আমরা সবাই জানি মধুর উপকারিতা মানব শরীরের জন্য অতুলনীয়। আমাদের জন্য মধু একটি সর্বাধিক পুষ্টিকর উপাদান। শরীরের ও সাস্থের জন্য মধু গুরুপ্তপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। পুষ্টির দিকদিয়ে তালিকা করলে সেই তালিকার প্রথমে থাকবে মধু। শরীরের জন্য উপকারি নিয়মিত মধু সেবন। বিশেষজ্ঞদের মতে খাটি মধু সেবনে নানা ধরনের রোগবালাই থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মধু সেবনে বিরত থাকায় ভালো। কেননা এটি প্রাকৃতিক অবস্থাতেই উত্তম। তাহলে আসুন আজ আমরা মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানবো-
মধুর উপকারিতা
মধুর উপকারিতাঃ প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ঘরোয়া চিকিৎসা ও শরীরের উপকারের জন্য মধুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। মধু আমাদের শরীরের জন্য অধিক উপকারি। কেননা মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান।
এটি আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ সহ আর নানা ধরনের রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। নিয়মিত সকালে খালি পেটে ২ চামচ খাঁটি মধু খাওয়া অসাধারণ উপকারী। নিয়মিত ও পরিমিত মধু সেবনে যেসব উপকার পাওয়া যায় তা হলো-
- হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- দৃষ্টিশক্তি ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।
- মধুর ক্যালরি রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়।
- গ্লাইকোজেনের লেভেল সুনিয়ন্ত্রিত করে।
- আলচার ও গ্যাস্ট্রিক রোগের জন্য উপকারী।
- মাথা ব্যথা দূর করে।
- গলা ব্যাথা, কাশি, এবং ঠাণ্ডা জাতীয় রোগে বিশেষ উপকার করে।
আমাদের দেহের জন্য যেমন মধুর উপকারিতা অনেক বেশি রয়েছে। সেই সাথে অনেকের ক্ষেত্রে এটি ভয়াবহতা ডেকে আনতে পারে। এটি প্রাকৃতিক অবস্থায় সেবনে উত্তম। মধুকে গরম অবস্থায় গ্রহণ করলে দেহে অনেক ঝুঁকি থাকে।
গরম জলে মধু খাওয়া উচিত নয় কেন?
মধু অনেকেই শরীরের জন্য উপকারি মাধ্যম হিসেবে গরম জলে সেবন করে থাকে। আবার অনেকেই ঘুম থকে উঠে সকালে চা এর সাথে সেবন করে। অনেকের মতে শরীর তাজা হয়, ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। গরম অবস্থায় খেলে মধুর উপকারিতার থেকে শরীরের জন্য এর ক্ষতিকর দিক বেশি হয়ে থাকে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা মনে করেন, এভাবে আপনি যা পান করছেন তা আসলে বিষ। মধু এমনিতেই গরম অবস্থাতে থাকে।
এটি সেবন করলে আমাদের শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। যা নানা ক্ষতির দিক ডেকে আনতে পারে। মধু খেলে শরীরে দুর্গন্ধযুক্ত, আঠালো, ক্ষতিকর পদার্থ জমা হয়। এই বিষাক্ত টক্সিন আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি আমাদের রক্তে জমা হতে দেয় না। যার ফলে রক্তের সাথে আমাদের শরীরে নানা সমস্যার দেখা দেয়।
মধু খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
মধু আমাদের শরীরের জন্য যেমন উপকারি, ঠিক তেমনি অপকারি। আমরা যদি মধুর উপকারিতা সঠিক ভাবে পেতে চাই, তাহলে আমাদের প্রয়োজন সঠিক নিয়মে মধু খাওয়া। কেননা অনেকেই মধু সেবনের সঠিক পদ্ধতি জানে না। এর কারণে আমাদের শরীরে নানা সমস্যার উপস্থিত দেখা যায়। মধু সাধারানত সকল মানুষের প্রিয় একটি খাবার। এটি আমাদের শরীরে শক্তি ও সুস্থতা বজায় রাখে। তবে মধু খাওয়ার বিশেষ কোন নিয়মের আদেশ নেই। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে মধু আমাদের শরীরে সঠিক উপকারির মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।
- প্রতিদিন সকালে ১-২ চা চামচ সরাসরি খাওয়ার অভভাস করুন।
- কাঁচা ছোলার ভিজিয়ে রেখে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে শারীরিক দুর্বলতা দ্রুত দূর হবে।
- ব্রেড অথবা রুটির সাথে জেলির পরিবর্তে মধু মিশিয়ে নিয়ে সেবন করুন।
- চায়ের সঙ্গে চিনির পরিবর্তে মধু পান করতে পারেন।
- সর্দি-জ্বর নিরাময়ের জন্য তুলসি পাতা বা বাসক পাতার রসের সঙ্গের মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
- যেসকল বাচ্চাদের বয়স ১ বছর বা ১২ মাসের কম, তাদের কোন ক্রমেই মধু খেতে দেয়া যাবে না।
এছারাও মধু আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত জরুরি। মানব দেহের ক্লান্তি ও শরীরকে ফিট রাখতে মধুর উপকারিতা অন্যতম। তবে মধু সঠিকভাবে গ্রহণ করলে আমাদের দেহ সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করবে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে মধু গুরুপ্তপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
মধুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সব খাবারের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে যা আমাদের শরীরের অন্য ক্ষতিকর। তেমনই মধুর উপকারিতার পাশাপাশি এটি অতিরিক্ত সেবনে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করতে পারি। মধুতে থাকে চিনি ও শর্করা। এছাড়াও আমাদের দেহে মধু ক্যালরির ঘাটতি পুরনে সাহায্য করে। এর ফলে আমরা শক্তি, ও শরীরকে ফিট রাখতে মধু পান করে থাকি। সাধারানত মধুর তাপমাত্রা গরম অবস্থায় থাকে। ফলে অনেকেই গরম পানির সাথে এটিকে পান করে থাকে। যা আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর।
মধুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। আবার অতিরিক্ত মধু সেবনে রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত মধু সেবনে শরীরের ক্যালরি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে শরীরের ওজন বৃদ্ধির দিকে ধাবিত করে। এটি অতিরিক্ত সেবনে মুখে চিনির পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় মুখের ও সাস্থের ক্ষতি করে। এবং এর আঠালো পদার্থ দাঁতের সঙ্গে লেগে দাঁতের ক্ষতি করে। যাদের মধুতে এলারজি আছে তাদের পেট ব্যাথা, বদ হজম সহ ডাইরিয়া হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
খাঁটি মধু চেনার উপায়
মধুর চাহিদা আদিম যুগ থেকেই বেশি। কেননা মধু আমাদের নানা কাজে সহয়তা করে থাকে। বর্তমান সময়ে বাজারে আমরা নানা ধরনের মধু দেখতে পারি। কিন্তু এগুলো আসল না নকল তা আমরা কিছু উপায়ে নির্ণয় করতে পারি। যে সকল মধু খাঁটি সেটি সহজেই বোঝা যায়। খাঁটি মধু চেনার উপায় হচ্ছে এতে সাদা ফেনা তৈরি হয়। ম্যাচের কাঠি খাঁটি মধুতে ডুবিয়ে তোলার পর এতে আগুন ধরাতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন জ্বলবে।
এবং অনেক সময় ধরে খাঁটি মধুকে ফ্রিজে সংরক্ষন করলে তা তরল অবস্থাতেই থাকবে। সারা বছর পানিতে নিমজ্জিত থাকার ফলে ম্যানগ্রোভ বন প্রচুর আর্দ্রতা শোষণ করে। তাই বিশুদ্ধ সুন্দরবনের মধু সবসময় পাতলা ও তরল হয়। এবং আমরা যে সকল মধু বাজার থেকে সংরক্ষন করে থাকি তা আসল অথবা নকল চেনার কোন উপায় থাকে না। আমাদের অবশ্যই উচিত খাঁটি মধু সংরক্ষন করে তা সেবন করা।
মধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা কাজে ব্যাবহার হয়ে থাকে। এটির প্রচলন আদিমকাল থেকেই। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে মধু গুরুপ্তপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। আমাদের সকলের উচিত শরীরকে ফিট রাখতে মধু সেবন করা। এবং অনেকের ক্ষেত্রে এটি ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। যার ফলে সেবনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরও জানতেঃ- Wikipedia
Leave a Comment