বাংলাদেশের যমুনা নদীর উপর নির্মিত সেতুকে যমুনা সেতু বলা হয়। এ দেশে যতগুলো সেতু রয়েছে তার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু হচ্ছে এই যমুনা সেতু। এ সেতুকে পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধু সেতু নামকরণ করা হয়েছে। অনেকেই আছেন যারা অনলাইনে যমুনা সেতু সম্পর্কে জানতে চান। কেননা বিগত সালের বিসিএস বা সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় যমুনা সেতু সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন এসেছে। তাই আপনারা যারা এবছর বিসিএস কিংবা চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য কত কিলোমিটার? যমুনা সেতু কত সালে উদ্বোধন করা হয়েছে? যমুনা সেতুর পিলার সংখ্যা কয়টি? সহ কতিপয় প্রশ্নের উত্তর চাকরির পরিক্ষার প্রস্তুতি স্বরূপ জেনে রাখতে পারেন।
তাই আমি আপনাদের কথা মাথায় রেখেই এই আর্টিকেলে যমুনা সেতু সম্পর্কে খুঁটিনাটি ও সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি। আশা করি আপনি এই আর্টিকেল থেকে যমুনা সেতু সম্পর্কে যাবতীয় সকল তথ্য পাবেন। তাই আর্টিকেলটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
যমুনা সেতুর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
স্বপ্নের সেতু যমুনা সেতু। এটি কেবল সেতু বা স্বপ্নই নয় বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়ন এবং সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে, যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যমুনা নদীর উপর দিয়ে এ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দেশের অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ আর উন্নয়নের ক্ষেত্রে যমুনা সেতুর গুরুত্ব আজ সর্বজনস্বীকৃত। আসুন জেনে নেই যমুনা সেতু সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-
যমুনা সেতুর অবস্থান
১৯৮৬ সালের মার্চে ইউএনডিপি, আরপিট, এনডিইসিও এবং বিসিএলকে সেতু নির্মাণের উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের জন্য নিযুক্ত করা হয়। ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাতটি স্থানের মধ্যে সিরাজগঞ্জ এবং ভূয়াপুর, সেতুর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং পরবর্তিতে এখানেই যমুনা সেতু নির্মান করা হয়।
যমুনা সেতুর আকার আকৃতি
তৎকালীন সময়ে ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৮.৫ মিটার প্রশস্ত সেতু যা পৃথিবীর একাদশ, এশিয়ার পঞ্চম ও বাংলাদেশের বৃহত্তম সেতু ছিল বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু। যমুনার বিশালতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে নদী বক্ষ ভেদ করে সুকঠিন ইস্পাত, পাথর ও কংক্রিটে নির্মিত এ সেতু ধনুকের মত ঈষৎ বাঁকা।
রেলপথ, বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস লাইন ও টেলিযোগাযোগ লাইন সম্বলিত এ সেতুর মোট প্রকল্প এলাকা ৭৮৭৯.৩৯ একর এবং স্প্যান সংখ্যা ৪৯টি। ১২৬৩টি ডেক সেগমেন্ট, ১২১টি পাইল, পাইলের জন্য ইস্পাত ৩৪,০০০টন, ৫০টি পিলার ও ৪ লেন বিশিষ্ট এ সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম তীরের সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৫.৩ ও ১৪.৪ কিলোমিটার এবং উভয় পার্শ্বে গাইড ব্যান্ডের দৈর্ঘ্য ২.২ কিলোমিটার।
নির্মাণ ব্যয় ও সহযোগিতা
বঙ্গবন্ধু সেতু বা যমুনা সেতু বাস্তবায়নে ব্যয় হয় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। তন্মধ্যে তিনটি উন্নয়ন সংযোগী সংস্থা- আইডিএ, এডিবি ও ওইসিএফ (জাপান) প্রত্যেকে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার করে মোট ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ যোগান দেয়। অবশিষ্ট অর্থ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়েছে।
নির্মাণ কাজ শুরু ও উদ্বোধন
১৯৯৪ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু সেতু বা যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বৃহৎ এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের ৪৪ মাস সময় লাগে যা নির্ধারিত সময় অপেক্ষা ৬ মাস বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ জুন ১৯৯৮ যমুনা নদীর উপর নির্মিত আত্মগৌর ও অগ্রগতির অপূর্ব নিদর্শন বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে একটি স্বপ্নের ফলক উন্মোচিত করেন।
যমুনা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
যমুনা সেতু সম্পর্কে অনেকেই সাধারণ জ্ঞান জানতে চান। নিচে যমুনা সেতু সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান আলোচনা করা হলো। এখানে যমুনা সেতু সম্পর্কিত সকল প্রশ্ন ও উত্তর রয়েছে। আপনারা এখান থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু বা যমুনা সেতু সম্পর্কিত সকল প্রশ্ন এবং উত্তর জানতে পারবেন। তাহলে আসুন জেনে নেই যমুনা সেতু সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর –
১. যমুনা সেতু কত সালে নির্মাণ করা শুরু হয়?
উত্তরঃ ১৯৯৪ সালে।
২. কোন কোম্পানি যমুনা সেতু নির্মাণ করেছিলো?
উত্তরঃ হুন্দাই।
৩. যমুনা সেতু কে উদ্বোধন করেন?
উত্তরঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৪. যমুনা বহুমুখী সেতু কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তরঃ টাঙ্গাইল জেলায়।
৫. বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু কোনটি?
উত্তরঃ যমুনা বহুমুখী সেতু।
৬. যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত?
উত্তরঃ যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.৫ মিটার।
৭.যমুনা সেতু নির্মাণ করতে মোট কত টাকা খরচ হয়েছে?
উত্তরঃ যমুনা সেতু নির্মাণ করতে মোট ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
৮. ঢাকা থেকে যমুনা সেতু কত কিলোমিটার?
উত্তরঃ ঢাকা শহর থেকে যমুনা সেতুর দূরত্ব প্রায় ১১০ কিলোমিটার।
৯. বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু কোনটি?
উত্তরঃ যমুনা সেতু।
১০.দক্ষিণ এশিয়ায় যমুনা সেতু কততম দীর্ঘতম সেতু?
উত্তরঃ ষষ্ঠ।
১১. বিশ্বে যমুনা সেতুর অবস্থান কততম?
উত্তরঃ বিশ্বে ১১শ দীর্ঘতম সেতু।
১২. যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য কত কিলোমিটার?
উত্তরঃ যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার।
১৩. যমুনা সেতুর প্রস্থ কত মিটার?
উত্তরঃ যমুনা সেতুর প্রস্থ ১৮.৫ মিটার।
১৪. ঢাকা থেকে যমুনা সেতু কত কিলোমিটার?
উত্তরঃ ঢাকা থেকে যমুনা সেতু প্রায় ৩২ কিলোমিটার।
১৫. যমুনা সেতুর মোট পিলার সংখ্যা কয়টি?
উত্তরঃ ৫০ টি।
১৬. যমুনা সেতুর মোট পাইল সংখ্যা কতটি রয়েছে?
উত্তরঃ ১২১ টি।
১৭. যমুনা সেতুতে কতটি স্প্যান বসানো হয়েছে?
উত্তরঃ ৪৯ টি।
১৮. যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ কবে শুরু হয়?
উত্তরঃ ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর তারিখে।
১৯. যমুনা সেতু কবে উদ্বোধন করা হয়েছে?
উত্তরঃ ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন।
২০. যমুনা সেতুর আয়ুষ্কাল কত বছর?
উত্তরঃ ১২০ বছর।
২১. কোন সরকারের আমলে যমুনা সেতু নির্মাণ হয়েছিল?
উত্তরঃ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।
২২. যমুনা সেতু নির্মাণ করেছে কোন প্রতিষ্ঠান?
উত্তরঃ হুন্ডাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ।
২৩. কত ডলারের বিনিময়ে হুন্ডাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ হাতে নেয়?
উত্তরঃ ৬৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২৪. যমুনা সেতু বাংলাদেশের কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ টাঙ্গাইল জেলার পশ্চিম পাশে এবং সিরাজগঞ্জ জেলার পূর্ব পাশে যমুনা সেতু অবস্থিত।
২৫. যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজে মোট কত টাকা ব্যয় হয়েছিল?
উত্তরঃ যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজে মোট ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল।
২৬. যমুনা সেতু কত লেন বিশিষ্ট?
উত্তরঃ যমুনা সেতু ৬ লেনের সড়ক, পথচারী রাস্তা ও বাইসাইকেল লেন রয়েছে।
২৭. সর্বপ্রথম যমুনা সেতু নির্মাণের দাবী কে উত্থাপন করেছিলেন?
উত্তরঃ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।
২৮. যমুনা সেতু নির্মাণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত সালে জাপান সরকারের সহায়তা চায়?
উত্তরঃ ১৯৭৩ সালে।
২৯. যমুনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কে?
উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
২৯.প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কত সালে যমুনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন?
উত্তরঃ ১৯৯৪ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে।
৩০. ২০২১-২২ অর্থ বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত যমুনা সেতুতে টোল আদায় হয় কত কোটি টাকা?
উত্তরঃ ৭ হাজার ৭৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
৩১. যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষের বর্তমান নাম কী?
উত্তরঃ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
৩২. বাংলাদেশ ছাড়া অপর কয়টি দেশ যমুনা সেতু নির্মানে ব্যয় বহন করেছে?
উত্তরঃ তিনটি।
৩৩. যমুনা সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করে কত সালে?
উত্তরঃ ১৯৯৮ সালের ৪ জুলাই।
৩৪. যমুনা সেতু দিয়ে উত্তরাঞ্চলের সাথে ঢাকার সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু হয় কবে?
উত্তরঃ ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট।
৩৫. বাংলাদেশের বৃহত্তম সেতুর নাম কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের সবেচেয়ে বৃহত্তম সেতু হলো পদ্মা সেতু।
৩৬. যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় কত তারিখে?
উত্তরঃ ১৯৯৪ সালের ১৬ অক্টোবর।
৩৭. কত সালে যমুনা সেতুতে ফাটলের দেখা দেয়?
উত্তরঃ ২০০৮ সালে।
৩৮. যমুনা সেতু স্থাপনের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া কত সালে?
উত্তরঃ যমুনা সেতু স্থাপনের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ১৯৪৯ সালে।
৩৯. স্থাপত্য মান অনুযায়ী যমুনা সেতুর আয়ুষ্কাল কত বছর?
উত্তরঃ ১১০ বছর।
৪০. যমুনা সেতু কে নির্মাণ করেন?
উত্তরঃ প্রথম ১৯৪৯ সালে যমুনা সেতু রাজনৈতিক পর্যায়ে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী স্থাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু সেসময় এই সেতুটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর এবং ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
৪১. যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ কত তারিখে শেষ হয়?
উত্তরঃ ১৯৯৮ সালের ২৩ মার্চ তারিখে।
শেষ কথা
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অথবা বিসিএস চাকরির পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য যমুনা সেতু সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন। আপনি যদি এই সব পরীক্ষায় ভালো করতে চান তাহলে আগে থেকেই আপনাকে যমুনা সেতু সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান মুখস্থ রাখতে হবে। এছাড়াও চাকরির প্রস্তুতি শক্তিশালী করতে চাইলে আপনি পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
আজকের এই যমুনা সেতু আর্টিকেলে আপনার কোন কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্টে আপনার প্রশ্নটি করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ্ যথাসম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তাহলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!
Leave a Comment