টেকনোলজি এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে মানুষের কয়েকটি ভুল ধারণা

আপনি নিশ্চিতভাবেই পৃথিবীর প্রত্যেকটি বিষয়েই মানুষের কিছু সাধারন ধারণা বা সাধারন কিছু বিশ্বাস দেখে/শুনে থাকবেন, অধিকাংশ সময় যার অনেকগুলোই শুধু গুজব বা মিথ্যা। মানুষের লাইফের অন্যান্য সব টপিকের পাশাপাশি টেকনোলজি এবং ইন্টারনেট নিয়েও মানুষের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে, যেগুলোর কারণে অনেক ইউজারই অনেকসময় গুজবে বিশ্বাস করে ভুল কাজ করেন বা ভুল সিদ্ধান্ত নেন, যা এমনকি অনেকসময় উলটো ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আপনি নিশ্চিতভাবেই পৃথিবীর প্রত্যেকটি বিষয়েই মানুষের কিছু সাধারন ধারণা বা সাধারন কিছু বিশ্বাস দেখে/শুনে থাকবেন, অধিকাংশ সময় যার অনেকগুলোই শুধু গুজব বা মিথ্যা। মানুষের লাইফের অন্যান্য সব টপিকের পাশাপাশি টেকনোলজি এবং ইন্টারনেট নিয়েও মানুষের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে, যেগুলোর কারণে অনেক ইউজারই অনেকসময় গুজবে বিশ্বাস করে ভুল কাজ করেন বা ভুল সিদ্ধান্ত নেন, যা এমনকি অনেকসময় উলটো ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে।


# Disc এবং Disk একই জিনিস

আপনার যদি এই দুটি আলাদা আলাদা ওয়ার্ড এর ব্যাপারে ক্লিয়ার আইডিয়া থাকে, আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ওয়ার্ড দুটির উচ্চারন একইরকম হওয়ার কারণে এখনও অধিকাংশ মানুষই ভেবে থাকেন যে Disc এবং Disk একই জিনিস। যদি আপনিও এতদিন তাই ভেবে থাকেন, তাহলে জেনে রাখুন, এটা সঠিক নয়! Disc এবং Disk এর কাজ প্রায় একই হলেও এই দুটি জিনিস একেবারেই আলাদা। হ্যাঁ, এই দুটিই স্টোরেজ ডিভাইস এবং এই দুটিই ডাটা স্টোর করার কাজে ব্যাবহার করা হয়। তবে দুটি দুই ধরনের জিনিস। যদি আপনি Disc এর কথা বলেন, তাহলে আমরা বেশ কিছু বছর আগে কোন মুভি বা ভিডিও দেখার জন্য যে গোল গোল চাকার মতো প্লাস্টিকের ডিস্কগুলো ব্যাবহার করতাম, আমরা সিপিইউ এর ডিস্ক ড্রাইভে যে গোলাকার ডিস্কগুলো ইনসার্ট করতাম, শুধুমাত্র সেগুলোকেই বলা হয় Disc।

আর এই গোলাকার ডিস্কগুলো ছাড়া বাকি যত স্টোরেজ ডিভাইস আছে, যেমন- হার্ড-ড্রাইভ, এসএসডি, মাইক্রো এসডি কার্ড এই সব স্টোরেজ ডিভাইসকেই আমরা ইন-জেনারেল Storage Drive  কিংবা Disk বলতে পারি। আপনি ওই আগেকার পাতলা গোলাকার ডিস্কগুলো ছাড়া আর যত রকমের স্টোরেজ ডিভাইসের কথাই চিন্তা করুন না কেন, বাকি সবগুলোই আসলে Disk ক্যাটাগরিতে পড়ে। তাই নেক্সট টাইম কোন স্টোরেজ ডিভাইসকে Disc বা Disk বলার আগে এই পার্থক্যটি মনে রাখতে পারেন!

# ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজ করলেই আপনি সুরক্ষিত

আপনি অনেকসময়ই শুনে থাকবেন যে ব্রাউজারে ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজ করলেই আপনার ব্রাজিং ডাটা সুরক্ষিত এবং আপনি ইনকগনিটো মোডে থাকলে আপনি ব্রাউজারে যেকোনো পার্সোনাল ইনফরমেশন নিরাপদে ইনপুট করতে পারবেন। ব্যাপারটা একেবারেই তেমন নয়। ইনকগনিটো মোড শুধুমাত্র একটাই কাজ করে। তা হচ্ছে, এই মোডে আপনি কি কি ওয়েবসাইট ভিজিট করলেন, ব্রাউজারে কি কি কুকিজ সেভ করলেন এসব কিছুই আপনি ইনকগনিটো মোড থেকে বের হওয়ার পরে আর ব্রাউজারের লোকাল স্টোরেজে সেভ করে রাখে না। এর ফলে পরবর্তিতে ওই একই ব্রাউজার অন্য কেউ ব্যাবহার করলে আপনার ব্রাউজিং ডাটার কোনরকম ট্রেস সে খুঁজে পায় না।

তবে এটা শুধুই লোকাল ইউজারদের ক্ষেত্রে। যেহেতু ইনকগনিটো মোড শুধুমাত্র আপনার ব্রাউজিং হিস্টোরি এবং কুকিজ ডিলিট করা ছাড়া আর কিছুই করছে না, তাই আপনার আইএসপি কিংবা আপনি যে ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন, সেই ওয়েবসাইট চাইলে একইভাবে আপনাকে ট্র্যাক করতে পারবে, যেমনটা সাধারণ মোডে ব্রাউজ করলে হতো। তাই ইনকগনিটো মোড শুধুমাত্র আপনার বাসার লোকজনদের কাছ থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে, ইন্টারনেট থেকে নয়! এই ব্যাপারে বিস্তারিত পড়তে চাইলে এই পোস্টটি পড়তে পারেন।

# রিসাইকেল বিন থেকে ডিলিট করলেই ফাইল ডিলিট হয়ে যায়

এটা সম্ভবত ৯০% অ্যাভারেজ ডেক্সটপ ইউজারদেরই ধারণা। কিন্তু এই ধারণাটিও ১০০% সত্যি নয়। হ্যাঁ, কোন ফাইল সাধারনভাবে ডিলিট করার পরে যদি রিসাইকেল বিন থেকেও ডিলিট করে দেন, তাহলে ডেক্সটপের কোথাও সেটি আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা এবং ফাইলটি কোন স্পেসও কোনজিউম করবে না। কিন্তু তার মানে এই না যে ফাইলটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফাইল কখনোই শেষ হয়ে যায় না। ভেবে দেখুন, ফাইল যদি ডিলিট করার পরে সত্যিই ধ্বংস হয়ে যেত, তাহলে কিভাবে এসব ফাইল ডিলিট করার পরেও ফাইল রিকভারি সফটওয়্যারগুলো ব্যাবহার করে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়?

 

কারণ, ফাইলগুলো ডিলিট করা হয়না, বরং বলতে পারেন যে ফাইলটিকে ডিলিট হিসেবে মার্ক করে দেওয়া হয়, কিন্তু ফাইলটি তখনো সেভাবেই থেকে যায় (বোঝার সুবিধার্থে)। শুনতে ভৌতিক শোনালেও এটাই সত্যি। যদিও কিভাবে কি করা হয় তার টেকনিক্যাল ব্যাখ্যা আছে এবং এটা জাস্ট ডিলিটেড হিসেবে মার্ক করার মতো এত সিম্পল প্রোসেস নয়। একটি ফাইলকে সম্পূর্ণভাবে ডিলিট বা উধাও করে দেওয়ার করার জন্য ফাইলটিকে অনেকগুলো 0000 বা অনেকগুলো 1111 দ্বারা ওভাররাইট করার মতো একধরনের প্রোসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যাকে টেকনিক্যাল ভাষায় বলা হয় Shred করা। ফাইল ডিলিট এর ব্যাপারে যদি বিস্তারিত পড়তে চান, এই পোস্টটি দেখতে পারেন!

# রানিং অ্যাপস ক্লিয়ার করলে ফোন ফাস্ট হবে

অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ইউজারদেরই একটি অভ্যাস হচ্ছে, কিছুক্ষন পরপর ফোনের রিসেন্ট অ্যাপস বা ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং থাকা অ্যাপসের লিস্টে গিয়ে পরপর সব অ্যাপস ক্লিয়ার করতে থাকা। কারণ, তারা মনে করেন যে, ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং থাকা অ্যাপসগুলো শুধু শুধুই তাদের ফোনের র‍্যাম এবং সিপিইউ পাওয়ার কনজিউম করছে যা ফোনের হেলথ এর জন্য ভালো নয়। তাই ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং থাকা সব অ্যাপস ক্লোজ করে দিলে ফোনের র‍্যাম ফাঁকা হবে এবং তাদের ফোন ফাস্ট হবে। কিন্তু তা একেবারেই ভুল ধারণা!

বর্তমান সময়ের অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো র‍্যাম ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে ইউজারের থেকে অনেক বেশি স্মার্ট। ফোনে ব্যাকগ্রাউন্ডে যতই অ্যাপস রানিং থাকুক না কেন, কোন অ্যাপকে কতটুকু রিসোর্স ইউজ করতে দিতে হবে, তা আপনার থেকে আপনার ফোন আরও ভালো জানে। তাছাড়া আপনি যখন ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন অ্যাপ রানিং রেখে দেবেন, তখন নেক্সট টাইম যখন ওই অ্যাপটি আপনি ওপেন করবেন, তখন অ্যাপটির অধিকাংশ ডাটা আপনার র‍্যামে আগে থেকেই লোড করা থাকবে। তাই ফোনকে নতুন করে খুব বেশি কাজ করতে হবেনা অ্যাপটিকে ওপেন করার জন্য।

কিন্তু যখন আপনি সব রিসেন্ট অ্যাপস ক্লোজ করে দেবেন, তখন দ্বিতীয়বার ওই অ্যাপগুলো যখন ওপেন করবেন, তখন আপনার ফোনকে নতুন করে আবার অ্যাপটিকে লোড করার জন্য, অ্যাপটির ডাটা আপনার প্রোসেসরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। এর ফলে ফোনের প্রোসেসর এবং র‍্যামকে আরও বেশি কাজ করতে হবে। তাই রিসেন্ট অ্যাপস রানিং রাখার থেকে ক্লোজ করে দেওয়াটাই বরং আপনার ফোনের হেলথের জন্য খারাপ। আর যদি অ্যাপ রানিং রেখে দিলে কতটুকু র‍্যাম খালি থাকছে সে বিষয়ে চিন্তা করেন, তাহলে জেনে রাখা ভালো, “ফ্রি র‍্যাম” আসলে কোন কাজেরই নয়। তাই যতটা পারেন ফোনকে র‍্যাম ব্যাবহার করতে দিন। (তবে একেবারে ১০০% ফুল করে ফেলা ভালো আইডিয়া নয়!)

আচ্ছা, সবশেষে আরেকটা ভুল ধারনার ব্যাপারে বলা যাক, যেটি না বললেই নয়!

# ফ্রিল্যান্সার মানেই প্রোগ্রামার

এই টাইটেলটা শুনে অনেকেই হয়তো ভাবছেন যে, এটা তো জানিই, নতুন করে আর বলার কি আছে? তাহলে আপনি এই পয়েন্টটা স্কিপ করুন। কিন্তু, আপনি হয়তো জানলেও আমাদের দেশের অধিকাংশ অ্যাভারেজ ইন্টারনেট ইউজাররাই ফ্রিল্যান্সার আর প্রোগ্রামারদের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। মূলত বাংলাদেশের মানুষেরই এই অজ্ঞতাটা সবথেকে বেশি। ফ্রিল্যান্সার মানে হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে অন্য কারো কোনো কাজ করে দেওয়া। সেটা যেকোনো ধরনের কাজই হতে পারে। ছবি এডিট করা, লোগো তৈরি করা, ওয়েবসাইট বানানো বা যেকোনো ধরনের কাজ হতে পারে যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা সম্ভব।

হ্যাঁ, এটা প্রোগ্রামিংও হতে পারে। প্রোগ্রামিং ফ্রিল্যান্সিং এর একটি পার্ট হতে পারে, তবে ফ্রিল্যান্সিং করা মানেই প্রোগ্রামিং করা নয়। হ্যাঁ, একজন প্রোগ্রামার চাইলে ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন, তবে কোনো ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কেউ অনেক বছর ধরে কাজ করলেই তিনি দক্ষ প্রোগ্রামার হবেন, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। এই বিষয়টি নিয়ে ছোট করে কিছু বলার দরকার মনে করলাম কারণ, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই এমন ধরনের একটা ভুল ধারণা (বা আংশিক ভুল ধারণা) আছে বলেই এখন বাংলাদেশের মানুষ প্রোগ্রামিং শেখার  জন্য ডেডিকেটেড প্রোগ্রামিং টিউটোরিয়াল বা কোডিং রিলেটেড ইউটিউব চ্যানেলগুলো ফলো না করে ফ্রিল্যান্সারদের চ্যানেলে প্রোগ্রামিং শিখতে যান। আর ফলস্বরূপ, মডিউলাস অপারেটর শিখতে গিয়ে শতকরার অংক শিখে আসেন। If you know what I mean!🤐

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories