ক্রায়োসার্জারি কি? জেনে নিন ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার সুবিধা ও অসুবিধা

ক্রায়োসার্জারি কি? জেনে নিন ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার সুবিধা ও অসুবিধা।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অন্যতম একটি আবিষ্কার ক্রায়োসার্জারি। দিনের পর দিন এই পদ্ধতি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমি আলোচনা করতে যাচ্ছি ক্রায়োসার্জারি কি? এবং এর ব্য়বহার, সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে।

ক্রায়োসার্জারি কি

ক্রায়োসার্জারি হলো কাটাছেঁড়াবিহীন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। গ্রিক শব্দ ক্রায়ো (Cryo) এবং সার্জারি (Surgery) থেকে ক্রায়োসার্জারি শব্দটি এসেছে। ক্রায়ো অর্থ “বরফের মতো ঠান্ডা” এবং সার্জারি অর্থ “হাতের কাজ বা শৈল্য চিকিৎসা’। অর্থাৎ অত্যন্ত শীতল তাপমাত্রায় শরীরের অস্বাভাবিক টিস্যু বা কোষগুলোকে ধ্বংস করার প্রকিয়ার নামই হচ্ছে ক্রায়োসার্জারি। অথবা বরফের মতো হিমশীতল পদার্থ প্রয়োগ করে যে চিকিৎসা করা হয় সেটিই ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতি। এটিকে অনেক সময় ক্রায়োথেরাপি বা ক্রায়োবায়োলেশনও বলা যায়।

ক্রায়োসার্জারি কি

ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতি

ক্রায়োসার্জারি হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় শরীরের অস্বাভাবিক কোষগুলোকে ধ্বংস করা যায়। প্রথমে সিমুলেটেড সফটওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত কোষগুলোর অবস্থান নির্ণয় করে নেওয়া যায়। এরপর নিম্ন তাপমাত্রায় রোগ আক্রান্ত কোষ বা টিস্যুতে আর্গন বা নাইট্রোজেন গ্যাস স্প্রে করার জন্য ‘ক্রায়োগান’ যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয় এবং শরীরের অভ্যন্তরে সার্জারির জন্য ‘ক্রায়োপাব’ যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়।

ক্রায়োপাব হলো ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতিতে যে নল ব্যবহার করে তরল নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, ডাই মিথাইল ও আর্গন ব্যবহার করা হয়। এ চিকিৎসা মাইনাস (-) ৪১ থেকে মাইনাস (-) ১৯৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় করা হয়। এত শীতল তাপমাত্রা হওয়ায় ওই স্থানের অক্সিজেন এবং রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়।

ফলে রক্ত জমাট বেধে যায় এবং আক্রান্ত টিস্যুটি মারা যায়। পুনরায় কোষের ভেতরে হিলিয়াম গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে তাপমাত্রা ২০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে উঠানো হয়। ফলে জমাটবদ্ধ টিস্যুটির বরফ গলে যায় এবং মৃত কোষগুলো স্বাভাবিকভাবেই শরীর দ্বারা শোষিত হয়।

ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসার ব্যবহার

ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করার কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এ চিকিৎসা পদ্ধতির কিছু সাধারণ কারণ-

  • ত্বকের ক্ষতঃ এ চিকিৎসা পদ্ধতি মেছতা, তিল, আঁচিল এর মতো ত্বকের ক্ষত দূর করতে ব্যবহার করা হয়।
  • ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ প্রাথমিক পর্যায়ে প্রোস্টেট ক্যান্সার  এবং ত্বকের ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও যকৃত ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ইত্যাদির চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা হয়।
  • চোখের চিকিৎসাঃ চোখের ছানি বা রেটিনাল টিয়ারের মতো চিকিৎসার জন্য ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ব্যথা চিকিৎসাঃ স্নায়ু-সম্পর্কিত ব্যথা কমানোর জন্য ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার ক্ষেত্রে।
  • কিডনি এবং লিভার টিউমারঃ কিডনি এবং লিভার টিউমারের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা  যেতে পারে। বিশেষ করে যখন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা চ্যালেঞ্জিং বা সম্ভব নয় এমন সময়ে এটি ব্যবহার করা যায়।

ক্রায়োসার্জারির সুবিধা

ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতি আধুনিক এবং নিরাপদ। এ চিকিৎসার অনেক সুবিধা রয়েছে। নিচে সুবিধাগুলো দেওয়া হলো-

  • এ চিকিৎসা পদ্ধতির খরচ তুলনামুলক কম। অন্যান্য সার্জারির তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী।
  • এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে অন্যান্য অস্ত্রোপচারের মতো জটিল কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
  • এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রায় ৯০ শতাংশ আক্রান্ত কোষ বা টিস্যু ধ্বংস হয়ে যায়।
  • সার্জারি সম্পন্ন করতে সময় কম লাগে।
  • রক্তপাত খুব কম হয়, তবে হয় না বললেই চলে।
  • রোগীকে কোনো পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয় না।
  • কাটাছেঁড়ার কোনো জটিলতা নেই।
  • সার্জারি শেষে রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হয় না।
  • ক্রায়োসার্জারির সুবিধা হলো এটি বারবার করা সম্ভব।
  • অন্যান্য সার্জারির থেকে কম বেদনাদায়ক।
  • যারা কোনোরুপ অপারেশনের ধকল সহ্য করতে পারে না, তাদের জন্য এই চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ উপযোগী।

ক্রায়োসার্জারির অসুবিধা

এ চিকিৎসা পদ্ধতির অনেক সুবিধা থাকলেও বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। চলুন অসুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক-

  • ক্যান্সার যদি বেশি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এর ট্রিট্মেন্টের জন্য এ চিকিৎসা পদ্ধতিৎ
  • ফুসফুস ও লিভারের  স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হতে পারে।
  • এ চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষণস্থায়ী কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
  • যকৃতে বা রক্তনালীতে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
  • ত্বকের চিকিৎসায় এ চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করলে ত্বক ফুলে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
  • মলদ্বারের ক্ষতি হতে পারে।
  • স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। সংবেদনশীলতা কমে যেতে পারে।
  • রোগাক্রান্ত কোষ  বা টিস্যুর সঠিক অবস্থান নির্ণয়ে ব্যর্থ হলে সুস্থ কোষের ক্ষতি হতে পারে।
  • যাদের প্রস্টেট গ্রন্থিগত সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়।

সুতরাং ক্রায়োসার্জারি হলো শীতল তাপমাত্রায় কাটাছেঁড়াবিহীন এবং রক্তপাতহীন চিকিৎসা পদ্ধতি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অন্যতম একটি শাখা এই চিকিৎসা পদ্ধতি। উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা আশা করি ক্রায়োসার্জারি কি, এর ব্যবহার, সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *