জ কি

হজ্জ কি

হজ্জ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে নিয়ত করা, দর্শন করা, সঙ্কল্প করা, গমন করা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা করা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায়, হজ্জ হল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের পবিত্র শহর মক্কায় অবস্থিত “আল্লাহর ঘর” কাবার উদ্দেশ্যে করা একটি তীর্থযাত্রা। এটি শাহাদাহ, সালাত, যাকাত  এবং সাওম এর পাশাপাশি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি স্তম্ভ। হজ হলো মুসলিম জনগণের সংহতি এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের আত্মসমর্পণের একটি বাহ্যিক প্রকাশ।

অন্য দিকে , জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ইহরাম বেঁধে আরাফার মাঠে অবস্থানসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি আমল যথাযথভাবে আদায় করে কাবাঘর তাওয়াফ করাকে হজ্ব বলে।

হজ্জের প্রকারভেদ

হজ্জের প্রকারভেদ

হজ্জ প্রধানত তিন প্রকার। যথা; (ক) হজ্জে ইফরাদ, (খ) হজ্জে কিরান এবং (গ) হজ্জে তামাত্তু। নিচে তিন প্রকার হজ্জের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

  • হজ্জে ইফরাদঃ হজ্জে ইফরাদ অর্থ হচ্ছে হজ্জের সফর শুরু করার সময় মিকাত থেকে যদি শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধে এবং হজের সঙ্গে ওমরাহ আদায় না করে তাহলে এ প্রকার হজকে ‘হজ্জে ইফরাদ’ বলা হয়। এ প্রকার হজ কারীকে শরিয়তের ভাষায় ‘মুফরিদ’ বলে।
  • হজ্জে কিরানঃ হজ্জে কিরান অর্থাৎ কেউ যদি একই সঙ্গে হজ এবং ওমরাহর নিয়ত করে উভয়টিই পালন করে এবং হজ ও ওমরাহর জন্য একই ইহরাম বাঁধে, তাহলে এ ধরনের হজকে শরিয়তের ভাষায় “হজে কিরান” বলা হয়। এ প্রকার হজ কারীকে ‘কারিন’ বলে।
  • হজে তামাত্তুঃ হজ্জে তামাত্তু মানে হজের সঙ্গে ওমরাহকে এভাবে মেলানো যে ‘মিকাত’ থেকে শুধু ওমরাহর ইহরাম বাঁধা। এই ইহরামে মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালনের পর ইহরাম ভেঙে ৭ জিলহজ সেখান থেকে হজের ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাকে “হজে তামাত্তু” বলে। এ প্রকারের হজ কারীকে ‘মুতামাত্তি’ বলে।

হজ্জের বিধান

হজ্জের বিধান

হজ্জ মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার মনোনীত একটি ফরজ ইবাদাত। হজ্জ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন মজিদে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন; “প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ” (সুরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯৭)। রাসুল (সঃ) বলেন, “লোকসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন” আকরা ইবনে হাবিস (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এটা কি প্রত্যেক বছর ফরজ?’ উত্তরে রাসুল (স.) বললেন;

“আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তবে ফরজ হয়ে যেত। আর প্রতি বছর হজ ফরজ হলে তা তোমরা সম্পাদন করতে সক্ষম হতে না? হজ জীবনে একবারই ফরজ। কেউ যদি একাধিকবার করে, তবে তা হবে নফল হজ।”(বুখারি)

যাদের ওপর হজ ফরজ হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব তাদের হজ আদায় করা উত্তম। যেখানে মানুষের জীবন-মরণের এক সেকেন্ডের নিশ্চয়তা নেই, সেখানে এক বছর অনেক দীর্ঘ সময়। তাই রাসুল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছে করেছে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা করে নেয়।” (সুনানে আবু দাউদঃ হাদিস নাম্বার-১৭৩২)

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে হজকে উত্তম আমল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একবার রাসুল (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘সর্বোত্তম আমল কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা।’ প্রশ্ন করা হলো, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ আবার প্রশ্ন করা হলো, ‘এরপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘হজে মাবরুর তথা মকবুল হজ।’ (বুখারিঃ হাদিস নাম্বার- ১৫১৯)

হাদিসে হজের মাধ্যমে গুনাহ মাফের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে হজ করল এবং এসময় অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকল, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে।’ (বুখারিঃ হাদিস নাম্বার- ১৫২১)

হজের বিনিময় জান্নাত। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন; এক উমরা আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজে মাবরুরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (সহিহ বুখারিঃ ১৭৭৩; সহিহ মুসলিমঃ ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদঃ ৭৩৫৪; সহিহ ইবনে হিববানঃ ৩৬৯৫)

হজ যেহেতু আর্থিক ইবাদতের সাথে সম্পর্কিত, তাই অনেকেই দরিদ্র হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় হজ পালন থেকে বিরত থাকে। অথচ হজ দারিদ্র বিমোচন করে। রাসুল (সঃ) বলেন, ‘তোমরা হজ-ওমরা সঙ্গে সঙ্গে করো। কেননা, এ দুটি দারিদ্র্য ও গোনাহ এভাবে দূর করে, যেভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। আর মকবুল হজের বিনিময় জান্নাত’ (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ২৮৮৭)

তাছাড়া হজ ও ওমরাহ পালনকারীকে আল্লাহর মেহমান বলা হয়েছে। আর এক্ষেত্রে মেহমানের সাথে তার আশানুরূপ আচরণ করা হবে। জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘হজ ও ওমরাকারীরা আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দোয়া করলে তাদের দোয়া কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদের তা দেওয়া হয়।’ (মুসনাদে বাজজারঃ ১১৫৩)

হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত

হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত

মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা মানবজাতির প্রতি, হজ্জকে ফরজ করেছেন কিছু শর্তসাপেক্ষের উপর। ওলামায়ে কেরামগণ একজন মুসলমান ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরজ হওয়ার ৫টি শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন। নিচে হজ্জ ফরজ হওয়ার ৫টি শর্ত সমূহ দেওয়া হলো-

  • মুসলমান হওয়াঃ মুসলমানের বিপরীত হচ্ছে কুফফার( অর্থাৎ কাফেরগন) সুতরাং কাফেরদের উপর হজ্জ ফরজ নয়।
  • সাবালক হওয়াঃ যে ব্যক্তি সাবালক হয় নি তার উপর হজ্জ ফরজ নয়। সুতরাং যদি নাবালক ব্যক্তি হজ্জ আদায় করে তাহলে তার হজ্জ নফল হজ্জ হিসাবে গন্য হবে।
  • বিবেক-বুদ্ধিমান হওয়াঃ বিবেক-বুদ্ধিমান হওয়ার বিপরীত হচ্ছে পাগল উন্মাদ, সুতরাং পাগলের উপর হজ্জ ফরজ নয়। এবং পাগলকে হজ্জ পালন করতে হবেনা।
  • স্বাধীন হওয়াঃ ক্রীতদাস-দাসীদের উপর হজ্জ ফরজ নয়। সুতরাং যদি সে হজ্জ আদায় করে তাহলে তার হজ্জ নফল হিসাবে গন্য হবে। যদি সে স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে পূনরায় ফরজ হজ্জ আদায় করবে।
  • শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকাঃ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতে সাংসারিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত এ পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে, যা দ্বারা সে কা’বা গৃহ পর্যন্ত যাতায়াত ও সেখানে অবস্থানের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া গৃহে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
  • মহিলাদের ক্ষেত্রেঃ মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত সামর্থ্য হল, হজ্জের সাথী হিসাবে কোন মাহরাম ব্যক্তি থাকা। যদি মহিলাদের কোন মাহরাম ব্যক্তি না পাওয়া যায় তাহলে তার উপর হজ্জ ফরজ নয়। সে মোহরেমের জন্য অপেক্ষা করবে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত।

শেষ কথা

পরিশেষে বলতে চাই, আজকের এই আর্টিকেল থেকে হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আশা করছি হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কিত আর্টিকেল ছাড়াও রোজা সম্পর্কিত আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের এই সাইটটই ভিজিট করতে পারেন। আর্টিকেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *