ফায়ারওয়াল (Firewall) কি? আপনার জন্য কতটা প্রয়োজনীয়?

ফায়ারওয়াল এর নাম এই কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এর দুনিয়াই নতুন কিছু না। আজ আলোচনা করবো ফায়ারওয়াল কি (Firewall)? এটা কীভাবে কাজ করে? এবং আপনার কম্পিউটার এর জন্য এটি কতটা প্রয়োজনীয়? তা নিয়ে। বন্ধুরা পোস্ট টির গভীরে যাওয়ার আগে জানিয়ে দেয় যে ইনক্রিপশন (Encryption) নিয়ে আমি একটি বিস্তারিত পোস্ট করেছি, আপনি চাইলে চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন।


ফায়ারওয়াল???

বন্ধুরা, ফায়ারওয়াল (Firewall) কি? এবং এটি কীভাবে কাজ করে? এই দুইটি বিষয় যদি আমি আপনাকে বলে দেয় তবে আপনি নিজে থেকেই জেনে যাবেন যে এটি আপনার কম্পিউটারের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়! কম্পিউটার জগতের বাহিরে উদাহরণ দিতে গেলে, ফায়ার ওয়াল এমন একধরনের প্রোটেকশন যা বাহিরের আগুন ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়না এবং ভেতরের আগুন বাহিরে যেতে দেয় না। এভাবেই ফায়ার ওয়াল দুইদিক থেকেই আপনাকে প্রটেক্ট করে। যদি কম্পিউটারের দুনিয়ায় ফায়ারওয়াল নিয়ে কথা বলি তো এটি এমন এক ধরনের প্রোটেকশন, যখনই আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন আপনার কম্পিউটারের মাধ্যমে এবং যেকোনো ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করেন সেটা অনলাইন ভিডিও দেখুন আর কিছু ব্রাউজ করুন বা কোন মেইল পাঠান তো এই সময় ফায়ার ওয়াল আপনাকে সুরক্ষা প্রদান করে আপনার কম্পিউটারে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু প্রবেশ হওয়া থেকে। অনেক সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত সফটওয়্যার, ম্যালওয়ার ইত্যাদি অনুমতি ছাড়া কম্পিউটারে প্রবেশ করে ফেলে। এবং প্রবেশ করার পরে আপনার কম্পিউটারের ফাইলস বা সিস্টেমের ক্ষতি সাধন করে। ফায়ারওয়াল শুধু মাত্র বিশ্বস্ত সাইটকে অনুমতি প্রদান করে ফাইল আপনার কম্পিউটারে রাখার জন্য। এবং সকল অনাকাঙ্ক্ষিত সফটওয়্যার, ম্যালওয়ার ইত্যাদিকে কম্পিউটারে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করার জন্য বাধা প্রদান করে থাকে।

অনুরুপ ভাবে মনে করুন, আপনার কম্পিউটারটিতে কোন ভাইরাস আছে এবং আপনার কম্পিউটারটি কোন লোকাল নেটওয়ার্ক এর সাথে সংযুক্ত হয়ে আছে। এবং সেখানে আরো ১০-২০ টা কম্পিউটার যুক্ত আছে (যেমনটা আপনার অফিসে হয়ে থাকে)। তো আপনার কম্পিউটারটি তো কোন ভাবে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েই গেছে, কিন্তু ফায়ারওয়াল আপনার লোকাল নেটওয়ার্কে থাকা কম্পিউটার গুলোতে যেন সেই ভাইরাস না ছড়াতে পারে তার সুরক্ষা হিসেবেও কাজ করে।

ফায়ারওয়ালের প্রকারভেদ

বন্ধুরা, ফায়ার-ওয়াল সাধারনত দুই প্রকারে দেখতে পাওয়া যায়। একটি হলো হার্ডওয়্যার নির্ভর ফায়ার-ওয়াল এবং আরেকটি হলো সফটওয়্যার নির্ভর ফায়ার ওয়াল। এখন চলুন এর প্রকার ভেদ নিয়ে সাধারন কিছু আলোচনা করা যাক।

 হার্ডওয়্যার নির্ভর ফায়ার-ওয়াল সাধারনত রাউটারে দেখা যায়। তাছাড়া আলদা ডেডিকেটেড ফায়ার-ওয়াল ডিভাইজ ও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এবং এই ডিভাইজ গুলো এক প্রকার হার্ডওয়্যার প্রোটেকশন প্রদান করে থাকে। মনে করুন আমি একটি রাউটার বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসলাম এবং এর সাহায্যে ১০ টি ডিভাইজ সংযোগ করলাম ইন্টারনেটে। এখন আমার রাউটারটিতে যদি ফায়ার ওয়াল চালু করা থাকে তবে রাউটারটি আমার সংযোগ করা ১০ টি ডিভাইজকেই ফায়ার ওয়াল সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসবে। এখন এই রাউটার ফায়ার-ওয়াল কীভাবে কাজ করে, আপনি যখনই কোন ইন্টারনেট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন বা প্রবেশ করার জন্য আপনার ব্রাউজার থেকে রিকুয়েস্ট পাঠান তখন আপনার সেন্ড করা রিকুয়েস্ট এর সাথে আপনার নেটওয়ার্ক আইডি যুক্ত হয়ে যায়। এবং রাউটার সেই রিকুয়েস্টকে প্যাকেট রূপে কাঙ্ক্ষিত সার্ভার এর কাছে পাঠিয়ে দেয়। এবং সার্ভার থেকে যখন ফিরতি প্যাকেট রাউটার এর কাছে পৌছায় তখন সেই প্যাকেটেও আপনার নেটওয়ার্ক আইডি যুক্ত থাকে। এবং রাউটারে অবস্থিত ফায়ার-ওয়াল আসল প্যাকেট গুলো চিনতে পারে এবং সেগুলো আপনার ডিভাইজে সেন্ড করে দেয়। এখন রাউটারে যদি এমন কোন প্যাকেট আসে যাতে আপনার নেটওয়ার্ক আইডি নেয়, তবে ফায়ার-ওয়াল সেটিকে তাৎক্ষনিক ব্লক করে দেয়।

বিভিন্ন এন্টিভাইরাস নির্মাতা কোম্পানিগন যেমন অ্যাভাস্ট, নরটন, এভিজি, ম্যাক্যাফি ইত্যাদিরা সাধারনত তাদের এন্টিভাইরাস এর সাথে ফায়ার ওয়াল সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। তাছাড়াও উইন্ডোজ এর ভেতরে ডিফল্ট ভাবে ফায়ারওয়াল এর সুবিধা থাকে। এবং সফটওয়্যার নির্ভর ফায়ার ওয়াল গুলোও হার্ডওয়্যার নির্ভর ফায়ার-ওয়াল এর মতোই কাজ করে। এবং এরা একটি কাজ এক্সট্রা করে সেটা হলো মনে করুন আপনি আপনার সিস্টেমে বা কম্পিউটারে কোন গেম ইন্সটল করলেন বা কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করলেন এবং যদি সেই গেমটি বা সফটওয়্যারটি কোন ইন্টারনেট সংযোগের জন্য রিকুয়েস্ট করে তবে আপনার কম্পিউটারে অবস্থিত ফায়ার ওয়াল থেকে আপনার কাছে একটি পপআপ আসবে অনুমতি চেয়ে। আপনি ইন্টারনেট অনুমতি প্রদান না করা পর্যন্ত আপনার ইন্সটল করা সফটওয়্যারটি ইন্টারনেট ব্যবহার করে কোন ডাটা সেন্ড বা রিসিভ করতে পারবেনা। উইন্ডোজ ফায়ার ওয়াল সবসময় এটা মনিটর করে যে, আপনার কম্পিউটারের যে আউট গোয়িং ট্র্যাফিক এবং যে ইঙ্কামিং ট্র্যাফিক তাদের উৎস কোথায়, তাদের আইপি অ্যাড্রেস কি, এরা বিশ্বস্ত কিনা বা কোন ইঙ্কামিং ট্র্যাফিক অনাকাঙ্ক্ষিত সফটওয়্যার ইন্সটল করছে কিনা। তো এই সকল জিনিস মানেজ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে কোন কোন ট্র্যাফিক কে আসতে দেবে এবং কোন গুলো ব্লক করবে।

ফায়ারওয়ালের প্রয়োজনীয়তা

 

অনেক সময় আপনি ভাবতে পারেন যে, “ধুর এটি অনেক বিরক্তিকর একটি বিষয়, বারবার সব সফটওয়্যার এর জন্য অনুমতি দিতে হয়, বারবার পপআপ আসে” ইত্যাদি। তবে আমি বলবো এটি একটি অনেক ভালো জিনিস। যদি এটি না থাকে তবে আপনার কম্পিউটারে যেকোনো ভাবে যেকোনো স্থান থেকে আক্রমন আসতে পারে। এবং তা প্রতিরোধ করার জন্য আপনার কাছে কোন ব্যাবস্থা থাকবেনা। আপনি ইন্টারনেটে হয়তো ব্যবহার করছেন গুগল ডট কম কিন্তু কোথায় থেকে যে কোন সফটওয়্যার এসে কম্পিউটারে ইন্সটল হয়ে যাবে টেরও পাবেন না। আর সেই সফটওয়্যার আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করে আপনার ডাটা চুরি করতে পারে, আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট ইনফর্মেশন বা আপনার ক্রেডিট কার্ড ইনফর্মেশন চুরি করতে পারে। তো এই অবস্থায়  হার্ডওয়্যার নির্ভর ফায়ার-ওয়াল হোক আর সফটওয়্যার নির্ভর ফায়ারওয়াল হোক, আপনার একটি ফায়ারওয়ালের অবশ্যই প্রয়োজন যদি আপনি আপনার কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কেনোনা ইন্টারনেট জগতে অনেক ভাইরাস যুক্ত সাইট আছে।

অনেক সময় আপনার কম্পিউটারে অনেক সফটওয়্যার আসে অ্যান্টিভাইরাস এর রুপ ধারণ করে কিন্তু সেই সফটওয়্যার গুলো নিজেই এক ধরনের ভাইরাস হয়ে থাকে। কখনো কখনো হয়তো আপনি কোন সাইটে প্রবেশ করলেন আর আপনার কাছে ম্যাসেজ আসে ” ইউর সিস্টেম মেমোরি ইজ লো” অথবা “আপনার ডিভাইজটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এক্ষুনি পরিষ্কার করে নিন” ইত্যাদি। আপনি এই সকল ম্যাসেজ পড়ে যখনই সেগুলতে ক্লিক করেন তখনই আপনার কম্পিউটারে কোন সফটওয়্যার ডাউনলোড হয়ে যায়। এবং এই সফটওয়্যার গুলো মেমোরি ক্লিন না করে উল্টা মেমোরি জ্যাম করে ফেলবে আপনার 😛 তো এই সকল অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় থেকে বাঁচতে আপনার কম্পিউটারে ফায়ারওয়াল থাকা অনেক বেশি জরুরী।

শেষ কথা

এতক্ষণে নিশ্চয় খুব সুন্দর কে বুঝে গেছেন যে ফায়ার-ওয়াল কি? কীভাবে কাজ করে এবং এটা কেন প্রয়োজনীয়? আশা করি আপনি আপনার কম্পিউটারে অবশ্যই ফায়ার-ওয়াল ব্যবহার করবেন। জানলেনই তো এটা কতটা প্রয়োজনীয়। যেহেতু এটি নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশ্ন তাই এই পোস্ট টি বেশি বেশি শেয়ার করে আপনার সকল বন্ধুদের জানিয়ে দিন। আপনার কাছে যদি এ বিষয়ের উপর আর ভালো তথ্য থাকে কিংবা কোন প্রশ্ন থাকে তবে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট করে নিচে জানাবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories