সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। মাত্র ৮ বর্গ কিলোমিটার সেন্টমার্টিন দ্বীপের আরেকটি নাম হচ্ছে “নারিকেল জিন্জিরা”। প্রতিবছর এই দ্বীপে প্রায় তিন লাখেরও বেশি মানুষ ভ্রমণ করে থাকেন। তাই আপনাদের ভ্রমণ কে আরও সহজ করতে আমরা আজকের এই আর্টিকেলে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান, ভ্রমণের উপযুক্ত সময়, এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
আসুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ এই সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান, হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য সমূহ-
সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ (wiki) বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ যা মূল ভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে এবং কক্সবাজার জেলা শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ৮ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। কক্সবাজার জেলার স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও ডাকা হয়। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই দ্বীপ টি বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসাবে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালি, চারপাশে সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে আকর্ষণীয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপটির ভূপ্রকৃতি প্রধানত সমতল। তবে কিছু কিছু বালিয়াড়ি দেখা যায়। এ দ্বীপটির প্রধান গঠন উপাদান হলো চুনাপাথর। জেলিফিশ, মিশ্র নোনা জলের মাছ, কচ্ছপ এবং প্রবাল এই দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ। তাছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রবাল প্রজাতি রয়েছে ৬৬ প্রকার, প্রবাল প্রজাতি ছাড়াও ১৮৭ প্রজাতির শামুক ও ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর এবং ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের অপরূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। যার চারিদিকে শুধুই নীল সমুদ্রের জল, তীরে বাঁধা নৌকা, সারি সারি নারকেল গাছ আর ঢেউয়ের ছন্দ, কখনো থেমে থেমে, কখনো আবার জোরে জোরে দমকা হাওয়ার স্পর্শ, এ সবই সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মহাত্ম যা অন্য দ্বীপ থেকে ছোট্ট এই দ্বীপটিকে করেছে অনন্য সুন্দর।
এ কারনে প্রতি বছর বহু দেশি বিদেশী পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলো; ছেঁড়া দ্বীপ, নারকেল জিঞ্জিরা, কোরাল দ্বীপ, মিউজিক ইকো রিসোর্ট, দারুচিনি দ্বীপ, ইত্যাদি। নিচে কয়েকটি স্থানের বিস্তারিত বর্নণা করা হলো-
দারুচিনি দ্বীপ
দারুচিনি দ্বীপ প্রায় সবার কাছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নামেই পরিচিত। এ দ্বীপের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের শেষ নেই। দারুচিনি দ্বীপের সৌন্দর্য মধ্যে রয়েছে নীল সবুজ সমুদ্র, সাদা বালির সৈকত, দারুচিনির এবং নারকেল গাছের সাজানো মুগ্ধকর পরিবেশ। এছাড়াও এই দ্বীপে আপনি দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সরীসৃপ এবং পাখি।
বাংলাদেশের বিখ্যাত লেখক, চিত্র নাট্যকার ও নাট্য পরিচালক হুমায়ন আহমেদ এই দারুচিনি দ্বীপ নিয়ে একটি জনপ্রিয় উপন্যাসও লিখেছেন। যদি কখনো আপনি এই দ্বীপে ভ্রমণ করতে যান্তাহলে আপনি সেখানকার মায়ার পড়ে যেতে বাধ্য হবেন। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে দারুচিনি দ্বীপের সৌন্দর্য অন্যতম।
কোরাল দ্বীপ
সেন্টমার্টিনের অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান হলো কোরাল দ্বীপ। কোরাল দ্বীপ থেকে আপনি সূর্যাস্তের সময়কার প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। অনেক পর্যটকরা কোরাল দ্বীপে আসেন শুধু মাত্র এই দৃশ্য অবলোকন করার জন্য। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে কোরাল দ্বীপের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে গিয়ে কোরাল দ্বীপ না দেখলে আপনার ভ্রমণটায় অসম্পূর্ন থেকে যাবে।
মিউজিক ইকো রিসোর্ট
সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আকর্ষণীয় ভাবে ফুটিয়ে তুলে থাকে মিউজিক ইকো রিসোর্ট। আপনারা যারা রাতের আকাশে জোছনার চাঁদ দেখতে পছন্দ করেন তারা মিউজিক ইকো রিসোর্ট গিয়ে মুক্ত আকাশের জোছনার চাঁদ দেখতে পারবেন। এছাড়াও মিউজিক রিসোর্টে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন খেলার সুবিধা রয়েছে।
মিউজিক রিসোর্টে খাবারের মধ্যে রয়েছে তাজা কাঁকড়া, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছের বার্বিকিউ।তাছাড়া এখানে আপনি পেয়ে যাবেন তাজা ফল ও শাকসবজি দিয়ে রান্না করা বিভিন্ন ধরণের খাবার। সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে মিউজিক ইকো রিসোর্ট এর ভূমিকা অপরিসীম।
ছেঁড়া দ্বীপ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ছেঁড়া দ্বীপ সৌন্দর্যে ভরপুর একটি দ্বীপ। ছেঁড়া দ্বীপে আপনি সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রবাল এবং শামুকের সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। তাছাড়া এই দ্বীপে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্রের দৃশ্য দেখা যায়। ছেঁড়া এই দ্বীপে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক পাথর। মূলত ছোট বড় পাথর গুলোই ছেঁড়া দ্বীপের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছেঁড়া দ্বীপের মুগ্ধকর দৃশ্য হলো সূর্যাস্তের সময়। সূর্যাস্তের সময় সমুদ্রের নীল পানির সাথে আকাশের লাল রঙের একটি মিশ্রণ দেখা যায় এবং এই সময় চারিদিকে যে সৌন্দর্যটা ফুটে ওঠে সেটা দেখে সবার মন প্রফুল্ল হয়ে উঠে।
নারকেল জিঞ্জিরা
সেন্টমার্টিনের এই দিকটা নারকেলের জিঞ্জিরা হওয়ার কারণ হচ্ছে এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে নারকেল গাছ, যা এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কে বাড়িয়ে তুলেছে। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন সাদা বালির সৈকত, মুক্ত নীল আকাশ, সবুজ কেয়া বাগান, বিভিন্ন ধরনের মাছ, কাঁকড়া ইত্যাদি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে নারকেলের জিঞ্জিরা অন্যতম। নারকেলের জিঞ্জিরাতেই রয়েছে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ন আহমেদ এর বাড়ি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের সেরা কিছু হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া
সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে গেলে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে মৌসুমের সময় সেন্টমার্টিনে হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। কিন্তু আপনাকে যাচাই বাছাই করে ভাল মানের হোটেল ও রিসোর্টে সাশ্রয়ী খরচে থাকা যায়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের সেরা কিছু হোটেল ও রিসোর্ট গুলো হলো; জ্যোৎস্নালয় বিচ রিসোর্ট, ব্লু মেরিন রিসোর্ট, কোরাল ভিউ রিসোর্ট, নীল দিগন্তে রিসোর্ট, প্রিন্স হেভেন রিসোর্ট, ড্রিম নাইট রিসোর্ট ইত্যাদি। হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে আপনি সিঙ্গেল, ডাবল এবং বন্ধুবান্ধব সহ থাকতে পারবেন। আসুন জেনে নেই রিসোর্ট গুলোর বিস্তারিত বর্ণনা-
ব্লু মেরিন রিসোর্ট
সেন্টমার্টিন দ্বীপের ফেরিঘাটের একবারে কাছ ঘেঁষেই অবস্থিত ব্লু মেরিন রিসোর্ট। এই রিসোর্টে সর্বমোট ৪১ টি গেস্টরুম রয়েছে। এখানে একজন, দুজন, তিনজন, ছয়জন ও দশজনের আলাদা রুম পাবেন। খরচ ও সুবিধা যেমন হবে—
- ৫,০০০ টাকার আশে-পাশে নন-এসি রুম ও ১৫,০০০ টাকার আশেপাশে এসি রুম পেতে পারেন।
- গ্রুপ ভ্রমণে ৫,০০০ টাকার আশেপাশে দশ জন থাকার মত বড় রুম পেয়ে যাবেন।
- ফোন নাম্বারঃ 01713-399001
জ্যোৎস্নালয় বিচ রিসোর্ট
সারি সারি নারকেল গাছ ঘেরা সৈকতের সামনে জ্যোৎস্নালয় বিচ রিসোর্ট অবস্থিত। এই রিসোর্টে আপনি পরিবার নিয়ে নিরাপদে স্বাচ্ছন্দ্য ভাবে থাকতে পারবেন। প্রাকৃতিক পরিবেশ বান্ধব কটেজগুলো আপনাকে শহরে ফেরার কথা ভুলিয়ে দিবে! এই রিসোর্টের বেশ কিছু সুবিধা হলো—
- ২,০০০ থেকে ৪,০০০ টাকার মধ্যে থাকতে পারবেন।
- শিশু ও পরিবার নিয়ে থাকলে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা পাবেন।
নীল দিগন্তে রিসোর্ট
সুন্দর সমুদ্রের প্রাকৃতিক পরিবেশে মোড়ানো নীল দিগন্তে রিসোর্ট। এটা জাহাজের জেটি থেকে কিছুটা দূরে দক্ষিণ দিকের সৈকতের কোণাপাড়ায় গেলে খুঁজে পাবেন। এখানে যেসব সুবিধা পাবেন তা হলো—
- ২,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা করতে পারবেন
- বিভিন্নরকম ছোট কটেজের মত রুম আছে
- ফোন নাম্বারঃ 01730-051005
দ্য আটলান্টিক রিসোর্ট
৪৩টি রুমের দ্য আটলান্টিক রিসোর্টের আগের নাম ছিল লাবিবা বিলাশ রিসোর্ট। বাজেট সীমিত হলে এখানে কম সাজসজ্জার থাকার জায়গা পাবেন। আবার বিলাসবহুল রুম ও আছে। যেসব সুবিধা পেতে পারেন—
- অনুষ্ঠান করার জন্য আলাদা পার্টি স্পেস আছে।
- ১,৫০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের থাকার জায়গা পাবেন।
- ফোন নাম্বারঃ 01719584899
কোরাল ভিউ রিসোর্ট
পূর্বদিকের সৈকতের পাশে জাহাজঘাটের সাথেই কোরাল ভিউ রিসোর্ট খুঁজে পাবেন। থাকার জন্য এটিও সেরা রিসোর্টের একটি। যে সুবিধা পেতে পারেন—
- ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকার রুম থেকে সমুদ্র দেখতে পারবেন।
- সুন্দর ও গোছালো আলো ঝলমলে পরিবেশে ছবি তুলতে পারবেন।
- ফোন নাম্বারঃ 01859-397045
হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ
দ্বিতল এই হোটেলটির অবস্থান ব্লু মেরিনের কিছুটা উত্তরে। কম খরচে থাকার জন্য এটিও ভালো একটি রিসোর্ট। বিচ থেকে একটু দূরে বলে অল্প কয়েকটি রুম থেকে সমুদ্রের খানিকটা দেখা যায়।
- প্রতিটি রুমের ভাড়া ২০০০ থেকে৪০০০ টাকা।
- সুন্দর পরিবেশ।
- ফোন নাম্বারঃ 01556-347711
উপরোক্ত হোটেল বা রিসোর্ট ছাড়াও সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রীযাপনের জন্য ছোট বড় আরও অসংখ্য রিসোর্ট রয়েছে। যেমন; কোরাল ব্লু, ড্রিম নাইট, সায়রি, অবকাশ, স্যান্ড শোর, ব্লু লেগুন, সিটিবি ইত্যাদি রিসোর্ট পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদেরকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান, রিসোর্ট ও হোটেল ভাড়া সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক তথ্য জানাতে পেরেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে এসেছে। এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে পরিচিত বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। নিত্য নতুন সব রকম তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আজ এ পর্যন্তই সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।
Leave a Comment