কেন আনলিমিটেড মোবাইল ডাটা প্ল্যান নেই? কেন আপনার ৩জি/৪জি স্পীড স্লো?

ইন্টারনেট কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আজকের দিনে, একদিন ব্রডব্যান্ড লাইন বা মোবাইল ইন্টারনেট না থাকলে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। আমার নিজের কথায় যদি বলি, ঘুমানোর আগে সকল প্রিয় ওয়েবসাইট এবং বিশেষ করে ইউটিউব একবার ঢু না মেরে আসলে ঘুম আসে না, অনেক সময় ভিডিও প্লে করেই ঘুমিয়ে পড়ি, তাহলে চিন্তা করে দেখুন ইন্টারনেট ছাড়া সেদিন কি অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।

যাই হোক, একদিন এক বন্ধুর সাথে চ্যাটিং করছিলাম কোন এক সোশ্যাল অ্যাপে, হঠাৎ করে আমার একটি ফাইলের দরকার পড়লে আমি তাকে আপলোড করতে বলি, সে তখন বলে, “ভাই মোবাইল ইন্টারনেট লিমিট শেষ হয়ে গেছে” — তৎক্ষণাৎ আমার মনে এই প্রশ্ন ঘণ্টা নাড়িয়ে দিল, আচ্ছা, কেন মোবাইল অপারেটর’রা আনলিমিটেড মোবাইল ইন্টারনেট অফার করে না? যেখানে ব্রডব্যান্ড বা ওয়াইফাই ইউজার’রা আনলিমিটেড ডাটা উপভোগ করতে পারে!

সিম কোম্পানিরা কেন আনলিমিটেড ইন্টারনেট প্ল্যান বের করে না তার উপর গবেষণা আর নিজের কিছু বুদ্ধি খাটিয়ে অবশেষে বিষয়টির উপর একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হলাম। আর কি রেজাল্ট খুঁজে পেয়েছি, এই বিষয়ের উপরই আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেল!


আনলিমিটেড মোবাইল ইন্টারনেট

ইন্টারনেটের ব্যবহার এতোটা জনপ্রিয় কখনোই হয়ে উঠত না যদি মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যাবহারের সুবিধা না থাকতো। বাড়িতে বা অফিসে ব্রডব্যান্ড রয়েছে সেটা অনেক সুবিধার, কিন্তু যখন বাড়ির বাইরে থাকবেন বা কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে উঠানো ফটো গুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করবেন, সেক্ষেত্রে সেল ইন্টারনেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে, বা বলতে পারেন, ইন্টারনেট আক্সেস করার আপনার কাছে মাত্র এই একটিই অপশন থাকবে। আবার যদি কথা বলি আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলের কথা, সেক্ষেত্রে সেল ইন্টারনেটই কেবল তাদের এক মাত্র ভরসা! অনেক গ্রামে এখনো বিদ্যুৎই নেই, সেখানে ব্রডব্যান্ড কল্পনা করাও পাপ।

এখন ফিরে আসা যাক আমাদের মূল বক্তব্যের দিকে, মোবাইল অপারেটর রা কেন আনলিমিটেড ডাটা প্ল্যান অফার করে না? আবার অনেক অপারেটর তাদের কোন ইন্টারনেট প্যাককে আনলিমিটেড বলে বিজ্ঞাপন করলেও সেখানে “ফেয়ার ইউজ পলিসি” নামে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এর মানে আপনার ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার নির্দিষ্ট পরিমাণ পার হওয়ার পরে ঐ মাসের জন্য বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইন্টারনেট স্পীড কমিয়ে দেয়া হবে। আসলে তারা এরকম কেন করে?

ওয়েল, আপনি যদি সম্পূর্ণ বিষয় গুলোকে সহজে বিস্তারিত বুঝতে চান, সেক্ষেত্রে এখন কিছু ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সিস্টেম নিয়ে জ্ঞান ঝাড়তে চলেছি সেগুলোকে বুঝতে হবে। মোবাইল দিয়ে যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বা মোবাইল অপারেটর (সিম কোম্পানিরা) যে টেকনোলোজি ব্যবহার করে আপনার পর্যন্ত ইন্টারনেট পৌছিয়ে দেয় সেখানে দুইটি টার্ম থাকে। প্রথম টার্মটি হচ্ছে ওয়্যারলেস টেকনোলোজি, এবং দ্বিতীয় টার্মটি হচ্ছে ব্যান্ডউইথ কানেকশন। যদি আমরা ওয়াইফাই হটস্পট নিয়ে আলোচনা করি, তাহলে ফোনে হটস্পট ইউজ করে পিসিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে কি প্রয়োজন হয়? অবশ্যই ফোনে ওয়াইফাই থাকতে হয় এবং ফোনের ডাটা কানেকশন অন রাখতে হয়, রাইট? কিন্তু যদি ফোনের ডাটা কানেকশন অন না রেখে ওয়াইফাই হটস্পট চালান সেক্ষেত্রে কি হবে? সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি ইন্টারনেট কানেকশন পাবেন না, যদিও আপনার পিসিতে ওয়াইফাই কানেকশন থাকবে।

এর অর্থ কি দাঁড়ালো? শুধু ওয়াইফাই নয়, আপনার অ্যাক্টিভ ইন্টারনেট কানেকশনও লাগবে, তবেই আপনি ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্রডকাস্ট করতে পাড়বেন। মোবাইল অপারেটর’রাও একই প্রিন্সিপ্যাল ইউজ করে থাকে। ২জি, ৩জি, ৪জি — এগুলো জাস্ট ওয়াইফাই এর মতোই ওয়্যারলেস টেকনোলোজি, কিন্তু এগুলো ব্যবহার করে ইন্টারনেট আক্সেস প্রদান করার জন্য অবশ্যই সেল টাওয়ারে ব্রডব্যান্ড কানেকশন যুক্ত করে রাখতে হয়। সেই ব্রডব্যান্ড কানেকশন থেকেই ইন্টারনেট ২জি, ৩জি, ৪জি ওয়্যারলেস টেকনোলোজির মাধ্যমে হটস্পট তৈরি করে আপনার ফোনে সেন্ড করা হয়। এখন মোবাইল টাওয়ারে অবশ্যই টি১, টি৩ টাইপের লাইন কানেক্টেড থাকে যেগুলোর অনেক হাই ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি রয়েছে।

তাহলে এখন আপনার মোবাইল ইন্টারনেট স্পীড নির্ভর করে দুইটি ফ্যাক্টেরের উপর, প্রথমত, আপনার টাওয়ারের সাথে যে ব্রডব্যান্ড কানেক্টেড রয়েছে তার কতোটুকু ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রয়েছে এবং আপনি যে ওয়্যারলেস টেকনোলোজি  (২জি, ৩জি, ৪জি) ব্যবহার করে ইন্টারনেট কানেক্টেড করেছেন সেই টেকনোলজির নিজের কতোটুকু ব্যান্ডউইথ সাপ্লাই করার ক্ষমতা রয়েছে।

উদাহরণ নেওয়ার জন্য মনে করুণ, আপনার বাসাতে তিনটি ওয়্যারলেস রাউটার রয়েছে এবং ২০০ মেগাবিট/সেকেন্ডের একটি ব্রডব্যান্ড কানেকশন রয়েছে। তিনটি রাউটার যথাক্রমে ৩টি ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ড 802.11a, 802.11n, এবং 802.11ac (এগুলোকে যথাক্রমে ২জি, ৩জি, ৪জি সাথে তুলনার করার জন্য বুঝানো হয়েছে) ব্যবহার করে কাজ করে। এখানে 802.11a স্ট্যান্ডার্ড এর সর্বচ্চ ব্যান্ডউইথ স্পীড ৫৪ মেগাবিট/সেকেন্ড, 802.11n এর সর্বচ্চ ব্যান্ডউইথ স্পীড ৩০০ মেগাবিট/সেকেন্ড এবং 802.11ac এর সর্বচ্চ ব্যান্ডউইথ স্পীড ১৩০০ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রয়েছে।

তাহলে আপনি যদি রাউটার ১ (802.11a) এর সাথে ওয়াইফাই কানেক্টেড করেন সেক্ষেত্রে আপনি কেবল ৫৪ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্তই স্পীড পাবেন, ব্রডব্যান্ড লাইন স্পীড ২০০ মেগাবিট হয়ে কোন লাভ নেই, কেননা আপনার ওয়্যারলেস টেকনোলজির সেই ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা নেই। আবার রাউটার ২ (802.11n), এবং রাউটার ৩ (802.11ac) এর সাথে কানেক্টেড হলে আপনি অনায়াসে ব্রডব্যান্ড লাইনের সম্পূর্ণ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতে পাড়বেন, কেননা এই দুই টেকনোলোজিতে আপনার লাইনের সমস্থ ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রয়েছে।

ঠিক ২জির কথা চিন্তা করলে এই টেকনোলজির নিজেরই ক্ষমতা নেই আপনাকে বেশি স্পীড দেওয়ার, তাই আপনার অপারেটরের ইন্টারনেট স্পীড ফাস্ট থাকলেও আপনি ২জি ব্যবহার করে ভালো স্পীড পাবেন না, অপরদিকে ৩জি টেকনোলোজিও তেমন একটা উন্নত নয়, ধরুন টাওয়ারে ১০০ মেগাবিট/সেকেন্ডের লাইন লাগানো রয়েছে, কিন্তু ৩জির নিজেরই ক্ষমতা নেই সেই স্পীড গ্রহণ করার, সাথে ইউজার যতো বাড়বে ৩জি টেকনোলজির ব্যান্ডউইথ কমে যাবে, যতোই টাওয়ারে লাগানো নেটের স্পীড বেশি থাক না কেন, ৩জি নিজেই আর ইউজার হ্যান্ডেল করতে পারবে না।

আপনি যখন ২জি নেটওয়ার্ক থেকে ৩জি নেটওয়ার্কে সুইচ করেন বা ৩জি থেকে ৪জিতে সুইচ করেন, এর মানে আপনি ছোট রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি থেকে বড় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে সুইচ করলেন। আপনার ডাউনলোড এবং আপলোড আরো বেশি পরিমানে এবং দ্রুত সংঘটিত হওয়ার জন্য বড় রাস্তা খুলে যাবে। তাহলে শুধু অপারেটরদের কাছে হাই স্পীড ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই হবে না, সেগুলোকে ইউজারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ওয়্যারলেস টেকনোলোজিও সেরকম হতে হবে।

মোবাইল নেটওয়ার্কে যতো ইউজার বেড়ে যায়, ইন্টারনেট হান্ডেল করা ততোই মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়, তাদের কাছে ব্যান্ডউইথ রয়েছে কিন্তু সেগুলো ইউজারের কাছে পৌঁছে দেয়ার সিস্টেমেই ত্রুটি থাকে। ধরুন ৩জি টেকনোলোজিতে একটি টাওয়ার থেকে ৫০ জন ইউজার ভালো স্পীডে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু সেখানে যদি ইউজার ৫০০ জন হয়ে যায় সেক্ষেত্রে টাওয়ারের কানেকশনে হাই স্পীড ব্যান্ডউইথ থাকা শর্তেও আপনি ভালো স্পীড পাবেন না, কেননা ৩জির নিজেরই ৫০০ ইউজার হান্ডেল করার ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি নাই।

মোবাইল অপারেটরদের কাছে বাকী ব্রডব্যান্ড আইএসপি দের মতোই ব্যান্ডউইথের বা ইন্টারনেটের কোন কমতি নেই, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওয়্যারলেস টেকনোলোজিতে, যদি আনলিমিটেড প্যান তারা বের করে, সেক্ষেত্রে ইউজাররা ডাউনলোড/আপলোড অনেক বাড়িয়ে দেবে, এতে ৩জি বা ৪জি টেকনোলজির ব্যান্ডউইথ সমস্যা সৃষ্টি হবে এবং নেটওয়ার্কে নতুন ইউজাররা বা গড়ে সকলেই আর ভালো স্পীড পেতে পারবে না।

আপনাকে যখন ফেয়ার ইউজ পলিসি লাগিয়ে দিয়ে ইন্টারনেট স্লো করিয়ে দেওয়া হয় এর মূল কারণ আপনাকে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না দেওয়া (আপনি কোন প্যাকেজ সাবস্ক্রাইব করেছেন সেই অনুসারে) এবং আরেকটি কারণ হচ্ছে সেই সময়ে আরো ইউজারদের জন্য ভালো স্পীড সরবরাহ করানো। এখন অপারেটর’রা যদি রিয়ালভাবে বেশি ইউজার হান্ডেল করতে চায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের নেটওয়ার্ক ডিভাইজ গুলো আপগ্রেড করতে হবে, আর সেটা বিশাল ব্যয়বহুল, তাই ব্যান্ডউইথ স্পীড কমিয়ে তারা এই বিষয় গুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

কেন আপনার ৩জি/৪জি স্পীড স্লো?

আমি জানি, এটা সকলেরই কমবেশি অভিযোগ রয়েছে, যে তারা ৩জি বা ৪জি এর সাথে কানেক্টেড থাকার পরেও ভালো স্পীড পাচ্ছেন না। দেখুন, উপরের প্যারাগ্রাফ গুলো ভালোভাবে বুঝে থাকলে অবশ্যই এটাও বুঝে গেছেন ইউজার বেশি হওয়ার ফলে আপনার ইন্টারনেট স্পীড কমে যায়, এখানে দুইটি বিষয় ঘটে, হয়তো টাওয়ারের সাথে লাগানো ব্রডব্যান্ড কানেকশনেরই ব্যান্ডউইথ স্পীড কম অথবা আপনার এরিয়াতে এতোবেশি ইউজার রয়েছে যে ওয়্যারলেস টেকনোলোজি তার নিজের ব্যান্ডউইথ হান্ডেল করতে পারছে না। এখানে এই বিষয়টি সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে, ৩জি/৪জি টেকনোলজির নিজের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি রয়েছে এবং টাওয়ারে লাগানো লাইনের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি রয়েছে।

যেমন ধরুন, বাইরের দেশে ৪জিতে তারা ১০০+ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড পায়, কিন্তু আমরা ২০ মেগাবিট/সেকেন্ড এভারেজ স্পীড পাই, তাহলে সমস্যা কোথায়? আসলে এবার সমস্যাটি হচ্ছে টাওয়ারের ব্রডব্যান্ড লাইনে, মানে অপারেটরের কাছে ততোটা হাই স্পীড ইন্টারনেট লাইন নেই। কিন্তু ৪জি টেকনোলোজির কাছে যথেষ্ট ব্যান্ডউইথ স্পীড আছে, তাই টাওয়ারে হাই স্পীড লাইন কানেক্ট করলে আপনার স্পীডও বেড়ে যাবে। এখন আপনি এটা বলতে পারেন না যে অপারেটর আপনাকে ৪জিই দিচ্ছে না!

ধরুন আপনি 802.11ac রাউটার কিনেছেন, যেটার স্পীড ১৩০০ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত, কিন্তু আপনার ব্রডব্যান্ড কানেকশন স্পীড যদি ৫ মেগাবিট হয়, তাহলে আপনি ৫ মেগাবিটই পাবেন। কিন্তু এর মানে এইটা নয় আপনার রাউটার টেকনোলোজি এসি রাউটার নয়। রবি তাদের ৪জি নেটওয়ার্ক’কে ৪.৫জি বলে প্রচার করছে, এখন ব্যাস্তবিকভাবে ৪.৫জি টার্মটি সম্ভব, এটা অসম্ভব কিছু নয়, মানে তাদের নেটওয়ার্কে ১০০ মেগাবিট + স্পীড প্রদান করার ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু আপনি যদি সেই স্পীড না পান সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের কাছে সেই পরিমানে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ নেই বা ইউজার অনেক বেশি তাই আপনি ভালো স্পীড পাচ্ছেন না, কিন্তু এর মানে এইটা নয় ৪.৫জিই নয় তাদের নেটওয়ার্ক। তো বুঝতেই পারলেন, ৩জি/৪জি ইউজ করা আর স্পীড কতোটা পেতে পারেন এই দুই ফ্যাক্টরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

কখনো কি আনলিমিটেড মোবাইল ইন্টারনেট সম্ভব হতে পারে?

এবার আবার ফিরে আসা যাক আজকের আর্টিকেলের মূল বক্তব্যে, আপনি এখন নিশ্চয় বুঝতে পাড়ছেন কেন মোবাইল অপারেটর’রা আনলিমিটেড প্যান প্রদান করতে পারে না। কেননা ৩জি/৪জি টেকনোলোজি ততোটা ইউজার এবং ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করতে পারে না, এবং অপারেটর’রা নেটওয়ার্ক আপগ্রেড করার পেছনে টাকা খরচ না করেই বেশি ইউজার সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি কখনো আনলিমিটেড মোবাইল ডাটা পেতে পারবো? মানে কখনো কি মোবাইল অপারেটররা সেটা অফার করবে?

হ্যাঁ, ভবিষ্যতে সেটা হতে পারে, কিন্তু অবশ্যই ৫জি টেকনোলোজি আসার পরে! যেখানে ৪জি ৬ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সির নিচে কাজ করে সেখানে ৫জি ৩০-৩০০ গিগাহার্জ রেঞ্জের মধ্যে কাজ করতে পারবে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি যতো বাড়ানো হয় ব্যান্ডউইথ স্পীডও ততো বাড়ানো সম্ভব। এই বিশাল রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ সমর্থন করার জন্য ৫জি একে তো হিউজ ডাটা হ্যান্ডেল করতে পারবে এবং দ্বিতীয়ত ৪জি প্রত্যেক মিটারে যতো ডিভাইজ সমর্থন করতে পারবে ৫জি ১,০০০ আরো বেশি ডিভাইজ সমর্থন করতে পারবে। মানে ৫জি তে একে তো হাই স্পীড নেট পাবেন, সাথে অনেক ইউজার হান্ডেল করার খমতার ফলে মোবাইল অপারেটর’রা তখন আনলিমিটেড প্ল্যান সেল করতে সক্ষম হবে।

এখন ৫জি আসার সাথে সাথে আপনি গিগাবিট ইন্টারনেট স্পীড পেতে আরম্ভ করবেন এরকমটা নয় কিন্তু, ৫জি টেকনোলোজি গিগাবিট ব্যান্ডউইথ সাপ্লাই করতে সক্ষম, কিন্তু কতোটা স্পীড পাবেন সেটা নির্ভর করবে অপারেটরের কাছে কতোটা ব্যান্ডউইথ রয়েছে। যদি অপারেটর তাদের ব্যান্ডউইথ বৃদ্ধি করে বা সহজ করে বলতে তাদের টাওয়ারে হাই স্পীড ব্রডব্যান্ড লাগাই সেক্ষেত্রে আপনিও সেটা পেতে থাকবেন, কেননা ৫জি সেগুলো আরামে হান্ডেল করবে।


আজকের আর্টিকেলটি অনেক বড় হওয়ার পেছনে সার্থকতা রয়েছে বলে আমি মনে করি, কেননা এখানে এমন কিছু তথ্য শেয়ার করলাম সেগুলো ৯০% মানুষের কাছেই পরিস্কার নয়। আশা করছি আর্টিকেলটির মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর বিষয় গুলোকে সহজ করতে পেরেছি। তবে এখনো যদি মনে প্রশ্ন থাকে বা কিছু বুঝতে সমস্যা হয়, অবশ্যই আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমি সর্বদাই উত্তর দেওয়ার জন্য বসে রয়েছি!

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories