৫ টি বেস্ট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস যেগুলো প্লে স্টোরে পাবেন না

কেমন কাটছে সবার হোম কোয়ারেন্টাইন? আশা করি ভালোই। যদি গৃহবন্দী হয়ে থাকতে থাকতে খুবই বিরক্ত হয়ে গিয়ে থাকেন, চলুন মজার কিছু জিনিস নিয়ে আলোচনা করা যাক। নতুন কিছু অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ দিয়েই শুরু করা যাক! টাইটেল দেখেই বুঝে গিয়েছেন, আজকে আবারো কথা বলতে চলেছি নতুন কয়েকটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস নিয়ে।

তবে, আজকে যে অ্যাপসগুলো নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি, এই অ্যাপগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে, এই অ্যাপগুলো এতই ভালো এবং এতই ইউজফুল যে, এগুলো প্লে স্টোরে পাবলিশ করারই অনুমতি পাওয়া যায়নি। যাইহোক, বেশি বকবক না করে সরাসরি কাজের কথায় আসি। ভয় নেই, প্লে স্টোরে না পেলেও অ্যাপগুলোর ডাউনলোড লিংক এই পোস্টে প্রত্যেকটি অ্যাপের নিচেই পেয়ে যাবেন। থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট এর লিংক হলেও প্রত্যেকটি সোর্সই ১০০% ট্রাস্টেড এবং নিরাপদ।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

Bromite Browser

প্রথমেই কথা বলা যাক একটি ওয়েব ব্রাউজার নিয়ে। এই ব্রাউজারটি অন্যান্য অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড ব্রাউজারের মতোই আরেকটি ক্রোমিয়াম ব্রাউজার, তবে ফিচারসের দিক থেকে অন্যান্য যেকোনো ওয়েব ব্রাউজারের তুলনায় অনেক বেশি ইউজফুল।

এই ব্রাউজারটির ফিচার সেট বলে শেষ করা যাবে না। কয়েকটি ফিচারের উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রথমত, এই ব্রাউজারে আপনি ব্যাকগ্রাউন্ডে ইউটিউব ভিডিও প্লে করতে পারবেন। অর্থাৎ, ইউটিউব প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন ছাড়াই যেকোনো ভিডিওতে ব্যাকগ্রাউন্ড প্লেব্যাক উপভোগ করতে পারবেন।

ব্রাউজারটিতে আরো আছে ন্যাটিভ অ্যাড ব্লকিং সার্ভিস, যেটি নিশ্চই আর নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। এছাড়া প্রাইভেসি রিলেটেড আরও অনেক অ্যাডভান্সড ফিচারস এবং সেটিংস আছে এই ব্রাউজারে, যেগুলো গুগল ক্রোম বা অন্য কোনো ক্রোমিয়াম ব্রাউজারে নেই। যেমন- ডিএনএস ওভার এইচটিটিপিএস, ডিফল্ট কুকিজ এবং ট্র‍্যাকার ব্লকিং ইত্যাদি।

ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনের ব্রাউজার হওয়ায় ব্রাউজারটির পারফরমেন্স এবং ইউজার ইন্টারফেস সবকিছুই একেবারেই গুগল ক্রোমের মতোই। ব্রাউজারটিতে আরও অনেক ফিচারস আছে যা আপনি ব্যাবহার করার সময় নিজেই এক্সপ্লোর করতে পারবেন। আপনি যদি সত্যিই প্রাইভেসি নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাকেন, তাহলে এটিই আপনার জন্য বেস্ট ওয়েব ব্রাউজার।

Blokada

আমার মতে এই অ্যাপটি আজকের এই লিস্টের মধ্যে সবথেকে ইউজফুল এবং সবথেকে ভালো অ্যাপ। অনেকে এই অ্যাপটির সাথে ইতমধ্যেই পরিচিত হতে পারেন। সহজ কথায় বলতে হলে, এটি অ্যান্ড্রয়েডের জন্য বেস্ট অ্যাড ব্লকার সলুশন। যেকোনো ধরনের অ্যাড ব্লক করার জন্য এই অ্যাপটি একাই যথেষ্ট।

তার থেকেও মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই অ্যাপটি ব্যাবহার করার জন্য আপনার ফোন রুটেড হওয়ারও প্রয়োজন নেই। আপনাকে শুধুমাত্র এই অ্যাপটি ওপেন করতে হবে এবং মেইন টগলটি অন করে দিতে হবে। সেই মুহুর্ত থেকেই আপনার ফোনের ব্রাউজার, ভিজিট করা ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে আপনার ইন্সটল করা অ্যাপস, গেমস সবকিছু থেকে সব ধরনের অ্যাডস উধাও হয়ে যাবে।

এই অ্যাপটি সত্যিকারেই অনেকটা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। অ্যাপটির ভেতরে আরও অসংখ্য ফিচারস আছে যেগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে। যেমন এক ক্লিকে ডিএনএস চেঞ্জ করা, প্রক্সি সার্ভার সেট করা এবং আরও অনেক কিছু।

তবে, অ্যাড ব্লক করার জন্য এই অ্যাপটি সবথেকে ভালো। আবার যেসব ওয়েবসাইট বা অ্যাপে আপনি অ্যাডস ব্লক করতে চান না, সেগুলো খুব সহজে অ্যাপের সেটিংস থেকে হোয়াইটলিস্ট করে রাখতে পারবেন। তাই অ্যাপটি ব্যাবহার করে যদি অ্যাড ব্লক করেন, ওয়্যারবিডিকে হোয়াইলিস্ট করে রাখতে ভুলবেন না!

NewPipe

নামটা একটু আজব ধরনের হলেও, এটি শুধুই একটি থার্ড পার্টি ইউটিউব অ্যাপ। শুধু একটি ইউটিউব অ্যাপ বললে ভুল হবে, বরং এটি বেস্ট এবং সবথেকে ফিচার প্যাকড ইউটিউব অ্যাপ। একটি থার্ড পার্টি ইউটিউব অ্যাপ হিসেবে যা যা ফিচার এতে থাকা সম্ভব, তার প্রায় সবকিছুই আছে এই অ্যাপে।

কয়েকটি ফিচারের উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রথমত, যেকোনো ইউটিউব ভিডিও আপনি MP4 বা WEBM ফরম্যাটে ডাউনলোড করতে পারবেন। ইউটিউব প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন ছাড়াই পপআপ উইন্ডোতে প্লে করতে পারবেন সব ভিডিও।

শুধু ভিডিও নয়, ভিডিওটির শুধুমাত্র অডিও ফাইলও আপনি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। রেগুলার ইউটিউব অ্যাপের থেকে আরো হাই রেজুলেশনে (১৪৪০পি বা ৪কে) ভিডিও প্লে করতে পারবেন এবং চাইলে যেকোনো এক্সটারনাল ভিডিও প্লেয়ারেও ইউটিউব ভিডিও প্লে করতে পারবেন। সবথেকে ভালো ফিচারটি হচ্ছে, এই অ্যাপের ইউজার ইন্টারফেসটি যথেষ্ট সুন্দর এবং একইসাথে সম্পূর্ণ অ্যাডফ্রি।

এছাড়া এই অ্যাপে আপনি লাইট থেকে শুরু করে ডার্ক এবং অ্যামোলেড ব্ল্যাক থিমও পাবেন, যেগুলো রেগুলাত ইউটিউব অ্যাপে কখনোই ছিলো না। এই অ্যাপটিতে আরও অনেক ছোট ছোট ফিচারস আছে যেগুলো অ্যাপটি ইউজ করলেই দেখতে পাবেন। যদি সেরা থার্ড পার্টি ইউটিউব অ্যাপের কথা বলেন, তাহলে আমি ব্যাক্তিগতভাবে এই অ্যাপটিই সাজেস্ট করবো।

MiXplorer

সহজ ভাষায় বলতে গেলে এটি একটি ফাইল এক্সপ্লোরার বা ফাইল ম্যানেজার অ্যাপ। তবে সাধারন ফাইল এক্সপ্লোরার হলে তো আর এই লিস্টে থাকার কথা নয়। যেমনটা ধারণা করেছেন, এটি অ্যান্ড্রয়েডের জন্য ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট এবং সবথেকে বেশি ফিচার প্যাকড ফাইল ম্যানেজার অ্যাপ। একটি ফাইল এক্সপ্লোরার অ্যাপে যত ধরনের ফিচার আপনি চাইতে পারেন, তার সবকিছুই পাবেন এই অ্যাপে।

মিনিমাল এবং সম্পূর্ণ অ্যাডফ্রি ইউজার ইন্টারফেসের সাথে উইন্ডোজের মতো ট্যাব বেজড ফাইল ভিউ পাবেন এই অ্যাপে। এসডি কার্ড থেকে শুরু করে ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ এবং রুট ফোল্ডারও অ্যাক্সেস করতে পারবেন এই ফাইল ম্যানেজারে।

আবার ফোন রুটেড হলে রুট অ্যাক্সেস ব্যাবহার করে সিস্টেম ফাইলস মোডিফাইও করতে পারবেন। এছাড়া আরও অনেক ফিচারস পাবেন ৩ এমবির এই ছোট অ্যাপটিতে। যেমন- এপিকে ম্যানেজার, বিল্ট ইন ভিডিও প্লেয়ার ও ইমেজ ভিউয়ার, ফাইল কম্প্রেসার, এফটিপি সার্ভার কানেকশন, উইন্ডোজ-লাইক কপি-পেস্ট সিস্টেম, অ্যাপ ব্যাকাপ এবং আরো অনেক কিছু।

এই ফাইল ম্যানেজারের সব ফিচারগুলো লিখে শেষ করা যাবে না। তাই যদি বেস্ট একটি ফিচার প্যাকড ফাইল ম্যানেজার ইন্সটল করে রাখতে চান, তাহলে এটাই আপনার কাছে বেস্ট অপশন।

VidMix

আজকের লিস্টটি শেষ করা যাক হোম কোয়ারেন্টাইন টাইমের জন্য বেস্ট একটি মুভি/সিরিজ অ্যাগ্রিগেটর অ্যাপ দিয়ে। নাম শুনেই বুঝে গিয়েছেন এটি ভিডিও কন্টেন্ট রিলেটেড কোনো অ্যাপই হতে চলেছে। তবে এটি শুধুমাত্র একটি মুভি অ্যাগ্রিগেটর অ্যাপ নয়। বরং আপনার যেকোনো ধরনের মুভি/সিরিজ/এনিমেশন কার্টুন/ লাইভ টিভির চাহিদা একাই মেটাতে সম্ভব এই অ্যাপটি।

যারা কয়েক বছর আগে Terrarrium TV অ্যাপটি ব্যাবহার করেছেন, তারা বুঝতেই পারছেন, আমি কেমন ধরনের অ্যাপের কথা বলছি। এই অ্যাপে আপনি প্রায় সব মুভি এবং সকল টিভি সিরিজ সার্চ করেই পেয়ে যাবেন। সার্চ করার পরে এই অ্যাপটি ইন্টারনেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনার মুভি বা সিরিজটির অনলাইন স্ট্রিম এবং ডাউনলোড লিংক খুঁজে এনে দেবে।

ন। সবথেকে মজার ব্যাপার, টরেন্ট থেকে মুভি ডাউনলোড করার পরে সাবটাইটেল খোজা নিয়ে যে ঝামেলায় পড়তে হয়, সেই ঝামেলা এই অ্যাপে নেই। মুভি প্লে করার সময়ই একইসাথে একই জায়গা থেকে আপনি সাবটাইটেল ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। সহজ কথায় বলতে গেলে, এটি প্রায় ফ্রি নেটফ্লিক্স।

আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আপনার কাঙ্খিত মুভি এবং সিরিজগুলোর সব এখানে না পেলেও ৮০-৯০% এখানেই পেয়ে যাবেন। শুধু তাই নয়, এই অ্যাপে আপনি বাইরের দেশের অনেক লাইভ টিভি চ্যানেলও দেখতে পারবেন। অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেসও অনেকটাই নেটফ্লিক্স এর মতো এবং ইজি টু ন্যাভিগেট। আপনি যদি আজকাল অধিকাংশ সময় মুভি এবং সিরিজ দেখেই কাটিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য এটাই বেস্ট মুভি সোর্স হবে (যদি নেটফ্লিক্স ব্যাবহার না করেন)।

এই ছিলো ৫ টি বেস্ট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস, যেগুলো এতই ভালো যে তারা প্লে স্টোরে জায়গা পায়নি! যাইহোক, কোনো অ্যাপ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা কোনো মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। ভালো থাকবেন এবং বাসায় থাকবেন!

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories