ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক ক্লিক না করেই কিভাবে বুঝবেন এটি নিরাপদ কিনা?

মনে রাখবেন, বেশিরভাগ হ্যাক অ্যাটাক আপনাকে বোকা বানিয়েই করা হয়ে থাকে। হ্যাকিং মানে অনেকে অনেক কিছু বোঝেন। কিন্তু আসল হ্যাকিং ওয়ার্ল্ডটা কিন্তু একটু আলাদা। অনেকে মনে করেন, হ্যাকার’রা অনেক শক্তিশালী সিস্টেমে বসে থেকে, নানান কোড রান করিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং করে সবকিছু হ্যাক করে ফেলে। হয়তো মুভিতে দেখে থাকবেন, হ্যাকার বসে রয়েছে এক বিশাল কম্পিউটার স্ক্রীনের সামনে আর স্ক্রীনে অনেক লেখা লাগাতার উপরে চলে যাচ্ছে, হ্যাকার পাগলের মতো কী-বোর্ড প্রেস করে যাচ্ছে। হ্যাঁ, এরকমটাও হয়, অনেক শক্তিশালী প্রোগ্রামার আর ক্র্যাকার রয়েছে, যারা সত্যিই অনেক অভিজ্ঞ। কিন্তু বেশিরভাগ সময়, আপনার কম্পিউটারের সাথে যুদ্ধ করার চাইতে, আপনাকে বোকা বানানোয় অনেক সহজ ব্যাপার হয়। আপনাকে মেইল করে, বা যেকোনো ফাঁদে ফেলিয়ে কোন স্পেশাল ওয়েবসাইট বা লিঙ্ক ওপেন করানোর চেষ্টা করানো হয়। আর আপনি না বুঝে লিঙ্ক ক্লিক করলেই পড়ে যান ফাঁদে, আপনার সিস্টেমে কোন ম্যালওয়্যার এসে যায় কিংবা আপনার তথ্য গুলো চুরি হয়ে যায়, বা আপনার যেকোনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝবেন, যে লিঙ্কটিতে ক্লিক করছেন, সেটা ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক কিনা?—এই আর্টিকেল আপনাকে ক্লিক না করেই কোন লিঙ্ক নিরাপদ কিনা সেটা নির্ণয় করতে সাহায্য করবে…


লিঙ্কের উপর মাউস নিয়ে যান

অনেক সময় কোন লিঙ্ক অনেক বড় আকারের হয়, তখন সেটার সম্পূর্ণ অংশ দেখতে পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় লিঙ্ক গুলোকে টেক্সটের মধ্যে লুকিয়ে ফেলা হয়, যেটাকে অ্যাংকর টেক্সট বলে। আবার অনেক সময়, আপনাকে বোকা বানানোর জন্য, লিঙ্ক টেক্সট আকারে দেখা যায় একটা কিন্তু ভেতরে আসলে আরেকটা লিঙ্ক লুকিয়ে থাকে। যেমন ধরুন, এখানে ক্লিক করুণ! —আমি লিখে রেখেছি “এখানে ক্লিক করুণ” কিন্তু সেটাতে কোন লিঙ্ক রয়েছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। এরকম টেক্সটের পেছনে হাইড হয়ে থাকা লিঙ্ক আগে থেকে দেখার জন্য লিঙ্কটিতে ক্লিক না করে জাস্ট লিঙ্কের উপর আপনার মাউস পয়েন্টারটি নিয়ে যান, এবার ব্রাউজারের নিচে দিকে দেখুন অরিজিনাল লুকিয়ে থাকা সম্পূর্ণ লিঙ্কটি শো করছে। আবার অনেক সময় আপনাকে প্রতারণা করার চেষ্টা করা হয়, যেমন- https://accounts.google.com.bd — ফেইক লিঙ্ক টেক্সট ব্যবহার করে আপনাকে বুঝানো হয়, আপনি আসল লিঙ্কের যাচ্ছেন, কিন্তু এর পেছনে আলাদা লিঙ্ক লুকানো থাকে। তো আপনি যে লিঙ্ক যেভাবেই দেখুন না কেন, ক্লিক করার আগে সেখানে মাউস নিয়ে যান, আর ব্রাউজার থেকে দেখে নিন, লিঙ্কটি আসলে কি।

কোন মেইল থেকে লিঙ্ক ক্লিক করার অবশ্যই ভেবে দেখুন মেইলটি আপনার কাছে আসার কথা ছিল কিনা। মেইলে যদি অঝথা বিষয়ে লিঙ্ক ক্লিক করতে বলে, সেক্ষেত্রে আপনার উপস্থিত বুদ্ধি ব্যবহার করুণ। আপনাকে হয়তো মেইল আসলো, আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভেরিভাই করুণ, হতে পারে এটি একটি ফিশিং মেইল। মেইলটির প্রদত্ত লিঙ্কটি দেখে নিন এবং ক্লিক করে সেখানে প্রবেশ করার আগে, গুগল করে আপনার ব্যাংক ওয়েবসাইট লিঙ্ক জেনে নিন। কিংবা আপনার ব্যাংকে কল করুণ, বিশ্বাস করুণ, এই এক মিনিটের সাবধানতা আপনাকে অনেক বড় ঝুকির হাত থেকে রক্ষা করবে।

সর্ট করা লিঙ্ক

বর্তমানে অনেক সর্ট লিঙ্ক সার্ভিস রয়েছে, যারা লম্বা কোন লিঙ্ককে সর্ট করে দেয়, সহজে মনে রাখবার জন্য বা শেয়ার করার জন্য। গুগলও এরকম একটি সার্ভিস প্রদান করে থাকে। যেমন ধরুন- https://archive.wirebd.com/smartphone-overheat-problem-in-bangla/ —এই লিঙ্কটি দেখতে বিশাল বড়, কিন্তু এটাকে সর্ট করা সম্ভব, যেমন- https://goo.gl/SDJyPy — লক্ষ্য করে দেখুন, দুইটি লিঙ্ক আপনাকে একই পেজে নিয়ে গেলেও লিঙ্ক দুইটি দেখতে কিন্তু সম্পূর্ণই আলাদা। যদি কোন হ্যাকার আপনাকে কোন ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক ক্লিক করানোর জন্য লিঙ্কটি সর্ট করে আপনাকে সেন্ড করে আপনি বুঝতেই পারবেন না, লিঙ্কটিতে ক্লিক করলে কোন ওয়েবপেজ ওপেন হবে। এমনকি লিঙ্কের উপর মাউস রেখেও কিছু বোঝা সম্ভব হয়ে উঠবে না।

তাহলে কি করতে হবে? আপনি যদি দেখেন, কোন লিঙ্ককে সর্ট করা হয়েছে। লিঙ্ক এর ডোমাইন নেম যদি goo.glbit.ly ইত্যাদি হয় সেক্ষেত্রে সেই লিঙ্ক ওপেন করার পূর্বে http://checkshorturl.com/ থেকে লিঙ্কটির ল্যান্ডিং পেজ দেখে নিন, তারপরে লিঙ্কটি আপনার কাছে সন্দেহ জনক মনে হলে আগে গুগল করে দেখুন, তারপরে লিঙ্কটিতে ক্লিক করতে পারেন। যদি লিঙ্কটি আপনার কাছে সন্দেহের মনে হয় কিন্তু আপনার মনে যদি কৌতূহলও থাকে তো অনেক অনলাইন লিঙ্ক স্ক্যানার রয়েছে, যেমন-  Norton SafeWeb, URLVoid, ScanURL ইত্যাদি থেকে লিঙ্কটি নিরাপদ কিনা তা চেক করতে পারেন।

ভালো এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম

অবশ্যই একটি ভালো ভালো এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল করে রাখুন। অনেক সময় অনেক চালাক হ্যাকার আপনাকে এমনভাবে বোকা বানাবে, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনার চেয়ে আপনার কম্পিউটারকে বোকা বানানো কঠিন। আপনার সিস্টেমে ভালো এন্টিভাইরাস ইন্সটল করে সেটাকে আপডেটেড রাখুন এবং রিয়াল টাইম স্ক্যানিং চালু রাখুন। এতে কোন ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক থেকে স্বয়ংক্রিয় ম্যালওয়্যার ডাউনলোড হওয়ার সময় অ্যান্টিভাইরাস সেটাকে ধরে ফেলবে।

আপনার এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামটি যদি লেটেস্ট আপডেটেড না হয়, সেটা লেটেস্ট ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক গুলোকে ধরতে পারবে না, এতে আপনি কোন কারণে ভুল করে খারাপ লিঙ্ক ওপেন করলে, আপনার সিস্টেমে এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ইন্সটল থাকা শর্তেও আপনার মেশিনে ম্যালওয়্যার চলে আসতে পারে। আরেকটি বিষয়, অবশ্যই সেকেন্ড এন্টি-ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করবেন। যদি আপনার প্রধান এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কোন কারণে ব্যার্থ হয়, সেকেন্ড সফটওয়্যারটি সেটাকে ডিটেক্ট করতে পারবে। ম্যালওয়্যার বাইট বা হিটম্যান প্রো —এগুলো সত্যিই অসাধারণ প্রোগ্রাম। আরো জানুন;  এন্টিভাইরাস বনাম এন্টিম্যালওয়্যার | আপনি কোনটি ব্যবহার করবেন? উইন্ডোজ ডিফেন্ডার কতোটা ভালো?

সবসময়ই বলি, আবারো বলছি, হ্যাক অ্যাটাক থেকে বাঁচতে নিজের উপস্থিত বুদ্ধির ব্যবহার করুণ। পাগলের মতো যা তা ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। আর নিজেকে অনলাইন বস মনে করে, এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার দরকার নেই, এরকম ভাবনা বাদ দিন। আপনার অনলাইন অভ্যাস পরিবর্তন করুণ, নিরাপদে থাকুন। আপনার যেকোনো প্রশ্ন বা মতামত জানাতে আমাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories