এক্ষুনি আপনার ডিফল্ট অ্যান্ড্রয়েড ম্যাসেজেস অ্যাপটি ব্যবহার করা বন্ধ করুন!

মনে পরে আগের দিনের কথা? যখন না ছিল ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার আর নাইবা ছিল হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রাম। বাটন ফোনের এক লিমিটেড ম্যাসেজিং সিস্টেমে চ্যাট করে সময় কেটেছে অনেকের ঘণ্টার পর ঘণ্টা। টি-নাইন কীপ্যাড সিস্টেম মনে আছে, যেখানে একই বাটন চেপে চেপে ৩-৪ টা অক্ষর লিখা যেতো? — এসএমএস ম্যাসেজেস নিয়ে যখনই লিখতে বসে না চাইলেও ঐ দিন গুলোর কথা মনে পড়েই যায়!

পেছনের কয়েক বছরে ম্যাসেজিং সিস্টেম অকল্পনীয় মাত্রায় পরিবর্তন লাভ করেছে। মানে ইন্টারনেট চ্যাট অ্যাপ গুলো আর কি! যেমন ধরি টেলিগ্রামের কথা, নানান ফিচার তো এই আর্টিকেল থেকে পেয়ে যাবেন, কিন্তু হাইলাইট করে বলতে ১.৫ জিবি সিঙ্গেল সাইজ পর্যন্ত ফাইল শেয়ারিং করা যায়, চিন্তা করতে পারেন? আমার আমার ছোটবেলায় এমএমএস এর কথা মনে পরে, হায়রে একটা কয়েক সেকন্ডের ভিডিও সেন্ড করবো তাও যায় না, ৫০০ কেবি সাইজ হলেও হবে নাকি বড় ফাইল, উফ… কি এক আজব অভিজ্ঞতা। কিন্তু দেখুন, এটা কেবল মাত্র ৮-৯ বছর আগেরই গল্প।

স্মার্টফোনের সবকিছুতে পরিবর্তন চলে আসলেও ডিফল্ট ম্যাসেজিং সিস্টেম যেন রয়ে গেছে সেই আদীম কালের মতোই। মানে অবশ্যই আমি SMS ম্যাসেজেস এর কথা বলছি। হ্যাঁ, আইফোন ইউজারদের গল্প একটু আলাদা, ওদের আই-ম্যাসেজেস সার্ভিস রয়েছে, আর ঐটা নিয়ে ওদের অনেক ভাব, কিন্তু দেরিতে হলেও কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ইউজাররা আই-ম্যাসেজেস এর মতো ফিলিংস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না।

তো আপনার ফোনের এসএমএস সিস্টেমকে আরো উন্নত করার জন্য বা যদি এক জায়গা থেকেই সব ধরণের রিচ ফিচার উপভোগ করতে চান, আপনাকে ফোনের ডিফল্ট অ্যান্ড্রয়েড ম্যাসেজেস অ্যাপটি ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। — মানে এটাই তো আজকের আর্টিকেলের মুল বিষয়বস্তু, রাইট?


অ্যান্ড্রয়েড ম্যাসেজেস

হ্যাঁ টেক গিকরা এতক্ষণে বুঝেই গেছেন আমি গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ম্যাসেজেস অ্যাপ নিয়ে কথা বলছি। যেটা বর্তমানে অনেক উন্নতি লাভ করেছে। সাথে প্রায় দুনিয়ার সকল দেশেই আরসিএস ও চালু করা হয়ে গেছে। তবে কিছু দেশে এখনো আরসিএস লভ্য নয়, যেমন- চায়না, রাশিয়া, ইরান, আরো কিছু দেশে হয়তো, বাট হু কেয়ারস?

ওয়েট, ওয়েট, “আরসিএস?” এইডা কিডা? — হ্যাঁ, অনেকের মনে এমন প্রশ্ন থাকতেই পারে। তবে যেখানে আজকের আর্টিকেলের সূচনায় এতোবড় করে লিখেছি সেখানে একটা বর্ণনাও যে মিস যাবে এমনটা ভাবতে পারলেন কিভাবে? তার আগে কিছু যৌক্তিক আলোচনা করে নেয়। ব্যাপার গুলো অনেকেরই জানা, বাট তারপরেও এই আর্টিকেলের স্বার্থে না বললেও না।

অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেম এবং অ্যাপল ইকোসিস্টেম সম্পূর্ণই আলাদা ব্যাপার। ডিভাইজ, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, সার্ভিসেস সবকিছুর উপরেই অ্যাপলের নিজস্ব কন্ট্রোল অনেক বেশি। যেহেতু আইওএস অপারেটিং সিস্টেম ওয়ালা ফোন অ্যাপেল ছাড়া আর কারো নেই, তাই যেকোনো ইকোসিস্টেম তৈরি করা খুব সহজ ব্যাপার। অপরদিকে, অ্যান্ড্রয়েড? এটা তো প্রত্যেক কোম্পানি ব্যবহার করে। বর্তমানে নাম গুনে শেষ করা যাবে না, এতো অ্যান্ড্রয়েড ফোনের কোম্পানি রয়েছে। ওকে, অ্যান্ড্রয়েড গুগলের সফটওয়্যার, কিন্তু সকল অ্যান্ড্রয়েড ফোন গুগলের নয়। মার্কেটে বড় অ্যান্ড্রয়েড ফোন নির্মাতা কোম্পানি গুলো হচ্ছে স্যামসাং, হুয়াওয়ে, শাওমি, অপ্পো, ওয়ানপ্লাস ইত্যাদি।

এখন এরা অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে সকলেই নিশ্চয় অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করছে, কিন্তু বাকি সার্ভিসেস এবং অ্যাপ গুলোতে এক ফোন কোম্পানি আরেক ফোন কোম্পানি থেকে আলাদা। যেমন- স্যামসাং, হুয়াওয়ে, শাওমি, ওয়ানপ্লাস সকলের আলাদা আলাদা ম্যাসেজিং অ্যাপ, ব্রাউজার, লঞ্চার, ক্যামেরা অ্যাপ, এমনকি ক্যালকুলেটর অ্যাপও একে অপরের থেকে আলাদা। এখন এই সকল কোম্পানি গুলো যদি একসাথে মিলে মিশে কাজ করে তবেই সম্পূর্ণ প্ল্যাটফর্ম জুড়ে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।

ওকে, বহু ফাউ প্যাঁচাল পেরে ফেলেছি, এবার কাজের কথায় আসি। আপনার ফোনের ডিফল্ট ম্যাসেজেস অ্যাপ যদি গুগল ম্যাসেজেস হয়ে থাকে তাহলে তো কোন কথায় নেই, আপনাকে অ্যাপ পরিবর্তন করতেই হবে না বরং আপনার গুটি ফিট! কিন্তু যারা স্যামসাং, হুয়াওয়ে, বা শাওমির ডিফল্ট অ্যান্ড্রয়েড ম্যাসেজেস অ্যাপটি ব্যবহার করছেন, তাদের এক্ষুনি পরিবর্তন করা দরকার। কেন? কেননা, ঐগুলো পুরাতন, ঐগুলো সিকিওর না, ঐগুলো মডার্ন না, ঐগুলোতে আরসিএস নেই। আরো আরো আরো অনেক কারন… পড়তে থাকুন…

আরসিএস | RCS (Rich Communication Service)

যারা আরসিএস অলরেডি বোঝেন, অনেকেই বলবেন, হেই, “আই ডন্ড গিভ অ্যা ড্যাম” আমি ফেসবুক মেসেঞ্জার ইউজার, হোয়াটসঅ্যাপ ইউজার, টেলিগ্রাম ইউজার, ব্লা ব্লা ইউজার। তেল, কিন্তু আরসিএস এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এখনো যারা আরসিএস বোঝেন না তাদের জন্য, দেখুন সাধারন এসএমএস নিয়ে আপনাকে জ্ঞান দেওয়ার কিছু নেই আমার, অনেকে এসএমএস এর উপর আমার থেকেও বড় বড় ডিগ্রী ধাড়ী রয়েছেন। এসএমএস এ কেবল মাত্র ১৬০ কারেক্টর টেক্সট আঁটানো যায় এক ম্যাসেজে। অপারেটররা এক এসএমএস এ ৪-৫টা এসএমএস একসাথে পাঠানোর সুবিধা দেয় এখন ফলে এসএমএস কিছুটা হলেও লম্বা টেক্সট সাপোর্ট করে কিন্তু মডার্ন ম্যাসেজিং অ্যাপ লাইক হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রামের কিছু এসএমএস পুরাই কচি খোকা।

এখন এই আরসিএস যে নতুন কোন বস্তু এমন কিন্তু নয়। পুরাতন এসএমএস সিস্টেমকে রিপ্লেস করার জন্য ২০০৭ সালে RCS (Rich Communication Service) প্রস্তাবিত করা হয়, কিন্তু খুব বেশি সারা পাওয়া যায়নি RCS নিয়ে, মানুষ তখনও SMS নিয়েই হয়তো সুখী ছিল! কিন্তু বর্তমান যুগের মোবাইল ইউজাররা সত্যিই SMS সিস্টেম নিয়ে সুখে নেই, তাই গুগলকে আরসিএস এর দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিতে হয়েছে।

শুধু ১৬০ কারেক্টর থেকেই মুক্তি নয়, পাশাপাশি RCS অনেকটা ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং অ্যাপের মতো কাজ করে। ঠিক যেমনটা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসআপ, টেলিগ্রাম, বা অ্যাপেলের আই-ম্যাসেজ এ হয়ে থাকে। আপনি গ্রুপ চ্যাট করতে পারবেন, অডিও বা ভিডিও ম্যাসেজ সেন্ড করতে পারবেন, হাই কোয়ালিটি ইমেজ শেয়ার করতে পারবেন, তাও আবার মোবাইলের ম্যাসেজিং অ্যাপ থেকেই! ইয়েস, এটাই বড় ডিল, কেননা আরেকজন ইউজারকে আলাদা কোন অ্যাপ ইন্সটল করতে বলতে হবে না। ফোনের ডিফল্ট অ্যাপ থেকেই সকলের সাথে টেলিগ্রাম লাইক চ্যাট করা যাবে।

কিন্তু সেখানেই তো বড় ঝামেলা, আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে হয়তো গুগলের অফিশিয়াল ম্যাসেজিং অ্যাপটি নেই। রয়েছে আপনার ফোন কোম্পানির তৈরি করা ম্যাসেজিং অ্যাপ। আর আরসিএস উপভোগ করতে আপনাকে ডিফল্ট অ্যাপটি বাদ দিয়ে গুগল ম্যাসেজেস অ্যাপটি ইন্সটল করে নিতে হবে।

তবে এটা ভালো ব্যাপার যে, অনেক কোম্পানি অলরেডি তাদের ফোনে ডিফল্ট ম্যাসেজিং অ্যাপ হিসেবে গুগল ম্যাসেজেসই ইমপ্লিমেন্ট করা শুরু করেছে। তবে যতো কোম্পানি ডিফল্ট ভাবেই গুগল ম্যাসেজিং অ্যাপ প্রদান করা শুরু করবে এই আরসিএস সিস্টেম ততোই বেশি সমৃদ্ধতা অর্জন করবে।

সিকিউরিটি

গত বছর গুগল আরসিএস নিয়ে কাজ করতে ঘোষণা করে। আমি তখন একটা টেক নিউজও পাবলিশ করেছিলাম এই স্টোরি কভার করে, কিন্তু এতদিন পরে কেন এতো বিস্তারিত আর্টিকেল? আসলে, তখন গুগল আরসিএস প্রথমত সকল ফোনে কাজ করতো না, দ্বিতীয়ত এতে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সিস্টেম ছিল না। যেহেতু এই ব্লগে আমি সিকিউরিটিকে সব চাইতে বেশি ফোকাসে রাখি তাই তখন আরসিএস সকলের জন্য সেফ অপশন ছিল না।

কিন্তু বর্তমানে আরসিএস এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সাপোর্ট করা শুরু করেছে, তাই সময়ও চলে এসেছে আরসিএস এ মুভ করার। সংক্ষেপে বলতে গেলে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন হচ্ছে এমন সিকিউরিটি ফিচার যেটা কারনে আপনার ম্যাসেজেস গুলো স্বয়ং গুগল বা আপনার মোবাইল অপারেটর কেউই পড়তে পারবে না। তবে এটা কিভাবে কাজ করে না নিয়ে আমি পূর্বেই আর্টিকেল কভার করে রেখেছি।


দেখেছেন তো? লিখতে লিখতে আর্টিকেল অনেক লম্বা করে ফেলেছি। আর বেশি বড় করবো না, যেহেতু আসল পয়েন্ট গুলো প্রায় দেখানো শেষ। আগেই বলেছি অ্যাপলের জন্য কোন নতুন সিস্টেম ইমপ্লিমেন্ট করা অনেক সহজ, ব্যাপারটা অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে পুরোটায় উল্টো। তবে যেহেতু গুগল অ্যান্ড্রয়েড ম্যাসেজিং অ্যাপ এতো উন্নত হয়েই গেছে, সাথে এতে মডার্ন ফিচার, আরসিএস, আর ডিফল্ট সাপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে সেক্ষেত্রে ফোনের ডিফল্ট অ্যান্ড্রয়েড ম্যাসেজেস অ্যাপটি পরিবর্তন করার সময় চলে এসেছে।

চিন্তা করে দেখুন, এক দুনিয়ার কথা যেখানে সকলের ফোনে আগে থেকেই গুগল ম্যাসেজেস অ্যাপ ডিফল্টভাবে ইন্সটল করা হয়েছে। আপনি এক অ্যাপ থেকেই চ্যাট করতে পারছেন আবার একই অ্যাপেই সকল ম্যাসেজেস গুলো সেভ থাকছে। কাউকে বলতে হচ্ছে না “আমার মেসেঞ্জার আইডিতে ছবি গুলো পাঠিয়ো” বরং আপনার ফোন নাম্বারে পাঠালেই হচ্ছে। ইন্টারনেট থাকলে নর্মাল সব চ্যাটিং ফিচার গুলো পাবেন যেমন- টাইপিং ইন্ডিকেটর, রিড রিসিট, হাই রেজুলেশন ফটো এবং ভিডিও শেয়ার করার সুবিধা, বড় গ্রুপে চ্যাট করার অভিজ্ঞতা, সাথে ন্যাটিভ সাপোর্ট তো থাকছেই।

ইন্টারনেট না থাকলে আপনার নর্মাল SMS তো সেন্ড করতে পারবেনই! — হ্যাঁ, গ্রুপ চ্যাটের জন্য এখনো আরসিএস এ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সাপোর্ট নেই, আর এটা এখনো একটা অসুবিধা। কিন্তু তারপরেও ফোনের ডিফল্ট ম্যাসেজিং অ্যাপে পরে থাকার কোন মানেই হয় না। অপরদিকে যারা হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম বা সিগন্যালের মতো ম্যাসেজিং অ্যাপ গুলো ব্যবহার করেন তারা আরামেই ব্যবহার করতে থাকতে পারেন, তবে স্টিল গুগল অ্যান্ড্রয়েড ম্যাসেজেস আর আরসিএস ব্যবহার না করার কোনই কারণ নেই।

Images:Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories