সারা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হল জাতিসংঘ। আপনারা যারা অনলাইনে জাতিসংঘের কাজ কি? এর উদ্দেশ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সার্চ করে থাকেন, তারা আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। কেননা আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি জাতিসংঘের কাজ, এর উদ্দেশ্য ও সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। জাতিসংঘের কাজ কি? এর উদ্দেশ্য ও ইতিহাস জানার আগে সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেই জাতিসংঘ কি-
জাতিসংঘ কি
জাতিসংঘ একটি অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংস্থা যা বিশ্বের স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির সম্মিলিত প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৪৫ সালে সারা বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগীতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিপুঞ্জ বা লীগ অফ নেশনসনের জন্ম হলেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা জাতিপুঞ্জের অসারতাকে সারা পৃথীবির সামনে স্পষ্ট করে তোলে। ফলাফল হিসেবে জাতিপুঞ্জ বিলুপ্ত হয় এবং তার পরিবর্তে, নতুন নাম, পরিকল্পনা ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতিসংঘ গড়ে ওঠে।
সারা বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা তথা জাতিসংঘের সদর দফতর নিউ ইয়র্ক শহরে অবস্থিত। এছাড়া জেনেভা, নাইরোবি, ভিয়েনা ও হেগ শহরে সংস্থাটির অন্যান্য দফতর রয়েছে। জাতিসংঘ ২৪ অক্টোবর ১৯৪৫ সালে মোট ৫১ টি রাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালের তথ্যনুসারে জাতিসংঘের মোট সদস্য সংখ্যা ১৯৩ টি। জাতিসংঘে যোগদানকারী সর্বশেষ সদস্য রাষ্ট্র হলো দক্ষিণ সুদান (২০১১ সালের ১৪ জুলাই, ১৯৩তম) দেশ হিসাবে যোগদান করে।
জাতিসংঘ সৃষ্টির ইতিহাস
জাতিসংঘ গঠনের পূর্বে বিশ্বের বিভিন্ন জাতিসমূহের মধ্যে শান্তি এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯২০ সালের ১০ জানুয়ারি লীগ অব নেশন্স প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক সংগঠন লীগ অব নেশন্স মোট ৫৮ টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে শুরুতে সফল ভাবে কার্যক্রম পরিচালিত করলেও ১৯৩০ সালের পর থেকে জার্মানী, ইতালি এবং জাপানের মতো অক্ষশক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হলে লীগ অব নেশন্সের কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়ে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা শুরু হলে স্পষ্ট ভাবে প্রমান হয়ে যায় যে, লীগ অব নেশন্স বিশ্বের শান্তি রক্ষার প্রধান লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২ তম প্রেসিডেন্ট ফ্রঙ্কলিন ডি রুজবেল্ট। তিনিই সর্ব প্রথম জাতিসংঘ গঠনের প্রস্তাব দেন। রুজবেল্ট প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৪৫ সালের ১ জানুয়ারি ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সম্পাদিত ‘সম্মিলিত জাতিসমূহের ঘোষণার’ মাধ্যমে, যেখানে ২৬টি দেশের প্রতিনিধিবর্গ প্রথমবারের মতো অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে যুদ্ধে করার ঘোষণা দেয়। একই বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত, সানফ্রানসিস্কোতে আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রশ্নে ‘জাতিসমূহের সম্মেলনে’ ৫০ টি দেশের প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ সনদ রচনা করেন।
জাতিসংঘের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ৫০টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন সনদটি অনুমোদন ও স্বাক্ষর করেন। পোল্যান্ড সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও পরে এতে স্বাক্ষর প্রদান করে প্রথম স্বাক্ষরকারী ৫১টি রাষ্ট্রের একটিতে পরিণত হয়। এর ফলে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর গণ-চীন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও স্বাক্ষরকারী অন্যান্য অধিকাংশ দেশের সনদ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের উদ্দেশ্য
জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় একটি সংস্থা। সারা বিশ্বের যে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহ জাতিসংঘের সদস্য হতে পারে। জাতিসংঘ কিছু মহৎ উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে। জাতিসংঘ গঠনের সাতটি লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিচে দেওয়া হলো-
- বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
- বিভিন্ন জাতি তথা দেশের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করা।
- অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলা।
- জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান গড়ে তোলা।
- বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ মীমাংসা করা।
- প্রত্যেক জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের স্বীকৃতি ও তার সমুন্নত রাখা, এবং
- উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের কার্যধারা অনুসরণ করা।
উপরের এই সাতটি উদ্দেশ্যগুলো স্তবায়নের জন্য জাতিসংঘ তার ছয়টি শাখার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে।
জাতিসংঘের কার্যাবলী
জাতিসংঘের মূল বা প্রধান শাখা ৬টি, তবে বর্তমানে ৫টি শাখা কার্যকর রয়েছে এবং ১ টি শাখা অকার্যকর রয়েছে। মূল সংস্থা গুলো সামাজিক ক্ষেত্র, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক বিকাশ, ঔপনিবেশবাদ লোপ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করা এবং শরণার্থী ও বাণিজ্যে আকর্ষণীয়ভাবে জাতিসংঘ যথেষ্ট সুনাম অর্জন করতে সাহায্য করেছে। আসুন জেনে নেই জাতিসংঘের মূল শাখার কার্যবলী গুলো কি কি –
- জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিতর্ক সভা হিসেবে বিশ্ব মতামত প্রকাশ করতে পারে।
- বিশ্বশান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষা করাও সাধারণ পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
- সাধারন পরিষদ আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করতে পারে।
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারে।
- জাতিসংঘের অন্যান্য শাখার কার্য্যের অনুসন্ধান ও নিয়ন্ত্রণ করে।
- নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে যে-কোন রাষ্ট্রকে নতুন সদস্যরূপে গ্রহণ করতে পারে। পাশাপাশি পুরাতন যে-কোন সদস্য রাষ্ট্রকে সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে পারে।
- পরিষদটি কিছু কিছু অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে। জাতিসংঘের বাজেট পাস করা এর অন্যতম কাজ।
- নির্বাচন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সম্পাদন করাও প্রধান কার্যসমূহের একটি।
- বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার লক্ষ্যে সাধারণ পরিষদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যাতে ছিন্ন হলে সংস্থাটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম জাতিসংঘের কাজ কি? এর উদ্দেশ্য ও ইতিহাস নিয়ে। আশা করছি আপনারা জাতিসংঘের কাজ কি? এর উদ্দেশ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। জাতিসংঘ ছাড়াও বিশ্বের আরও বিভিন্ন ধরণের বড় বড় সস্থা সম্পর্কে জানতে আমাদের এই সাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Leave a Comment