গুগল আইও ২০২১ : টপ ৫ টি অ্যানাউন্সমেন্ট

প্রত্যেকবছরই গুগল তাদের সবথেকে ইম্পর্ট্যান্ট আপকামিং ফিচারস এবং প্রোজেক্টগুলো তাদের জেনারেল কাস্টোমার এবং ডেভেলপারদের কাছে অ্যানাউন্স করার জন্য একটি ইভেন্টের আয়োজন করে থাকে, যার নাম দেওয়া হয় Google I/O। গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ক্রাইসিসের কারণে গুগল গত বছরের ফিজিক্যাল I/O ইভেন্ট বাতিল করেছিলো। তবে এবছর সফলভাবেই আয়োজন করা হয়েছিলো এবছরের ইভেন্ট, Google I/O 2021 এর। এবছরের ইভেন্টে ডেভেলপার স্পেসিফিক অ্যানাউন্সমেন্টের পাশাপাশি বেশ নতুন কিছু কাস্টোমার স্পেসিফিক ফিচারস এবং প্রোজেক্টের ব্যাপারেও জানিয়েছে গুগল। চলুন জানা যাক নতুন কি কি ফিচারস এবং প্রোজেক্ট গুগল এবছর অ্যানাউন্স করেছে, যেগুলো সাধারন গুগল ইউজারদের দরকার হতে পারে।

অ্যান্ড্রয়েড ১২ পাবলিক বেটা

এবছরের ইভেন্টের সবথেকে বড় আকর্ষনই ছিলো অ্যান্ড্রয়েড ১২ এর অফিসিয়াল পাবলিক বেটা ভার্সনের অ্যানাউন্সমেন্ট। যদিও এখনো ১০℅ এর ও কম অ্যান্ড্রয়েড ইউজাররা তাদের ফোনে অ্যান্ড্রয়েড ১১ ব্যাবহার করছেন, তবুও গুগল তাদের অনেক বছরের ইতিহাস বজায় রেখে প্রত্যেক বছরই নতুন নতুন অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন রিলিজ করেই চলেছে। গত কয়েক বছর নতুন অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনগুলোতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য চেঞ্জ না আনলেও এবার অ্যান্ড্রয়েড ১২ তে গুগল অ্যান্ড্রয়েডে বেশ কিছু নতুন ফিচার যোগ করেছে। যেমন- বেটার ওয়াইফাই শেয়ারিং, বেটার স্ক্রিনশট এডিটিং টুলস, স্মার্ট ফেস-বেজড অটো রোটেশন এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি, গুগল এবার অ্যান্ড্রয়েড ১২ এর সাথে রিলিজ করতে চলেছে তাদের ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন ল্যাংগুয়েজের নতুন এডিশন, ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন ৩.০ বা “ম্যাটেরিয়াল ইউ”।

ম্যাটেরিয়াল ইউ ডিজাইন ল্যাংগুয়েজের সাহায্যে অ্যান্ড্রয়েডের চিরচেনা ইউজার ইন্টারফেসে অনেক বড় চেঞ্জ আনা হয়েছে যা আগের থেকে আরও অনেক বেটার, ক্লিন এবং অর্গানাইজড। বলতে গেলে অ্যান্ড্রয়েডের অধিকাংশ ইউজার ইন্টারফেস, যেমন- সেটিংস মেনু, নোটিফিকেশন বার, অ্যাপ ড্রয়ার, হোমস্ক্রিন, সবকিছুই প্রায় নতুন করে সাজানো হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ১২ তে। আশা করা যায়, চলতি বছরের শেষের দিকে আমরা অ্যান্ড্রয়েড ১২ চালিত নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন হাতে পেতে পারি। তবে আপনি চাইলে এখনই অ্যান্ড্রয়েড ১২ এর পাবলিক বেটা পিক্সেল ফোনের পাশাপাশি গুগলের সিলেক্টেড আরো ১২ টি মেজর ম্যানুফ্যাকচারারের স্মার্টফোনে ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড ১২ এর মেজর কয়েকটি ফিচার জানার জন্য এই পোস্টটি পড়ে নিতে পারেন।

টাইজেন ওএসের সাথে পার্টনারশিপ

অধিকাংশ অ্যাভারেজ অ্যান্ড্রয়েড ইউজাররা হয়তো জানেন না, তবে অনেকেই হয়তো জানেন যে, গুগলের নিজস্ব একটি কাস্টোমাইজড অ্যান্ড্রয়েড এডিশন আছে যা স্মার্টওয়াচে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই ওএসটিকে বলা হয় WearOS। আবার স্মার্টওয়াচে ব্যাবহারের জন্য স্যামসাং এর আলাদা একটি কাস্টোমাইজড অপারেটিং সিস্টেম আছে, যার নাম হচ্ছে টাইজেন ওএস। স্যামসাং এর স্মার্ট টিভিতেও এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। গুগল আইও ইভেন্টের আরেকটি মেজর অ্যানাউন্সমেন্ট ছিলো টাইজেন এবং WearOS এর পার্টনারশিপ। ঘোষণা অনুযায়ী, গুগল এবং স্যামসাং WearOS এবং TyzenOS কে মার্জ করে একটি সুপার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চলেছে যার নাম দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র Wear।

গুগলের ওএস এবং স্যামসাং এর টাইজেন একত্রিত হওয়ায় স্মার্টওয়াচ ইউজাররা দুই ওএসের বেস্ট ফিচারগুলো একই জায়গায় উপভোগ করতে পারবেন। গুগল এবং স্যামসাং এর ভাষ্যমতে, নতুন এই ইউনিফাইড অপারেটিং সিস্টেমে ইউজাররা প্রায় ৩০% বেটার ব্যাটারি লাইফ, আরো ফাস্ট এবং স্মুথ অ্যাপ্লিকেশান স্টার্টআপ এবং প্রায় ৩০% বেশি ফাস্ট লোড-টাইম পাবেন। স্যামসাং এখনো তাদের নিজেদের লাইনাপে নতুন নতুন স্মার্টওয়াচ লঞ্চ করবে, তবে সেগুলোতে এখন থেকে টাইজেন ওএসের পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে নতুন Wear অপারেটিং সিস্টেম। এছাড়া অন্যান্য স্মার্টওয়াচ ম্যানুফ্যাকচারার যারা গুগলের ওয়াচ ওএস ব্যবহার করতো, তারাও এরপর থেকে তাদের নতুন স্মার্টওয়াচগুলোতে এই নতুন বেটার ওএস ব্যবহার করতে পারবে।

নতুন ক্যামেরা ফিচারস

গুগলের ক্যামেরা সফটওয়্যার সবসময়ের জন্যই স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রিতে বেস্ট ঈণ ক্লাস ছিলো, যা গুগল প্রত্যেকবারই তাদের নতুন পিক্সেল স্মার্টফোনের সাহায্যে প্রমান করেছে, বর্তমানে অন্যান্য স্মার্টফোনেও আমরা গুগল ক্যামেরা অ্যাপের মডেড ভার্সন ব্যবহার করি, যা ফোনের ডিফল্ট ক্যামেরার থেকে আরও অনেক বেটার আউটপুট দিতে পারে। এর প্রধান কারণটিই হচ্ছে গুগলের অসাধারন ইনটেলিজেন্ট ইমেজ প্রোসেসিং অ্যালগরিদম। আর এবার গুগল তাদের ক্যামেরা সফটওয়্যারের ইমেজ প্রোসেসিং ক্যাপেবলিটি আরও বেটার করেছে।

গুগল তাদের ইমেজ প্রোসেসরে নতুন বেশ কিছু ফিচার যোগ করেছে  যার সাহায্যে এবার থেকে ইউজারের তোলা সেলফিতে কার্লি এবং ওয়েভি চুলের গঠন ক্যামেরা আরও ভালোভাবে ডিটেক্ট করতে পারবে এবং এই হিসেবে ইমেজটি পোস্ট-প্রোসেস করতে পারবে। এর ফলে এখন থেকে গুগল ক্যামেরা অ্যাপে ক্যাপচার করা সেলফিতে ইউজারের চুল আরও ন্যাচারাল হবে। এছাড়াও গুগল আরও একটি ফিচার নিয়ে কাজ করছে, যা ফলে ইউজাররা গুগল ক্যামেরায় ক্যাপচার করা স্টিল ইমেজ থেকে অ্যানিমেশন তৈরি করতে পারবেন।

এই ফিচারটিকে গুগল “সিনেম্যাটিক মোমেন্টস” নামকরন করেছে। এটা মুলত সেই সিচুয়েশনগুলোতে কাজে আসবে যখন আপনি একটি পারফেক্ট শটের আশায় পরপর বেশ কয়েকটি ছবি তুলতে থাকেন। অনেকসময় অনেক বাচ্চার লাফালাফি করার ছবি তোলার সময় আমরা এমনটা করে থাকি। এই মোমেন্টে তোলা সবগুলো ছবির সিকুয়েন্সকে নিয়ে প্রোসেস করে একটি পারফেক্ট এনিমেশন তৈরি করতে সক্ষম হবে গুগলের নতুন ক্যামেরা সফটওয়্যার।

ল্যামডা ল্যাংগুয়েজ মডেল

এবছরের গুগল আইও ইভেন্টের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অ্যানাউন্সমেন্ট ছিলো ল্যামডা (laMDA) যা গুগলের তৈরি একটি ইন্টেলিজেন্ট কনভার্সেশনাল ল্যাংগুয়েজ মডেল। এটিকে তৈরি করা হয়েছে গুগলের হাইলি অ্যাডভান্সড নিউরাল নেটওয়ার্ক ইঞ্জিন, “ট্রান্সফরমার” এর সাহায্যে। যেখানে অন্যান্য টেক ইন্ডাসট্রির তৈরি ল্যাংগুয়েজ মডেল শুধুমাত্র ইউজারের জিজ্ঞেস করা কুয়েরির উত্তর দিতে পারে, গুগলের এই নতুন ল্যাংগুয়েজ মডেল ইউজারের কুয়েরির উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি সাধারন মানুষের মতো ডায়লগ বেজড ন্যাচারাল কনভার্সেশনেও পারদর্শী।

ল্যামডা ল্যাংগুয়েজ মডলের কারণে ভবিষ্যতে গুগলের কোন সার্ভিসে ভয়েস কম্যান্ড দেওয়ার সময় বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টকে কিছু জিজ্ঞেস করার সময় আপনাকে কোন স্পেসিফিক স্কিমা ফলো করে প্রশ্ন করতে হবে না। আপনি আরেকজন রিয়াল হিউম্যানের সাথে কথা বলার সময় যেভাবে কথা বলেন এবং যেভাবে আপনার কনভার্সেশন এগিয়ে নিয়ে যান, আপনি ঠিক একইভাবে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের সাথে কথা বলতে পারবেন যদি সেখানে এই নতুন ল্যাংগুয়েজ মডেল ব্যবহার করা হবে। ল্যামডা এখনো ডেভেলপমেন্ট ফেজে আছে তবে খুব শীঘ্রই এটিকে গুগলের কনভার্সেশনাল প্রোডাক্ট যেমন- গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং গুগল হোমে ব্যবহার করা হবে।

প্রোজেক্ট স্টারলাইন

করোনাভাইরাস সংকটের কারণে গত ১ বছরে ভিডিও কলিং এবং ভিডিও কনফারেনসিং এর চাহিদা আগের তুলনায় হটাত করেই অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখন অনেকেই তাদের বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে ইন-পারসন দেখা করার থেকে ভার্চুয়ালি কনভার্সেশন চালিয়ে যেতেই বেশি পছন্দ করেন। মানুষের এই ভিডিও কনফারেন্সিং এক্সপেরিয়েন্সকে পরবর্তী লেভেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুগল যে নতুন প্রোজেক্টটি নিয়ে কাজ করছে তার নামই হচ্ছে “প্রোজেক্ট স্টারলাইন”। ভিডিও কনফারেন্সিং এর ক্ষেত্রে থ্রিডি ইমেজিং ব্যবহার করে গুগল ইউজারদেরকে ভিডিও কল করার সময় একে অপরের সাথে আরেকটু বেশি কানেক্টেড ফিল করার সুযোগ দিতে চাইছে।

যদিও এই প্রোজেক্টটি কনজিউমার লেভেলে বাস্তুবায়ন হতে এখনো অনেক দেরি হবে, তবে গুগলের দেখানো ডেমো অনুযায়ী, এই প্রোজেক্টটি সত্যিকারেই ভিডিও কলিং এর ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলেছে। এই ক্ষেত্রে আপনি যখন স্টারলাইনের জন্য তৈরি স্পেশাল ডিসপ্লে, ক্যামেরা এবং সেন্সর ব্যবহার করে কারো সাথে ভিডিও কল করবেন, তখন প্রতিটি মোমেন্টে আপনার রিয়ালটাইম থ্রিডি ইমেজ তৈরি করা হবে এবং এই থ্রিডি মডেল ব্যবহার করে আপনি যার সাথে কথা বলছেন তার কাছে আপনার থ্রিডি মডেলটি রিয়ালটাইম রেন্ডার করা হবে। একইভাবে আপনি যার সাথে কথা বলছেন, তার সাথেও তেমনটাই হবে। এর ফলে যে দুজন ইউজার ভিডিও কনফারেন্স করছেন, তাদের কাছে একে অন্যকে একেবারেই রিয়াল মনে হবে। ব্যাপারটা লিখে বোঝানো কঠিন, তবে আপনি গুগলের ইউটিউব চ্যানেলে প্রোজেক্ট স্টারলাইনের ডেমো ভিডিওটি দেখলে আশা করি আরও পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারবেন।


 

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories