থাইরয়েড কি? থাইরয়েড এর লক্ষণ ও থাইরয়েডের ঝুঁকি কমাতে করণীয়

থাইরয়েড কি? থাইরয়েড এর লক্ষণ ও থাইরয়েডের ঝুঁকি কমাতে করণীয়

থাইরয়েড মূলত একটি প্রজাপতি আকৃতির অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি যেটা আমাদের গলার কাছে থাকে। এটা থাইরক্সিন নামে একটি থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। থাইরয়েড এর লক্ষণ গুলো হচ্ছে হৃদস্পন্দন, মেজাজ, শক্তি স্তর, বিপাক, হাড়ের স্বাস্থ্য, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি।

থাইরয়েড কি

থাইরয়েড কি

থাইওয়েড গ্রন্থি বা থাইরয়েড হল দুইটি লোব দ্বারা গঠিত একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যার অবস্থান গলার সামনে দিকে। থাইরয়েড গ্রন্থি ঘাড়ের দিকে শ্বাসনালীর চারপাশে আবৃত থাকে যা দেখতে অনেকটায় প্রজাপতির মতো। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ মূলত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করা।

শরীরে থাইরয়েড হরমোন উৎপন্ন কম হলে হাইপোথাইরয়েডিজম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিজম। থাইরয়েড এর সমস্যা হলে শরীরে অনেক রকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। থাইরয়েড কি থাইরয়েড এর লক্ষণ ও থাইরয়েডের ঝুঁকি কমাতে করণীয় কি? জানতে হলে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন।

থাইরয়েড এর লক্ষণ

থাইরয়েড এর লক্ষণ

থাইরয়েড রোগের প্রধান দুটি ধরন হল, হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপারথাইরয়েডিজম এছাড়াও কয়েকটি ধরন হচ্ছে প্রদাহ বা থাইরয়ডাইটিস, গলগন্ড ও ক্যানসার। নিচে থাইরয়েড এর লক্ষণ সমুহ দেওয়া হলো-

হাইপোথাইরয়েডিজম এর কয়েকটি লক্ষণ

হাইপোথাইরয়েডিজম এর হাইপো শব্দের অর্থ হলো কম। কোন কারণে থাইরয়েদ গ্রন্থি প্রয়োজনের তুলনায় কম হরমোন তৈরি করলে তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা বোঝার কিছু লক্ষণ হলো থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে বিপাক ক্রিয়া দেরিতে হয়। এছাড়া আরও কয়েকটি লক্ষণ গুলো হলো-

  • শরীরে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি
  • সব সময় দুর্বল বা ক্লান্তিবোধ
  • অনিয়মিত মাসিক বা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাসিক হওয়া
  • স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া
  • চুল ও ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া
  • অনেক দিন যাবত কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া
  • গর্ভবতী মহিলাদের বারবার গর্ভপাত হওয়া
  • শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত
  • মানসিক বিকাশে সমস্যাও দেখা দেয়
  •  শীত সহ্য করতে না পারা
  • রক্তে চর্বির মাত্রা বৃদ্ধি ও  স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া ইত্যাদি।

হাইপারথাইরয়েডিজম এর লক্ষণ গুলো

থাইরয়েড এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে হাইপারথাইরয়েডিজমও একটি অন্যতম লক্ষণ। হাইপারথাইরয়েডিজম হলো এমন একটি শারীয়বৃত্তীয় অবস্থা যখন দেহের থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত থাইরক্সিন হরমোন উৎপাদন করে।থাইরক্সিন হরমোন নিঃসরণ বেড়ে গেলে শরীরে যেসব লক্ষন দেখা দেয়-

  • দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
  • বুক ধরফর করা
  • শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে যাওয়া
  • গরম সহ্য করতে না পারা
  • ঘন ঘন পায়খানা হওয়া
  • হাত সহ সারা শরীর কাপুনি দেওয়া
  • চখ কোটর থেকে যেন বেড়িয়ে আসা এবং
  • ঘুম না হওয়া ইত্যাদি।

গলগণ্ড

গলগণ্ড

গলগণ্ড থাইরয়েড এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে খুবই পরিচিত একটি লক্ষণ। অনেক সময়ে থাইরয়েড গ্রন্থি নিজে থেকেই বড় হয়ে যেতে পারে, যাকে আমরা গলগণ্ড বলে থাকি। থাইরয়েড গ্রন্থি বিভিন্ন ভাবে বড় হতে পারে। আয়োডিনের অভাবে গলগন্ড রোগ হতে পারে। সাধারণত যারা লবণ কম খায় তাদের গলগণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও যারা সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে অনেক দূরে বা উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে তাদের ক্ষেত্রে ও গলগণ্ড হতে পারে।

যেহেতু আয়োডিন মানব শরীরে হরমোন তৈরির বিশেষ একটি উপাদান। আয়োডিন যদি কম থাকে গ্রন্থি চেষ্টা করবে শরীরের হরমোনকে স্বাভাবিক রাখতে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে গ্রন্থি আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাবে। যাকে হাইপারট্রোফি বলা হয়।

থাইরয়েড ক্যান্সার

থাইরয়েড ক্যান্সার

থাইরয়েড গ্রন্থির কোন অংশের কোষ সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেলে তাকে থাইরয়েড ক্যান্সার বলে।  থাইরয়েড গ্রন্থির কিছু অংশ ফুলে উঠা মানেই ক্যান্সার নয়। থাইরয়েড ক্যান্সারের কয়েকটি লক্ষণ হল; গোলার সামনের অংশ ফুলে উঠতে ও ফোলা অংশ টি অনেক শক্ত হতে পারে। গোলার নিচে একাধিক টিউমার বা উভয় পাশে টিউমার হতে পারে। ওজন কমে যায়। ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া, গলার স্বর কর্কশ হয়ে যাওয়া এবং কাশি হওয়া ইত্যাদি।

থাইরয়েড এর লক্ষণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ভাল কোন ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহন করুন ও তার নির্দেশ মতো জীবন পরিচালনা করুন।

থাইরয়েডের ঝুঁকি কমাতে করণীয়

থাইরয়েডের ঝুঁকি কমাতে করণীয়

থাইরয়েড রোগে নারী-পুরুষ, শিশু -বৃদ্ধ যে কোন সময় আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে মহিলাদের  মেনোপজ বন্ধ হওয়ার পর থেকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। থাইরয়েড এর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে। এছাড়া থাইরয়েড রোগের হাত থেকে বাঁচতে চিকিৎসার বিকল্প নেই। চিকিৎসা নেওয়ার পাশা-পাশি কিছু নিয়ম নীতি ও খাদ্ভ্যাভাস মেনে চলতে হবে।

থাইরয়েড এর ঝুঁকি কমাতে যেসব খাবার খাওয়া যাবে

থাইরয়েড এর ঝুঁকি কমাতে যেসব খাবার খাওয়া যাবে

কিছু কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো থাইরয়েড এর ঝুকি কমাতে সাহায্য করে। কেনোনা থাই রয়েডের সমস্যা দেখা দিলে কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাবারের তালিকায় যুক্ত করা এবং নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খাবার খাওয়া উপকারী। এগুলো দেহের থাইরয়েড হরমোন বাড়ানো বা কমানোর ওপরে প্রভাব রাখে। থাইরয়েড এর ঝুকি কমাতে যেসব খাবার খাওয়া যাবে তা হলো-

আয়োডিন যুক্ত খাবারঃ- থাইরয়েড রোগের অন্যতম কারন হচ্ছে আয়োডিনের অভাব। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির আয়োডিন যুক্ত লবন উৎপাদন করছে যা আমরা খুব সহজে পেয়ে থাকি। থাইরয়েড এর ঝুঁকি কমাতে আমাদের প্রতিদিন পরিমাণ মতো আয়োডিন যুক্ত লবণ খেতে হবে। তাছাড়া সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দুধ, পনির ইত্যাদি তে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন রয়েছে।

শাকসবজিঃ- থাইরয়েড রোগ থেকে সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিনের খাবারে সবুজ শাক-সবজি রাখুন। সবুজ শাক-সবজি তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ রয়েছে। যা শরীরের কার্যকারিতা বাড়ায় ও ক্ষতিকর রোগ জীবাণু বের করে দিয়ে থাইরয়েডের কার্যক্রম ধরে রাখে।

প্রোটিন সমৃগ্ধ খাবারঃ- শরীর কে সুস্থ্য রাখতে প্রোটিন জাতীয় খাবারের ভূমিকা অপরিসীম। দই একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।দইয়ে আয়োডিন এবং প্রোবায়োটিক রয়েছে যা থাইরয়েডের থাইরক্সিন হরমোন তৈরি করে স্বাস্থ্য ভাল রাখে।

সেলেনিয়ামঃ- এই খনিজ উপাদান থাইরয়েড হরমোনকে সক্রিয় করে। শরীরের কোষগুলো হরমোনকে কাজে লাগাতে পারে। তা ছাড়া এর রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা। সেলেনিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস হলো ব্রাজিল বাদাম, টুনা মাছ ও ডিম।

জিঙ্কঃ খাদ্যের জিঙ্ক উপাদান থাইরয়েড হরমোনকে সক্রিয় রাখে। এটি টিএসএইচ নামক হরমোন নিঃসরণ প্রভাবিত করে, যা মূলত থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে জিংকের অভাবে থাইরয়েডের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এর অন্যতম উৎস হলো চিংড়ি, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, কাঁকড়া, ঝিনুক ইত্যাদি।

থাইরয়েড এর ঝুঁকি কমাতে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না

থাইরয়েড এর ঝুঁকি কমাতে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না

কিছু খাবার যেমন থাইরয়েড সুরক্ষায় কাজ করে, তেমনি কিছু খাবার গ্রন্থিটিকে বিপদে ফেলতে পারে। বিশেষ করে এমনকিছু খাবার রয়েছে যা গ্রন্থিটিতে সমস্যা হলে খাওয়া উচিত নয়। এখানে থাইরয়েড রোগীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এমনকিছু খাবারের তালিকা দেয়া হলো।

সয়াবিনঃ- সয়াবিনে থাকা আইসপ্লাবিন থাইরয়েড হরমোন  তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সয়াবিন খেলে, থাইরয়েড সমস্যা অনেক গুণ বেড়ে যেতে পারে। তাই খাদ্য তালিকা থেকে সয়াবিন কে বাদ দিতে হবে।

ব্রকলি ও ফুলকপিঃ- থাইরয়েড এর লক্ষণ প্রকাশ পেলে ফুলকপি ও ব্রকলি না খাওয়াই ভাল। কারন এতে থাকা ফাইবার এবং অনান্য নিউট্রিসিয়ান্স থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে বাধা দিতে পারে।

ফ্যাট জাতীয় খাবারঃ- ফ্যাট জাতীয় খাবার শরীরে থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট মেডিসিন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই ঘি, মাখন, মেওনিজ, জাঙ্ক ফুডে থাকা ফ্যাট খাবার খেলে তা থাইরয়েড গ্ল্যান্ড এ প্রভাব বিস্তার করে।

সফট ড্রিংকসঃ- থাইরয়েড এর লক্ষণ দেখা দিলে মিষ্টি জাতীয় খাবারের পাশা-পাশি সফট ড্রিংকস শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম থাকে তাছাড়া সফট ড্রিংকস খেলে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে বাধা প্রদান করে থাকে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পেরেছেন থাইরয়েড কি? থাইরয়েড এর লক্ষণ ও থাইরয়েডের ঝুঁকি কমাতে করণীয়। যদি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আর হ্যাঁ আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তাহলে অন্যদের কে শেয়ার করবেন যাতে তারা থাইরয়েড কি? থাইরয়েড এর লক্ষণ ও থাইরয়েডের ঝুঁকি কমাতে করণীয় কি সে সম্পর্কে জানতে পারবে। এই রকম আরও বিভিন্ন রোগের আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

থাইরয়েড সম্পর্কে আরও জানতেঃ- ভিজিট করুন

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মধ্যেও থাকতে পারে হাইপোথাইরয়েডিজম এর লক্ষণ – জেনে নিন হাইপোথাইরয়েডিজম কেন হয় ও প্রতিকার