ব্যাড সেক্টর কি? কেন ব্যাড সেক্টর তৈরি হয়? কিভাবে ফিক্স করবেন?

ধরুন আপনি কম্পিউটারের সামনে বসে রয়েছেন, আর বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ফলে আপনার কম্পিউটার ধপ করে অফ হয়ে গেলো। আপনি অনেকবার হয়তো লক্ষ্য করেছেন, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরে কম্পিউটার নতুন করে অন করলে উইন্ডোজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিস্কচেক করতে আরম্ভ করে দেয়। এভাবেই ধরুন একদিন ডিস্কচেক করতে গিয়ে আপনার কাছে ম্যাসেজ আসলো, “ব্যাড সেক্টর খুঁজে পাওয়া গেছে!” —এই ব্যাড সেক্টর কি জিনিষ? হার্ড ড্রাইভের এই সমস্যা সম্পর্কে জানার আগে, অবশ্যই আপনার হার্ড ড্রাইভ কিভাবে কাজ করে সেটা জানা প্রয়োজনীয় (আগে আর্টিকেলটি পড়ে নিন)। ব্যাড সেক্টর মূলত হার্ড ডিস্কের সেই ক্ষুদ্রতর অংশ যেটা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে আছে এবং ঐ সেক্টর গুলো ডাটা রীড রাইট করার রিকোয়েস্টে কোন রেসপন্স করে না। তবে শুধু হার্ড ড্রাইভেই নয়, এসএসডি‘তেও ব্যাড সেক্টর তৈরি হতে পারে। এই আর্টিকেল থেকে ব্যাড-সেক্টর তৈরি হওয়ার কারণ, এর প্রকারভেদ, এবং এটা কিভাবে ফিক্স করা যায়—সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো…


ব্যাড সেক্টর

আগেই বলেছি, হার্ড ড্রাইভে ব্যাড সেক্টর বলতে সে অংশকে নির্দেশ করা হয়, যেটি ডাটা রীড রাইট করার রিকয়েস্টে কোন রেসপন্স দেয় না। বিভিন্ন কারণে হার্ড ড্রাইভে ব্যাড-সেক্টর তৈরি হতে পারে। হতে পারে হার্ড ড্রাইভটি পড়ে গিয়ে এতে ফিজিক্যাল ড্যামেজ হয়েছে, প্রস্তুতকারী কোম্পানির অপূর্ণতার জন্য, হার্ড ড্রাইভকে বিশাল শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের আবেশে নিয়ে গেলে, হার্ড ড্রাইভের ভেতর থাকা ডিস্কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেলে, আবার ফ্ল্যাশ মেমোরি সেলে সমস্যা হওয়ার কারণে এসএসডি’তেও ব্যাড-সেক্টর তৈরি হতে পারে।

যাই কিছুই হোক না কেন, ব্যাড সেক্টর প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে—ফিজিক্যাল ব্যাড সেক্টর এবং লজিক্যাল ব্যাড সেক্টর; যেগুলকে আবার “হার্ড” এবং “সফট” ব্যাড সেক্টরও বলা হয়।

ফিজিক্যাল  বা হার্ড ব্যাড সেক্টর—নামটি শুনেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, হার্ড ড্রাইভ ফিজিক্যাল ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে এটি ঘটে থাকে। হার্ড ড্রাইভটি হয়তো পড়ে গিয়ে বিশেষ আঘাত পেয়েছে কিংবা ধুলা প্রবেশ করে সেক্টর গুলোকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। আবার অনেক সময় হার্ড ডিস্কের ভেতর টেকনিক্যাল প্রবলেম থাকার ফলেও ফিজিক্যালি সেক্টর ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। আবার এসএসডি’র ফ্ল্যাশ মেমোরিতে গণ্ডগোল হয়ে যাওয়ার ফলে সেক্টর ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। যাই হোক, সাধারণত ফিজিক্যাল ড্যামেজ হয়ে যাওয়া সেক্টর গুলোকে রিপেয়ার করা সম্ভব হয় না।

লজিক্যাল বা সফট ব্যাড সেক্টর—যেগুলোকে হার্ড ড্রাইভ নিজে থেকে মনে করে, এটি ঠিকঠাক কাজ করছে না। হয়তো অপারেটিং সিস্টেম হার্ড ড্রাইভকে ঐ সেক্টর থেকে ডাটা রীড রাইট করার কম্যান্ড দেয় এবং ডাটা রীড রাইট করার সময় সফট ড্যামেজ সেক্টর থেকে এরর ম্যাসেজ আসে, ফলে সিস্টেম বুঝতে পারে সেখানে নিশ্চয় কোন সমস্যা রয়েছে, আর ঐ সেক্টর গুলোকে ড্যামেজ সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা হয়। এই সেক্টর গুলোকে লো লেভেল ফরম্যাট করে অথবা সেক্টর গুলোকে জিরো দ্বারা ওভার-রাইট করে, এধরনের প্রবলেম সল্ভ করা সম্ভব। উইন্ডোজ ডিস্কচেক টুল আরামে এই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম।

কিভাবে ব্যাড সেক্টর চিহ্নিত করা হয়?

ডাটা লস থেকে বাঁচার জন্য হার্ড ড্রাইভ নিজে থেকেই অনেক বিষয় চেক করতে থাকে, যেগুলো সম্পর্কে অপারেটিং সিস্টেম কিছুই বুঝতে পারে না। যখন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে কম্পিউটার ধপ করে বন্ধ হয়ে যায় বিশেষ করে সেই সময় সেক্টর বেশি ড্যামেজ হয়। কেনোনা হার্ড ড্রাইভ সব সময়ই কোন না কোন অপারেশন মানে রীড রাইট সম্পূর্ণ করতেই থাকে। কোন সেক্টর রাইট হওয়ার মাঝ পর্যায়ে বিদ্যুৎ আচানক চলে গেলে ঐ সেক্টরে রাইট হওয়া অর্ধেক ডাটা হার্ড ড্রাইভ এরর কারেকশন কোডের সাথে আর ম্যাচ করে না ফলে হার্ড ড্রাইভ ঐ সেক্টরকে ব্যাড সেক্টর বা ড্যামেজ সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত করে রাখে।

ড্যামেজ সেক্টর গুলো ততোক্ষণ পর্যন্ত আবার কাজে ফিরে আসতে পারে না, যতক্ষণ না কোন আলাদা অপারেশন যেমন ডাটা রিকভারি বা উইন্ডোজ ডিস্কচেক প্রসেস চালানো হয়। যখন ড্যামেজ সেক্টরটিতে আবার রাইট অপারেশন চালানো হয়, হার্ড ড্রাইভ সেই সেক্টরকে আবার কাজে ফিরিয়ে নিয়ে আসে এবং ড্যামেজ সেক্টরের নাম থেকে বাতিল করে দেয়।

হার্ড ড্রাইভ ফেইল

সত্যি বলতে হার্ড ড্রাইভের কোনই ভরসা নেই, এটি চলতে চলতেও ফেইল হতে পারে আবার না চালিয়ে সিন্দুকে ঢুকিয়ে রাখলেও ফেইল হতে পারে। ব্যাড সেক্টর থাকার পরেও হয়তো আপনার হার্ড ড্রাইভ ঠিকঠাক কাজ করবে, কিন্তু হতে পারে ড্যামেজ সেক্টর গুলো থাকার ফলে আপনার কোন কোন ফাইল করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে। যদি এই ড্যামেজ ফিজিক্যাল হয়ে থাকে তবে রিপেয়ার করা সম্ভব হবে না, যদি ড্যামেজ লজিক্যাল হয়, তবে ডাটা রিকভার করার মাধ্যমে ফাইল ফেরত পেতে পারেন, সাথে ডিস্কচেক রান করানোর ফলে সফট ড্যামেজ সেক্টর রিপেয়ার করানোও সম্ভব হবে। যেহেতু হার্ড ড্রাইভে ডাটা রেখে ভরসা করতে পারবেন না, তাই অবশ্যই আপনার প্রয়োজনীয় ডাটা গুলোকে নিয়মিত ব্যাকআপ করে রাখুন, এবং যদি সম্ভব হয় একসাথে অনেক গুলো ব্যাকআপ কপি বানিয়ে রাখুন। হিউজ ডাটার জন্য এলটিও ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারেন, এতে ডাটা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য ফেইল হওয়া ছাড়া সংরক্ষন করতে পারবেন।

যখন আপনার কম্পিউটার কোন ব্যাড সেক্টর খুঁজে পায়, সেটাকে মার্ক করে রাখে এবং ঐ সেক্টরকে আর ভবিষ্যতে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে। আপনাকে ঐ ড্যামেজ সেক্টর পুনরায় বরাদ্দ করার প্রয়োজন পড়বে, না হলে এই সেক্টরের ডাটা হার্ড ড্রাইভ অন্যত্র স্টোর করবে। কিছু কিছু ড্যামেজ সেক্টর হার্ড ড্রাইভ ডিটেক্ট করতে পারে না, ফলে হার্ড ড্রাইভ ফেইল হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। যদি আপনি দেখেন, আপনার হার্ড ড্রাইভ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ড্যামেজ সেক্টর ডিটেক্ট করছে, তো বুঝে নেবেন হার্ড ড্রাইভটি সম্পূর্ণ ফেইল হওয়ার অবস্থায় চলে এসেছে।

কিভাবে ড্যামেজ সেক্টর চেক এবং রিপেয়ার করবো?

আপনি যদি উইন্ডোজ কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন, সেখানে বিল্ডইন ভাবে ডিস্কচেক অপশন রয়েছে, যেটা “chkdsk” নামে পরিচিত—এটি সহজেই ড্যামেজ সেক্টর গুলোকে খুঁজে বেড় করতে পারে, সফট ড্যামেজ সেক্টর গুলোকে রিপেয়ার করতে পারে এবং এগুলকে আবার ব্যবহার করার উপযোগী করে তুলতে পারে। যদি আপনার উইন্ডোজ মনে করে, আপনার হার্ড ড্রাইভে কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে, তো উইন্ডোজ স্টার্ট হওয়ার সময় এই টুলটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রান করিয়ে দেয়। আলাদা অপারেটিং সিস্টেম যেমন লিনাক্স ডিস্ট্র, ম্যাক ওএস ইত্যাদিতে এদের নিজস্ব ডিস্ক চেক টুল রয়েছে। আমার মতে এই ব্লগে উইন্ডোজ ইউজারই বেশি, যদি কেউ ম্যাক বা লিনাক্স ব্যবহার করে ডিস্কচেক না করতে পারেন, আমাকে নিচে কমেন্ট করুন, আমি পদ্ধতি গুলো সেখানে শিখিয়ে দেবো।

শুধু উইন্ডোজের ডিফল্ট টুল নয়, সাথে আরো অনেক তৃতীয় পক্ষ সফটওয়্যার SpinRite, অনেক ভালো কাজ করে। ড্যামেজ সেক্টর হার্ড ডিস্কের এক জন্মগত সমস্যা, এটা ঘটবেই। তাই অবশ্যই আপনার সকল ডাটা গুলোকে ব্যাকআপ করে রাখা প্রয়োজনীয়। আর আমি আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করে থাকলাম আপনাদের কমেন্ট গুলো পড়ার জন্য, আমি সত্যিই জানতে চাই আপনাদের কারো ড্যামেজ সেক্টর প্রবলেম ঘটেছে কিনা! আপনি কিভাবে সেটাকে চেক করেছিলেন এবং ফিক্স করেছিলেন! —নিচে আমাদের কমেন্ট করে সবকিছু জানান।


Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories