খেজুর খাওয়ার ১০টি উপকারিতা কি কি?

খেজুর খাওয়ার ১০টি উপকারিতা কি কি? জেনে নিন এখনই

আমরা প্রতিনিয়ত কম বেশি সবাই খেজুর খাই, কিন্তু আমরা কি জানি খেজুর খাওয়ার উপকারিতা কি? খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন এবং ম্যাগনেসিয়ামসহ নানান পুষ্টিগুন।

খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুর খেলে শরীরে ক্লান্তিভাব দূর হয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি। যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

একজন মানুষ দিনে কয়টি খেজুর খেতে পারে?

খেজুর সম্ভাব্য উপকারিতা সহ পুষ্টিকর ফল। গবেষণায় দেখা গেছে যে, খেজুর খেলে মস্তিষ্ক, হজমশক্তি এবং হৃদরোগ ভালো রাখতে সাহায্য করে। খেজুর হলো, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস যা রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে এবং প্রাকৃতিক শ্রমকে সহজ করতে সাহায্য করতে পারে।

একজন মানুষ দিনে কয়টি খেজুর খেতে পারে? _ wirebd.com

মনে রাখবেন যে কোনও কিছুর অতিরিক্ত সেবন উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাই খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রেও এটি মাথায় রাখতে হবে। চিকিৎসকের মতে, প্রতিদিন ২টি-৩টি খেজুর খাওয়া উচত। যারা ওজন বাড়াতে চান তারা প্রতিদিন ৪টি করে খেজুর খেতে পারেন।

কখন খেজুর খাবেন?

দিনভর এনার্জি পেতে খেজুর সকালে খেলে ভালো, এতে সারাদিন দেহে শক্তি পাওয়া যায় প্রচুর। ব্যায়াম করার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে এটি খেলে দেহে সহজে ক্লান্তি আসে না, পাশাপাশি পেট থেকে দূষিত পদার্থও বেরিয়ে যায়।

স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে সুপরিচিত খেজুর খেতে পারেন ঘুমানোর আগে। তবে বদ হজমের সমস্যা থাকলে ভারি খাবার খাওয়ার পর পরই খাবেন না খেজুর। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা থাকলেও এড়িয়ে চলুন এই ফলটি।

ভিজিয়ে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিজিয়ে রাখা খেজুর সকালে খালি পেটে খেতে হবে। তাহলেই এটি শরীরের অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিবে। খেজুর কেন ভিজিয়ে রেখে খাবেন চলুন জেনে নেওয়া যাকঃ-

  • খেজুর ভিজিয়ে রাখলে ট্যানিন বা ফাইটিক অ্যাসিড দূর হয়, যা এর পুষ্টিগুণকে সহজে শোষণ করে।
  • ভিজিয়ে রাখা খেজুর খেলে সহজে হজম হয়।
  • খেজুরের পুষ্টি শোষণ করে নিতে চাইলে খাওয়ার আগে সারারাত অন্তত ৮-১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সকালে উঠে খালি পেটে সেই খেজুর খান। এতে সারাদিন সতেজ অনুভব করার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় আপনার পেট ভরিয়ে রাখতেও কাজ করবে।
  • নিয়মিত ভেজানো খেজুর খেলে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।

খেজুর খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

শিশুদের জন্য খেজুর কতটা উপকারী?

খেজুর একটি পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে পরিচিত এবং প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত মিঠাই থাকার কারণে এটি বাচ্চাদের উপকারিতা দিতে পারে। শিশুদের স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খেজুর সবচেয়ে ভালো।

খেজুরে উপস্থিত পোষকাংশ সেটা বাচ্চাদের বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং শরীরের উপকারিতা প্রদান করতে পারে। খেজুরে উপস্থিত ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বাচ্চাদের মজুদ স্বাস্থ্যকর বিকাশ ও সমর্পক রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও খেজুরে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে যার ফলে খেজুর বাচ্চাদের পাচন সিস্টেমকেও সহায়তা করতে পারে।

খেজুর খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

খেজুরে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিঙ্ক এবং ম্যাঙ্গানিজ সহ বিভিন্ন পুষ্টির ভান্ডার।যা আপনার শরীর উপযুক্ত ও রোগ মুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আজকে আমরা খেজুর খাওয়ার সেরা ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। তো চলুন শুরু করা যাকঃ

  •  শরীরে শক্তি যোগায়ঃ খেজুর আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়। প্রতিদিন ৪-৫টি করে খেজুর খেলে শরীরের শক্তি দ্রুত বাড়তে থাকে। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি, যার ফলে অনেক শক্তি ব্যয় হয়। শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য সব খাবারের মধ্যে খেজুর হচ্ছে অন্যতম। কারণ, এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পদার্থ, প্রোটিন, লোহা সহ আরও অনেক কার্যকারী উপাদান যা তাৎক্ষণিক শক্তি ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
  • দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে খেজুর ফল অনন্য ভূমিকা রাখে। যাদের চোখের নানান সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন খেজুর খেতে পারলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। খেজুরে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
  • ত্বক ভালো ও সুন্দর রাখেঃ ত্বক সুস্থ, সুন্দর, উজ্জল ও কোমল রাখতেও খেজুরের উপকারিতা অনন্য। ত্বক সুস্থ, সুন্দর রাখার জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪-৫টা খেজুর খেতে পারেন। এতে থাকা ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়ামসহ আরও অনেক কার্যকারী উপাদান রয়েছে যা আপনার ত্বক সুস্থ, সুন্দর রাখতে যতেষ্ট সাহায্য করে। এটি আপনার ত্বকের উজ্জলতাও বাড়িয়ে দেয়।
  •  ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ খেজুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমানে এমন অনেক মানুষই আছেন যারা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। যা শরীরে স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সরূপ। এই ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা অনেক টাকাই নষ্ট করে ফেলছি। কিন্তু আপনি ইচ্ছে করলে কিছু প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারেন। যেমনঃ খেজুর, এটি মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
  • হাড় সুস্থ ও মজবুত রাখেঃ হাড় সুস্থ ও মজবুত রাখতে খেজুরের উপকারিতা অতুলনীয়।আমরা অনেকেই হাড়ের দুর্বলতা অনুভব করি। নিয়মিত খেজুর খেলে হাড় সুস্থ ও মজবুত থাকে, এবং হাড়ের দুর্বলতা চলে যায়। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম। এই সকল খনিজ পদার্থ হাড়ের সুস্থতার জন্য অতুলনীয় ভূমিকা রাখে। তাই ছোট-বড় সবারই এই খেজুর খাওয়া প্রয়োজন।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করেঃ  আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যায় ভুগেন তাহলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ৪/৫ টি ভালোমানের খেজুর খান। খেজুরে থাকা বিভিন্ন কার্যকারী উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে পারে। এই খেজুর প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বা রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে এর পানি খেতে পারেন। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
  • ওজন বাড়াতে সাহায্য করেঃ আপনি যদি আপনার ওজন বাড়াতে চান তাহলে নিয়মিত ৪/৫ টি করে খেজুর খান। খাওয়ার ১-২ মাস পর দেখবেন আপনার ওজন যথেষ্ট বেড়ে যাবে। যাদের ওজন মাত্রাতিরিক্ত হারে কমে যেতে শুরু করেছে তারা অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশপাশি প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন। কারণ, এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে  ক্যালরি যা শরীরে ভাঙন রোধ করে ওজন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  •  চুল পড়ার হার কমায়ঃ খেজুর চুল পড়া রোধ করতেও কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা এগুলিকে আপনার চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী করে তোলে। খেজুর আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি নিশ্চিত করে যাতে রক্ত প্রবাহ শক্তিশালী থাকে এবং মাথার ত্বক তার প্রাপ্য পুষ্টি পায়। আপনার মাথার ত্বকে অক্সিজেনের বর্ধিত প্রবাহ নতুন চুলের বৃদ্ধিকে সহজতর করবে এবং চুল পড়ার হারও অনেকাংশে কমিয়ে দিবে।
  • উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করেঃ খেজুর উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। মাঝে মাঝে আমাদের প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। তার জন্য আমরা ডাক্তারের কাছে ছুটাছুটি করি। কিন্তু আপনি জানেন কি, কিছু প্রাকৃতিক খাবার খেলেই উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো যায়। আর সেগুলোর মধ্যে খেজুর সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়াম যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ খেজুর বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। খেজুর খেলে শরীরে এল ডি এল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় এবং সুস্থ ও ভালো থাকে। এছাড়া মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, অ্যানামিয়ার মতো রোগকে দূরে রাখে এবং অ্যালার্জির প্রকোপ কমাতেও সাহায্য করে।

প্রচুর প্ররিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকায় নানান ধরনের রোগ নিরাময় করার ক্ষমতা রয়েছে ছোট এই ফলটির। পাশাপাশি এর পুষ্টিগুন আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটায়। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে অনন্ত তিনটি করে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে করে আপনার অনেক উপকার হবে।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *