green-tea

জেনে রাখুন গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক নিয়ম

পুরো পৃথিবী জুরে স্বাস্থ্য সচেতনায় বহুল ব্যবহৃত অন্যতম একটি পানীয়ের নাম হচ্ছে গ্রিন টি। গ্রিন টি এর উপকারিতা নিয়েও চলছে জোর প্রচারণা। শুধু আমেরিকা, চিন, জাপান, কোরিয়াতেই নয় বরং বাংলাদেশেও আজকাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গ্রিন টি।

গ্রিন টি নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা করার ফলে কম বেশি সবাই জেনে গিয়েছে যে সাধারন চা এর চাইতে গ্রিন টি এর উপকারিতা অনেক বেশি। কিন্তু আপনি কি জানেন গ্রিন টি কি ভাবে স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে? অথবা গ্রিন টি কি কি উপকার করে! গ্রিন টি এর উপকারিতা জেনে নেওয়ার আগে চলুন একনজরে গ্রিন টি কি সেসম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্য জেনে নেই।

গ্রিন টি কি?

গ্রিন টী মূলত ‘ক্যামেলিয়া সিনেসিস’ উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত এক প্রকার স্বাস্থ্যকর চা। গ্রিন টি তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা নির্দ্বিধায় শরীর কে ফিট রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া এটি শরীরের পক্ষে অত্যান্ত ভাল বিধায় যাদের দিনে দুই তিন কাপ চা খাওয়ার অভ্যাস আছে তারা গ্রিন টি পান করতে পারেন।

এক জরিপে দেখা গিয়েছে, পৃথিবীতে মোট ব্যবহৃত চা এর পরিমাণের প্রায় ২০ শতাংশই গ্রিন টি বা সবুজ চা। প্রাচিনকাল ধরে চিন ও জাপানের অধিবাসীরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গ্রিন টি ব্যবহার করে আসছে।

গ্রিন টি বা সবুজ চা এর পুষ্টিগুন

যে কোন মিষ্টি ছাড়া গ্রিন টি ক্যালোরি মুক্ত হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। এক কাপ সবুজ চা তে ২০ থেকে ২৫ মিলি গ্রাম ক্যাফেইন রয়েছে। এছাড়া গ্রিন টি পৃথিবীতে প্রাপ্ত সর্বাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃগ্ধ স্বাস্থ্যকর পানীয়। গ্রিন টি মোট ওজনের প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশই পলিফেনল। আর এই পলিফেনলের ৬০-৮০ শতাংশে ক্যাটেচিন বিদ্যমান রয়েছে। ক্যাটেচিন দেহের কোষের ক্ষতিসাধনে বাধা প্রদান করে।

গ্রিন টি এর উপকারিতা

গ্রিন টি এর উপকারিতা

গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সবারই কম বেশি জানা উচিৎ। চলুন জেনে নেই গ্রিন টি এর উপকারিতাগুলো কি কি:-

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে

গ্রিন টি বা সবুজ চা তে পলিফেনল নামক উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। এই পলিফেনল উপাদানে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা টিউমার প্রতিরোধ করে এবং ক্যান্সারের কোষ কে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। গ্রিন টি বা সবুজ চা অনেক আগে থেকেই স্তন ক্যান্সার, প্রোটেস্ট ক্যান্সারের কোষ কে মেরে ফেলতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য আপনাকে দিনে ২-৩ কাপ গ্রিন টি বা সবুজ চা পান করতে পারেন।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে

মানব শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল থাকলে রক্তের বিভিন্ন নালীতে গিয়ে জমা হয়ে রক্ত নালী ব্লক করে দিতে পারে। এতে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রতিদিন গ্রিন টি বা সবুজ চা পান করলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল গুলো আস্তে আস্তে কমে যায় এবং রক্তনালী ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না ফলে মারাত্মক হৃদরোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে গ্রিন টি এর উপকারিতা

মুখের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যার আক্রমনের কারণে আমাদের মুখ গহব্বরে প্রদাহ ও দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। ব্যাকটেরিয়া আক্রমনের ফলে দাঁতে পোকা ধরে। দাঁতে পোকা ধরা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে নিয়মিত গ্রিন টি পান করা উচিৎ।

ওজন কমাতে কার্যকারী

ওজন কমাতে সবচেয়ে কার্যকারি ভূমিকা পালন করে গ্রিন টি। কারন গ্রিন টি প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের মেটাবলিজম বাড়টাতে সহায়তা করে। গ্রিন টি প্রতিনিয়ত পান করলে শরীরের মেদ আস্তে আস্তে কমে যায়। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন তাহলে অবশ্যই গ্রিন টি বা সবুজ চা পান করতে হবে। চেষ্টা করবেন যে কোন শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করার আগে গ্রিন টি পান করে নেওয়ার জন্য।

ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে সাহায্য করে

গ্রিন টি এর সাথে অন্যান্য উপাদান যেমন অর্ধেক কলা, এক চামচ মধু, এক চামচ টক দই ভাল ভাবে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে কিছুখন মুখে লাগিয়ে রাখি। ১০-১৫ পর মুখ ধুয়ে নেই। দেখবেন মুখের ত্বক অনেকটায় ময়শ্চারাইজ করছে।

চুল শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে

চুল শক্ত ও মজবুত করতে গ্রিন টি এর উপকারিতা অনেক। ৩ থেকে ৪ টি গ্রিন টি প্যাকেট নিয়ে এক গ্লাস পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন, মাথায় শ্যাম্পু করার পর গ্রিন টিভেজানো পানি মাথার ত্বকে এবং চুলে আলতো ভাবে মালিশ করুন। ১-২ সপ্তাহের মধ্যেই চুল পড়া সমস্যা বন্ধ হয়ে যাবে ও চুলের গোরা শক্ত হবে।

গ্রিন টি এর উপকারিতা

উপরে গ্রিন টি এর উপকারিতা বর্ণনা করা হলেও অপকারিতা বর্ণনা করা হয় নি। জেনে নেওয়া যাক গ্রিন টি এর কয়েকটি অপকারিতা সমূহ;

পেট ব্যথা

আমরা ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে গ্রিন টি পান করে ফেলি যা মোটেও ঠিক নয়। কারন গ্রিন টি তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ট্যানিক উপাদান। ট্যানিক উপাদানটি আপনার পাকস্থলীর অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। অ্যাসিডিটি বাড়ার কারণে আপনার পেট ব্যথা অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আলসার বাড়িয়ে তোলে

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর খালি পেটে বা দিনের যে কোন সময় খালি পেটে গ্রিন টি কখনোই পান করা উচিৎ নয়। কেননা খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে পেপটিক আলসার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আয়রনের শোষণের ক্ষমতা কমে যায়

শরীর সুস্থ্য রাখতে আয়রনের প্রয়োজন অপরিসীম। আয়রন মানব শরীরে রক্ত শোষণ করতে সক্ষম। কিন্তু খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন শোষণ করতে পারে না। তার ফল শ্রুতিতে আয়রন শোষণের ক্ষমতা কমে যায়। যারা রক্ত শুন্যতায় ভুগেন তাদের গ্রিন টি একেবারেই খাওয়া উচিৎ নয়।

রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে

গ্রিন টি তে রয়েছে ক্যাফেইন অ্যাড্রিনাল নামক একটি উপাদান। সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে ক্যাফেইন অ্যাড্রিনাল নামক উপাদানের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

গ্রিন টি পান করার সঠিক সময়

গ্রিন টি থেকে উপকার পেতে হলে অবশ্যই সঠিক সময়ে গ্রিন টি পান করতে হবে। সঠিক সময় হল;

  • সকালে নাস্তা করার পর
  • রাতে ঘুমাতে যাওয়ার কিছুখন আগে
  • ব্যায়াম করার আধা ঘন্টা আগে এবং
  • খাবার খাওয়ার এক ঘন্তা আগে ও খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা পরে।

পরিশেষে বলতে চাই, গ্রিন টি মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটা পানীয়। কিন্তু প্রত্যেকটি জিনিস গ্রহণ করার আগে আপনাকে এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে ভাল ভাবে জানার চেষ্টা করতে হবে।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অ্যাপেন্ডিসাইটিস কেন হয়? জেনে নিন অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার