মাউন্ট এভারেস্ট । মাউন্ট এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত ও বিস্তারিত সকল তথ্য

মাউন্ট এভারেস্ট নিয়ে তো ছোটবেলা থেকেই আমরা কমবেশি অনেক কিছুই জানি। এটি আসলে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গের অবস্থান এশিয়ার নেপাল ও চীনের সীমানায়। এভারেস্ট বিজয়ী মূসা ইব্রাহিম জানিয়েছেন এভারেস্ট শৃঙ্গের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট। এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার। জর্জ এভারেস্টের নামানুসারে এই চূড়াটির নামকরণ করা হয়।

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। তিব্বতি ভাষায় এর নাম চোমোলুংমা আর নেপালে সাগরমাথা। এভারেস্ট নিয়ে অনেক তথ্য রয়েছে যেগুলো আমরা কম-বেশি সবাই জানি। আজকে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো মাউন্ট এভারেস্ট, মাউন্ট এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত ও এর বিস্তারিত সকল তথ্য সম্পর্কে। চলুন তবে শুরু করা যাক-

মাউন্ট এভারেস্ট

মাউন্ট এভারেস্ট

হিমালয় পর্বতমালার মাউন্ট এভারেস্ট হলো বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এভারেস্ট পর্বত বা মাউন্ট এভারেস্ট যা নেপালে সগরমাথা এবং তিব্বতে চোমোলাংমা নামে পরিচিত। আজ থেকে প্রায় ৫৭ বছর আগে এই শৃঙ্গে মানুষের পায়ের প্রথম চিহ্ন পড়েছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার হলেও পৃথিবীর কেন্দ্র হতে এই শৃঙ্গের দূরত্ব সর্বাধিক নয়। তবে , তুষারাবৃত অবস্থায় এর উচ্চতা দাঁড়ায় ৮৮৪৮.৮৬ মিটার।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, মাউন্ট এভারেস্ট হল সেই প্রাসাদ যেখানে পাঁচ বছর বয়সী এক দেবী বাস করেন। তিব্বতি ভাষায় মাউন্ট এভারেষ্টের নামের অর্থ ‘পৃথিবীর মা’। ১৮৫৮ সালের শুরুর দিকে, ভারতীয় জরিপ কর্মকর্তা ও হিমালয় পরিমাপের দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন পরিচালক জর্জ এভারেস্টের নামানুসারে এই চূড়াটির নামকরণ করা হয়। এ নামেই বিশ্বে এটি অধিক পরিচিতি পায়।

মাউন্ট এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত

মাউন্ট এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল হিমালয় পর্বতমালার মাউন্ট এভারেস্ট। এটি হিমালয় অঞ্চলে, চীন-নেপাল সীমান্তের প্রায় 28 ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং 87 ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। হিমালয়ের মহালঙ্গুর হিমাল পর্বতমালায় এর অবস্থান। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,৮৪৮ মিটার ৮৬ সেন্টিমিটার উঁচু, যা এটিকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত করে তোলে। এভারেস্টে আরোহণের জন্য সাধারণত দুটি পথ বেছে নেন। একটি হলো নেপালের দক্ষিণ রুট এবং আরেকটি তিব্বতের উত্তর রুট।

মাউন্ট এভারেস্টের বিস্তারিত সকল তথ্য

পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট আহোরণ সব পর্বতরোহীর কাছে একটা স্বপ্ন! প্রায় ৬৫০০ কোটি বছর আগে, ভারতীয় উপমহাদেশ ইউরেশিয়ার দিকে ধাবিত হয় এই পর্বত। শেষ পর্যন্ত ইউরেশিয়ার সাথে এর সংঘর্ষ হয়, আর এর ফলেই সৃষ্টি হয় হিমালয় পর্বতমালার। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন ইউরেশিয়ান এবং ভারতীয় প্লেটের সংঘর্ষের কারণে হিমালয়ের উচ্চতা প্রবলভাবে বেড়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মাউন্ট এভারেস্টের বিস্তারিত সকল তথ্যসমূহ।

এভারেস্ট নিয়ে সাধারন কিছু তথ্য

এভারেস্ট নিয়ে সাধারন কিছু তথ্য

  • এভারেস্টের সৃষ্টি প্রায় ৬০ মিলিয়ন বছর আগে।
  • ১৮৪১ সালে জর্জ এভারেস্ট মাউন্ট এভারেস্ট আবিষ্কার করেন, তিনি পেশায় একজন ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল ছিলেন।
  • অফিশিয়াল তথ্য অনুযায়ী এভারেস্টের উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফিট)।
  • এভারেস্টের পূর্ব নাম ছিল পিক-বি, পরবর্তীতে পিক-১৫ নামকরণ করা হয়।
  • ২৯শে মে ১৯৫৩ সালে  নিউজিল্যান্ডের স্যার এডমণ্ড হিলারি এবং নেপালের শেরপা তেঞ্জিং দক্ষিণ দিক থেকে সর্ব প্রথম এভারেস্টের শীর্ষে আরোহণ করেন।
  • নেপাল বা চীনের সীমান্তে অবস্থান এর উপর ভিত্তি করে এভারেস্টের উচ্চতা নিয়ে রয়েছে কিছু মত বিরোধ রয়েছে। নেপালি গবেষকদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এভারেস্টশৃঙ্গের উচ্চতা ২৯,০৩৫ ফুট (৮,৮৪৮ মিটার) উঁচু, আবার চীনা গবেষকদের মতে, ২৯,০১৬ ফুট (৮,৮৪৪ মিটার)।
  • ১৮৮৭ সালে ‘ব্রিটিশ সার্ভেয়ার অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড্রু ওয়া মাউন্ট’ এভারেস্টের নামকরণ করেন।
  • এভারেস্টের পূর্ব নাম ছিল পিক-বি, পরবর্তীতে এর নাম হয় পিক-১৫।
  • এভারেস্টে ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন চলাচলের রুট রয়েছে।
  • এভারেস্টে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হতে পারে।
  • মাউন্ট এভেরেস্টের বাতাসের গতি ২০০ মাইল।
  • শারীরিক ভারসাম্য বজায় রেখে এভারেস্ট শীর্ষে উঠতে ৪০দিনের মতো সময় লাগে।

মাউন্ট এভারেস্টের কিছু অজানা তথ্য

মাউন্ট এভারেস্টের কিছু অজানা তথ্য

  • নেপালে অবস্থিত এই পর্বতকে নেপালের স্থানীয়রা ‘সাগরমাথা ’ বলে যার অর্থ হল “আকাশের দেবী”।
  • তিব্বতে অবস্থিত এই পর্বতটিকে “চোমোলাংমা” বলা হয় যার অর্থ “মহাবিশ্বের মা” কারন এভারেস্টের শীর্ষ থেকে দেখা যায় বৌদ্ধদের পবিত্র স্থান।
  • চীনাদের কাছে এভারেস্টটি “কোকোল্যাংমা” নামে পরিচিত।
  • প্রতি বছর ভূতাত্ত্বিকগত উত্থানের কারণে এভেরেস্টটি গড়ে আনুমানিক ৪মিলিমিটার উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
  • মাউন্ট এভেরেস্টের ২২,০০০ ফিট (৬৭০০ মিটার) উপরের ফাটলে ব ছোট কালো রঙের মাকড়সার বাসা রয়েছে যা “হিমালয়ের জাম্পিং মাকড়শা” নামে পরিচিত।
  • এভারেস্টে আরোহণের ক্ষেত্রে বয়সের পরিসীমা রয়েছে। নেপালের সীমান্ত দিক থেকে আরোহণ করতে গেলে ১৬ বছর বয়সী ও চীনা সীমান্তের পাশ দিয়ে আরোহণ করতে হলে ১৮-৬০ বছরের মধ্যে বয়স হতে হবে।
  • এভারেস্টে আরোহনের জন্য জন প্রতি ৪০ হাজার ডলার খরচ করতে হয় যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা।
  • যারা পর্বতারোহীদের গাইড হিসেবে কাজ করে তাদেরকেই ‘শেরপা’ বলে।
  • খাবার হিসেবে পর্বতারোহীরা প্রচুর ভাত ও নুডুলস খায়।
  • লোক মুখে প্রচলিত আছে, শেরপারা নিজেদের তাপমাত্রা কমাতে ও বাড়াতে পারে।
  • মাউন্ট এভেরেস্টের অক্সিজেনের পরিমান সমুদ্র স্তরে উপস্থিত অক্সিজেনেরতিন ভাগের এক ভাগ।

এভারেস্টে সর্বপ্রথম

এভারেস্টে সর্বপ্রথম

  • সর্বপ্রথম এভারেস্টের উচ্চতা নির্ণয় করা হয় ১৮৯৯ সালে।
  • ১৯২১ সালে তিব্বতের উত্তর দিক থেকে সর্ব প্রথম একজন ব্রিটিশ পর্বত আরোহণের চেষ্টা করে ব্যার্থ হন।
  • সর্বপ্রথম শারীরিক ভাবে অক্ষম ব্যাক্তি হিসেবে ১৯৪৮ সালে নিউ ইয়র্কের টম হুইটকার পর্বত আরোহণ করেন।
  • ইতালির রেইনহোল্ড মেসনার ও তার সঙ্গী পিটার হাবলার ১৯৭৪ সালে প্রথম অক্সিজেন ছাড়া পর্বত আহোরণ করেন।
  • ২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তি জাপানের ইউইচিরো মিউরায় পর্বত আরোহণ করেন , বয়স ৮০।
  • প্রথম যুগল হিসেবে নুঙ্গশী ও তাশি মালিক একসাথে এভেরেস্টের চূড়ায় উঠে।
  • প্রথম নারী হিসেবে জুনকো তাবেই এভেরেস্টের চূড়ায় উঠে।
  • ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম এক নেপালি দম্পতি বিয়ে করেছিল এভারেস্টের শীর্ষ স্থানে। তারা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার জন্য এভেরেস্টের শীর্ষে অবস্থান করেছিল মাত্র ১০ মিনিট।

এভারেস্ট জয়ে বাংলাদেশ

এভারেস্ট জয়ে বাংলাদেশ

  • ২৩ মে ২০১০ সালে বাংলাদেশি হিসেবে মুসা ইব্রাহিম, পেশায় একজন সাংবাদিক এভারেস্ট জয় করেন।
  • ২১ মে ২০১১ সালে এম এ মুহিত দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের শীর্ষে আরোহণ করেন। তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের শীর্ষে আরোহণ করেন।
  • ২০১২ সালের ১৯ মে প্রথম নারী বাংলাদেশি হিসেবে নিশাত মজুমদার এভারেস্টে পা রাখেন। তিনি পেশায় একজন একাউন্টেন্ট।
  • ২০১২ সালের ২৬ মে সবচেয়ে কম বয়সী বাংলাদেশি এবং দ্বিতীয় নারী হিসেবে ওয়াসাফিয়া নাজরিন এভারেস্ট জয় করেন। তিনি পেশায় একজন মানবসেবা ও উন্নয়নকর্মী।
  • ২০১৩ সালে ২০ মে বাংলাদেশী হিসেবে সজল খালেদ নামের একজন চলচিত্রকার এভারেস্টের শীর্ষে উঠেন কিন্তু পর্বত থেকে নামার সময় তার হঠাৎ মৃত্যু ঘটে।

এভারেস্ট নিয়ে কিছু ভুল তথ্য

এভারেস্ট নিয়ে কিছু ভুল তথ্য

  • জর্জ এভারেস্টের নামানুসারে এভারেস্টের নামকরন করা হলেও অনেকে এভেরেস্টকে এভার-এস্ট বলে কিন্তু এর আসল উচ্চারণ হল এভে-রেস্ট।
  • অনেকেই মনে করেন, হিমালয় পর্বত হলো পৃথিবীর সবচেয়ে উচু বা বড় পর্বত। কিন্তু হিমালয় কোন একটি নির্দিষ্টপর্বত না হিমালয় পর্বত মালা ১৫০টি বৃহৎ পর্বতের সমষ্টিতে গড়ে উঠেছে।
  •   আরেকটি মজার কিন্তু ভুল তথ্য হল সবাই ভাবে এভারেস্টে আরোহণ করা সবচেয়ে কঠিন ও পর্বতারোহীদের মৃত্যু হার একমাত্র এই শৃঙ্গেই সবচেয়ে বেশি। আসলে কিন্তু এটা সঠিক না। এভারেস্টের কাছাকাছি আরেকটা পর্বত- মাউন্ট গডউইন অস্টেন অবস্থিত, হিমালয়ের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ পর্বত যা আরোহণে শতকরা ২৬ মৃত্যু হার, ২৬ যেখানে এভারেস্টের মৃত্যু হার শতকরা ৪।

এভারেস্টের কিছু পরিসংখ্যান

এভারেস্টের কিছু পরিসংখ্যান

  • পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সাল পর্যন্ত এভারেস্টের শীর্ষে উঠার চেষ্টা করেছে মোট ৫২৯৪ জন।
  • এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছেছেন ২০০০ এরও বেশি পর্বতারোহী।
  • সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এভারেস্টের শীর্ষে উঠার রেকর্ড অর্জন করেন কামি রিতা শেরপা।
  • ১৯২৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত, পাহাড়ের চূড়ায় উঠার পথে প্রায় ২৯৫টি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে যা মোট পর্বতারোহীদের ৩.৫%।
  • প্রতি ১০ জন সফল পর্বতারোহীর মধ্যে ১জন পর্বতারোহীর জীবন মৃত্যুর সম্মুখীন হয়।
  • ঠাণ্ডা, দমবন্ধ, তুষারের জন্য চোখে দেখতে না পারা, ক্ষুধা ও হাইপোথার্মিয়ার কারণে ১৯৬৯ সাল থেকে প্রতি বছরে একজনের মৃত্যু ঘটে।
  • ১৯৭৪ সালকে এভেরেস্টের ইতিহাসে “কুমারী বছর” হিসেবে গন্য করা হয় এর কারণ এই বছর কেউ পর্বত আরোহণের চেষ্টা করে নি।
  • পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিব্বতের পাশ দিয়ে এভেরেস্টে আরোহণের ক্ষেত্রে বেশীরভাগ পর্বতারোহী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের আর্টিকেলটির মূল বিষয় ছিল মাউন্ট এভারেস্ট, মাউন্ট এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত ও এর বিস্তারিত সকল তথ্য সম্পর্কে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আমাদের সাথেই থাকুন এবং আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

মাউন্ট এভারেস্ট সম্পর্কে আরও জানতেঃ- ভিজিট করুন

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *