শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে কি হবে?

শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে কি হবে? ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কিভাবে বুঝবেন ও কি খাবেন?

সূর্যের আলো ভিটামিন ডি’য়ের অন্যতম প্রধান উৎস। সারাসরি সূর্যের আলোতে আমাদের শরীর ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে। এছাড়াও বিভিন্ন খাবার থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি যা শরীরের ভেতরেই উৎপন্ন হয়। আমাদের শরীরে ভিটামিন ডির কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন। এর মধ্যে আছে ভিটামিন ডি১ , ডি২ ও ডি৩। ভিটামিন ডি হাড় ও দাঁতের বৃদ্ধি বিকাশে সাহায্য করে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতাও তৈরি করতে পারে। আমাদের শরীর প্রাকৃতিক ভাবে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে।

ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি একটি সেকোস্টেরয়েড গ্রুপ যা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফেটের আন্ত্রিক শোষণ এবং মানবদেহে বিভিন্ন জৈবিক প্রভাব সৃষ্টির জন্য দায়ী। এর প্রধান প্রাকৃতিক উৎস হলো সূর্যের আলো। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ত্বকের এপিডার্মিসের নীচের স্তরে কলিক্যালসিফেলের সংশ্লেষণের মাধ্যমে ভিটামিন ডি তৈরি হয়।

শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে কি হয়?

গবেষণামতে, প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জনের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকতে পারে। শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা বেড়ে যায়। ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে শরীর বেশি ক্লান্ত লাগে এবং অবসাদগ্রস্ত লাগে। শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হওয়া মানে হাড় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়া।

হাড় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়লে আর্থাইটিসের মতো রোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। কিন্তু ভিটামিন ডি হাড়কে শক্তপোক্ত করার পাশাপাশি হার্ট, ব্রেন এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি এর অভাবে মাংসপেশীর দুর্বলতাও বেড়ে যায়।

শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি বুঝবেন যেভাবে?

আর সব ভিটামিনের তুলনায় ভিটামিন ডি একটু আলাদা। অন্য সব ভিটামিন খাবারে পাওয়া গেলেও ভিটামিন ডি এর মূল উৎস সূর্যের আলো। খাদ্য সহজলভ্য নয় বলে অনেকের মধ্যেই ভিটামিন ডি’র অভাব দেখা দেয়। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকা জরুরী। কিছু উপসর্গের মাধ্যমে বুঝা যায় শরীরে ভিটামিন ডি’র অভাব আছে কিনা। উপসর্গগুলো হলোঃ

  • ক্লান্তিঃ প্রতিদিন নিয়মিত কাজ করতে গিয়ে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ছে, হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে ভিটামিন ডি’র অভাব রয়েছে। কারণ, ভিটামিন ডি এর অভাব হলে এমনটা হয়।
  • অনিদ্রাঃ ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে ঘুমের সমস্যা হয়। কারণ, ভিটামিন ডি মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। নিদ্রা চক্র বজায় রাখতে মেলাটোনিন প্রয়োজন।
  • মানসিক অবসাদঃ গবেষণায় কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছে যে ভিটামিন ডি এর অভাবে মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়। যদিও ভিটামিন ডি এর সঙ্গে মানসিক অবসাদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
  • হাড়ের ব্যথাঃ শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা যাওয়া মানেই হারের সমস্যা শুরু হওয়া। ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড়ের জোর কমে যায়, হাড়ের গিটে ব্যথা হয় ইত্যাদি আরোও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন ডি এর মূল কাজই হলো হাড়ের ক্ষয় রোধ করা।
  • পেশিতে টানঃ শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে পেশিতে টান খায়, জোর কমে যায় ইত্যাদি আরোও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। পেশীর গঠন ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন ডি।
  • ডার্ক সার্কেলঃ শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, নিদ্রা নষ্ট হয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে চোখের নিচে। ঘুম কম হওয়ার কারণে অনেকের চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল বা কালি পড়তে দেখা যায়।
  • চুল পড়াঃ মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে ভিটামিন ডি খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এর উভাব দেখা দিলে নতুন চুল তৈরি ব্যাহত হয়। চুল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি আপনার আবার নতুন চুল না গজায়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি রয়েছে। যার ফলস্বরুপ আপনার মাথায় টাকও পড়তে পারে।

ভিটামিন ডি অভাবের লক্ষণ

শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে কিছু লক্ষণের মাধ্যমে তা বুঝা যায়-

  • চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি।
  • মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ দেখা দেয় সেই সাথে ঘনঘন মেজাজেরও পরিবর্তন হয়।
  • হঠাৎ করেই ওজন কমে যায়।
  • শরীরে যদি কোনো ঘা থাকে, তাহলে সেটা শুকাতেও সময় লাগে।
  • থায়রয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। মেরুদন্ডে ব্যথা হয় ও অসময়ে দাঁত পড়ে যায়।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিলেও শরীরে ক্লান্তিভাব বেশি লাগে।
  • শিশুদের রিকেট রোগ দেখা দেয়।

ভিটামিন ডি’র উপকারিতা

ভিটামিন ডি’র অনেক উপকারিতা রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। নিচে ভিটামিন ডি’র কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

  • হাড় শক্ত করেঃ শরীরে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি’র প্রয়োজন। ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম এই ২টি উপাদান হাড়ের মূল গঠন তৈরি করে। শরীরে ভিটামিন ডি’র অভাব হলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হাড় আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে যায়। যার ফলে অস্টিওপরোসিস রোগ হয়।
  • দাঁত শক্ত করেঃ ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট শিশু ও বয়স্কদের দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। এটি মূলত দাঁতের মিনারেলের উন্নতি ঘটিয়ে দাঁতের ক্ষয় রোধ করে থাকে।
  • পেশীর শক্তি বাড়ায়ঃ ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে। শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
  • শিশুদের জন্য উপকারঃ শিশুদের জন্য ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি শিশুদের রিকেট রোগ হওয়ার থেকে রক্ষা করে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার ক্ষুধা কমায়  যার ফলে এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার

বিভিন্ন খাবার থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। নিচে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। যে খাবারগুলো খেলে দেহে ভিটামিন ডি তৈরি হয়।

  • দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। গরুর দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  •  শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করতে গেলে চিজ খান। কারণ, চিজ খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়ে।
  • প্রতিদিন একটি করে কমলাও খেতে পারেন। কমলাতে যেমন ভিটামিন ডি রয়েছে তেমনি রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি।
  • সামুদ্রিক জাতীয় মাছ যেমন টুনা, স্যালমন এসব খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। কারণ, এসব মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে।
  • মাশরুম হলো একমাত্র অপ্রাণিজ খাদ্য যেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। আপনি ইচ্ছা করলে মাশরুমও খেতে পারেন। তবে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা মাশরুম খাওয়ার আগে অবশই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। মানসিক সুস্থতার জন্যও এটি খুবই জরুরী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন বলে শেষ করা যাবে না।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *