ডোপ টেস্ট কি? ডোপ টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন

ডোপ টেস্ট কি? ডোপ টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন

মাদকের মত অভিশাপের বিরুদ্ধে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে ডোপ টেস্ট। আর ডোপ টেস্টকে ড্রাগ টেস্টও বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে পুরো বিশ্বেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাদকাসক্তির প্রকোপ খুব দ্রুত বাড়ছে। আর মাদকের ব্যবহার প্রায় সকল দেশেই আইনত দন্ডনীয়। সেই জন্যই মাদক সেবনকারীদের শনাক্ত করতে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই ডোপ টেস্ট করানো হয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ডোপ টেস্ট করার নিয়ম চালু করা হচ্ছে। তবে অনেকেরই অজানা আসলে কী এই ডোপ টেস্ট। আর কেনই বা করা হয় এই পরীক্ষা। তাই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের জানাবো ডোপ টেস্ট কি, কেনো এই পরীক্ষা করা হয় এবং কোন কোন মাদক সেবন করলে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে তা ধরে পড়ে। চলুন তবে শুরু করা যাক-

ডোপ টেস্ট কি

ডোপ টেস্ট কি?

ডোপ টেস্ট হলো কোন প্রাণীর শরীরের কোন অংশের নমুনা থেকে ঐ প্রাণীর শরীরে কোন নির্দিষ্ট মাদকের উপস্থিতি আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। যেমন অনেক সময় কোন খেলোয়াড় বা খেলায় অংশ নেয়া অন্যান্য প্রাণীর (যেমন-কুকুর, ঘোড়া) কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকারের ড্রাগ ব্যবহার করে থাকে। ফলে তারা স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় ভালো ফলাফল করে। আর তাই ড্রাগ বা মাদক সেবনকারীদের সনাক্ত করার জন্য পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই ব্যবহৃত পদ্ধতিকে ডোপ টেস্ট বলা হয়।

অথবা আমরা বলতে পারি, কোনো ব্যক্তি আদৌ মাদকাসক্ত কি না তা যাচাইয়ের জন্য যে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয় তাকেই ডোপ টেস্ট বলে। কারণ, যারা নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের শরীরে ওই নেশাজাতীয় পদার্থের কিছুটা হলেও থেকে যায়। আর সেটিই ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে। আবার দেখা যায়, কখনো কখনো ছাত্রছাত্রীরা তাদের পড়াশোনা মনে রাখার জন্য বিভিন্ন ড্রাগ সেবন করে। এমনকি বিভিন্ন চাকরীক্ষেত্রের কর্মজীবীরাও কাজে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য ড্রাগ সেবন করে থাকে। যেগুলোর পরবর্তী ফলাফল প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ভয়াবহ। সেকারণে এসকল মাদকের ব্যবহার প্রায় সকল দেশেই আইনত দন্ডনীয়।

ডোপ টেস্ট কেন ও কাদের করা হয়

ডোপ টেস্ট কেন ও কাদের করা হয়?

বর্তমানে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে একেবারে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সব বয়সীরাই এখন মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আর এই মাদকাসক্তদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। বর্তমানে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা এখন সমাজের জন্য হুমকির কারণ। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি বেশ হুমকি স্বরুপ। মূলত এসব কারণেই ডোপ টেস্ট করানো হয়। এছাড়া আরোও অনেক কারণে ডোপ টেস্ট করানো হয়। যেমনঃ-
  • মাদকসেবী শনাক্ত করতে
  • খেলোয়াড়দের জন্য
  • সরকারি, আধা-সরকারি চাকরিতে প্রবেশকালে
  • বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে
  • ট্রাফিক আইনের জন্য
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সময়
  • বিদেশ যেতে চাইলে
  • ফরেনসিকের প্রয়োজনে
  • অস্ত্রের লাইসেন্স করাতে
  • আইনি জটিলতা এড়াতে ইত্যাদি।

ডোপ টেস্ট কীভাবে করা হয়?

ডোপ টেস্ট কীভাবে করা হয়?

বিশ্বের অনেক দেশেই সাধারণত ডোপ টেস্টের জন্য মূত্র থেকে মাদকের উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য বানিজ্যিকভাবে তৈরী করা টেস্ট কিট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় এই টেস্টের ফলে  পজিটিভ আসলে আরেকটি টেস্ট করা হয়। যেটি তুলনামূলকভাবে প্রাথমিক টেস্টের চেয়ে নির্ভুল ও কিছুটা সময়সাপেক্ষ। ডোপ টেস্ট কীভাবে করা হয় নিম্নে এই সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হলো-

  • ইউরিন বা মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ডোপ টেস্ট করা হয়।
  • কোনো মাদক সেবনের পর মুখের থুথু পরীক্ষা করে এর উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়। যেমন- গাজা সেবন করার পরবর্তী ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত মুখের লালা পরীক্ষা মাধ্যমে এই মাদক পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়।
  • আপনার শরীরে মাদকের কোনো উপস্থিতি আছে কি না তা পরীক্ষার অন্যতম এক উপায় হলো রক্ত পরীক্ষা। শরীরের রক্ত টেস্টের মাধ্যমে মাদকের উপস্থিতির সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।
  • এমনকি ডোপ টেস্টের ক্ষেত্রে চুল পরীক্ষা করার মাধ্যমেও মাদক শনাক্ত করা হয়। যেমনঃ- কেউ যদি মাদক গ্রহণ করে তার পরবর্তী ৯০ দিন পরেও তার চুল পরীক্ষা করার মাধ্যমে সহজেই ধরা পড়ে।
  • আবার ট্রাফিক পুলিশরা অ্যালকোহল ডিটেক্টরের মাধ্যমে সন্দেহভাজন চালকদের নিঃশ্বাস পরীক্ষার মাধ্যমে মাদক শনাক্ত করে থাকেন।

ডোপ টেস্টের সময় কোন কোন ড্রাগস ধরা পড়ে

ডোপ টেস্টের সময় কোন কোন ড্রাগস ধরা পড়ে?

বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর যাদেরকে সংক্ষেপে (ডিএনসি) বলা হয়। তাদের প্রণীত এক খসড়া অনুযায়ী ডোপ টেস্টে নির্দিষ্ট কিছু মাদক পরীক্ষা করা হয়। যেমন- ডায়াজেপাম, লোরাজেপাম, অক্সাজেপাম, টেমাজেপাম, কোডিন, মরফিন, হেরোইন, কোকেন, গাজা, ভাং, চরস, অ্যালকহোল বা মদ, ফেনিসিডিল, ইয়াবা ও এলএসডি। ডিএনসিয়ের প্রণীত খসড়া অনুযায়ী ডোপ টেস্টে নির্দিষ্ট কিছু ড্রাগ পরীক্ষা করা হয়। আর এসকল ড্রাগের রাসায়নিক উপাদান কারো দেহে পাওয়া গেলে তবেই তার ডোপ টেস্টের ফলাফল পজিটিভ আসতে পারে। ড্রাগগুলোর তালিকা নিম্নে লেখা হলোঃ-

  • মেথামফেটামিনঃ- এটি মূলত ইয়াবার মূল উপাদান। মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন মিশ্রিত করে ইয়াবা তৈরী করা হয়।
  • অ্যালকোহলঃ- ডোপ টেস্টে ইথাইল অ্যালকোহল পরীক্ষার মাধ্যমে সকল প্রকার মদ ও মদজাতীয় পদার্থ শনাক্ত করা হয়।
  • ক্যানাবিওনিডসঃ- এ ধরণের মাদকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গাঁজা বা মারিজুয়ানা, ক্যান্নাবিস, হাশিস।
  • বেনজোডায়াজেপাইনসঃ- এর মাঝে উল্লেখযোগ্য মাদক হচ্ছে ডায়াজেপাম, ক্লোনাজেপাম, মিডাজোলাম।
  • অপিওইডসঃ- এ ধরনের মাদকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হেরোইন, মরফিন, কডেইন।

ডোপ টেস্ট করার নিয়ম

ডোপ টেস্ট বেশ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে করা হয়। যেমনঃ প্রথমে যে ব্যক্তির ডোপ টেস্ট করানো হয় তার পরিচয় জমা নেওয়ার জন্য একটি ফরম পূরণ করতে হয়। ফর্মে তার নাম, ঠিকানা, বয়স, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদির তথ্য দেওয়া থাকে।ডোপ টেস্টের ফরম পূরণ করার পর নমুনা জমা দিতে হয়। তারপর ওই নমুনা একজন বিসিএস ক্যাডার ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। নমুনাতে যদি কোনো মাদক ধরা পড়ে তাহলে ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসবে। আর ওই ব্যক্তি যদি মাদকাসক্ত না হন অর্থাৎ মাদক সেবন না করেন তাহলে তার নমুনা পরীক্ষায় ডোপ টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে।

ডোপ টেস্ট থেকে বাঁচার উপায়

ডোপ টেস্টের পজিটিভ ফলাফল অনেক ক্ষেত্রেই অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় এর জন্য ক্যারিয়ারও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ডোপ টেস্ট থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে মাদক সেবন না করা। আর কেউ যদি মাদকাসক্ত থাকে তাহলে ডোপ টেস্টের আগেই তাকে মাদক গ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে। আর যদি মাদক গ্রহণ করেই থাকে তাহলে ঐ মাদক শরীর থেকে চলে যাওয়ার পর ডোপ টেস্ট করাতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাদক গ্রহণ বন্ধের ৩ মাস বা তারও পরে ডোপ টেস্ট করানো উচিত। কারণ, এতে ডোপ টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকবে।

ডোপ টেস্ট কোথায় করা হয় ও কত খরচ হয়?

ডোপ টেস্ট কোথায় করা হয় ও কত খরচ হয়?

ডোপ টেস্ট দেশের সব সরকারি হাসপাতালেই করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ডোপ টেস্টের জন্য একটি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০০ টাকা। এবং নন-স্পেসিফিক পরীক্ষা যেমন- বেঞ্জোডায়াজেপিন, এমফেটামাইনস, অপিয়েটস ও কেননাবিনেয়েডস- এই চারটির প্রতিটির ফি ১৫০ টাকা এবং অ্যালকোহল পরীক্ষার ফি ৩০০ টাকা। এছাড়াও বাংলাদেশের বেশ কিছু স্থানে ডোপ টেস্ট শনাক্তকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেমন- রংপুর, ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, রাজশাহী, পাবনা, সিলেট, খুলনা, বগুড়া, গাজীপুর, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, যশোর, নরসিংদী ও টাঙ্গাইল। এই জেলাগুলোতে ডোপ টেস্টের জন্য মিনিল্যাব বসানো হয়েছে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ, আশা করি আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনারা ডোপ টেস্ট সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন। এখানে আমি ডোপ টেস্ট কি, এটা কেন বা কাদের করানো হয়, এটি কীভাবে করা হয়, কোন কোন মাদক সেবন করলে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে এবং এই ডোপ টেস্ট থেকে বাঁচার উপায় কি সেই সবকিছু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা নিজেও মাদক সেবন করবো না এবং অন্যকেও মাদক সেবন করা থেকে বিরত রাখবো। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *