পর্ব-৯
অ্যাপস ছাড়া একটি অপারেটিং সিস্টেম কল্পনাই করা যায়না। টেকনিক্যালি বলতে গেলে অ্যাপসই হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ। একটি অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রকম অ্যাপস থাকে। নেট ব্রাউজ করার জন্য ব্রাউজার অ্যাপস, গান শোনার জন্য মিউজিক প্লেয়ার অ্যাপস, ডকুমেন্ট এডিট করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা গুগল ডক, ছবি এডিট করার জন্য ফটো এডিটর অ্যাপস এবং এমন শত শত কাজের জন্য হাজারো অ্যাপস থাকে একটি অপারেটিং সিস্টেমে।
আর অপারেটিং সিস্টেমটি যদি হয় অ্যান্ড্রয়েড, তাহলে তো কথাই নেই, প্লে স্টোরে একই কাজের জন্য কমপক্ষে ১০০ রকমের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস পাবেন। যাইহোক, আর বেশি ভূমিকা না করে কাজের কথায় আসি। আজকে আমাদের বেস্ট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস সিরিজের নবম পর্বে আরো ৫ টি এমন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস শেয়ার করবো যেগুলো আপনার বা আমার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে।
AuroraStore
এটি অ্যান্ড্রয়েডের জন্য একটি থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোর, ঠিক গুগল প্লে স্টোরের মতোই। আপনি এই স্টোর থেকে গুগল প্লে স্টোরে যত অ্যাপস আছে, সব অ্যাপসই ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, এটি কোন পেইড অ্যাপ আপনাকে ফ্রি-তে দেবে এমন কোন ব্ল্যাকমার্কেট নয়। যেসব ফ্রি অ্যাপস আপনি প্লে স্টোরে পাবেন, সেসব অ্যাপসই আপনি এই স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন এবং ইন্সটল করতে পারবেন।
আবার, প্রত্যেকটি অ্যাপের লেটেস্ট ভার্সন পাবেন আপনি এই স্টোরে। অনেকসময় অনেক অ্যাপের লেটেস্ট ভার্সন গুগল প্লে স্টোরে এভেইলেবল হতে কিছুটা দেরি হয়। তবে AuroraStore এ আপনি সবসময়ই সব অ্যাপের লেটেস্ট ভার্সন খুব দ্রুত পেয়ে যাবেন। অন্যান্য থার্ড পার্টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডাউনলোড ওয়েবসাইটের সাথে এই স্টোরটির পার্থক্য হচ্ছে, এট ন্যাটিভ অ্যাপ এবং এটির অ্যাপ ডাউনলোড এবং ইন্সটলেশন একেবারেই গুগল প্লে স্টোরের মতো। এটির ডাউনলোড স্পিডও যথেষ্ট ভালো।
এখন আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, প্লে স্টোর থাকতে আপনি কেন এই স্টোরটি ব্যাবহার করবেন? এর কারণ হচ্ছে, এই স্টোরে আপনি এক্সট্রা আরো অনেক ফিচার পাবেন যেগুলো গুগল প্লে স্টোরে কখনোই পাবেন না। যেমন- আপনি চাইলে এই স্টোরের সেটিংস থেকে লোকেশন স্পুফ করে যেসব অ্যাপ বাংলাদেশে প্লে স্টোরে এভেইলেবল নেই সেসব অ্যাপসও ডাউনলোড করতে পারবেন এবং চাইলে ডিভাইস ইনফো স্পুফ করে আপনার ডিভাইসের জন্য যেসব অ্যাপস এভেইলেবল নেই সেগুলোও ডাউনলোড করতে পারবেন (যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিভাইস স্পুফ করে অ্যাপ ডাউনলোড করলে অ্যাপগুলো আপনি ইন্সটল করতে পারবেন না।
আর আপনার ফোনে যদি গুগল সার্ভিসেস এর সাপোর্ট না থাকে ( Huawei! ), তাহলে এমনিতেও আপনি প্লে স্টোর ব্যাবহার করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনি এই ষ্টোরকে প্লে স্টোরের বেস্ট অলটারনেটিভ হিসেবে ব্যাবহার করতে পারবেন। আর এই অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেসও খুবই সুন্দর এবং একইসাথে সম্পূর্ণ অ্যাডফ্রি। যেমনটা অলরেডি ধারণা করেছেন, এই অ্যাপটি আপনি গুগল প্লে স্টোরে খুঁজে পাবেন না। AuroraStore এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন স্টোরটি।
Torrz
এটি একটি টরেন্ট সার্চ ইঞ্জিন। যারা প্রত্যেকদিনই টরেন্ট ব্যাবহার করেন এবং যেকোনো ধরনের পেইড কন্টেন্টের জন্য টরেন্ট ওয়েবসাইটগুলোই যাদের একমাত্র ভরসা, আমার মতে, তাদের জন্য ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট অ্যাপ হচ্ছে এটি। এটি জাস্ট আরেকটা টরেন্ট ওয়েবসাইট নয়। এই অ্যাপের মেইন পেজে থাকা সার্চ ইঞ্জিনে আপনাকে জাস্ট আপনার কাঙ্ক্ষিত টরেন্টটির নাম লিখে সার্চ করতে হবে। এরপরে এই অ্যাপটি বিভিন্ন ধরনের টরেন্ট ওয়েবসাইট থেকে আপনার প্রয়োজনীয় কন্টেন্টটির সার্চ রেজাল্ট খুঁজে এনে দেখাবে। কোন টরেন্টটি কোন ওয়েবসাইট থেকে ফেচ করা হয়েছে এবং কোন টরেন্টটির সেই মুহূর্তে সিডার এবং লিচার কতজন রয়েছে, সেগুলোও সার্চ রেজাল্টের সাথেই দেখানো হবে, যাতে আপনি সহজেই ঠিক করতে পারেন যে কোন টরেন্টটি আপনি ডাউনলোড করবেন।
তবে এটি কোন টরেন্ট ডাউনলোডার নয়। যেসব টরেন্ট আপনাকে সার্চ রেজাল্টে দেখানো হবে, সেসব রেজাল্টে ক্লিক করলেই আপনি সরাসরি টরেন্টটির ম্যাগনেট ডাউনলোড লিংক কপি করতে নিতে পারবেন, যা আপনার পছন্দের টরেন্ট ডাউনলোডার অ্যাপে পেস্ট করেই ডাউনলোড শুরু করে দিতে পারেন। ডাউনলোড লিংক ছাড়াও আরও কিছু অপশন খুঁজে পাবেন, যেগুলো খুব একটা ইম্পরট্যান্ট নয়। আর হ্যাঁ, আরও ভালো ব্যাপার হচ্ছে, এই অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেসও খুবই সুন্দর এবং মডার্ন। আর এই অ্যাপটিও সম্পূর্ণ অ্যাড-ফ্রি। আমার মতে, টরেন্ট-ফ্রিক দের জন্য মাস্ট-হ্যাভ একটি অ্যাপ এটি।
Borno Keyboard
এই অ্যাপটি দেশীয় ডেভেলপারের তৈরি একটি বাংলা লেখার কি-বোর্ড অ্যাপ। এই অ্যাপটি অ্যাট-দিস-পয়েন্ট বেশ জনপ্রিয়। তবুও যারা জানেন না তাদের জন্য এই অ্যাপটিও আজকের লিস্টে যোগ করলাম। অ্যান্ড্রয়েডে বাংলা লেখার জন্য আমরা সবাই সবসময়ের জন্যই রিদ্মিক কিবোর্ড ব্যাবহার করে আসছি। এই কিবোর্ডটিও রিদ্মিক কিবোর্ডের মতোই ফোনেটিক এবং আরও কিছু ট্রেডিশনাল লেআউটে বাংলা লেখার সুযোগ দেয়। বাংলা লেখার ক্ষেত্রে কিবোর্ড সাজেশন এবং অটো কারেকশন একেবারেই রিদ্মিক কিবোর্ডের মতোই। তবে,এই অ্যাপটির ভালো দিকটি হচ্ছে, এটির ইউজার ইন্টারফেস রিদ্মিক কিবোর্ডের থেকে বেশ ভালো এবং মডার্ন।
এটির ইউজার ইন্টারফেস অনেকটা গুগল কিবোর্ড বা জিবোর্ডের মতো, যা অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড ইউজাররাই পছন্দ করেন। আর অটোকারেকশন এন্ট্রি এবং সাজেশন স্ট্রিপে সোলাইমানলিপি ফন্ট ব্যাবহার করায় এই কিবোর্ডের ফন্টগুলোও দেখতে খুব সুন্দর। আর হ্যাঁ, এই কিবোর্ডের সেটিংসে কিবোর্ডটিকে নিজের মতো করে কাস্টোমাইজ করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে যা রিদ্মিক কিবোর্ডে থাকলেও কিছুটা লিমিটেড। আর এই কিবোর্ডটির প্রি-ডিফাইন্ড বেশ কিছু কালার অ্যাকসেন্ট এবং থিমসও আছে যেগুলো বেশ সুন্দর। রিদ্মিক কিবোর্ড থেকে মুভ করলে প্রথম কয়েকদিন মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হলেও, একবার অভ্যস্থ হয়ে গেলে আশা করি রিদ্মিক কিবোর্ডের থেকেও আরও ফাস্ট টাইপ করতে পারবেন এই কিবোর্ড ব্যাবহার করে। রেগুলার ব্যাবহার না করলেও অন্তত দেশীয় ডেভেলপারদেরকে সাপোর্ট করার জন্য হলেও একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন এই কিবোর্ডটি।
Hermit
এটি একটি ওয়েব ব্রাউজার বলতে পারেন, তবে একটু অন্য ধরনের ওয়েব ব্রাউজার। এই অ্যাপটি ব্যাবহার করে আপনি যেকোনো লার্জ স্কেল ওয়েব অ্যাপলিকেশনকে আপনার ফোনে ন্যাটিভ অ্যাপের মতো ব্যাবহার করতে পারবেন, তবে ওয়েব অ্যাপ হওয়ায় অ্যাপগুলো ন্যাটিভ অ্যাপের তুলনায় অনেক কম রিসোর্স ব্যাবহার করবে এবং আরও অনেক কম ব্যাটারি ড্রেইন করবে। অ্যাপনার ফোন যদি ফ্ল্যাগশিপ হয়, তাহলে হয়তো আপনার এই টুলটির দরকার হবে না। আপনার ফোন যদি কিছুটা পুরনো হয় এবং কিছুটা স্লো হয়, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য এই অ্যাপটি দরকারি হতে পারে। যেমন- ফেসবুকের অফিসিয়াল অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি খুবই ভারী এবং রিসোর্স হাংরি অ্যাপ। অনেক স্টোরেজও দরকার হয় এই অ্যাপটি ভালোভাবে রান করতে।
আপনি যদি খুবই ক্যাজুয়াল এবং অনিয়মিত ফেসবুক ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো আপনার এই ফেসবুক অ্যাপটি ইন্সটল করে রাখার দরকার নেই। এমন সিচুয়েশনে আপনি ফেসবুকের মোবাইল ওয়েবসাইট/ওয়েব অ্যাপটিকেই Hermit এর সাহায্যে ন্যাটিভ ওয়েব অ্যাপ হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন। শুধু তাই নয়, আপনি আরও কিছু এক্সট্রা ফিচারস যোগ করতে পারবেন এই টুলটির সাহায্যে যা অফিসিয়ালি ফেসবুকের মোবাইল ভার্সনে নেই। যেমন, ডার্ক মোড। আবার আপনি চাইলে অ্যাড-ব্লকার এবং পপআপ ব্লকারও ব্যাবহার করতে পারবেন এর সাথে। ফেসবুক শুধুমাত্র একটি উদাহরণস্বরূপ বলেছি। আপনি Hermit ব্যাবহার করে আরও অনেকগুলো ওয়েব অ্যাপস সহজে ব্যাবহার করতে পারবেন। আর চাইলে নিজে কাস্টম অ্যাড্রেস ইন্টার করেও ওয়েব অ্যাপ যোগ করতে পারবেন।
ClimaCell
এটি একটি ওয়েদার এবং ফোরক্যাস্ট অ্যাপ। যারা ইতিপূর্বে ওয়েদার অ্যাপ Dark Sky এর ডিজাইন এবং সিম্পল ইউজার ইন্টারফেসের ফ্যান ছিলেন, তাদের এই ওয়েদার অ্যাপটি ভালো লাগবেই। যেমনটা অনেকেই জানেন, Dark Sky কে অ্যাপল কিনে নেওয়ার পরে অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মের জন্য ডিসকন্টিনিউ করা হয়েছে। যদি Dark Sky অ্যাপটি ভালো লেগে থাকলে আপনার অবশ্যই এই ওয়েদার অ্যাপটি ট্রাই করা উচিত, যেহেতু এটি Dark Sky এর ডিজাইন এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দ্বারা ইন্সপায়ারড।
এখানে আপনি আপনার লোকেশনের লাইভ টেম্পারেচারের পাশাপাশি বাতাসের গতি, আকাশের অবস্থা এবং মিনিট-বাই-মিনিট ওয়েদার প্রেডিকশন দেখতে পারবেন। একটি ফিচার প্যাকড ওয়েদার অ্যাপে যেসব ফিচার আপনি বা আমি এক্সপেক্ট করি, তার সব ফিচারসই ইমপ্লিমেন্ট করা হয়েছে এই অ্যাপে। তবে এই অ্যাপের সবথেকে ভালো ফিচারটি হচ্ছে, এখানে আপনি আপনার কিছু এক্সপেক্টেড ডেইলি অ্যাক্টিভিটি বা স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি যোগ করতে পারবেন। যেমন- আপনি যদি আপনার এক্সপেক্টেড অ্যাক্টিভিটি রানিং সেট করেন, তাহলে অ্যাপটি প্রতিদিন ওয়েদার কন্ডিশনের ওপরে বেজ করে আপনার দৌড়ানোর জন্য ওইদিনের বেস্ট টাইমটি আগে থেকেই আপনাকে জানিয়ে দেবে। এমন আরও অনেক ফিচারস রয়েছে এই অ্যাপে যা আপনি সচরাচর অন্যান্য সব ওয়েদার অ্যাপে পাবেন না।
Images: Shutterstock.com
No Comment! Be the first one.