আদা মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে অন্যতম। আদা আমাদের প্রায় সবার বাড়িতেই থাকে। তবে আমাদের অনেকেরই আদার উপকারিতা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। এবং প্রতিদিন খালি পেটে আদা খাওয়ার প্রভাব কি হতে পারে সেটিও জানা নেই। আজকের এই আর্টিকেলে আমি আদার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি।
আদা সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য
আদা হলো একটি ফুলেল উদ্ভিত। এর ইংরেজি নাম Ginger এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Zingiber officinale। এর ভেতরের রঙ ফিকে হলুদ। আদা ছোট রাইজোম জাতীয় বীরুৎ। এদের রাইবোজোম ঝাঁঝালো স্বাদ ও সুগন্ধীযুক্ত। এদের গাছটি ২ থেকে ৩ ফুট উচু হতে পারে।
আদা মানুষের মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।এটি খাদ্যশিল্পে, আচার, ঔষধ, পানীয় তৈরিতে ও সুগন্ধী তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। আদাকে মসলা শিল্পের মধ্যে অন্যতম হিসেবে ধরা হয়।
মহা উপকারি আদার ইতিহাস
আদা হলো এশিয়া থেকে রপ্তানী করা প্রথম মসলাগুলোর মধ্যে একটি। যা মূলত মসলা বাণিজ্যের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছেছিল। রোমান এবং প্রাচীন গ্রীসরা এটি ব্যবহার করতো। ভারত, চীন এবং জাপানিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী এটি ঐতিহ্যগত ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
আদার উপকারিতা
আদা যদিও খুব সুস্বাদু নয়, তবে এর রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। জিঞ্জেরল, আদার মূলের একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এতে আরো রয়েছে শোগাওল, জিঞ্জিবেরিন এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ। চলুন দেখে আসা যাক আদার উপকারিতাগুলোঃ-
আদা বমি বমি ভাব কমায়
বমি বমি ভাব কমাতে আদা অনেক কার্যকরী। আমাদের অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে উঠেই বমি বমি ভাব হয়, এসময় এক টুকরা আদা সাহায্য করতে পারে আপনার বমি বমি ভাব কমাতে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় এটি আপনাকে সাহায্য করবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে।
ওজন কমাতে আদার ভুমিকা
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আদা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আদাতে রয়েছে অধিক মাত্রায় জিনজেরোল, যেটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অয়ান্টি-ইনফ্লেমটারির শক্তিশালী উপাদান। যা দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
লোয়ার ব্লাড সুগার কমায়
লোয়ার ব্লাড সুগার কমাতে আদা উপকারী। আদা আমাদের শরীরকে আরও ভালোভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে সাহায্য করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা উন্নত করতে সহায়তা করে।
আদা পিরিয়ডের ব্যাথা কমায়
আদা পিরিয়ডের ব্যাথা কমাতে দারুন কার্যকরী। ঋতুস্রাবের ব্যাথা কমাতে আদা পাউডার সাহায্য করতে পারে। অথবা আদা দিয়ে চা খেলেও ব্যাথা নিমিষে গায়েব হয়ে যায়। অর্থাৎ আদা মাসিকের ব্যথার বিরুদ্ধে কিছুটা ওষুধের মতো কাজ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আদা
আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আদা শরীরের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ফুসফুসের রোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
আদায় জিনজেরোল থাকে যা ক্যান্সারের প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এতে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগগুলো থাকার কারনে এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
আদা মুখ সুস্থ রাখে
আদায় জিনজেরোল নামক উয়াপদানটি মুখের ব্যাকটেরিয়াকে বৃদ্ধি থেকে বিরত রাখে। এবং এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল শক্তি আপনার হাসিকেও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
কোলেস্টরল কমাতে আদা
আমাদের দেহে কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে আদা খুবই কার্যকরী। ৩ মাস ধরে প্রতিদিন ৫ গ্রাম আদা খেলে আমাদের দেহের এলডিএল কোলেস্টরলের মাত্রা গড়ে ৩০ পয়েন্ট কমে যায়।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
আদা তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি আমাদের দেহের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এটি পরিপাকতন্ত্রের নড়াচড়া বাড়াতে সাহায্য করে ফলে আমরা যা খাই এনজাইমগুলো তা ভেঙ্গে দিয়ে খাবার হজম করতে সহায়তা করে।
প্রতিদিন খালি পেটে আদা খেলে প্রভাব
আদা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আর প্রতিদিন খালি পেটে আদা খেলে পাওয়া যায় নানা ধরনের উপকার। চলুন দেখে আসা যাক কি কি উপকার পাওয়া যায় খালি পেটে আদা খেলেঃ-
- আদা পেশীর ব্যাথা কমাতে কার্যকরী।
- ত্বককে স্বাস্থজ্জ্বল রাখে।
- অয়ান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরে প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।
- বমি বমি ভাব দূর হয়।
- মলত্যাগের গতি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।
- ওজন কমাতে সহায়তা করে।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে
- হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস রোধে সাহায্য করে।
- কাশি কমায়। কফ দূর করতে সহায়তা করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহ্যতা করে।
আমাদের প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় আদা একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে কাজ করে। এর গুণাগুণে আমরা আমাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তাই পরিবার ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিদিন খালি পেটে আদা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
Leave a Comment