হার্ড ড্রাইভ অ্যাক্টিভিটি লাইট কি? কেন এটি সর্বদা ফ্ল্যাশিং করতে থাকে?

আপনি ডেক্সটপ ব্যবহার করুণ, আর ল্যাপটপ —দেখবেন আপনার কম্পিউটারে একটি হার্ড ড্রাইভ অ্যাক্টিভিটি লাইট লাইট রয়েছে যেটা সর্বদা ফ্ল্যাশিং করতেই থাকে। আপনি কম্পিউটারে কোন কাজ করলেও সেটা ফ্ল্যাশিং করে আবার কোন কাজ না করলেও ফ্ল্যাশিং করতেই থাকে। ব্যাট ফ্ল্যাশিং করার মাধ্যমে আসলে এটি কি করে? এটি লাইট আসলে আপনাকে কি বুঝাতে চেষ্টা করে। এটা নর্মাল নাকি কোন বিপদের চিহ্ন? এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সকল বিষয় গুলোর উপর পর্দা ফাঁস করতে চলেছি…


হার্ড ড্রাইভ অ্যাক্টিভিটি লাইট

হার্ড ড্রাইভ অ্যাক্টিভিটি লাইট মূলত ডেক্সটপ কম্পিউটারের কেসিং এর সামনের দিকে থাকে আর ল্যাপটপের পাওয়ার বাটনের আশেপাশে বা সামনের বডির দিকে থাকতে দেখা যায়। এটি মূলত একটি বিল্ডইন লাইট বা এলইডি বাল্ব হয়ে থাকে, যেটা হার্ড ড্রাইভের অ্যাক্টিভিটির উপর লাগাতার ফ্ল্যাশিং করতে থাকে। আপনার হার্ড ড্রাইভে বিন্দু মাত্র রীড বা রাইট হওয়ার সময় এই লাইট লাফাতে (জ্বলা/নেভা) থাকে। এখন আপনি বলবেন, হার্ড ড্রাইভ থেকে সিস্টেম ফাইল অ্যাক্সেস করছে কিনা সেটা সামনে বাতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়ার কি আছে? হ্যাঁ, অবশ্যই এর উপকারি দিক রয়েছে। কম্পিউটার বন্ধ করার সময়ও পর্যন্ত হার্ড ড্রাইভ অ্যাক্টিভিটি লাইট মিটমিট করতে থাকে, সেই সময় আপনি বুঝতে পারেন অবশ্যই সিস্টেম এখনো কাজ করছে, তাই আপনি ল্যাপটপ ব্যাটারি খুলে ফেলা বা ডেক্সটপের ক্ষেত্রে মেইন পাওয়ার অফ করা থেকে বিরত থেকে ডাটা করাপশন থেকে বাঁচতে পারেন।

আগেই বলেছি ডেক্সটপে এটি কেসিং এর সামনে এবং ল্যাপটপে এটি ডিভাইজের কোনায় দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এক্সটার্নাল ড্রাইভের ক্ষেত্রে বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভে ঐ ড্রাইভের গায়েই অ্যাক্টিভিটি লাইট লাগানো থাকে। এরও উপকারি দিক রয়েছে, যেমন যখন অ্যাক্টিভিটি লাইট ফ্ল্যাশিং করবে, এর মানে আপনাকে ড্রাইভটি ডিস্কানেক্ট করা যাবে না। কম্পিউটার, ডিভাইজ, এবং মডেল অনুসারে হার্ড ড্রাইভ অ্যাক্টিভিটি লাইট এর কালার আলাদা আলাদা হতে পারে—সাদা, ব্লু, রেড, গ্রীন—যেকোনো কালারের লাইট হতে পারে। অনেক কম্পিউটার কেসিং এ বা ল্যাপটপের গায়ে “HDD” লিখে লেবেলিং করা থাকে। আবার অনেক সময় হার্ড ড্রাইভ বা ডিস্কের আইকন আঁকানো থাকতে পারে। তবে যদি কিছুও না থাকে, এর সর্বদা অন/অফ হতে থাকা স্বভাব থেকে বুঝে যাবেন, ঐটিই হার্ড ড্রাইভ অ্যাক্টিভিটি লাইট।

কেন এটি সর্বদা ফ্ল্যাশিং করতে থাকে?

আপনি যখন কম্পিউটার ব্যবহার করছেন, তখন বিষয়টি স্বাভাবিক, কেনোনা অবশ্যই আপনার টাস্ক গুলোকে সম্পূর্ণ করতে হার্ড ড্রাইভের ফাইল গুলোকে অ্যাক্সেস করতে হচ্ছে এবং রীড রাইট প্রসেস চলতেই থাকে। কিন্তু নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, যখন কম্পিউটারে কোন প্রোগ্রাম চলে না, তখন কেন এই লাইট টিমটিম করে? — হ্যাঁ, আপনার কম্পিউটার ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস চালাতে থাকে। আপনি যখন ম্যানুয়ালি কম্পিউটারকে কোন টাস্ক চাপিয়ে না রাখেন, তখনও পর্যন্ত আপনার কম্পিউটার আপনার বাধ্য হয়ে আপনার জন্যই কাজ করে যায়। ব্যাট কি কি ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস চলতে থাকে? নিচের লিস্টের দিকে চোখ বুলিয়ে নিন;

 

ফাইল ইনডেক্সিং ঃ— আপনি কি জানেন, আপনার কম্পিউটারের মডার্ন অপারেটিং সিস্টেম অনেকটা গুগলের মতোই কাজ করে আপনাকে ফাইল সার্চ ফিচারটি প্রদান করে থাকে। গুগল কি করে, জাস্ট ইন্টারনেটের প্রত্যেকটি সাইট থেকে পেজ গুলোকে ইনডেক্স করে, মানে নিজের সার্ভারে ক্যাশ ডাটাবেজ তৈরি করে রাখে, এরপর যখন আপনি সার্চ করেন আপনাকে ডাটাবেজ থেকে রেজাল্ট প্রদর্শিত করানো হয়। ঠিক তেমনি মডার্ন অপারেটিং সিস্টেম যেমন আপনার উইন্ডোজ ১০ প্রত্যেকটি হার্ড ড্রাইভ ফাইল গুলোকে ইনডেক্স করে রাখে এবং একটি ডাটাবেজ তৈরি করে, যেটার উপর ভিত্তি করে আপনাকে ইনস্ট্যান্ট সার্চ ফিচার প্রদান করে। আর এই ফাইল ইনডেক্সিং করার সময় হার্ড ড্রাইভ রীড রাইট হতে থাকে।

ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট ঃ— যেকোনো মডার্ন কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট করতে পারে, আগের অপারেটিং সিস্টেম গুলোর কথা আলাদা। যাই হোক, এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডাটা গুলোকে একটি সারিবদ্ধ করিয়ে নেওয়া হয়, এতে প্রচুর রীড রাইটিং অপারেশনের প্রয়োজন হয়, যখন আপনি কম্পিউটারে কিছু করেন না, ঠিক তখনোই অপারেটিং সিস্টেম এই প্রসেস চালিয়ে থাকে। হার্ড ড্রাইভের ক্ষেত্রে ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট আদর্শ ব্যাপার, কিন্তু এসএসডি’তে ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট করানো একেবারেই অনুপযুক্ত!

অ্যান্টিভাইরাস স্ক্যানিং ঃ— আজকের মডার্ন অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম গুলো আপনার নিরাপত্তার জন্য রিয়াল টাইম স্ক্যানিং এবং শিডিউল স্ক্যানিং ফিচার ব্যাকগ্রাউন্ডে রান করিয়ে রাখে। আপনার অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম হার্ড ড্রাইভের প্রত্যেকটি ফাইল খুঁটিয়ে দেখার সময় অনেক রীড প্রসেস হার্ড ড্রাইভকে হ্যান্ডেল করতে হয়। বেশিরভাগ অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম আর্কাইভ ফাইলের ভেতরেও অ্যাক্সেস করতে পারে, সেক্ষেত্রে হার্ড ড্রাইভের উপর অপারেশন চাপ আরো বেড়ে যায়।

অটোমেটিক আপডেট ঃ— উইন্ডোজ ১০ তো অটোমেটিক আপডেট চালিয়ে রাখেই, সাথে অনেক প্রোগ্রাম যেমন গুগল ক্রোম, মোজিলা ফায়ারফক্স, এরা স্বয়ংক্রিয় আপডেট চালু করে রাখে, যখনই দেখে আপনার কম্পিউটার আলাদা কাজে ব্যস্ত নেই, জাস্ট আপডেট নিতে শুরু করে দেয়, তাই আপনার হার্ড ড্রাইভ অ্যাক্টিভিটি লাইট ফ্ল্যাশিং করতেই থাকে।

অ্যাক্টিভিটি লাইটের ফ্ল্যাশিং স্ট্যাটাস ব্যাখ্যা

যেমনটা এই আর্টিকেল জুড়েই বলে আসছি, আপনার কম্পিউটারে বিন্দু মাত্র কোন ডাটা রীড/রাইট হওয়ার সময় হার্ড ড্রাইভ অ্যাক্টিভিটি লাইট ফ্ল্যাশিং করবে। কিন্তু এটি অনেক সময় আরো কিছু ব্যাখ্যা করে, আপনি লাইট ফ্ল্যাশিং করার উপর ভিত্তি করে অনেক সমস্যার সাইন বুঝতে পারবেন!

যদি লাইট জ্বলেই থাকে ঃ— অনেক সময় আপনার হার্ড ড্রাইভ লাইট এক নাগাড়ে জ্বলেই থাকতে পারে। এর মানে কিন্তু এটা নয়, আপনার হার্ড ড্রাইভ এতোদ্রুত রীড রাইট প্রসেস চালাচ্ছে যে লাইট অফ হওয়ার সময়ই পাচ্ছে না। যদি লাইট জ্বলেই থাকে, অবশ্যই বুঝে নেবেন আপনার ডিভাইজ লক হয়ে গেছে, কিংবা হাং হয়ে গেছে। যদি কম্পিউটার হাং হয়ে যায়, আর যেটা যেতেই পারে, সেক্ষেত্রে একটি সিম্পল রিস্টার্ট এ ধরনের সমস্যাকে সমাধান করে ফেলতে পারে।

যদি লাইট অফ/অন হতে থাকে ঃ— যদি আপনার হার্ড ড্রাইভ লাইট নেভা/জ্বলা করতেই থাকে, তো এটা একেবারেই স্বাভাবিক প্রসেস, আর এরকমটা সারাদিন জুড়ে করতে থাকলেও কোন সমস্যার কারন নেই। আপনি যখন কম্পিউটার ব্যবহার করবেন তখনও এমনটা জ্বলতে থাকে আবার কম্পিউটার ব্যবহার না করলেও জ্বলতে থাকে এটাই স্বাভাবিক। আর কম্পিউটার ব্যবহার না করলেও কেন জ্বলে, সেটা তো উপরে বর্ণিত রয়েছেই! অনেক কম্পিউটার কেসিং এর সাথে এই লাইট নাও থাকতে পারে, যেটা আনকমন ব্যাপার, সেক্ষেত্রে সফটওয়্যার নির্ভর সলিউসন রয়েছে তাই চিন্তা করার কোনই কারণ নেই। জাস্ট  Activity Indicator বা  HDD LED ফ্রী প্রোগ্রাম গুলো দিয়ে এই কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।


পরিশেষেও বলছি, হার্ড ড্রাইভ অ্যাক্টিভিটি লাইট ফ্ল্যাশিং করতে থাকা একেবারেই নর্মাল প্রসেস, তবে আপনার যদি মনে হয় ম্যালিসিয়াস অ্যাক্টিভিটি ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করছে তাই এই লাইট পাগলের মতো জ্বলতেই আছে, সেক্ষেত্রে ভালো অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করে আপনার সিস্টেমকে স্ক্যান করিয়ে নিতে পারেন। আর যেকোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে আমাকে জানাতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories