ডিজিটাল জুম Vs অপটিক্যাল জুম | কেন এই পার্থক্য বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?

আপনি ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার সময় কিংবা ক্যামকরডার কেনার সময় অবশ্যই ডিজিটাল জুম এবং অপটিক্যাল জুম — এই দুইটি টার্ম সম্পর্কে শুনে থাকবেন। ক্যামেরাতে কতো মেগাপিক্সেল সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, তার পাশাপাশি ক্যামেরাতে কোন টাইপের জুম ব্যবহার করা হয়েছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনার অবশ্যই এই দুই টাইপের জুম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজনীয়, কেনোনা এরা একে অপরের থেকে সম্পূর্ণই আলাদা। আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন, আর আপনি এই বিষয়ে অবশ্যই বিস্তারিত জেনে যাবেন!

অপটিক্যাল জুম

অপটিক্যাল জুম হচ্ছে ক্যামেরা লেন্সের আসল ফোকাল লেন্থের পরিমাপ। ফটোগ্রাফিতে ফোকাল লেন্থ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি টার্ম। সহজ ভাষায় বলতে গেলে এটি হলো ক্যামেরা লেন্সের দৃষ্টিক্ষেত্র। ফোকাল লেন্থ নির্ধারণ করে, ক্যামেরা লেন্স কতোটুকু সিন দেখতে পাবে। আরো সহজ ভাষায় বলতে ফোকাল লেন্থ হলো লেন্সের মাঝখান এবং ক্যামেরা সেন্সরের মাঝের দূরত্ব। যখন ক্যামেরা লেন্সকে সামনের দিকে ফিজিক্যালি মুভ করা হবে সেন্সর থেকে তখন জুম বেড়ে যাবে, কেনোনা তখন দৃশ্য থেকে ছোট অংশ ক্যামেরা সেন্সরে এসে পড়বে।

তো বেসিক ভাবে, অপটিক্যাল জুম হচ্ছে সেটা যেখানে ক্যামেরা লেন্স ফিজিক্যালি ফিজিক্যালি সামনে পেছনের দিকে মুভিং করে কোন দৃশ্যের ছোট অংশ কাছ থেকে বা দূর থেকে দেখা হয়। তাই বলতে পারেন, অপটিক্যাল জুমই হচ্ছে “রিয়াল জুম”। এতে ফোকাস দূরত্ব অ্যাডজাস্ট করে সিন সুট করা হয়, তাই কোয়ালিটি অনেক ভালো পাওয়া সম্ভব। যদি আপনার ক্যামেরাতে অপটিক্যাল জুম থাকে, সেক্ষেত্রে জুম দিয়ে ফটো উঠানোর পরেও আপনার কোয়ালিটি নষ্ট হবে না, ফটোতে যথেষ্ট বর্ণনা মজুদ থাকবে।

ডিজিটাল জুম

ডিজিটাল জুম আসলে এক ধরণের টেকনোলজি, যেখানে ডিজিটাল ফটোর কোন অংশকে ক্রোপ করে সেখানে ম্যাগনিফাইং ইফেক্ট দিয়ে সেই অংশকে বড় করে দেখানো হয়। এখানে কোনই ক্যামেরা লেন্স ফিজিক্যাল ভাবে মুভ করে না। আসলে ডিজিটাল ফটো গুলো অনেক ক্ষুদ্রক্ষুদ্র অংশ দ্বারা তৈরি, যাকে পিক্সেল বলা হয়। সহজভাবে ডিজিটাল জুম বলতে, এক টেকনোলজি ব্যবহার করে কোন ইমেজ থেকে কোন অংশের ছোট পিক্সেল গুলোকে বাছাই করা হয় এবং সেগুলোর সাইজ বড় করে দেওয়া হয়, যাতে ঐ অংশটি বড় করে দেখা যায়।

যদিও ডিজিটাল জুমে ফটোকে কাছ থেকে দেখায় কিন্তু জুম বাড়ানোর সাথে সাথে ফটো কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যায়, ফটো ঘোলা হতে থাকে, একসময় ফটো তথ্য ধ্বংস হয়ে যায়। যখন মাত্র কয়েকটা পিক্সেলকেই বড় করা হবে, সেগুলো তো আগের তথ্য গুলোকেই জাস্ট বড় করবে, ফলে কোয়ালিটি বিশ্রী হয়ে যাবে। অপটিক্যাল জুমে পিক্সেল বড় করা হয় না, লেন্স সামনে পেছনে সরিয়ে সরাসরি ইমেজকেই বড় হিসেবে ক্যাপচার করা হয়, যেখানের পিক্সেলে ঐ ইমেজ বড় হিসেবেই তথ্য থাকে, কিন্তু সেখানেও যদি আরো ডিজিটাল জুম দেওয়া হয়, তবে ইমেজ ফেটে যাবে। ফোনের ফটো গ্যালারী থেকে যখন কোন ফটো আঙ্গুল দিয়ে টেনে জুম করেন, আসলে সেটাকেই ডিজিটাল জুম বলা হয়।

যদি আপনার ক্যামেরা কোয়ালিটি সত্যিই অসাধারণ এবং হাই রেজুলেসন ফটো ক্যাপচার করতে পারে, সেক্ষেত্রে ২ গুন থেকে ৩ গুন পর্যন্ত ডিজিটাল জুম দিতে পারেন, কিন্তু এর চেয়ে বেশি জুম দেওয়া যাবে না। আর স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল জুম না ব্যবহার করার জন্যই রেকমেন্ড করবো। স্মার্টফোন ক্যামেরা সেন্সর এমনিতেই ছোট আকারের হয়ে থাকে, ছোট সেন্সর মানে কোন পরিমানে আলো আর বর্ণনা ক্যাপচার করা, এতে আবার ডিজিটাল জুম দিলে কি আর থাকবে কোয়ালিটি!

কিভাবে জুম পরিমাপ করা হয়?

যখন আপনি ডিজিটাল ক্যামেরা স্পেসিফিকেশনের দিকে দেখেন, ডিজিটাল জুম এবং অপটিক্যাল জুম উভয়ই প্রথমে একটি নাম্বার তারপরে “X” দিয়ে বোঝানো থাকে। যেমন ধরুন, “2X” অথবা “10X” জুম। এখানে বেশি নাম্বার দ্বারা এটাই বোঝানো হয়, সেই ক্যামেরা লেন্সে আরো শক্তিশালী ম্যাগনেফিকেসন রয়েছে। তবে এখানে একটি বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতেই হবে, প্রত্যেকটি ক্যামেরার “10X” জুম কিন্তু এক নয়। আপনার ক্যামেরায় কতোবড় ফোকাল লেন্থ রয়েছে সে অনুসারে আপনি জুম করতে পারবেন। আপনার ক্যামেরাতে যতো এক্স জুমই লেখা থাকুক না কেন, সেটার আসল পরিমাপ সবসময়ই ফোকাল লেন্থের উপর নির্ভরশীল।

যেমন ধরুন, আপনার ক্যামেরা’তে 10X অপটিক্যাল জুম রয়েছে যার ফোকাল লেন্থ ৩৩মিমি; তো এখানে আপনি ম্যাক্সিমাম ৩৫০মিমি পর্যন্ত ফোকাল লেন্থ পাবেন। ঠিক এভাবেই ২৮মিমি ফোকাল লেন্থের ক্যামেরাতে 10X অপটিক্যাল জুমে ২৮০মিমি পর্যন্ত ফোকাল লেন্থ পাওয়া যাবে। আপনার ক্যামেরার আসল ফোকাল লেন্থ অবশ্যই স্পেসিফিকেশনে এড করা থাকবে।

ফিক্স লেন্স ক্যামেরা

বিশেষ করে যে ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা গুলোতে ফিক্স লেন্স থাকে, মানে লেন্স পরিবর্তন করা যায় না, এতে কোম্পানি ডিজিটাল জুম ফিচার দিয়ে থাকে। যে ডিএসএলআরে লেন্স পরিবর্তন করা যায়, ফিক্স লেন্স মডেল থেকে সেগুলোর দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে। আপনি জাস্ট পছন্দ মতো আরো ভালো বা প্রশস্ত অ্যাঙ্গেলের লেন্স সেখানে লাগাতে পারবেন।

বেশিরভাগ ডিএসএলআর লেন্স গুলোতে “X” এবং নাম্বার দিয়ে জুম রেটিং করা থাকে না, তবে ফোকাল লেন্থ পরিমাপ করা থাকে। তবে একটি সাধারণ অংক করার মাধ্যমে আপনি সহজেই জুম পরিমাপ করতে পারবেন। আপনার ক্যামেরার মাক্স ফোকাল লেন্থ ব্যবহার করুণ, ধরুন সেটা ৩০০মিমি এবং আপনার ক্যামেরার আসল ফোকাল লেন্থ ধরুন ৫০মিমি; এর মানে হচ্ছে আপনার লেন্সে 6X জুম রয়েছে।


আশা করছি এতক্ষণে আপনি অপটিক্যাল জুম এবং ডিজিটাল জুম সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো জানতে পেড়েছেন। এই পয়েন্টে এসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে চাই, সেটা হচ্ছে অনেক ক্যামেরার স্পেসিফিকেশনে ডিজিটাল জুম এবং অপটিক্যাল জুম মিশ করে অনেক বড় জুম নাম্বার ক্যামেরার বাক্সে লেখা থাকে, এই বড় নাম্বার দেখে মোটেও বোকা সাজবেন না। অবশ্যই আলাদা আলাদা করে দেখে নেবেন, ডিজিটাল কতোটুকু এবং অপটিক্যাল কতোটুকু। আর আপনি আসলে কতোটুকু জুম পাবেন, সেটা নির্ণয় করা তো শিখেই নিলেন!

ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে আরো যেকোনো টাইপের আর্টিকেল পেতে চাইলে আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন, সাথে এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে যেকোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories