তেঁতুল, কি! নাম শুনেই জিভে জল চলে আসলো? তেঁতুল দেখে জিভে জল আসে না এমন মানুষ পাওয়া খুব মুশকিল। তেঁতুল পছন্দ করে না এমন নারী খুজে পাওয়া খুব কঠিন। তবে কি এ তালিকায় ছেলেরা নেই? অনেক সময় দেখা যায় ছেলেরা মেয়েদেরও হার মানায়। শুধু তেঁতুল খেলেই চলবে না, আমাদের সকলের তেঁতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা জরুরী।
আমরা অনেকে তেঁতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কম বেশি জানি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তেঁতুলের উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা বেশি মনে করে। যার ফলে অনেকে তেঁতুল খেতে ভয় বোধ করে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেয়া যাক তেঁতুলের উপকারিতা এবং অপকারিতা।
তেঁতুল পরিচিতি
তেঁতুল অতি জনপ্রিয় ফল। এটি সাধারণত গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Tamarind এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম (Tamarindus indica)। বাইরের শক্ত খোলসের ভেতরে রসালো বীজ রয়েছে যা দেখতে কিছুটা খেজুরের মতো। কাঁচা অবস্থায় টক হলেও, পাকার সঙ্গে সঙ্গে এ ফলে মিষ্টতা চলে আসে। অর্থাৎ টক মিষ্টি স্বাদের ফল হলো তেঁতুল।
তেঁতুলে কি কি পুষ্টিগুণ বিদ্যমান
তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুণ। যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে। এতে ভিটামিন সি, ই, বি ছাড়াও নানা উপাদান রয়েছে। অন্য ফলের থেকে পাকা তেঁতুলে খনিজ পদার্থ অনেক বেশি। চলুন জেনে নেওয়া প্রতি ১০০ গ্রাম তেঁতুলে কী কী এবং কতোটা পুষ্টিগুণ রয়েছে-
- ৬২.৩ গ্রাম শর্করা
- ২.৩ গ্রাম প্রোটিন
- ৫.১ গ্রাম ফাইবার (আশ)
- ১.৯ মিলিগ্রাম নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩)
- ০.৬ গ্রাম ফ্যাট (চর্বি)
- ৩.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
- ১৪ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট (ফলিক অ্যাসিড)
- ৬২৭ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম
- ৯২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
- ৭৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
- ২.৮ মিলিগ্রাম আইরন
তেঁতুলের উপকারিতা
টক-মিষ্টি স্বাদের ফল তেঁতুল। এতে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টি। তেঁতুল দেখলেই জিভে জল চলে আসে। টক কেবল মুখের স্বাদই ফেরায় না, সুস্থ থাকতেও সহায়তা করে। গ্রীষ্মকালে আপনার শরীর থেকে অনেক পানি ঘাম আকারে বেরিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শরীরকে শীতল রাখলে তেঁতুলের উপকারিতা অনেক। অনেকেই কাঁচা তেঁতুল পছন্দ করেন বা শরবত, যেভাবেই খেতে পছন্দ করেন দিনশেষে নিজের শরীরের অনেক উপকার করছেন আপনি। চলুন জেনে নিই তেঁতুলের উপকারিতাগুলোঃ-
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে তেঁতুল:- তেঁতুলে রয়েছে ম্যালিড অ্যাসিড, টার্টারিক অ্যাসিড এবং পটাশিয়াম থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে সাহায্য করে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা দূর করতে এ ফলের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া পেটের ব্যথা সারাতে তেঁতুল গাছের শিকর ও ছাল ব্যবহার করা যেতে পারে।
আলসার রোধ করতে তেঁতুল:- অনেকের পেটে ও ক্ষুদ্রান্তে পেপটিক আলসারে ভুগে থাকেন। এতে রয়েছে পলিফেনলিক কম্পাউন্ড যা আলসার সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে বা হতে দেয় না। এছাড়া রিসার্চ করে দেখা গেছে তেঁতুলের বীজের গুড়ো নিয়মিত খেতে পেপটিক আলসার সেরে যায়। তাই নিয়মিত এই ফল খেলে আলসার হওয়া থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
সর্দি কাশি দূর করতে তেঁতুল:- তেঁতুলে উপস্থিত antihistaminic properties প্রপার্টি যা শরীরে অ্যালার্জি হতে দেয় না। এছাড়াও এতে ভিটামিন সি থাকায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
হার্ট বা হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে তেঁতুল:- তেঁতুল খুবই হার্ট ফ্রেন্ডলি কারণ এতে ফ্ল্যাভরনয়েড উপাদান থাকে যা ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডও জমতে বাধা দেয়। এছাড়া এতে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকায় রক্ত চাপ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত তেঁতুল খেলে ব্লাড প্রেসায় নিয়ন্ত্রণে থাকে।
লিভার সুরক্ষিত রাখতে তেঁতুল:- তেঁতুল আমাদের যকৃত বা লিভারকেও ভালো রাখতে বিশেষ ভুমিকা রাখে। নিয়মিত তেঁতুল পাতা ব্যবহার করলে ক্ষতিগ্রস্থ যকৃৎ বা লিভার অনেকটা সেরে উঠে।
আঘাত জনিত ক্ষত সারিয়ে তুলতে তেঁতুল:- তেঁতুল গাছের ছাল এবং পাতায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-সেপটিক গুণাগুণ রয়েছে, যা আঘাত জনিত ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে তেঁতুল:- তেঁতুলে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা কিডনি ক্যান্সার এবং কিডনি ফেলিওর রোধ করতে সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে তেঁতুলের ভূমিকা:- তেঁতুলে অধিক মাত্রায় আঁশ বা ফাইবার রয়েছে আবার একই সঙ্গে সম্পুর্ণ ফ্যাট ফ্রি। রিসার্চ করে দেখা গেছে তেঁতুল সম্পুর্ণ ফ্যাট ফ্রি হওয়ায় ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে উপস্থিত Hydroxycitric acid খিদে কমাতে সাহায্য করে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে তেঁতুলের ভূমিকা:- তেঁতুল বীজে alpha-amylase নামক এক ধরণের এনজাইম থাকে যা রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। তাই ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে তেঁতুলের বীজের ভুমিকা অপরিসীম।
ত্বক উজ্জ্বল ও রোগমুক্ত রাখতে তেঁতুলঃ- তেঁতুল সূর্যের ভায়োলেট রশির হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে সহায়তা করে। এছাড়াও যাদের ব্রণ আছে তাদের জন্য এই ফল খুবই উপকারী। এতে হাইড্রক্সি অ্যাসিড রয়েছে যা ত্বকের মৃত চামড়া কোষ দূর করতে সাহায্য করে। এতে ত্বক রোগ্মুক্ত এবং উজ্জ্বল থাকে।
তেঁতুলের অপকারিতা
নানা রকম উপকারিতা থাকলেও পরিমাণ না বুঝে বা শরীরের অবস্থা না বুঝে অধিক পরিমাণে তেঁতুল খেলে হতে পারে হিতে বিপরীত।
তেঁতুল একটি অ্যাসিডিক ফল, যা খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। আবার অতিরিক্ত তেঁতুল না খাওয়াই ভালো। বেশি তেঁতুল খেলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা হতে পারে। চলুন জেনে নেই তেঁতুলের অপকারিতা কি কি?
- বেশি তেঁতুল খেলে ওজন দ্রুত হ্রাস পায়।
- জন্ডিসের মতো সমস্যা হতে পারে।
- শরীরে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি হতে পারে।
- গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
- শরীরে রক্তপাত বৃদ্ধি করে।
- পিত্তথলির সমস্যা হতে পারে।
- দাঁত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আমি এই আর্টিকেল চেষ্টা করেছি তেঁতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে। আপনারা যারা তেঁতুল সম্পর্কে তেমন একটা জানতেন না। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য বেশ উপকার করবে।
Leave a Comment