ডুয়াল গ্রাফিক্স কার্ড | একটি গেমিং পিসিতে দুইটি গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করা কতোটা যৌক্তিক? [গেমিং এডিশন!]

যখন কম্পিউটিং এর কথা আসে, দিনদিন কম্পিউটার গুলোকে আরো দ্রুত থেকে দ্রুততর গড়ে তোলা হচ্ছে। একসময় যেখানে সিঙ্গেল কোর প্রসেসর দিয়েই সকল কম্পিউটিং চাহিদা পূরণ করা হতো, সেখানে আজ ১৮ কোর বা ২০ কোর প্রসেসরও আমাদের ওয়ার্কিং লোড নিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনে মাল্টি কোর সিপিইউ ব্যবহার করা একেবারেই কমন এবং অত্যাবশ্যক ব্যাপার, তাহলে সেই টার্ম অনুসারে মাল্টিপল জিপিইউ বা ডুয়াল গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করলে কেমন হয়? সেক্ষেত্রে সিস্টেম থেকে কতোটা বেটার গ্রাফিক্স পারফর্মেন্স পাওয়া যেতে পারে? সবচাইতে বড় প্রশ্ন হলো, একাধিক জিপিইউ ব্যবহার করার কি সত্যিই মূল্য রাখে? — চলুন, এই আর্টিকেলে বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক…


ডুয়াল গ্রাফিক্স কার্ড

যেহেতু কম্পিউটারে ভিডিও রেন্ডারিং, যেকোনো প্রকারের গ্রাফিক্স প্রসেসিং, গেমিং, এমনকি আপনার কম্পিউটার মনিটরে যেকোনো ইমেজ দেখানোর জন্য গ্রাফিক্স কার্ডই প্রধান দায়ী, সেক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার আপনার সিস্টেমে গ্রাফিক্স প্রসেসিং বুস্ট করবে। অবশ্যই ডুয়াল জিপিইউ এর পারফর্মেন্স একটি সিঙ্গেল কার্ড থেকে পাওয়া সম্ভব হবে না। অনেক সময় একটি দামী সিঙ্গেল গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করার চাইতে কমদামী দুইটি কার্ড ব্যবহার করা বেশি উপযোগী হতে পারে! অবশ্যই আপনি বেটার পারফর্মেন্স পাবেন, এটা নিশ্চিত, কিন্তু ডুয়াল কার্ড ব্যবহার করার কতোটা মূল্য রাখে, সেটা এক আলাদা কাহিনী।

এএমডি এবং এনভিডিয়া উভয় গ্রাফিক্স কার্ড কোম্পানিই একসাথে দুইটি বা আরোবেশি জিপিইউ ব্যবহার করার সলিউশন উন্মুক্ত করে রেখেছে, কিন্তু কনজিউমারদের জন্য এটি কতোটা উপযোগী? আপনার সিস্টেমে ডুয়াল জিপিইউ রান করানোর জন্য, সেটা এএমডি হোক কিংবা এনভিডিয়া হোক, অবশ্যই স্পেশাল হার্ডওয়্যার রিকোয়ারমেন্ট প্রয়োজনীয় রয়েছে। একাধিক জিপিইউ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এএমডি গ্রাফিক্স কার্ড সলিউশনের নাম হচ্ছে ক্রসফায়ার (CrossFire) এবং এনভিডিয়া কার্ড সলিউশনের নাম হচ্ছে এসএলআই (SLI)। আপনি এক কোম্পানির দুইটি কার্ড ব্যবহার করুণ, অথবা আলাদা কোম্পানির দুইটি কার্ড ব্যবহার করুণ সেক্ষেত্রে অবশ্যই সাপোর্টেড মাদারবোর্ড এবং প্রয়োজনীয় পিসিআই এক্সপ্রেস গ্রাফিক্স কার্ড স্লোট থাকা জরুরী হবে, নতুবা আপনি ডুয়াল কার্ড ব্যবহার করতে পাড়বেন না।

 

সাপোর্টেড মাদারবোর্ডে দুইটি কার্ড স্লোট থাকার সাথে একটি ব্রিজ সিস্টেমও থাকে, যেটা দুইটি কার্ডকে একত্রে কাজ করাতে সাহায্য করে। এসএলআই সলিউশনে অবশ্যই দুইটি কার্ডে সেম জিপিইউ থাকতে হবে, হোক সেটা আলাদা কোম্পানির তাতে সমস্যা নেই। যেমন যদি একটি কার্ড ১০৫০ টিআই হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই অপর কার্ডটিকেও ১০৫০ টিআই হতে হবে, তাহলেই কেবল এসএলআই সলিউশনে কাজ করাতে পাড়বেন। অপরদিকে ক্রসফায়ার সলিউশনে একটি জিপিইউ এর সাথে আলাদা অনেকটা একই টাইপের জিপিইউ কাজ করতে পারে। তবে কোন জিপিইউ এর সাথে কোন জিপিইউ কাজ করতে পাড়বে, তার লিস্ট দেখার জন্য এনভিডিয়ার এসএলআই পেজ এবং এএমডির ক্রসফায়ার পেজ চেক করতে পারেন।

যাই হোক, সাপোর্টেড কার্ড গুলো ব্রিজের সাথে কানেক্টেড করিয়ে দিয়ে এবার কার্ড গুলোকে রান করানোর জন্য এসএলআই বা ক্রসফায়ার ড্রাইভার প্যানেল থেকে সেটিং এনাবল করে দিতে হবে। এখানে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, আপনার ড্রাইভার সফটওয়্যারটি জেনো আপটু-ডেটেড হয়ে থাকে, আপনার ড্রাইভার প্রোগ্রামটি যদি এসএলআই বা ক্রসফায়ার সমর্থন করে সেক্ষেত্রে পারফর্মেন্সে লক্ষণীয় উন্নতি অনুভূত করতে পাড়বেন। যদিও এটি পারফর্মেন্স একেবারেই দিগুন করে দেবে না, তবে বেশিরভাগ গেমের এর ক্ষেত্রে লক্ষ্য করে দেখবেন স্মুথ এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যাচ্ছে এবং আগের থেকে অনেক বেটার পারফর্মেন্স প্রদান করবে, আর সেটা আপনি নিজে ফিল করতে পাড়বেন।

সুবিধা

মাল্টিপল গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করার প্রধান সুবিধাটি হচ্ছে পারফর্মেন্স, বিশেষ করে গেমিং এ পারফর্মেন্স উন্নতি। যখন আপনি ডুয়াল গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করেন, ৩ডি ইমেজ রেন্ডারিং এর সময় টাস্ক দুইটি কার্ডের মধ্যে শেয়ার হয়ে যায়, এতে কার্ডে লোড কম পরে, ভালো পারফর্মেন্স প্রদান করতে পারে। আপনি আগের গেম গুলো আরো বেশি ফ্রেম রেটে, আরোবেশি রেজুলেশনে, বেশি ফিল্টার ব্যবহার করে খেলতে পারেন। এমনটি আপনার গেমের গ্রাফিক্স কোয়ালিটিরও উন্নতি দেখতে পাওয়া যায় নাটকীয়ভাবে!

অনেকে টাকা এবং পারফর্মেন্সের মধ্যে ব্যালেন্স করার জন্য ডুয়াল জিপিইউ ব্যবহার করে। অনেক সময় দুইটি মিডরেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ড থেকে একটি হাই এন্ড দামী গ্রাফিক্স কার্ডের তুলনায় একই পারফর্মেন্স পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে দুইটি কার্ড লাগিয়ে আপনি টাকা বাঁচালেন আবার অনেকটায় হাই এন্ড কার্ডের পারফর্মেন্সও গেইন করলেন। আর সত্যি বলতে ডুয়াল কার্ড ব্যবহার করা সিস্টেম দেখতেও অনেক কুল লাগে, বেশি প্রফেশনাল লুক চলে আসে আপনার গেমিং সেটআপটিতে।

আজকের বেশিরভাগ কার্ড এবং মনিটর ১০৮০পি রেজুলেশনে চলে, ডুয়াল জিপিইউ সেটআপ করার মাধ্যমে আপনি মাল্টি মনিটরে গেমিং করতে পাড়বেন, এতে অনেক বেটার গ্রাফিক্স এক্সপেরিয়েন্স করতে পাড়বেন নিঃসন্দেহে। সাথে ৪কে রেজুলেশন গেমিং এর ক্ষেত্রেও অনেক গ্রাফিক্স বুস্ট লক্ষ্য করতে পাড়বেন। ডুয়াল কার্ড বিশেষ করে তাদের জন্য অত্যন্ত সুবিধার, যারা তাদের পুরাতন কার্ডকে সম্পূর্ণ রিপ্লেস না করে আরেকটি সমমানের কার্ডের সাথে ব্যবহার করতে চান। এতে আপনার খরচ কিছু কম আসবে, কিন্তু হাই এন্ড কার্ডের মতো পারফর্মেন্স পেতে পাড়বেন।

অসুবিধা

সুবিধা গুলো সত্যিই অসাধারণ তাই না? — কিন্তু ডুয়াল ভিডিও কার্ডের বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে, আর এই অসুবিধা গুলোই এই সিস্টেমের মূলহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম সমস্যাটি হচ্ছে, জিপিইউ এর দাম; যেখানে সিঙ্গেল কার্ড কিনতেই অনেকে হিমশিম খেয়ে যায় সেখানে ডুয়াল কার্ড সেটআপ অনেকটা কল্পনার ব্যাপার। চিন্তা করে দেখুন, দুইটি ১০৫০ টিআই কেনা কতোটা ব্যয়বহুল ব্যাপার হতে পারে। অনেক ডুয়াল কার্ড সিস্টেম থেকে সিঙ্গেল কার্ডের পারফর্মেন্স অনেক ভালো হয়, সেক্ষেত্রে ডুয়াল কার্ডে কোনই লাভ আসবে না। তাছাড়া সকল গেম কিন্তু ডুয়াল জিপিইউ ব্যবহার করে ভালো পারফর্ম করে না, অবশ্যই আলাদা কাজে বুস্ট পাবেন, কিন্তু তারপরেও অনেক গ্রাফিক্স ইঞ্জিন ভালোভাবে ডুয়াল জিপিইউ হ্যান্ডেল করতে পারে না।

আপনার কম্পিউটার কেসের মধ্যে এক সাথে দুইটি জিপিইউ বসে আছে, এর মানে এদের কাজ করার জন্য আরো বেশি পাওয়ার প্রয়োজনীয়। আজকের জিপিইউ গুলো অনেকবেশি পাওয়ার হাংরি হয়ে থাকে, একটি হাই এন্ড জিপিইউ ই মোটামুটি ৫০০ ওয়াট পাওয়ার খেয়ে ফেলে, সেখানে ডুয়াল সেটআপ করলে ৮৫০ ওয়াট + পাওয়ার সাপ্লাই এর প্রয়োজন পড়বে, সেটা পার্সোনাল পিসির জন্য অনেকবেশি পাওয়ার। শুধু তাই নয়, দুইটি জিপিইউ একত্রে আরো বেশি নয়েজ, আরোবেশি উত্তাপের সৃষ্টি করবে, আর এই পয়েন্টে এসে আপনি অনুধাবন করবেন যে এই সিস্টেম আপনার জন্য নয়।

তাছাড়া আপনি ডুয়াল গ্রাফিক্স কার্ড থেকে ঠিক কতোটা উন্নত পারফর্মেন্স পাবেন সেটা অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভর করবে আপনার পিসির বাকি হার্ডওয়্যার গুলোর উপর। যেমন ধরুন আপনি অনেক ভালো জিপিইউ লাগিয়েছেন, কিন্তু আপনার সিপিইউ অনেক পুরাতন মডেলের, সেক্ষেত্রে আপনি কখনোই ভালো পারফর্মেন্স পেতে পাড়বেন না। সিপিইউ ডাটা সেন্ড করার সময় ডাটা থ্রটলিং করবে, এতে জিপিইউ ঠিক মতো প্রসেস করতে পাড়বে না। এর মানে, ডুয়াল জিপিইউ সিস্টেম শুধু হাই এন্ড পিসির জন্যই উত্তম, তাছাড়া উল্টা পিসি স্লো হয়ে যেতে পারে।


দেখুন, আপনি যদি হাই এন্ড ইউজার হয়ে থাকেন, হাই এন্ড গেমিং করেন, একসাথে মাল্টি মনিটর ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে ডুয়াল ভিডিও কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাধারণ কনজিউমারদের জন্য ডুয়াল কার্ডের কোনই প্রয়োজনীয়তা নেই। এতো ঝামেলা করার কোন প্রয়োজন নেই, যদি আপনি সাধারণ ইউজার হয়ে থাকে। যদি এক্সট্রিম রেজুলেসন পেতে চান বা একাধিক ১০৮০পি বা ৪কে মনিটর হ্যান্ডেল করতে চান, সেক্ষেত্রে ডুয়াল ভিডিও কার্ড লাগাতে পারেন। তবে আমার মনে হয়, উপরে যথেষ্ট পরিমানে আলোচনা করে নিয়েছি, আর আপনি সহজেই বুঝে গেছেন আপনার ঠিক কোনটা করা প্রয়োজনীয়।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories