ইনটেল অপটেন মেমোরি | হার্ড ড্রাইভ কে বানিয়ে ফেলুন এসএসডি!

সবকিছুতেই প্রায় দেখতে পাওয়া যায়, একটা সুবিধা পেলে তাতে আরেকটা অসুবিধা থেকেই যায়। কম্পিউটিং বা কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও সেটা লক্ষণীয়। যদি টাকার কথা চিন্তা করেন তবে সস্তায় হয়তো হার্ড ড্রাইভ পেয়ে যাবেন, কিন্তু সেটাতে পারফর্মেন্স পাবেন না এসএসডি’র মতো। আবার যদি এসএসডি কেনেন ভালো পারফর্মেন্স পাবেন, কিন্তু টাকা অনেক বেশি লাগবে, আবার সাথে হার্ড ড্রাইভের মতো এতো বিশাল স্টোরেজ ক্যাপাসিটি পাবেন না। কিন্তু এমন হলে কেমন হতো বলুন তো, ধরুন আপনার মাকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ’কেই যদি এসএসডি’র মতো ফাস্ট করা যেতো, হ্যাঁ হাইব্রিড ড্রাইভ অনেকটা এইরকম হয়ে থাকে—এর মধ্যে কিছু পরিমানের এসএসডি থাকে যেটা পারফর্মেন্স বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিন্তু আমি কথা বলছি, আপনার পুরাতন বা বর্তমান ড্রাইভকেই যদি এসএসডি বা তার চেয়েও ফাস্ট বানানো যেতো? হ্যাঁ বন্ধু এটি কোন কল্পনা নয়, লেটেস্ট ইনটেল অপটেন মেমোরি (Intel® Optane™ Memory) মডিউলের সাথে তো মোটেও কোন কল্পনা নয়!


ইনটেল অপটেন মেমোরি

 

আপনি একেবারে নতুন আর আপগ্রেডেড কম্পিউটার ব্যবহার করার পরেও দেখবেন ইনটেল দুই একমাস পরে আপনার কম্পিউটার’কে আরো একধাপ আপগ্রেড করার জন্য কোন না কোন টেক বেড় করে ফেলবে। আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারি না, আমার সবচাইতে পছন্দের এই কোম্পানি কিভাবে এতো নতুন আইডিয়া আর নতুন টেক সামনে নিয়ে আসে। ইনটেল অপটেন মেমোরি মডিউল ঠিক এমনি নতুন একটি টেক যেটা আপনার স্লো পিসি’কে বানিয়ে দেবে আরো ফাস্ট। আপনার এইচডিডি’কে এসএসডি’র মতো ফাস্ট করে দেবে আর এসএসডি অলরেডি থাকলে সেটাকে সুপার ফাস্ট করে দেবে। কিভাবে?

বন্ধু ইনটেল অপটেন মেমোরি মূলত ইনটেলের নতুন ক্লাসের হাইপার-ফাস্ট মেমোরি মডিউল, যেটা ৩ডি ন্যান্ড ফ্যাশ টেকনিকের উপর তৈরি সাথে এতে আরো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এর নাম মেমোরি হলেও এটি কিন্তু কোন র‍্যাম নয়—কিন্তু এটি স্টোরেজ মেমোরি’র পাশাপাশি র‍্যাম’কেউ বুস্ট করতে পারে। দুর্ভাগ্যবসত যদি আপনার ৭ম জেনারেশন সাপোর্টেড মাদারবোর্ড না থাকে বা ৭ম জেনারেশনের আই৩, আই৫, আই৭ প্রসেসর না থাকে—সেই ক্ষেত্রে আপনি এই সুপার ফাস্ট মডিউল’টি আপনার সিস্টেমে লাগাতে পারবেন না। এই মডিউলটি মূলত একটি ক্যাশ মেমোরি হিসেবে কাজ করে, যেটা ট্র্যাডিশনাল র‍্যাম থেকেও আরো ফাস্ট হয়ে থাকে। মূলত এই মেমোরি মডিউলটি আপনার হার্ড ড্রাইভ বা এসএসডি, র‍্যাম, এবং প্রসেসরের মধ্যে একটি ব্রিজ তৈরি করে আর এক ক্লেভার টেক ব্যবহার করে এদের মধ্যে ইনপুট আউটপুট আদেশ গুলোকে  নিয়ন্ত্রন করে। যে ফাইল গুলো সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় আপনার সিস্টেমে বা প্রসেসর, র‍্যাম, হার্ড ড্রাইভকে যে ফাইল গুলোকে বারবার অ্যাক্সেস করতে হয়, সেই ফাইল গুলোকে এই ক্যাশ মেমোরি নিজের মধ্যে স্টোর করে রাখে, আর দ্রুত প্রসেসরের কাছে পৌছিয়ে দেয়। এই মেমোরি’টির লেটেন্সি অনেক কম, তাই আপনার পিসি’র পারফর্মেন্স অন্য লেভেলে চলে যায়।

এটি কতোটা ফাস্ট?

 

ইনটেল অফিশিয়াল অপটেন মেমোরি পেজ অনুসারে—এই মেমোরি মডিউল’টি আপনার কারেন্ট সিস্টেমকে আরো ২৮% বেশি ফাস্ট করে দেবে, সাথে আপনি যদি মাকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করে থাকেন, সেই ক্ষেত্রে হার্ড ড্রাইভকে আগের থেকে আরো ১৪ গুন বা ১৪০০% বেশি ফাস্ট করে দেবে এবং প্রত্যেক দিনের টাস্ক গুলোকে আরো ২ গুন স্পীডে লোড করবে। কনজিউমার’দের জন্য বর্তমানে যে ইনটেল অপটেন মেমোরি লভ্য রয়েছে সেটাকে এম ডট টু (M.2) মেমোরি মডেল বলা হচ্ছে, এবং এটি দুইটি ক্যাপাসিটি’তে বর্তমানে প্রাপ্য; একটি ১৬ জিবি এবং আরেকটি ৩২ জিবি। যেকোনো প্রকারের ট্যাস্ক’কে বুস্ট করার জন্য এই মেমোরি মডিউলটি ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি ডেইলি কম্পিউটিং, ভিডিও এডিটিং, ৪কে মিডিয়া প্লে, গেমিং —যেকোনো ট্যাস্ক বুস্ট করার ক্ষেত্রে এই মেমোরি মডিউল ব্যবহার করতে পারেন।

আপনার কাছে হয়তো আই৭ প্রসেসর নেই, হতে পারে আই৩ এর বেসিক ৭ম জেনারেশন প্রসেসর ব্যবহার করছেন এবং সাধারণ ডিডিআর৪ র‍্যাম ব্যবহার করছেন সাথে নর্মাল মাকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ—আপনার সিস্টেমে যদি এই অপটেন মেমোরি মডিউল’টি ইন্সটল করেন সেক্ষেত্রে সিস্টেম পারফর্মেন্স আগের চেয়ে ২৮% বেড়ে যাবে, মানে এসএসডি’র মতো স্পীড আপনার সিস্টেমে লক্ষ্য করতে পারবেন। তবে এখানে কিছু ব্যাপার রয়েছে বন্ধু, আপনি অপটেন মডিউল কিনলেন আর সাথে সাথে কিন্তু স্পীড বুস্ট হয়ে যাবে না। আপনি হয়তো প্রথমে মেমোরি মডিউলটি লাগিয়ে কোনই স্পীড পার্থক্য লক্ষ্য করতে পারবেন না। লাইনাসের দেখানো অপটেন মেমোরি টেস্টিং নিয়ে একটি ভিডিও‘তে দেখা গেছে, অপটেন মেমোরি বেঞ্চমার্কিং’এ খুব একটা পার্থক্য দেখা যায় নি। কেনোনা এই সিস্টেম’টি ইন্টেলিজেন্স এর উপর কাজ করে। আপনার কম্পিউটারে একে ইন্সটল করার পরে একে কিছু সময় দিতে হবে আপনার কম্পিউটার টাস্ক গুলোকে স্টাডি করার জন্য। সে মনিটর করবে কোন ফাইল গুলো এবং আপনি কোন প্রোগ্রাম গুলো বেশি ব্যবহার করছেন, সেই অনুসারে মেমোরি মডিউলটি শিক্ষা গ্রহন করবে এবং ফাস্ট ফাইল সরবরাহ করতে আরম্ভ করবে।

 

কিছু অসুবিধা

অনেক সুবিধার মধ্যে এই মেমোরি মডিউলটির কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রথমত, যেহেতু এটি মাত্র কেবল ১৬ জিবি এবং ৩২ জিবি স্টোরেজ ক্যাপাসিটি’তে আসে তাই একে প্রাইমারী ড্রাইভ হিসেবে সরাসরি ব্যবহার করা সম্ভব নয়, যদিও এর দাম অনেক কম সে হিসেবে এর পারফর্মেন্স বৃদ্ধি সত্যি লক্ষণীয়, কিন্তু তারপরেও এই প্রাইজ পয়েন্টের মধ্যে যদি আরো ক্যাপাসিটি দেওয়া যেতো, তাহলে অন্তত ওএস’কে এই মেমোরি মডিউলে ইন্সটল করে রাখা যেতো, এতো সম্পূর্ণ ওএস’ই ফাস্ট লোড হতো, শুধু নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন বা ব্যাবহারের পরে বা একে ট্রেইন করতে হতো না।

সাথে আরেকটি ব্যাপার যেটা আমার খারাপ লেগেছে, এটি শুধু ৭ম জেনারেশন মাদারবোর্ড এবং ৭ম জেনারেশন সিপিইউ’কেই সমর্থন করে। যেখানে আগের জেনারেশন প্রসেসর গুলোর বা সিস্টেম গুলোর জন্য এই মডিউল বেশি প্রয়োজনীয়। শুধু এতোটুকুই এর অসুবিধা নয়, আরেকটি ব্যাপার হলো, ধরুন আপনি কম্পিউটারে ওএস ইন্সটল করেছেন এসএসডি’তে এবং সাধারণ ফাইল গুলোকে স্টোর করেছেন মাকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভে, হতে পারে হার্ড ড্রাইভে কিছু সফটওয়্যারও ইন্সটল করেছেন; এক্ষেত্রে শুধু মাত্র আপনার ওএস ইন্সটল থাকা ড্রাইভটিই বুস্টিং সুবিধা পাবে, মাকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভটির জন্য কোন অপটিমাইজেশন পাবেন না।যদি আপনি দুইটি এসএসডি’ও ইন্সটল করে রাখেন, তো সেকেন্ড ড্রাইভটি কোনই অপটিমাইজেশন সুবিধা পাবে না। যদি বেটার সিস্টেম বিল্ড করতে চান, সেক্ষেত্রে অপটেন মেমোরি’তে ইনভেস্ট না করে এসএসডি এবং আরো বেশি র‍্যাম লাগানোর ক্ষেত্রে মাথা ঘামানো উচিৎ!


তো বন্ধু বুঝতেই পাড়ছেন, এই মেমোরি মডিউলটি কাদের জন্য এবং কাদের জন্য নয়। আপনি যদি কারেন্ট ৭ম জেনারেশন সিস্টেম থেকেই আরো কিছু বুস্ট স্পীড পেতে চান সেক্ষেত্রে এটি আপনার জন্য বেস্ট হবে, হতে পারে আপনি বেশি বা আরো ফাস্ট র‍্যাম কিনতে পাড়ছেন না এই মুহূর্তে তো অপটেন মেমোরি আপনার ডেইলি টাস্ক গুলোকে বুস্ট করতে সক্ষম হবে। তবে যদি রিয়াল পারফর্মেন্স চান, তো বড় এসএসডি এবং বড় আর ফাস্ট র‍্যামের দিকে ইনভেস্ট করায় বেস্ট হবে।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories