ম্যালওয়্যার কি? ভাইরাস, ট্রোজান, ওয়র্মস | কীভাবে বাঁচবো?

ম্যালওয়্যার, ভাইরাস, ট্রোজান, ওয়র্মস ইত্যাদি নাম গুলো আপনারা সকল ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার ইউজাররা অবশ্যই শুনে থাকবেন। এখন এই সব কি জিনিস? এগুলো কীভাবে আপনার সিস্টেমকে খারাপ করতে পারে? এবং কীভাবে এগুলো থেকে আপনি বাঁচতে পারেন? এসকল বিষয় নিয়ে আজকের এই পোস্ট লিখতে চলেছি। বন্ধুরা, আপনারা ম্যালওয়্যার সম্পর্কে আজ পর্যন্ত যতোটুকু জেনেছেন, শুনেছেন, দেখেছেন, আমার অনুরোধ সব কিছু একদম এক সাইটে রেখে দিন। এবং চলুন এবার ফ্রেস ভাবে সবকিছু জেনে নেওয়া যাক।


ম্যালওয়্যার???

ম্যালওয়্যারের পুরো নাম হলো ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার (Malicious Software)। অর্থাৎ এটি একধরনের সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যেটি একদম ঠিক নেয়, এবং খারাপ ভাগ্যবসত যদি আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করে তবে আপনার পুরো কম্পিউটারটিকে অকেজো করে ফেলতে পারে। এখন কথা বলা যাক এই ম্যালওয়্যার কোথায় কোথায় থেকে আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে তা নিয়ে। দেখুন আজকের দিনে আপনার কম্পিউটারটি আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে কমন সোর্স হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেটে যদি আপনি কোন ম্যালিসিয়াস ওয়েবসাইটে থাকেন, যদি আপনি কোন পাইরেটেড মুভি ডাউনলোড করেন, যদি পাইরেটেড সফটওয়্যার এবং গেমস ডাউনলোড করেন, যদি আপনি কোন ম্যালিসিয়াস ওয়েবসাইটে ম্যালিসিয়াস অ্যাডের উপর ক্লিক করেন অথবা আপনার কাছে যদি কোন ম্যালিসিয়াস ইমেইল আসে তবে এগুলোর মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারটি ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। অনলাইন ছাড়া অফলাইনেও আপনার কম্পিউটার আক্রান্ত হতে পারে। আপনি যদি কোন অজানা সোর্স থেকে আসা সিডি, ডিভিডি, বা পেনড্রাইভ আপনার কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করেন তবে আপনার কম্পিউটার আক্রান্ত হতে পারে।

এখন ম্যালওয়্যারের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা যাক। এটি প্রধানত ৩ প্রকারে দেখতে পাওয়া যায়। যথাঃ ভাইরাস, ট্রোজান, এবং ওয়র্মস। এই ৩ বান্দা আলাদা আলাদা জিনিস 😛 এবং আলাদা আলাদা ভাবে আপনার কম্পিউটারের ক্ষতি সাধন করতে সর্বদা প্রস্তুত। চলুন এই ভার্চুয়াল মনস্টার গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

ভাইরাস???

চলুন সর্ব প্রথম কথা বলা যাক ভাইরাস নিয়ে। ভাইরাস কি করে, এটি আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করে কিছু খণ্ডিত এবং নির্দিষ্ট ফাইল সমূহকে অকেজো করে ফেলতে পারে। মনে করুন আপনার কাছে একটি ওয়ার্ড ডকুমেন্ট আছে, এখন যদি সেটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে সেই ডকুমেন্টটি আমি আর ওপেন করতে পারবোনা। কিংবা ফাইলটি পুরোপুরি ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা জাঙ্ক এ রূপান্তরিত হতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে যে ভাইরাস আপনার পুরো ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যারকেই অকেজো করে ফেলতে পারে। এই অবস্থায় আপনি যদি কোন ফাইল কপি করেন বা কারো সাথে শেয়ার করেন, তবে সেই ভাইরাস আক্রান্ত ফাইল অন্য কম্পিউটারে প্রবেশ করে সেই কম্পিউটারটিকেও অকেজো করে ফেলতে পারে।

ওয়র্মস???

এবার ম্যালওয়্যারের আরেকটি ক্যাটাগরি ওয়র্মস নিয়ে আলোচনা করা যাক। ওয়র্মস কি করে, এটি সাধারনত নিজেকে গুন করার চেষ্টা করে। এর মানে আপনার কম্পিউটারটি যদি ওয়র্মস দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে এটি আপনার কম্পিউটারে অনেক একই ফাইলস তৈরি করবে এবং আপনার সিস্টেমকে স্লো করে দেবে। এবং আপনার কম্পিউটার থেকে যদি আরেকটি কম্পিউটারে কিছু কপি করেন তবে এটি সেই কম্পিউটারকেও আক্রান্ত করবে। এবং একই ভাবে হাজার হাজার একই ফাইল একই নামের ফোল্ডার বারবার তৈরি করে আপনার সিস্টেমকে স্লো করে ফেলবে।

ট্রোজান???

এবার আসি ম্যালওয়্যারের আরেকটি ক্যাটাগরি ট্রোজান এর কথা নিয়ে। ট্রোজান সবচেয়ে চালাক প্রকিতির একধরনের ম্যালওয়্যার। কারন এটি ছদ্মবেশে আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। আপনার হয়তো মনে হতে পারে এটি একটি আসল সফটওয়্যার কিন্তু ট্রোজান আপনার কম্পিউটারে প্রবেশের মাধ্যমে আপনার সিস্টেমের ক্ষতি সাধন করে। উদাহরণ স্বরূপ অনেক মেমোরি ক্লিনার দেখতে পাওয়া যায়, যেগুলোতে ক্লিক করার পর মনে হয় যে আপনার মেমোরি বুঝি ক্লিন হয়ে গেলো 😀 কিন্তু আসলে মেমোরি আর জ্যাম হয়ে যায়। তাছাড়াও বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস, স্পীড বুস্টার এর রুপেও ট্রোজানকে দেখতে পাওয়া যায়। আপনার মনে হবে যে আপনার মেমোরি ক্লিন করবে বা কম্পিউটারের স্পীড বুস্ট হবে। কিন্তু একবার এই জিনিস আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করার পরে এটি আসল রুপ দেখাবে, এবং আপনার সিস্টেম স্লো করতে আরম্ভ করবে। এবং শুধু আপনার কম্পিউটারের স্পীড স্লো করেই এর পেটের ভাত হজম হবে না 😛 বরং আপনার কম্পিউটারে বিভিন্ন ভাইরাস, ওয়র্মস, ম্যালওয়্যার প্রবেশের জন্য রাস্তা তৈরি করে দেবে।

ম্যালওয়্যার থেকে বাঁচার উপায়

 

তো আপনারা জানলেন যে এই ম্যালওয়্যার প্রধানত ৩ প্রকারের হয়ে থাকে। তাছাড়াও আরেকটি জিনিস আছে, যার নাম হলো স্পাইওয়্যার। কিন্তু একে নিয়ে এখানে আলোচনা করবোনা। আরেকটি পোস্টে বলবো যে এটি কি, কীভাবে ক্ষতি করে এবং এ থেকে বাঁচার উপায় জানাবো। আমরা এখন ম্যালওয়্যার থেকে বাঁচার উপায় সমূহ জানবো।

দেখুন সর্বপ্রথম উপায় তো এটি যে, আপনি আপনার পুরো ধারনার এবং সাবধানতার ব্যবহার করুন। আপনি আপনার কমন সেন্স ব্যবহার করুন। চেষ্টা করুন ইন্টারনেটে যে ওয়েবসাইট গুলো ভিসিট করেন তা যেন বিশ্বস্ত সাইট হয়। একটি পপুলার, বড়, এবং বিশ্বস্ত সাইট সাধারনত ম্যালিসিয়াস হয় না। যেকোনো ওয়েবসাইটের লিঙ্কে ক্লিক করে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকুন। কোন ওয়েবসাইট ভিসিট করার সময় আপনার কাছে যদি অ্যাড আসে যে, “আইফোন জিতুন, এখানে ক্লিক করুন” বা “আপনার কম্পিউটারের সকল ভাইরাস রিমুভ করুন” ইত্যাদি অ্যাডে কখনোয় ক্লিক করবেন না। তাছাড়া আপনার কাছে যদি এমন কোন মেইল আসে যে, “আপনি এতো কোটি টাকার লটারি জিতেছেন” বা “আপনার জন্য লেটেস্ট অফার নিয়ে নিন অমুক অ্যান্টিভাইরাস ১ বছরের জন্য ফ্রি” তো ইত্যাদি মেইল কখনোয় ওপেন করবেন না। বা মেইলের সাথে আসা ফাইল কখনোয় ডাউনলোড করবেন না। তো অনলাইনে এ সকল বিষয় বস্তুর উপর বিশেষ ধ্যান রেখে আপনার কম্পিউটারকে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাচাতে পারেন।

তাছাড়াও আমি বলবো একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস এবং সাথে ইন্টারনেট সিকিউরিটি ব্যবহার করুন। তবে একটি বিশেষ খেয়াল রাখুন এই অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি যেন একটি পেইড ভার্সন হয় একটি লাইসেন্সড ভার্সন হয়। আপনি যদি ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস বা পাইরেটেড অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করেন তবে আমার কথা শুনে নিন, এতে আপনার সামান্যতম লাভ হবে না। বরং উল্টা আপনি ট্রোজান আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন। তো আমার মতে যেকোনো কোম্পানির হোক না কেন একটি পেইড ভার্সন অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টিম্যালওয়্যার আপনার কাছে থাকা প্রয়োজনীয়।

তাছাড়া আপনি যদি কোন প্রকারের পাইরেটেড কনটেন্ট ব্যবহার না করেন তবে তা আপনার জন্য এক অধিক সুরক্ষা স্তর তৈরি হয়। যদিও সবসময় পাইরেটেড মুভিজ বা সফটওয়্যারের ভেতর ভাইরাস থাকেনা, তবুও কখনো কখনো থাকতেও পারে। তাছাড়া আপনার কম্পিউটারে কোন সিডি, ডিভিডি, বা পেনড্রাইভ প্রবেশ করানোর আগে ভেবে নিন যে এগুলো বিশ্বস্ত সোর্স থেকে আপনার কাছে এসেছে কিনা। কেনোনা অনেক সময় ১০ মিনিটের এক কপি পেস্ট আপনার পুরো কম্পিউটার খারাপ করার জন্য দায়ী হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার কাছে একটি পেইড ভার্সন অ্যান্টিভাইরাস থাকলে অনেক ভালো হয়। যদি না থাকে তবে কোন প্রকার সিডি, ডিভিডি, বা পেনড্রাইভ প্রবেশ করানোর আগে ভালো করে ভেবে নিন। ভুল করেও একবার যদি এই ভার্চুয়াল এভিল গুলো আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করে বসে, তো আপনি অনেক ভোগান্তির শিকার হতে পারেন।

আমি ম্যালওয়্যার দ্বারা আগে থেকেই আক্রান্ত হয়ে আছি, আমি কি করবো?

 

আপনার কম্পিউটারটি যদি আগে থেকেই বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনি একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টিম্যালওয়্যার দ্বারা আপনার কম্পিউটারকে ম্যালওয়্যার মুক্ত করাতে পারেন। অনেক সময় অনেক অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যারও আপনার পিসিকে ক্লিন করতে পারে না। এই অবস্থায় আপনার কম্পিউটারের হার্ড-ড্রাইভ সম্পূর্ণ ইরেজ করে এই আক্রমন থেকে বাঁচতে পারেন। এসব ছাড়াও ফায়ারওয়াল ব্যবহার করাও একটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফায়ার-ওয়াল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লেখা এই পোস্ট টি পড়তে পারেন। তো আপনার ইন্টারনেট সুরক্ষা বৃদ্ধি করার জন্য আপনি একটি ভালো ফায়ারওয়াল ব্যাবহার করতে পারেন। আপনি যদি কোন ইন্টারনেট সিকিউরিটি ওয়ালা অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করেন তবে সেখানেও একটি শক্তিশালি ফায়ারওয়াল পেয়ে যাবেন, তা ব্যবহার করতে পারেন। এবং এটির ব্যাবহারের সাহায্যে অনলাইনের মাধ্যমে আপনার কাছে যেসকল অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় আসতে পারতো তা আর আসবে না। এবং এভাবে আপনি আপনার কম্পিউটারকে আরো সিকিউর বানাতে পারবেন।

শেষ কথা

বন্ধুরা আশা করছি ফায়ারওয়াল, ম্যালওয়্যার, ভাইরাস, ট্রোজান, ওয়র্মস নিয়ে আলোচিত এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক কাজে লাগবে। এবং এসব জিনিস সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনার যেকোনো প্রকারের প্রশ্ন অথবা মতামত জানাতে নিচে কমেন্ট করতে একদম ভুলবেন না। আর যেহেতু পোস্ট টি পড়া হয়ে গেছে আপনার তাই শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। আপনি যদি এই ব্লগে নতুন হয়ে থাকেন তবে এই সাইটকে বুকমার্ক করে রাখুন। কেনোনা আমি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন টেকনোলজি এবং সিকিউরিটি নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করি। তাই নিয়মিত ভিসিট করতে ভুলবেন না।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories