ওয়েবক্যাম কিভাবে কাজ করে? স্মার্টফোন দিয়ে কি ওয়েবক্যাম বানানো সম্ভব?

ওয়েবক্যাম এর কথা শুনলেই প্রথমেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে কম্পিউটার মনিটর এর ওপর লাগিয়ে রাখা ক্যামেরাটির কথা। ইন্টারনেট এর ব্যাপক প্রসার ও ব্যবহার এর কারনে পার্সোনাল কম্পিউটার এর মত যন্ত্রে ওয়েবক্যাম খুবই প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্রাংশে পরিনত হয়ে গিয়েছে। ওয়েবক্যাম মূলত এক প্রকার ভিডিও ক্যামেরা যা কম্পিউটার থেকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কে স্হির চিত্র এবং ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করে।

বর্তমানে আমরা ফেসবুকে দেখি অনেকে কম্পিউটার এর সামনে বসে লাইভে কথা-বার্তা বলছেন, এটা তারা ওয়েবক্যাম এর সাহায্যেই করছেন। এখন স্মার্টফোনের কথা বলতে গেলে, আমাদের স্মার্টফোনের যে ফ্রন্ট ক্যামেরাটি রয়েছে একে আমরা স্মার্টফোনের ওয়েবক্যামেরা বলতে পারি। কম্পিউটারে একটি ফিজিক্যাল ওয়েবক্যামেরা ব্যবহার করে অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং করা হয়, স্কাইপি বা অন্যান্য মাধ্যমে মানুষের সাথে যোগাযোগ করা হয় – ঠিক একইভাবে স্মার্টফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়েও এইসব করা হয় [স্মার্টফোনের ওয়েব ক্যামেরা ফিট করা থাকে বিল্ট-ইন ভাবে]  বলে আমরা একে ওয়েবক্যামেরা বলতে পারি।

আপনার কম্পিউটারে এক্সটারনালভাবে অথবা ল্যাপটপে বিল্টইন তথা ইন্টারনালভাবে যে ওয়েবক্যামেরাটি আছে এটি হল একটি সাধারন ভিডিও ক্যামেরা, এর ভেতর তেমন কোনো মেজর কম্পোনেন্ট নেই। ওয়েবক্যাম নাম শুনে হয়তোবা ভাবতে পারেন ক্যামেরাটির নিজস্বভাবে ওয়েবে তথা অনলাইনে সংযোগ করার ক্ষমতা রয়েছে কিনা? আসলে তা না। ওয়েবক্যামটি একটি সাধারন ইউএসবি কেবল এর সাথে কম্পিউটারে কানেক্টেড থাকা একটি ক্যামেরা মডিউল। আর সে কেবল স্হির চিত্র ও ফুটেজ কম্পিউটারে প্রেরন করে এবং তারপর সে ডাটা কোথাও কিভাবে ব্যবহার করা হবে তার দায়িত্ব পরে কম্পিউটার এর হাতে, তবে এর কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে এর নাম দেয়া ওয়েব ক্যাম। যাই হোক, কম্পিউটার সে ডাটা কে প্রোসেস করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক অথবা ইন্টারনেটে প্রেরন করার জন্য ব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড নেটওয়ার্ক মডেম।

ওয়েবক্যাম কে আমরা অনেক সময় মনে করি এটি কেবল ফেস-টু-ফেস কমিউনিকেশন এর জন্য,তবে কিন্তু আমরা একে সিকিউরিটি সার্ভিলিয়েন্স এর কাজেও ব্যবহার করতে পারি। যেহেতু বর্তমান সময়ে ওয়েবক্যাম এর দাম খুবই কম এবং খুবই কমপ্যাক্ট – সেকারনে একটি সাধারন ওয়েবক্যাম কিনে অফিস বা দোকানে লাগিয়ে রেখে তা দিয়ে দূর থেকে মনিটর করতে পারব। সেখানে কি হচ্ছে। ওয়েবক্যামেরাটিকে কি করতে হবে? কেবল একটি চালু কম্পিউটার এর সাথে ইউএসবি কেবল দিয়ে সংযোগ দিয়ে রাখতে হবে, ব্যাস! একইভাবে বাসায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানের কার্যাবিধি নজরে আনার জন্য কিন্তু ওয়েবক্যামেরা ব্যবহার করতে পারেন।

আপনি ওয়েবক্যাম দিয়ে আসলে কি করতে চান, এ বিষয়ে বহু কম্পিউটার সফটওয়্যার বিদ্যমান। এইসব সফটওয়্যার এর ব্যবহারে আপনি দূর থেকে সার্ভিলিয়েন্স এর কাজ,লাইভ স্ট্রিমিং বা অারো অনেক কিছু করতে পারবেন, সাধারন ওয়েবক্যাম দিয়ে।

অনেক সময় এসব সফটওয়্যার পেইড হয়, আর এই কারনে আপনি যদি আসলেই ওয়েবক্যাম ব্যবহার করে প্রোফেশনালি আপনার অফিস বা দোকান তদারকি করতে চান, সেক্ষেত্রে নিজের ওয়েবসার্ভার ভাড়া নিয়ে ছবি/ফুটেজ যেকোন ভাবে আপনি নিজে লাইভ স্ট্রিমিং এমনকি ব্রডকাস্ট করতে পারবেন ওয়েবক্যাম ব্যবহার করে। আমরা এখানে ওয়েবক্যাম দিয়ে কি কি করা যাবে তা বলছি, আপনাকে যে সার্ভার ভাড়া নিয়ে এসব করতে হবে তা বলছি না। শুধু জেনে রাখেন ওয়েবক্যাম ব্যবহার করে এগুলো করা সম্ভব – আর এর ফলে ওয়েবক্যাম এর ব্যবহার কিন্তু ভিডিও চ্যাটিঙেই থেমে নেই ওয়েবক্যাম এর টেকনোলোজি দুনিয়ায় অনেক ব্যবহার রয়েছে।তবে ওয়েবক্যাম এর আরেকটি দারুন বিকল্প রয়েছে, তা সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেলের শেষে জানব।

স্মার্টফোনকে ওয়েবক্যাম হিসেবে ব্যবহার

যদিও একটি ওয়েবক্যাম এখন খুবই কম দামের হয়ে গিয়েছে ; তবুও অনেক সময় এমন পরিস্হিতি হয় যে, আপনার কাছে একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আছে ঠিকই তবে তাতে কোনো ক্যামেরা নেই – এবং আপনার জরুরী কোনো মিটিং এর জন্য টেলিকনফারেন্স করতে হবে, অথবা জরুরী অন্য কোন ভিডিও চ্যাট করতে হবে ; তবে আপনার কাছে ওয়েবক্যাম নেই তখন? আপনি কি দোকান থেকে একটা কিনে এনে কাজ সারবেন?

না, এই পরিস্হিতি সামাল দেয়ার জন্য আপনি কিন্তু আপনার স্মার্টফোনকে ব্যবহার করতে পারেন, অনেকটা ওয়েবক্যাম হিসেবে। আর এক্ষেত্রে আমরা যে সফটওয়্যারটিকে ব্যবহার করব, তার নাম হল DroidCam। প্রথমত ড্রয়েডক্যাম এর একটি এনড্রয়েড অ্যাপলিকেশন ডাউনলোড করে নেব গুগল প্লে স্টোর থেকে। দ্বিতীয়ত নিচে দেওয়া লিংক থেকে কম্পিউটার এর জন্য সফটওয়্যারটি ডাউনলোড এবং ইনস্টল করে নেব।

তারপর আপনার কম্পিউটারে সফটওয়্যারটি ওপেন করবেন, সাথে এন্ড্রয়েড মোবাইলটিতেও। এখন আপনার ফোনে একটা আইপি শো করবে,আমারটা ছিল ১৯২.১৬৮.*.৩। এই আইপিটা কম্পিউটার সফটওয়্যারটিতে বসিয়ে দেবেন, ব্যাস! আপনার এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন আপনার ওয়্যারলেস ওয়েবক্যাম।তবে আপনি সফটওয়্যারটিতে ইউএসবি কেবল সিস্টেম সেট করে দিয়ে, ইউএসবি কেবল এর মাধ্যমেও ফোনকে ওয়েবক্যাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

ওয়েবক্যাম না আইপিক্যাম

এখন আরেকটি প্রশ্ন হয়ত থাকতে পারে, আইপি ক্যাম ভালো না ওয়েবক্যাম? আইপিক্যাম বা আইপি ক্যামেরা নিয়ে আমার বিস্তারিত একটি আর্টিকেল ছিলো, সেটা এখন পড়ে নিতে পারেন। আসলে সিকিউরিটি বা তদারকির জন্য যদি আপনি ক্যামেরা ব্যবহার করতে চান, তবে আইপি ক্যামেরা আপনার জন্য ভালো হবে।

এখানে ওয়েবক্যামেরা ব্যবহার করা যায়, তবে ওয়েবক্যাম এর ফুটেজ নেটওয়ার্কে ছাড়ার জন্য একটি ডেডিকেটেড কম্পিউটার প্রয়োজন হয়, যে কম্পিউটার এর সাথে ওয়েবক্যামটি কানেক্টেডড থাকে, তারওপর কম্পিউটার এর জন্য ইন্টারনেট সংযোগ তো লাগেই। তবে অন্যদিকে আইপি ক্যামেরা কে কোনো কম্পিউটার বা স্মার্টফোন এর সাথে সবসময় সংযোগ দিয়ে রাখতে হয় না। আইপি ক্যামেরাকে একটি নেটওয়ার্ক তথা ওয়াইফাই বা ল্যান কানেকশন এর সাথে সংযোগ দিয়েই রাখলেই শেষ। এরপর পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে সেই ক্যামেরার আইপি ব্যবহার করে তার ফুটেজ দেখা যাবে। সুতরাং সিকিউরিটি,নজরদারি এসব ক্ষেত্রে ওয়েবক্যামেরার চেয়ে আইপি ক্যামেরা এগিয়ে এবং এটি সাশ্রয়ী।অন্যদিকে, কেবল ভিডিও চ্যাট, ফেসবুক বা ইউটিউবে লাইভে আসার জন্য ওয়েবক্যাম আপনার জন্য পারফেক্ট হতে পারে।

আশা করি আজকের আর্টিকেলে ওয়েবক্যাম সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছেন, হয়তবা আপনি জানতেন। ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন। কিছু জানানোর থাকলে নিচে মতামত জানাতে পারেন। ধন্যবাদ

 

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories