ফোনে নেটওয়ার্ক কভারেজ কম পাচ্ছেন? তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য!

জঘন্য সেলফোন সিগন্যাল কোয়ালিটি দুই কারণে ঘটতে পারে, প্রথমত এটি আপনার সেল অপারেটরের সমস্যা এবং দ্বিতীয়ত হতে পারে আপনি এমন জায়গায় বাস করছেন যেখান থেকে সেলফোন টাওয়ার অনেক দূরে কিংবা অনেক ম্যাটেরিয়াল সেল সিগন্যালকে ব্লক করছে। এই অবস্থায় অনেক সেলফোন অপারেটর ফ্রী’তে বা আলাদা করে একটি ডিভাইজ প্রদান করে যেটা সেলফোন সিগন্যালকে বুস্ট করে আপনার কলিং কোয়ালিটি উন্নত করতে সাহায্য করে। একে সেলফোন সিগন্যাল বুস্টার বলা হয়—যেটি শক্তিশালী সেল সিগন্যাল তৈরি করার ডেডিকেটেড একটি ডিভাইজ।

আসলে এটি নতুন সেল সিগন্যাল তৈরি করে না বরং অপারেটর সেল টাওয়ার থেকে আসা সিগন্যালকে রিপিট করে এবং বুস্ট করে, তাই অসাধারণ শক্তিশালী কমিউনিকেশন সম্ভব হয়। এই আর্টিকেলে আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো, এটি কিভাবে কাজ করে এবং বোনাস হিসেবে থাকছে, কিভাবে আপনার ফোনে সেল সিগন্যাল কোয়ালিটি বুস্ট করবেন!


সেলফোন সিগন্যাল বুস্টার

আপনি নিশ্চয় “ডেড জোন” এই টার্মটি শুনে থাকবেন, এটি এমন কোন জায়গা যেখানে আপনি সেলফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। কেনোনা সেখানে কোন সেল সিগন্যাল নেই, তাই আপনি নেটওয়ার্ক প্রভাইডারের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন না এবং কলিং, টেক্সটিং সম্ভব হবে না। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ডেড জোন থাকে, যেখানে সেলফোন নেটওয়ার্ক একেবারেই খুঁজে পাওয়া যায় না। সত্যিই অনেক বিরক্তিকর ব্যাপার তাই না? সেলফোন অপারেটর’রা বিশেষ করে তাদের ওয়েবসাইটে সেল কভারেজ এরিয়ার ম্যাপ প্রদান করে রাখে, যদি আপনার বাসস্থান এই ম্যাপের মধ্যে না পরে তো আপনি ডেড জোনে রয়েছেন। এমনকি ম্যাপের এরিয়ার মধ্যে থেকেও আপনার সেল সিগন্যাল বহু খারাপ হতে পারে, যার ফলে বিরক্তিকর কল ড্রপিং, লো ডাটা স্পীড সমস্যায় পড়তে হতে পারে আপনাকে।

আর এই সমস্যা দুর করার জন্যই সেলফোন সিগন্যাল বুস্টার টার্মটি আমাদের সামনে চলে আসে—এই গাজেট এন্টেনা এবং অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করে সেল সিগন্যালকে বুস্ট করে, ফলে আপনার ফোনে আরোবেশি সিগন্যাল বার শো করানো সম্ভব হয়, আর যতোখুশি ড্রপিং সমস্যা ছাড়া আপনাকে কলিং করার ক্ষমতা প্রদান করে।

আমার শহরের বাসাতেও খুব ভালো সিগন্যাল পাইনা, যেখানে মাত্র বাসা থেকে হাফ কিলোমিটার দূরেই সেল টাওয়ার রয়েছে। আসলে শহরের উঁচু বিল্ডিং গুলো অনেকটা সিগন্যাল শোষণ করে নেয়, আর আপনি যদি ঘনবসতির মধ্যে অবস্থান করেন, সেক্ষেত্রে নিশ্চয় বিল্ডিং আরো অনেক বেশি হবে, আর আপনার সিগন্যাল প্রবলেমও অনেক বেড়ে যাবে। সেলফোন সিগন্যাল বুস্টার ৪জি, ৩জি, ২জি —যেকোনো ধরণের সেল সিগন্যালকে বুস্ট করতে সাহায্য করে এবং বাজারে/অনলাইনে ২/৩ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজারের উপর পর্যন্ত সেল সিগন্যাল বুস্টার কিনতে পাওয়া যায়, এখানে আপনার সিগন্যাল কভারেজ এবং ব্যান্ডউইথ অনুসারে বুস্টারের দাম কম বা বেশি হতে পারে।

সেলফোন সিগন্যাল বুস্টার কিভাবে কাজ করে?

বুস্টারে অনেক এন্টেনা থাকে যেগুলো সেল সিগন্যাল ক্যাপচার করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই এন্টেনা গুলো শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য সিগন্যাল ক্যাপচার করে, কেনোনা বুস্টারকে বাড়ির ছাদে বা জানালার বাইরে ইন্সটল করা প্রয়োজনীয় হয়, যাতে এটি ভালো সেল সিগন্যাল রিসিভ করতে পারে। বুস্টার সেল টাওয়ার থেকে ভালো সিগন্যাল এন্টেনার মাধ্যমে ক্যাপচার করার পরে এটি অ্যামপ্লিফায়ার বা সেল রিপিটারের কাছে পাঠিয়ে দেয়, এবার অ্যামপ্লিফায়ার সিগন্যালকে আরো বুস্ট করে ঘরের ভেতরের এন্টেনাতে পাঠিয়ে দেয়। আর এই ইন্ডোর এন্টেনা বাড়ির সমস্ত সেল সিগন্যালকে স্ট্রং করে দেয়!

সেলফোন সিগন্যাল বুস্টার কেনার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজনীয়! অবশ্যই যেকোনো সেল সিগন্যাল বুস্টার সকল অপারেটরের সাথে কাজ করে না। অর্থাৎ কেনার সময় অবশ্যই চেক করে দেখুন, সেটা আপনার নির্দিষ্ট অপারেটর সেল সিগন্যালকে সাপোর্ট করে কিনা। অনলাইন থেকে বুস্টার কেনার সময় তাদের প্রোডাক্ট পেজে ডিটেইলস দেখে নেবেন, সেখানে অবশ্যই সাপোর্টেড অপারেটর লিস্ট বর্ণিত থাকে। আর হ্যাঁ, বুস্টার কেনার পরে সেটাকে এমন কোন স্থানে ইন্সটল করার প্রয়োজন পড়বে, যেখানে ভালো সেল সিগন্যাল টাওয়ার থেকে রিসিভ হয়। আপনি কতোটুকু বুস্টেড কভারেজ চান, সে অনুসারে আপনাকে বুস্টার কিনতে হবে।

বাংলাদেশের অপারেটর গুলো 900Mhz, 1800Mhz, এবং 2100Mhz ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড গুলো সাপোর্ট করে। আমার পরিক্ষা অনুসারে রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক এবং টেলিটক; ২জি নেটওয়ার্ক (৯০০ মেগাহার্জে), ৩জি নেটওয়ার্ক (২১০০ মেগাহার্জে) এবং ৪জি নেটওয়ার্ক (৯০০ এবং ১৮০০ মেগাহার্জে) সরবরাহ করিয়ে থাকে। আপনার অপারেটর কোন ব্যান্ডটি ইউজ করছে সেটা জানার জন্য NetMonster অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন।

বাজারে সিঙ্গেল ব্যান্ড এবং মাল্টিপল ব্যান্ডের সিগন্যাল বুস্টার কিনতে পাওয়া যায়। সিঙ্গেল ব্যান্ড বুস্টারের দাম একটু তুলনা মুলকভাবে কম হয়ে থাকে। ধরুন, আপনি শুধু কথা বলবেন সেক্ষেত্রে ৯০০ ব্যান্ড এর বুস্টার কিনলেই হবে, যদি ইন্টারনেট ও কল দুইটারই দরকার লাগে তাহলে ডুয়াল ব্যান্ড বা ট্রাই ব্যান্ড বুস্টার কিনতে হবে।

সেলফোন সিগন্যাল বুস্টার ছাড়া সেল সিগন্যাল বুস্ট

আপনার স্থানে যদি সত্যিই সেল সিগন্যালের খুব সমস্যা থাকে, অবশ্যই সিগন্যাল বুস্টারে টাকা ইনভেস্ট করা আদর্শ ব্যাপার। কিন্তু অনেক সময় কিছু সাধারণ বিষয়ের উপর খেয়াল রেখেও সেল সিগন্যাল বুস্ট করা সম্ভব। আমি নিচে কিছু সাধারণ টিপস শেয়ার করলাম, যেগুলো আপনার ফোনে বেটার সিগন্যাল কোয়ালিটি পেতে আপনাকে সাহায্য করবে…

ফোন অফ করে আবার অন করুণ ;— অনেক সময় সেল সিগন্যাল প্রবলেম আপনার ফোনের জন্যই হতে পারে, আর কম্পিউটারের মতো ফোনটি রিস্টার্ট করে বা সিম্পল অফ করে আবার অন করার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। হতে পারে আপনার সেলফোন কোন দুর্বল টাওয়ারের কানেকশনই বারবার রিসিভ করছিলো, ফোন অফ/অন করার মাধ্যমে ফোন হয়তো নতুন সেল টাওয়ারের সাথে কানেক্ট হওয়ার চেষ্টা করবে এবং এতে বেটার সিগন্যাল কোয়ালিটি পেতে পারবেন। অনেক সময় ফোন দীর্ঘ সময় অন রাখার কারণে অপারেটিং সিস্টেম থেকেও কিছু সমস্যা বা ফোন ফ্রিজিং প্রবলেম হয়ে যেতে পারে, এরোপ্লেন মুড অন/অফ করেও এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তবে ফোন পাওয়ার অফ/অন করলে বেশি ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

ব্যাটারি রিচার্জ করুণ ;— যদি আপনার ফোনে ব্যাটারি লো হয়ে যায়, আপনার ফোন পাওয়ার সেভিং মুডে চলে যায়, এতে সেল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফোন বেশি পাওয়ার সরবরাহ করতে পারে না। তাই ফোনটি চার্জে লাগিয়ে দিন, যদি চার্জ করা তৎক্ষণাৎ সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে পাওয়ার সেভিং মুড অফ করে দিন, যদিও এতে ব্যাটারি দ্রুত ড্রেইন হবে কিন্তু নেটওয়ার্ক বার বেড়ে যাবে।

অবস্থানের পরিবর্তন করুণ ;— অনেক সময় যেখানে রয়েছেন, সেখান থেকে কিছু সরানোরা করে সেল সিগন্যালের উন্নতি করা সম্ভব হতে পারে। আবার হতে পারে আপনি যেভাবে ফোনটি ধরে রেখেছেন, এতে ফোনের এন্টেনা কভার হয়ে থাকতে পারে, তাই ফোন ধরার স্টাইল পরিবর্তন করে দেখুন কোন উন্নতি পাওয়া সম্ভব হয় কিনা। যদি বাড়ির ভেতরে বা ঘরের মধ্যে সিগন্যাল প্রবলেম হয় বাইরে বা ছাদে গিয়েও সিগন্যালে বেশ উন্নতি আনতে পারবেন। অনেক সময় যেকোনো দিকে একটু নড়াচড়া করার মাধ্যমেই আপনার ফোনের সিগন্যাল উন্নতি করা সম্ভব হতে পারে।

একটি ভালো ফোন কিনুন ;— আপনি যেখানে থাকছেন, কিংবা যে অপারেটর সিম কার্ডই ব্যবহার করছেন, সর্বদাই যদি ফোনে দুর্বল সিগন্যাল দেখতে পান, সেক্ষেত্রে নিশ্চয় আপনার সেলফোনটিতেই সমস্যা রয়েছে। আপনার ফোনের এন্টেনাতে ফল্ট রয়েছে কিংবা জাস্ট সেটা উইক হয়ে গেছে। এই অবস্থায় একটু নতুন আর বেটার ফোন কিনে ফেলা বেস্ট হবে! নতুন স্মার্টফোন কেনার গাইড এখান থেকে দেখে নিতে পারেন!

সেল অপারেটর পরিবর্তন করুণ ;— অনেক সময় আপনার স্থানে এক সেল অপারেটর ভালো সিগন্যাল দিতে পারে না, কিন্তু হতে পারে সেখানে অন্য সেল অপারেটরের সিগন্যাল অনেক স্ট্রং, তাই অপারেটর পরিবর্তন করার মাধ্যমেও আপনি বেটার সিগন্যাল পেতে পারেন। আগে অপারেটর পরিবর্তন করা বেশ ঝামেলার কাজ ছিল কিন্তু বর্তমানে এমএনপি সুবিধার খাতিরে আপনি নাম্বার পরিবর্তন না করেই অপারেটর পরিবর্তন করে ফেলতে পারবেন।

ওয়াইফাই কলিং ;— অনেক অপারেটর ওয়াইফাই সার্ভিস প্রদান করে থাকে, সকল বিভাগে না থাকলেও ঢাকাতে অনেক সেল অপারেটর ওয়াইফাই প্রদান করে, এখন এই সেল অপারেটর গুলো ওয়াইফাই কলিং সমর্থন করে কিনা জানি না, তবে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয়ই ওয়াইফাই কলিং সমর্থন করে। যদি আপনার সেল নেটওয়ার্ক দুর্বল আর ওয়াইফাই সিগন্যাল স্ট্রং হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়াইফাই এর মাধ্যমে কল সুইচ করে দেয়। যদি আপনার অপারেটর ওয়াইফাই কলিং সমর্থন করে, সেখানে সাধারণ কলিং এবং ম্যাসেজ রিসিভ করতে পারবেন। আমার যদি আপনার ইন্টারনেট কানেকশন থাকে বা ব্রডব্যান্ড লাইন থাকে, ওয়াইফাই ব্যবহার করে সহজেই ইন্টারনেট কল বা ভিওআইপি কল যেমন- স্ক্যাইপ, ডুয়ো, ইত্যাদি করতে পারবেন।


তো আপনার ফোনে বা আপনার এরিয়াতে কি নো সিগন্যাল বা দুর্বল সিগন্যাল সমস্যা রয়েছে? আপনার বাসা থেকে সেল টাওয়ার সামান্য দূরে হওয়ার পরেও কি সেল সিগন্যাল ভালো পাচ্ছেন না? আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানান। যদি সেলফোন সিগন্যাল বুস্টার কিনতে চান, কেনার সাহায্যের জন্য আমাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন, আমি আপনার জন্য বেটার বুস্টার রেকোমেন্ড করার চেষ্টা করবো!

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories