সাধারানত আমরা ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস পালন করে থাকি। ১৪ ই ফেব্রুয়ারী হল ভালোবাসা বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে নামে পরিচিত। বর্তমান বাংলাদেশে এই দিন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তরুন সমাজের কাছে। এই দিনে অনেকে অনেক ভাবে উজ্জাপন করে থাকে। কেউ তার প্রিয় মানুষকে ফুল দিয়ে ভালোবাসার সন্মান জানিয়ে এই দিন শুরু করে। আবার কেউ বাবা মাকে ফুল দিয়ে সন্মান ও শ্রদ্ধা জানায়। এই ভালোবাসা দিবস পালন করার আয়োজন হিসেবে সামাজিক গণমাধ্যম খুব বড় একটা ভূমিকা পালন করে। বলতে গেলে সামাজিক গণমাধ্যম গুলিতে ভালবাসার জোয়ার বইয়ে যায়।
আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচনা করবো ভালোবাসা দিবস কিভাবে এলো এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আমরা কেন উজ্জাপন করবো?
যেভাবে এলো ভালোবাসা দিবস
১৪ ই ফেব্রুয়ারী ভালবসা দিবস। বিশ্ব জুড়ে নানা আয়োজনে এ দিনটি উজ্জপিতপ হয়ে থাকে। অনেকে এই দিনটি প্রিয় মানুষ, স্বামী স্ত্রী, বাবা মা আত্মীয় স্বজন দের সাথে উজ্জাপন করে থাকে। দিনটি সবায় উজ্জাপন করলেও আমরা অনেকেই জানি না ভালোবাসা দিবস আসলো কিভাবে। খ্রিষ্টানদের ইতিহাসে ৫০ জনের মতো ভ্যালেন্টাইন নামক ব্যক্তির নাম খুজে পাওয়া যায়। তার মধ্যে ২জন ভ্যালেন্টাইন ছিল অন্যতম যাদের নাম খ্রিষ্টানদের ইতিহাসে খুজে পাওয়া যায়।
ক্যাথলিক চার্চের শুরুর দিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক এক বা একাধিক খ্রিষ্টীয় ইতিহাসে শহিদ হওয়া কে সন্মান জানাতে উৎসব হিসেবে দিনটি উজ্জাপন করা হত। সময়ের ব্যাবধানে এই দিনটি ভালোবাসা, সংস্কৃতি, কালচার, ইত্যাদিতে রুপ নেয়। ভালোবাসা দিবস প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেকের রয়েছে অনেক মত। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে তৃতীয় শতকে এক পাদ্রির শহীদ হওয়ার ঘটনা। রোমান সম্রাট ছিল তখন দ্বিতীয় ক্লাডীয়াস।
তখন তারা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করেছিল। যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে পরাজিত করতে তিনি সেনাবাহিনি কে আরও বড় করার নির্দেশ দিলেন। ওই সময় তরুণেরা যুদ্ধ করার অনিচ্ছা দেখায়। তখন ক্লাডিয়াস ভাবলেন, সঙ্গী না থাকলেই যুদ্ধে যোগদান করবে তরুণেরা। তাই তিনি বিয়ে করা নিশেধ করলেন। তখন সম্রাটের চোখ ফাকি দিয়ে পাশে দারালেন এক পাদ্রি যার নাম ভ্যালেন্টাইন। তিনি গোপনে তরুণদের বিয়ে দিয়ে দেন।
কিন্তু সম্রাটের চোখ বেশি দিন ফাঁকি দিতে পারলেন না, ধরা পড়লো কিছুদিনের মধ্যে। শুরু হল ভ্যালেন্টাইন এর কারাবন্দি জীবন। মুক্তির পথ জানা না থাকলেও প্রায় প্রতিদিন তরুন তরুণীরা দেখতে যেত তাকে। ধর্মযাজক হয়েও এক সময় রীতিনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেই তরুণীর প্রেমে মজেন ভ্যালেন্টাইন। ২৬৯ খ্রিতাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাসির মঞ্চে যাওয়ার আগে প্রেয়সীকে ভ্যালেন্টাইন একটি চিঠি লেখেন। যার শেষটা এমন ছিল ‘তোমার ভ্যালেন্টাইনের কাছ থেকে ভালোবাসা।’
অবশেষে, ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে রোমের বাদশা পোপ জেলুসিয়াস ভ্যালেন্টাইন অর্থাৎ ভালোবাসা দিবস ঘোষণা করেন। আর এখান থেকেই ভালোবাসা দিবসের সৃষ্টি হয়।
তবে এটি নিয়েও প্রাচীন কালের মানুষেরা দ্বিমত পোষণ করে। তারা মনে করতো ১৪ই ফেব্রুয়ারী পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা বছরের ২য় মাসে ২য় সপ্তাহে ডিম পাড়তে বসে। আবার অনেকে বলে এদিনে পাখিদের মিলন ঋতু শুরু হয়।
ভ্যালেন্টাইন’স ডে কীভাবে শুরু হয়েছিল?
প্রথম ভ্যালেন্টাইন’স ডে ছিল ৪৯৬ সালে। একটি নির্দিষ্ট দিনে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালনের বিষয়টি বেশ প্রাচীনকালের ঐতিহ্য, যা রোমান উৎসব থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। রোমানদের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে লুপারকালিয়া নামে একটি উৎসব ছিল – আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বসন্ত মৌসুম শুরু হওয়ার সময়। উদযাপনের অংশ হিসাবে ছেলেরা একটি বাক্স থেকে মেয়েদের নাম লেখা চিরকুট তোলেন। যে ছেলের হাতে যেই মেয়ের নাম উঠত, তারা দুজন ওই উৎসব চলাকালীন সময়ে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড থাকতেন বলে মনে করা হয়।
অনেক সময় ওই জুটিই বিয়েও সেরে ফেলতেন। পরবর্তী সময়ে, গির্জা এই উৎসবটিকে খ্রিস্টান উৎসবে রূপ দিতে চেয়েছিল। একইসাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের স্মরণে এই উৎসব উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।ধীরে ধীরে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামটি মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করে। আর মানুষ তার ভালবাসার মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশের জন্য এই নামটি ব্যবহার করা শুরু করে।
ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস। প্রত্যেক বছর এইদিনে প্রেমিক প্রেমিকারা তাদের প্রেম দিবস পালন করে থাকে। প্রেমিক প্রেমিকরা যেদিন ই দেখা করে সেইদিন তাদের প্রেম দিবস। কিন্তু ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালোবাসার দিন হিসেবে আরও বেশি আবেগ প্রবনতা কাজ করে। শুধু প্রেমিক প্রেমিকা নয় এই দিনে বাবা মা, স্বামী স্ত্রী সবায় মিলে একটি ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এই দিন উপলক্ষে বিনদনের জন্য সবায় পার্ক সহ বিভিন্ন যায়গা মেতে ওঠে আনন্দে। সারা বিশ্বে এই দিনটি নানা ভাবে উজ্জাপিত হয়ে থাকে। এদিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে বাংলাদেশ সহ অনেক দেশেই দিন টি ছুটির দিন নয়। ছুটির দিন না থাকেও বাঙ্গালীরা এই দিন নানা ভাবে উজ্জাপন করে থাকে।
তবে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা কততুকু যুক্তিযুক্ত তা নির্ভর করে নিজের বিবেক/ব্যাক্তিগত মানসিকতার ওপর। এই দিনটি প্রেম ও আবেগ প্রকাশ করার একটি উপায় হিসেবে বিশ্বব্যাপি গৃহীত হয়েছে। তবে এটি সবার জন্য সত্য নয় কিছু কিছু সচেতন মানুষ রয়েছে যারা মনে করে ভ্যালেন্টাইন ডে বলে কিছু নেই। ভালোবাসা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন লাগে না। ভালোবাসা সব দিনই প্রকাশ করা যায়। সুতরাং আমি বলবো ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত না নির্ভর করবে আপনার ব্যাক্তিগত মানসিকতা ও মূল্যবোধের ওপর।
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে ভালোবাসা দিবস কিভাবে এলো এবং এটি পালন করা কতটুকু যোক্তীযুক্ত সেটি নিয়ে এই আর্টিকেলে আমি আলোচনা করার শ্রেষ্ঠা করেছি। আশা করছি আপনারা খুব সহজেই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কে আরও জানতেঃ- wikipedia.org
Leave a Comment