এবছরের শুরুর দিকে হোয়াটসঅ্যাপের আপডেট করা নতুন প্রাইভেসি পলিসি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রাইভেসি পলিসি অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যাবহার করতে চাইলে আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে ফেসবুকের সাথে আপনার পার্সোনাল ডাটা শেয়ার করতে হবে। কয়েকদিন আগে হোয়াটসঅ্যাপ আরও জানিয়েছে যে, আপনি যদি হোয়াটসঅ্যাপের এই নতুন প্রাইভেসি পলিসি অ্যাকসেপ্ট না করেন, তাহলে আপনি কিছুদিনের মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপের বিবিন্ন কোর ফিচারস ব্যাবহার করতে পারবেন না। এই কারণেই প্রাইভেসি কনসার্নড ইউজাররা হোয়াটসঅ্যাপ বাদ দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তে অন্য কোনো ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ ব্যাবহার করার কথা ভাবছেন।
আপনার যদি হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রাইভেসি পলিসি নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে আপনার কোনো চিন্তাই নেই। তবে যদি আপনি হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তে ব্যাবহার করার মতো অন্য কোনো অলটারনেটিভ মেসেজিং অ্যাপ ব্যাবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে কি কি অপশন আছে আপনার কাছে, সেগুলো নিয়েই কথা বলতে চলেছি। তবে হ্যাঁ, আপনি যেকোনো মেসেজিং অ্যাপ চাইলেই রেগুলার ব্যাবহার করতে পারবেন না। নিজে নতুন মেসেজিং অ্যাপে সুইচ করার পাশাপাশি, যাদের সাথে আপনি রেগুলার হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতেন, তাদেরকেও সেই নতুন প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে হবে। যাইহোক, আর কথা না বাড়িয়ে দেখা যাক আপনার কাছে আর কি কি অপশন আছে।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
Signal Private Messenger
হোয়াটসঅ্যাপ অলটারনেটিভের কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে সিগনাল মেসেঞ্জারের নাম। হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রাইভেসি পলিসি আসার পর থেকে সিগনাল মেসেঞ্জারই ট্রেন্ডিং হোয়াটসঅ্যাপ অলটারনেটিভ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, পৃথিবীর সবথেক ধনী ব্যাক্তি ইলন মাস্ক নিজে টুইট করে সবাইকে সিগনাল মেসেঞ্জার ব্যাবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারের এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন টেকনোলজিটি তৈরি করেছে সিগনাল ফাউন্ডেশন। আর এই সিগনাল ফাউন্ডেশনের তৈরি সম্পুর্ন আলাদা একটি মেসজিং অ্যাপ হচ্ছে সিগনাল মেসেঞ্জার। সিগনাল মূলত সবথেকে সিকিওর মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে পরিচিত।
সিগনাল মেসেঞ্জারে আরও এক্সট্রা কিছু সিকিউরিটি ফিচারস আছে যেগুলো আপনি হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাবেন না। যেমন- সেল্ফ ডেস্ট্রাক্টিং মেসেজ এবং স্ক্রিনশট প্রোটেকশন, যার ফলে কেউ আপনার চ্যাটের স্ক্রিনশট নিতে পারবে না। এছাড়াও সিগনাল মেসেঞ্জারে চ্যাট থেকে শুরু করে কল, গ্রুপ কল এবং সব ইউজার ডাটা এনক্রিপ্টেড। আর সিগনাল ফাউন্ডেশনের ভাষ্যমতে, সিগনাল মেসেঞ্জার আপনার কোনো ডাটার সাথে আপনার কোনো লিংক রাখেনা বা আপনার ডিভাইস ফিংগারপ্রিন্ট আপনার ডাটার সাথে কখনোই লিংক করেনা।
আর সিগনাল মেসেঞ্জার অবশ্যই সম্পুর্ন অ্যাডফ্রি এবং স্পন্সর ফ্রি। এটি হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারের থেকে অনেক বেশি লাইটওয়েট। আর এটির ইউজার ইন্টারফেসও হোয়াটসঅ্যাপের থেকে অনেক বেশি ক্লিন এবং মিনিমাল। সত্যি কথা বলতে হোয়াটসঅ্যাপের সবদিক থেকে বেস্ট অলটারনেটিভ খুঁজলে এটাই আপনার জন্য বেস্ট অপশন।
Telegram Messenger
হোয়াটসঅ্যাপের আরেকটি অলটারনেটিভ হচ্ছে টেলিগ্রাম মেসেঞ্জার। টেলিগ্রাম অলরেডি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ওপেন-সোর্স ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ। রাশিয়ান এই মেসেজিং অ্যাপটিতে এমন সব ফিচারসই পাবেন যেগুলো একটি আইডিয়াল মেসেজিং অ্যাপে থাকা উচিত। টেলিগ্রামের সবথেকে ভালো ফিচারটি হচ্ছে, আপনি টেলিগ্রামে সর্বোচ্চ ২ জিবি পর্যন্ত ফাইল শেয়ার করতে পারবেন। অন্য কোনো মেসেজিং অ্যাপে আপনি এত বড় ফাইল সাইজ লিমিট পাবেন না। যেখানে হোয়াটসঅ্যাপে আপনি ২৫ এমবির বেশি সাইজের ফাইল সেন্ড করতে পারবেন না, সেখানে ২ জিবি লিমিট অনেক বড় অ্যাডভান্টেজ বলে আমি মনে করি।
এছাড়া টেলিগ্রামে আপনি আরও অনেক ফিচার পাবেন যেগুলো আপনি হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাবেন না। যেমন- টেলিগ্রমে আপনি অনেক কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের বট পাবেন যেগুলো আপনার অনলাইন লাইফকে আরও সহজ করবে। টাস্ট রিমাইন্ডার থেকে শুরু করে, লিংক শর্টেনার, ইউটিউব ডাউনলোডার এমন হাজারো রকমের টেলিগ্রাম বট ব্যাবহার করতে পারবেন আপনি। টেলিগ্রামের আরেকটি হাইলাইটেড ফিচার হচ্ছে, আপনি টেলিগ্রামে সেন্ড করা কোনো টেক্সট সেন্ড করার পরেও এডিট করতে পারবেন, যা আমার জানামতে অন্য কোনো ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপে নেই। এছাড়া আনসেন্ড অপশন তো থাকছেই।
টেলিগ্রামের মেসেজ ডেলিভারি স্পিডও আমার কাছে অন্যান্য অধিকাংশ মেসেজিং অ্যাপের থেকে ফাস্ট মনে হয়। টেলিগ্রামের এমন আরও অনেক ফিচার আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তে আপনার যদি সবথেকে অ্যাডভান্সড ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ ব্যাবহার করার ইচ্ছা হয়, আমি বলবো টেলিগ্রাম ব্যাবহার করতে।
Snapchat
স্ন্যাপচ্যাটও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অ্যাপ। তবে সত্যি কথা বলতে, নামের সাথে চ্যাট থাকলেও স্ন্যাপচ্যাট আসলে কোনো ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ নয়। এটি মেসেজিং অ্যাপের থেকে আরও বেশি কিছু। এটি ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামের মতোই একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং একইসাথে একটি মেসেজিং অ্যাপ। তবে আপনি চাইলে এটিকে একটি ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের মতো করেও ব্যাবহার করতে পারেন। আর স্ন্যাপচ্যাটের সব ফিচারস বাদ দিলেও ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে এটি যথেষ্ট ভালো।
স্ন্যাপচ্যাটেও আপনি এমন কিছু ফিচার পাবেন, যা আপনি অন্যান্য অধিকাংশ মেসেজিং অ্যাপ বা হোয়াটসঅ্যাপে পাবেন না। যেমন, সিগনালের মতো স্ন্যাপচ্যাটেও আপনি টাইমার সেট করে সেল্ফ ডেসট্রাক্টিং মেসেজ পাঠাতে পারবেন। আবার স্ন্যাপচ্যাটের সবথেকে ইউনিক ফিচারটি হচ্ছে, কেউ আপনার চ্যাটের স্ক্রিনশট নিলে সাথে সাথেই আপনি এই ব্যাপারে নোটিফিকেশন পাবেন এবং জানতে পারবেন যে কে আপনার চ্যাটের স্ক্রিনশট নিয়েছে।
আর আপনার যদি সেল্ফি তোলার সময় ফেস ফিল্টার ব্যাবহার করার অভ্যাস থাকে, তাহলে আপনার জন্য স্ন্যাপচ্যাট মাস্ট ইউজ একটি অ্যাপ। কারণ, সবথেকে সুন্দর ফেস ফিল্টার এবং ফেস মাস্কগুলো আপনি স্ন্যাপচ্যাটেই পাবেন। তাই এক্ষেত্রে স্ন্যাপচ্যাটকে একইসাথে ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের মতো ব্যাবহার করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারবেন। সত্যি কথা বলতে, হোয়াটসঅ্যাপের অলটারনেটিভ হিসেবে আপনি চাইলে স্ন্যাপচ্যাট ব্যাবহার করতে পারেন, তবে এর থেকেও বেটার অপশন আপনি আরও পাবেন।
Alaap
হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তে আপনি যদি আমাদের দেশে তৈরি আমাদের দেশের নিজস্ব কোনো অ্যাপ ব্যাবহার করতে চান, তাহলে আপনার জন্য BTCL এর তৈরি আলাপ অ্যাপটি একটি ভালো চয়েজ হতে পারে। এই অ্যাপটি আপনি একেবারেই হোয়াটসঅ্যাপের মতো করে ব্যাবহার করতে পারবেন। আর, এটির ইউজার ইন্টারফেসও প্রায় হোয়াটসঅ্যাপের মতোই। তাই হোয়াটসঅ্যাপের লং টাইম ইউজার হয়ে থাকলে আপনার কাছে এই অ্যাপটি ফ্যামিলিয়ার লাগবে। আর এই অ্যাপটির সার্ভার আমাদের দেশের মধ্যে থাকায় এটির মেসেজ ডেলিভারি স্পিড এবং রেস্পন্স টাইম হোয়াটসঅ্যাপের তুলনায় কিছুটা ফাস্ট হবে।
হোয়াটসঅ্যাপের মতোই আপনি এতে টেক্সট চ্যাট, ইমেজ, ভয়েস মেসেজ পাঠাতে পারবেন। আবার ফ্রি ভয়েস কল এবং ভিডিও কলও করতে পারবেন। তবে আলাপ অ্যাপ ব্যাবহার করলে আপনি একটা এক্সট্রা ফিচার উপভোগ করতে পারবেন। তা হচ্ছে, লোকাল কলিং। আপনি এই অ্যাপ ব্যাবহার করেই বাংলাদেশের যেকোনো লোকাল অপারেটরের নাম্বারে ৩০ পয়সা প্রতি মিনিট রেটে কল করতে পারবেন এবং বাংলাদেশের যেকোনো কর্পোরেট/বিজনেস নাম্বারে ফ্রি কল করতে পারবেন। তবে শুধুমাত্র ফ্রি ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে ব্যাবহার করতে চাইলেও এটি একটি ডিসেন্ট চয়েজ। তবে, আলাপ অ্যাপে সাইনআপ করার জন্য আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকার দরকার পড়বে।
