ফিতরা দেওয়ার নিয়ম এবং সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ

ফিতরা দেওয়ার নিয়ম এবং সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ

ফিতরা দেওয়ার নিয়ম এবং সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ কত এ জাতীয় প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। আমরা জানি পবিত্র রমজান মাস শেষে, শাওয়াল মাসের চাঁদ উঠলে সারা বিশ্বের মুসলমান ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের ঈদুল ফিতর নামাজ আদায়ের পূর্বে ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। ফিতরা আদায় প্রসঙ্গে,

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতরার যাকাত রোজা পালনকারীকে অনর্থক, অবঞ্চনীয় ও নির্লজ্জতামুলক কথাবার্তা বা কাজকর্মের মলিনতা থেকে পবিত্র করা এবং মিসকিনদের উত্তম খাদ্যের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে অত্যাবাসকীয় করেছেন।” ( সুনানে আবু দাউদ) আপনারা যারা ফিতরা দেওয়ার নিয়ম এবং সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ কত জানতে চাচ্ছেন তারা আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন-

ফিতরা কি

ফিতরা কি?

সাদাকাতুল ফিতরা একটি আরবি শব্দ। সাদাকাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে দান; ফিতর অর্থ হচ্ছে এক মাস রোজা রাখার পর রোজা ভাঙা। মুলত সাদাকাতুল ফিতর অর্থ হচ্ছে, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে রোজা ভাঙা উপলক্ষে গরীব-মিসকিনকে যা দান করা হয়, তা-ই সাদাকাতুল ফিতর (wiki)। ইসলামী পরিভাষায় সাদাকাতুল ফিতর বলতে বোঝায় রমজান শেষে ঈদ উদযাপনের দিন খাদ্য স্বরূপ নির্ধারিত সম্পদ প্রদান করা।

ফিতরা মূলত ওয়াজিব করা হয়েছে রমজানের রোজা সংক্রান্ত বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুক্তিসমূহ হতে মুক্ত হওয়ার বিশেষ সুযোগ স্বরূপ। সাদকাতুল ফিতর মূলত ধনী, ছোট, বড়, স্বাধীন, ক্রীতদাস, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে। সাদাকাতুল ফিতরা ঈদুল ফিতর সালাতের পূর্বে আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের সালাতের পর ফিতরা প্রদান করলে তা সাধারণ সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।

ফিতরা দেওয়ার নিয়ম

ফিতরা দেওয়ার নিয়ম

ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ঈদুল ফিতরের ওয়াজিব নামাজের পূর্বে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমান ব্যক্তি কে ফিতরা আদায় করতে হবে। আর এটি হচ্ছে তার ওয়াজিব। আর যদি নাবালক ছেলে মেয়ে থাকে তাহলে তাদের পক্ষ থেকে তার বাবাকে ফিতরা আদায় করতে হবে। এমনকি ঈদের নামাজের আগে জন্মগ্রহন করা শিশুর জন্য তার বাবার পক্ষ হতে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু প্রসিদ্ধ ফতোয়া গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে- মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ মালিক হলে ওই মুসলমান ব্যক্তিকে অবশ্যই ফিতরা দিতে হবে এবং এটি তার উপর ওয়াজিব।

ফিতরা আদায় প্রসঙ্গে আরও বলা হয়েছে যে, ফিতরা আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের দিন সুবেহ সাদিকের পর থেকে ঈদের নামাজ আদায় করার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত, অর্থাৎ ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরবর্তী সময় থেকে ঈদের নামাজ আদায় করার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত। তবে ফিতরা তাদের জন্য উপযুক্ত যারা যাকাতের জন্য উপযোগী হয়, আর যারা যাকাত দেয় না তাদের ফিতরা দিতে হয় না। ( ফতোয়া আলমগীরী, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৯৪)।

ফিতরা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন; “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অনর্থক কাজ ও অশ্লীলতা হতে পবিত্রকরণ এবং মিসকীনদের জন্য খাদ্যের উৎস হিসেবে রোযা পালনকারীর উপর ফিতরা ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের আগে তা আদায় করবে তা কবুলযোগ্য ফিতরা হিসেবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পর আদায় করবে সেটা সাধারণ সদকা হিসেবে গণ্য হবে।” (সুনানে আবু দাউদ; ১৬০৯)

অধিকাংশ আলেমের মতে খাদ্যের বদলে খাদ্যে দ্রব্যের মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা আদায় হবে না। দলীলের দিক থেকে এই মতটি অধিক শুদ্ধ। বরং ওয়াজিব হলো খাদ্যদ্রব্য থেকে ফিতরা আদায় করা। যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ আদায় করেছেন। শাইখ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ এর মতে; কিলোগ্রামের হিসাবে ফিতরার পরিমাণ প্রায় ৩ কিলোগ্রাম। ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণও একই পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। (৯/৩৭১)

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ

অসহায় গরিবদুঃখী মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো সাদাকাতুল ফিতর। সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর ওয়াজিব। আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) বলেন, “আমরা এক ‘সা’ (দুই হাতের কবজি একত্র করে চার খাবরিতে যে পরিমাণ খাবার ওঠে) পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা পরিমাণ যব অথবা এক সা পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা পরিমাণ পনির অথবা এক সা পরিমাণ কিশমিশ দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।” (বুখারি, হাদিসঃ ১৫০৬)

উক্ত হাদিসের বর্নণা অনুযায়ী দুইটি পরিমাপে ৫ টি জিনিস দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়। আর তা হলো; গম, যব, কিশমিশ, খেজুর এবং পনির। এই ৫ টি জিনিস গুলোর মধ্যে গমের পরিমাপ হলো অর্ধ সা আর বাকিগুলোর পরিমাপ এক সা। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো একটি দিয়ে এ ফিতরা আদায় করতে পারবেন। বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে তা তুলে ধরা হলো–

গম অথবা আটাঃ গম বা আটার পরিমাপ হবে অর্ধ সা, যা ৮০ তোলা সেরের মাপে ১ সের সাড়ে বারো ছটাক। আর কেজির হিসাবে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম। তবে ন্যূনতম পূর্ণ ২ সের/কেজির মূল্য আদায় করা উত্তম ৷ যার বর্তমান বাজারমূল্য ১১৫ টাকা।

খেজুরঃ খেজুর এর পরিমাপ হবে ১ সা। ফিতরা আদায় করার জন্য কেজির হিসাবে খেজুরের পরিমাপ হবে, ৩কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৬৫০ টাকা।

যবঃ খেজুর এর মতো ফিতরা আদায়ের জন্য যবের পরিমাপও হবে ১ সা। কেজির হিসাবে যবের পরিমান হবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩৯৬ টাকা।

পনিরঃ পনিরের পরিমাপও এক সা। কেজির হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজারমূল্য ২ হাজার ৬৪০ টাকা।

কিশমিশঃ এর পরিমাপও এক সা। কেজির হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজারমূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা।

শেষ কথা

আশা করছি আপনারা আমাদের আজকের এই আর্টিকেল থেকে ফিতরা দেওয়ার নিয়ম এবং সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাই আপনারা আপনাদের সম্পদের উপর নির্ভর করে সঠিক ভাবে ফিতরা আদায় করবেন। তাছাড়া আপনারা যদি আজকের এই আর্টিকেল বা ফিতরা সম্পর্কে আরও কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। ইনশাআল্লাহ্‌ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ্‌ হাফেয।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *