ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু আমাদের সকলের কাছে অনেক পরিচিত। লেবু যেমন সহজলভ্য, তেমনি এর গুণেরও শেষ নেই। লেবুর উপকারিতার কথা আমাদের কাছে অজানা নয়। আমরা সবাই কম-বেশি লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে জানি। প্রতিদিন লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক লেবুর উপকারিতা এবং প্রতিদিন কিভাবে লেবু খাবেন।
লেবুর পুষ্টিগুণ
লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে শেষ করা যাবে না। লেবু হলো ভিটামিন সি এর একটি ভান্ডার স্বরূপ। যা ভিটামিন বি৬, কপার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ। লেবুতে ক্যালোরি এবং চর্বি কম থাকে। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণে সাহায্য করে। এছাড়াও লেবু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (wikipedia) হিসেবে কাজ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর অভাবে আমাদের ত্বক ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে এবং স্কিন ড্রাই হয়ে যেতে পারে। কিন্তু লেবুর ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্কিনকে নরমাল রাখতে সাহায্য করে, স্কিনকে উজ্জ্বল রাখে, বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
লেবুর উপকারিতা
দৈনন্দিন জীবনে লেবুর নানা ধরনের ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা কি জানি লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে? লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, একে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডও বলা হয়। লেবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে পেট পরিষ্কার করার মতো বিভিন্ন উপকারে আসে। লেবু একটি বহুমূখী ফল যা আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকার করে। তাহলে লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যায়ঃ
- লেবু ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- লেবুর ভিটামিন সি এন্টিসেপটিক এর কাজ করে ও ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করে।
- লেবু বুক জ্বালা প্রতিরোধ করতে এবং আলসার সারাতে সহায়তা করে।
- রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে।
- লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ক্যান্সার কোষ গঠন প্রতিরোধ করে।
- গলার ও শ্বাসনালীর প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে।
- শরীরের ভেতর অন্ত্রনালী, যকৃত ও পুরো শরীরকে পরিষ্কার রাখে এবং টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
- সামান্য গরম পানিতে লেবুর রস পরিপাক প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে এবং লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- লেবুর রস ব্রণে দিলে ব্রণ দূর হবে এবং নতুন ব্রণ উঠতে বাঁধা প্রদান করবে।
- লেবু আর্থাইটিসের রোগিদের জন্য বেশ উপকারী।
- পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
- ত্বক দাগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে লেবু।
- পিএইচ ব্যালেন্স রাখতে বেশ কার্যকরী।
লেবুর খোসার উপকারিতা
লেবুর উপকারিতার পাশাপাশি লেবুর খোসার উপকারিতাও অনেক। লেবুর খোসায় রয়েছে পেকটিন, ভিটামিন সি, খনিজ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফাইবার। এতে ডি লিমোনিন নামক একধরনের অ্যাসিড থাকে যা বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে। তবে মেদ কমানো ছাড়াও লেবুর খোসায় আরও অনেক গুণ রয়েছে। নিচে লেবুর খোসার উপকারিতা দেওয়া হলো-
- লেবুর খোসায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য লেবুর খোসা বেশ উপকারী। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।
- লেবুর খোসা মুখের বা কনুইয়ের কালো দাগ, বার্ধক্যের ছাপ, বলি রেখা দূর করতে সাহায্য করে।
- এটি হাড়ের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
- অতিরিক্ত ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
- লেবুর খোসাতে পটাশিয়াম থাকায় রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- আঁশ বা ফাইবার অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে।
- লেবুর খোসা হজমে সাহায্য করে এবং পেট ফোলাভাব রোধে সহায়তা করে।
লেবুর রস ও গরম পানির উপকারিতা
লেবুর উপকারিতা আমরা অনেক ভাবে ভোগ করে থাকি। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস , যা দেহের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সকালে উঠে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে সারাদিনের হজমশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেক উপকার পাওয়া যায়।
আসুন জেনে নিই সকালে গরম পানির সাথে লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতাগুলো:-
- ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করে।
- শরীরের অয়ান্টি-অক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ করতে বেশ কার্যকরী।
- দেহের ভেতরে পিএইচ এর মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে দেহের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
- দেহের হরমোনকে সক্রিয় রাখে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
- লেবুর ভিটামিন ‘সি’ স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
লেবুর শরবতের উপকারিতা
সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এক গ্লাস লেবুর শরবতই যথেষ্ঠ। গরমে এক গ্লাস লেবুর শরবত আমাদের শরীরে পরম প্রশান্তি এনে দেয়। প্রতিদিন লেবুর শরবত পান করলে ত্বকের আর্দ্রতার মাত্রা বজায় রাখার পাশাপাশি নানা উপকার করে থাকে। নিচে লেবুর শরবত উপকারিতা দেওয়া হলোঃ-
- লেবুর শরবত ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
- লেবুর পানি শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- এটি পিত্তথলির পাথর দূর করে।
- ঠান্ডাজনিত রোগ উপশম করে।
- লেবুর শরবত ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
রূপচর্চায় লেবুর ব্যবহার
লেবুর উপকারিতার মধ্যে রূপচর্চাও হতে পারে একটি বিশেষ গুণ। লেবুর পরিচিতি আসলে সুগন্ধি ফল হিসেবেই। লেবু স্বাস্থ্যের পাশাপাশি রূপচর্চার ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর। লেবুর রস মুখ, হাত-পা ও চুলের যত্নে বেশ উপকরী। ত্বক পরিষ্কার রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই। নিচে রূপচর্চায় লেবুর ব্যবহার দেওয়া হলোঃ-
ত্বক পরিষ্কার করতে লেবুর ব্যবহারঃ- লেবুর রস ত্বক পরিষ্কার করতে অনেক উপকারী। লেবুর রসের সঙ্গে কাঁচাদুধ, মধু, কাঁচাহলুদ বাটা মিশিয়ে নিয়মিত মুখে দিলে ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন। লেবুর রস ত্বকের তেল ভাব দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
লেবু চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ- লেবুর রসের সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ পেস্ট তৈরি করে নিয়মিত চুলে দিলে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল ঝলমলে ও উজ্জ্বল কালো হয়।
নখ পরিষ্কার করতে লেবুর ব্যবহারঃ- রান্নার সময় নারীদের হাতের নখে আদা, রসুন, পেঁয়াজ ও বিভিন্ন ধরনের সবজির রস ঢুকে কালো হয়ে যায়। এমন সময় নখ পরিষ্কার করতে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। এক টুকরো লেবু কেটে হাতে ঘষলে নখের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়।
লেবু ব্রণ থেকে মুক্তি দাইঃ- লেবুর রস ব্রণ দূর করতে বেশ উপকারী। লেবুর রসের সঙ্গে হালকা মধু মিশিয়ে তুলা দিয়ে ব্রণের ওপর প্রলেপ দিয়ে রাখুন। এতে ব্রণ থেকে মুক্তি মিলবে।
ঠোঁটে লেবুর ব্যবহার:- গরমেও ঠোঁট হতে পারে শুষ্ক ও মলিন। লেবুর সাহায্যে এই সমস্যা দূর করা যায়। লেবুর রস ও বাদামি চিনি মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে ঠোঁট এক্সফলিয়েট করে নিন। এরপর লেবু ও চিনির মিশ্রণ আলতোভাবে ঠোঁটে মালিশ করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়।
দাঁতে ব্যবহার: দাঁত সাদা করতে লেবুর তৈরি ‘হোয়াইটেনিং প্যাক’ বেশ কার্যকর। লেবুর রসের সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে পেস্ট করে দাঁতের ওপর পাতলা করে প্রলেপ দিয়ে রাখুন। এরপর টুথব্রাশের সাহায্যে দাঁত মেজে নিন এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে দাঁত ঝকঝক করবে।
প্রতিদিনের ডায়েটে লেবু
আপনি যদি ডায়েট করার চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন, তাহলে লেবুকে আপনার সেরা সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে হবে। লেবুতে পলিফেনলস আছে যা ক্ষুধা নিবারণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া খায়ার আগে লেবু পানি পান করলে ক্ষুধা কিছুটা কম লাগে।
অর্থাৎ প্রতিদিনের ডায়েটে লেবু খুব কার্যকারী উপাদান। চলুন জেনে নিই কিভাবে আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে লেবু যুক্ত করবেন।
- লেবু চা ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি আপনার চায়ে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যোগ করে প্রতিদিন ২-৩ কাপ খেতে পারেন।
- হালকা গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে নিতে পারেন।
- মাংস ম্যারিনেট করতে একটি লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
- রোস্ট করা মুরগি বা সবজির সাথে কয়েক ফোঁটা লেবু যোগ করতে পারেন।
- সালাদে লেবুর রস ছেঁকে নিতে পারেন।
- ভাত রান্না করার সময় তাতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যোগ করতে পারেন, যাতে দানা একে অপরের সাথে লেগে না যায়।
প্রতিদিন যেভাবে লেবু খাবেন
ভিটামিন সি পানিতে দ্রাব্য ভিটামিন, তাই পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে বা শরবত করে খেতে পারেন। বাড়িতে সকালে খাওয়ার ফল না থাকলে লেবুর রস খেতে পারেন। প্রতিদিন ভাতের সাথেও লেবু খেতে পারেন। ছানা তৈরিতে লেবুর রস ব্যবহার করা ভালো তবে দুধ ও লেবু পরপর খাওয়া ঠিক নয়। তাছাড়া সকালে খালি পেটে লেবু খাওয়া ঠিক না এতে অ্যাসিডিটি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
আমি এই আর্টিকেলটি জুড়ে চেষ্টা করেছি আপনাদের কাছে লেবুর উপকারিতা বিষয়টিকে স্পষ্ট করে তোলার। এবং আপনাদের জানিয়েছি লেবুর পুষ্টিগুণ, লেবুর উপকারিতা, লেবুর খোসার উপকারিতা, লেবুর রস ও গরম পানির উপকারিতা, লেবুর শরবতের উপকারিতা, রুপচর্চায় লেবু আরও জানিয়েছি কিভাবে প্রতিদিনের ডায়েটে লেবু যুক্ত করবেন ও প্রতিদিন যেভাবে লেবু খাবেন। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে।
Leave a Comment