অ্যান্ড্রয়েডের জন্য ৫ টি বেস্ট ইমেইল অ্যাপ

ইমেইল ইনবক্স ম্যানেজ করার জন্য অধিকাংশ সময়ই ফোনের ডিফল্ট ইমেইল অ্যাপ যথেষ্ট হয়না। যদিও, গুগলের তৈরি ইমেইল ক্লায়েন্ট, Gmail যথেষ্ট ফিচার প্যাকড, তবে অনেকসময় ইমেইল ম্যানেজ করার জন্য থার্ড পার্টি অনেক ইমেইল অ্যাপ Gmail এর থেকেও আরো ভালো কাজ করে। আজকে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য ৫ টি থার্ড পার্টি ইমেইল ক্লায়েন্ট বা ইমেইল অ্যাপ নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি যেগুলো আপনার ইমেইল ইনবক্সকে আরো বেশি অর্গানাইজড রাখবে এবং আরো বেশি কাস্টোমাইজ করার সুযোগ দেবে।

পনি যদি অনেক বেশি ইমেইল কনভারসেশন করেন, তাহলে আপনার অবশ্যই কোনো বেটার থার্ড পার্টি ইমেইল অ্যাপ ব্যাবহার করা উচিত বলে আমি মনে করি। যাইহোক, সরাসরি মেইন টপিকে আসা যাক!

এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

Outlook Mail

খুব সম্ভবত, টেক জায়ান্ট মাইক্রসফটের তৈরি আউটলুক ইমেইল অ্যাপ এখনও পর্যন্ত ফ্রি ইমেইল অ্যাপগুলোর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয়। আউটলুক ইমেইলের জনপ্রিয়তার কারণ হচ্ছে এর সুন্দর এবং মিনিমাল ইউজার ইন্টারফেস, যা মাইক্রোসফটের ফ্লুয়েন্ট ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ফলো করে। সত্যি কথা বলতে আউটলুক মেইলের ইউজার ইন্টারফেস জিমেইলের ম্যাটেরিয়াল ডিজাইনের থেকে ভিজুয়্যালি আরও বেশি সুন্দর।

তবে শুধু ইউজার ইন্টারফেসই নয়, আউটলুক মেইলে আরও কিছু এক্সট্রা ফিচারস আছে যেগুলো আপনি জিমেইল এবং অন্যান্য অনেক ইমেইল অ্যাপে পাবেন না। যেমন, আউটলুক মেইলের একটি হাইলাইটেড ফিচার হচ্ছে Focused Inbox। আউটলুক মেইলে আপনার ইমেইল ইনবক্সকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যার মধ্যে একটি হচ্ছে Focused, যেখানে আউটলুক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যাবহার করে শুধুমাত্র সেই ইমেইলগুলোকেই রাখবে যেগুলোতে আপনার ফোকাস দেওয়ার দরকার আছে। এছাড়া বাকি যেসব ইমেইল যেগুলোতে আপনার তেমন কোনো ফোকাস দেওয়ার দরকার নেই, যেমন- প্রোমোশনাল ইমেইল, মার্কেটিং ইমেইল, অপ্রোয়জনীয় নোটিফিকেশন ইমেইল এগুলো সব থাকবে Others সেকশনে।

শুনতে তেমন দরকারী কোনো ফিচার মনে না হলেও, আপনি কয়েকদিন আউটলুক ইমেইল ব্যাবহার করার পরে অন্য কোনো ইমেইল অ্যাপে সুইচ করলে আপনি অবশ্যই এই ফিচারটি মিস করবেন। এই ফিচারটির কারণে আউটলুক ইনবক্সে দরকারী ইমেইল খুঁজে পেতে কয়েক মিনিট ধরে সম্পুর্ন ইনবক্স স্ক্রল করতে থাকার দরকার হয়না। আর আউটলুকে নতুন ইমেইল টাইপ করার সময় আপনি অনেক এক্সট্রা টেক্সট এডিটিং এবং স্টাইলিং ফিচারস পাবেন, যেগুলো অন্যান্য অধিকাংশ ইমেইল অ্যাপে কখনোই পাবেন না। আউটলুকের ইমেইল টাইপ করার স্ক্রিনটি অনেকটা ছোটখাটো মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতো।
যদিও আউটলুক মেইল অ্যাপ সবথেকে ইফেক্টিভ হয় যদি আপনি মাইক্রোসফটের আউটলুক ইমেইল সার্ভিস ব্যাবহার করেন, তবে আপনি যেকোনো ইমেইল সার্ভিসই আউটলুক অ্যাপের সাথে খুব সহজেই কানেক্ট করে ব্যাবহার করতে পারবেন। জিমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করতে চাইলে আপনাকে জাস্ট গুগল অ্যাকাউন্টের সাথে আউটলুক মেইল অ্যাপটি কানেক্ট করে নিতে হবে। আর আপনি চাইলে আউটলুক অ্যাপে আপনার অনেকগুলো ইমেইল অ্যাকাউন্ট সাইন-ইন করে সবগুলোর ইনবক্স মার্জ করেও ব্যাবহার করতে পারবেন। আপনি যদি কয়েকটি ইমেইল অ্যাড্রেসের ইনবক্স একটি অ্যাপ থেকে ব্যাবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে আউটলুক মেইলই আপনার জন্য বেস্ট অপশন হবে।

Download Link

Blue Mail

থার্ড পার্টি ইমেইল অ্যাপসগুলোর মধ্যে Blue Mail ও আরেকটি জনপ্রিয় নাম। এটি প্রায় সব মেইনস্ট্রিম ইমেইল সার্ভিস যেমন- Gmail, Yahoo, Outlook, Aol, Gsuite Mail এবং অন্য যেকোনো Pop3 এবং IMAP ইমেইল সাপোর্ট করে। আউটলুক মেইল অ্যাপের মতোও এটিতেই মাল্টি অ্যাকাউন্ট ফিচার আছে, যার সাহায্যে আপনি একটি অ্যাপ থেকেই আপনার সবগুলো ইমেইল অ্যাকাউন্টের ইনবক্স চেক করতে পারবেন এবং যেকোনো ইমেইল অ্যাকাউন্ট থেকে ইমেইল সেন্ড করতে পারবেন। এছাড়া Blue Mail এর নোটিফিকেশন সেটিংস অন্যান্য অধিকাংশ ইমেইল অ্যাপের থেকে বেশি ফিচার প্যাকড। আপনি কোন ইমেইল অ্যাকাউন্টের জন্য কখন নোটিফিকেশন পেতে চান, কোন ইমেইল অ্যাকাউন্ট কতক্ষন পরপর সিংক করতে চান এই সব ছোট ছোট অপশন আপনি নিজের ইচ্ছামত চেঞ্জ করে নিতে পারবেন।

তাছাড়া যে কয়েকটি হাতেগোনা ইমেইল অ্যাপের Android Wear সাপোর্ট আছে, তার মধ্যে Blue Mail একটি। এছাড়াও Blue Mail এ আরও কিছু স্মার্ট ফিচারস এবং সেটিংস রয়েছে যেগুলো আপনি অন্যান্য অনেক ফ্রি ইমেইল ক্লায়েন্টে পাবেন না। তবে Blue Mail এ কিছু সম্ভাব্য প্রাইভেসি ইস্যু রয়েছে যেহেতু এটি ইমেইল সিংকিং এবং ইমেইল সেন্ড-রিসিভ করার জন্য নিজের সার্ভার ব্যাবহার করে। তবে অধিকাংশ অ্যাভারেজ ইমেইল ইউজারের জন্য এটা তেমন কোনো ইস্যু নয়। আর Blue Mail এর ইউজার ইন্টারফেস Outlook এর মতো সুন্দর না হলেও যথেষ্ট সুন্দর এবং মিনিমাল।

Download Link

Spark

থার্ড পার্টি ইমেইল অ্যাপসগুলোর মধ্যে Spark বেশ নতুন একটি অ্যাপ। অ্যাপটি লঞ্চ করা হয়েছিলো ২০১৯ সালে এবং এখনো পর্যন্ত এটি ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট ইমেইল অ্যাপস। বেসিক সব ইমেইল ফিচারস এবং কাস্টোমাইজেশনের পাশাপাশি আপনি এতে আরও অনেক অ্যাডভান্সড ফিচারস পাবেন, যেগুলো সাধারনত অন্যান্য অধিকাংশ ইমেইল অ্যাপেই পাবেন না। ইমেইল স্নুজ করা, টাইমার সেট করে ইমেইল সেন্ড করা, ইমেইলকে টাস্ক রিমাইন্ডার হিসেবে সেট করা, সেন্ড করা ইমেইল একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আনসেন্ড করতে পারা ইত্যাদি এমন অনেক ছোট ছোট দরকারী ফিচার পাবেন আপনি এই অ্যাপে যেগুলো জিমেইল বা আপনার ফোনেত ডিফল্ট ইমেইল ক্লায়েন্ট পাবেন না।

এই ইমেইল অ্যাপেও Outlook এর মত একটি ইনবক্স সিস্টেম আছে যেগুলো আপনার সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় ইমেইলগুলোকে আলাদা করে স্টোর করে আপনাকে শো করবে। আবার এই লিস্টের অন্যান্য ইমেইল অ্যাপের মতো এটিতেও আছে ইউনিভার্সাল ইনবক্স সিস্টেম। অর্থাৎ, আপনি আপনার আলাদা আলাদা ইমেইল অ্যাড্রেসের ইনবক্স একসাথে মার্জ করে সবগুলোর ইনবক্সে থাকা ইমেইল এক জায়গায় দেখতে পারবেন। Blue Mail এর মতো এটিও প্রায় সব জনপ্রিয় ইমেইল সার্ভিসের সাথে সহজেই কোনো সেটাপ ছাড়াই ইন্টিগ্রেট হয়। আর এটার ইউজার ইন্টারফেসও খুবই ক্লিন এবং মিনিমাল।

Download Link

Spike

হ্যাঁ, আগেরটা আর এটার নাম অনেকটাই সিমিলার। এটিও আরেকটি ইউনিক ইমেইল ক্লায়েন্ট। তবে এই ইমেইল ক্লায়েন্টটি এই লিস্টের অন্যগুলোর থেকে একটু আলাদা। Spike এর ফোকাস হচ্ছে ইমেইলকে অনেকটা কনভারসেশন বা চ্যাটের মতো করে প্রেজেন্ট করা। Spike আপনার ইমেইল ইনবক্সকে অনেকটা আপনার ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের ড্যাশবোর্ডের মতো লুক দেবে। প্রত্যেকটি ইমেইল কনভারসেশনকে অনেকটা ফেসবুক মেসেঞ্জারের মেসেজের মতো করে দেখানো হবে যার ফলে প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা কনভারসেশন এবং একটি কনভারসেশনের সকল হিস্টোরি খুব সহজেই আপনি খুঁজে পাবেন।

Spike ব্যাবহার করে আপনি যদি কাউকে ইমেইল সেন্ড করেন এবং যাকে সেন্ড করেছেন সে যদি সাথে সাথে রিপ্লাই করে, তাহলে ইমেইল করার সময় আপনি একেবারেই চ্যাট করার মতো ফিল পাবেন। আর প্রত্যেকটি ইমেইলকে চ্যাট কনভারসেশনের মতো করে প্রেজেন্ট করায় ইমেইল হিস্টোরি খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় এই অ্যাপে। আর এটার ইউজার ইন্টারফেসও অবশ্যই ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের মতোই এবং খুবই সুন্দর। আপনি কয়েকদিন যদি Spike ব্যাবহার করেন, তাহলে নরমাল ইমেইল ক্লায়েন্টে আর কখনোই কমফোর্টেবল ফিল করবেন না। যদি একটু ইউনিক ধরনের ইমেইল ক্লায়েন্ট ব্যাবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই Spike ট্রাই করে দেখতে পারেন।

Download Link

CleanFox

সত্যি কথা বলতে, এটি কোনো ট্রেডিশনাল ইমেইল ক্লায়েন্ট বা ইমেইল অ্যাপ নয়। তবে এই অ্যাপ ইমেইল ইউজারদের জন্য অত্যন্ত কাজের একটি অ্যাপ হতে পারে বলে এই অ্যাপটি এই লিস্টের শেষে অ্যাড করেছি। যারা অনেক বেশি ইমেইল আদান-প্রদান করেন, তারা অবশ্যই একটা ঝামেলায় পড়ে থাকেন, তা হচ্ছে ইমেইল নিউজলেটারস। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং কোম্পানি থেকে প্রত্যেকদিন অনেক প্রোমোশনাল ইমেইল সেন্ড করা হয়, যেগুলো আমরা কেউ পেতে চাইনা। শুধিমাত্র আলসেমির কারণে ইমেইলগুলোর নিচে স্ক্রল করে Unsubscribe লিংকে ক্লিক করে ইমেইলগুলো থেকে আনসাবস্ক্রাইব করা হয়না বলেই এসব ইমেইল নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় প্রত্যেকদিন। তবে CleanFox আপনার এই সমস্যার সমাধান হতে। CleanFox এর শুধু একটাই কাজ, আর তা হচ্ছে এসব প্রোমোশনাল ইমেইল থেকে অটোমেটিক্যালি আনসাবস্ক্রাইব করা।

আপনাকে জাস্ট CleanFox অ্যাপে আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস অ্যাড করতে হবে। এরপরে আপনার ইমেইল সার্ভিসে CleanFox অ্যাপ কানেক্ট করলে CleanFox তখন থেকেই তার কাজ শুরু করবে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এটি আপনার পারমিশন ছাড়া কোনো প্রোমোশনাল ইমেইল থেকে আপনাকে আনসাবস্ক্রাইব করিয়ে দেবে না।
অ্যাপটি নিয়মিত আপনার ইনবক্স স্ক্যান করবে এবং আপনি যেসব সার্ভিস থেকে প্রোমোশনাল ইমেইল পেয়েছেন সেসব সার্ভিসগুলোকে কার্ড আকারে পরপর শো করবে। যেসব সার্ভিস থেকে আপনি কোনো প্রোমোশনাল ইমেইল পেতে চান না, আপনাকে জাস্ট সেই কার্ডগুলোকে লেফট সোয়াইপ করে দিতে হবে, অনেকটা Tinder এর মতো। কোন সার্ভিসের কার্ড জাস্ট একবার লেফট সোয়াইপ করে দিলেই আপনি সেই সার্ভিস থেকে আর কোনো প্রোমোশনাল ইমেইল রিসিভ করবেন না। ঠিক তেমনি কোনো সার্ভিসের প্রোমোশনাল ইমেওল চালু রাখতে চাইলে সেই কার্ডটি রাইট সোয়াইপ করবেন। ইমেইল আনসাবস্ক্রাইব করার এর থেকে সহজ উপায় আর কিছু হতেই পারেনা

download LInk

 

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories