এই ৫টি কারণে আপনার এক্ষুনি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করা উচিৎ!

ফেসবুকের জনপ্রিয়তা এক্কেবারে তুঙ্গে, আপনি হয়তো এটাকে জাস্ট একটা সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবেই ইউজ করেন, কিন্তু অনেকের জন্য এটা শুধু সোশ্যাল মিডিয়া না! তাদের জন্য ফেসবুক জীবনের বিশাল এক বড় অধ্যায় সাথে তাদের ড্রাগ বা বিড়ি সিগারেট সবকিছুই হচ্ছে ফেসবুক! প্রত্যেক মাসে ফেসবুকের বিলিয়ন অ্যাক্টিভ ইউজার রয়েছে, কিন্তু তারপরেও অনেক কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্য আপনার এক্ষুনি ফেসবুক ব্যবহার করা বন্ধ করা উচিৎ, হতে পারে সেটা ফেসবুকের প্রাইভেসি স্ক্যামের জন্য বা হতে পারে বন্ধুর আপনার চেয়েও সুখী জীবন দেখতে দেখতে আপনি ক্লান্ত!

তো এবার সময় এসেছে ফেসবুক বাদ দেওয়া বা কিছু সময় এটা থেকে দূরে থাকা, এতে আপনারই ভালো হতে পারে! যাইহোক, এই আর্টিকেলে ৫টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম, যেগুলোর কারণে আপনার এক্ষুনি ফেসবুক ইউজ বন্ধ করা উচিৎ!


ফেসবুক নিজে থেকেই সবকিছু!

ফেসবুক এমন এক প্ল্যাটফর্ম যেখানে সবকিছু করার ট্রায় করছে কোম্পানিটি। আগে কি হতো, আপনি কমিউনিটি তৈরি করার জন্য আলাদা ফোরাম বা ব্লগ ওয়েবসাইট গুলো জয়েন করতেন, কিন্তু ফেসবুকে গ্রুপ ফিচারে আপনি সেটা ফেসবুক থেকেই কমিউনিটি তৈরি করতে পারছেন। আপনার কিছু কিনতে হলে আপনি অ্যামাজন বা দেশের লোকাল অনলাইন শপ ভিজিট করেন, কিন্তু ফেসবুকে নিজস্ব ই-কমার্স সিস্টেম রয়েছে যেখানে যে কেউ কেনাবেচা করতে পারে।

আপনার নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করার ও দরকার নেই ফেসবুকের মতে, জাস্ট ফেসবুক পেজ খুলে নিলেই হচ্ছে। ভিডিওর জন্য ইউটিউব দেখার ও দরকার নেই, ফেসবুকেরই ভিডিও প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। ভিডিও চ্যাট করার জন্য স্ক্যাইপ ও লাগবে না, মাসেঞ্জারে ভিডিও চ্যাট করতে পারবেন। রেস্টুরেন্ট খোঁজার জন্য গুগল ম্যাপ লাগবে না, ফেসবুকেই এই ফিচার রয়েছে। মানে কি বুঝলেন? ফেসবুক অল-ইন-ওয়ান হতে চায় ইন্টারনেটে!

এখন আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন, ফেসবুকের এতো সার্ভিস ইউজ করার পরে ফেসবুকের কাছে আপনার কতো গুলো পার্সোনাল তথ্য রয়েছে, আপনার সবকিছুই ফেসবুক জানে। এমন ও হতে পারে গুগলের থেকেও বেশি ফেসবুক আপনার ডাটা কালেক্ট করে রেখেছে। হ্যাঁ, অনেকেই বলবে আমার যায় আসে না ফেসবুক কি সেভ করছে। কিন্তু অনেকেরই প্রাইভেসি ব্যাপারে বিশেষ নজর রয়েছে, তাদের জন্য ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়ার এটা এক বিশেষ কারণ হতে পারে।

বিজ্ঞাপন ট্র্যাকিং

ওয়েল, ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকেই অর্থ উপার্জন করে, বিজ্ঞাপন ছাড়া এমন বিশাল প্ল্যাটফর্ম তারা চালু রাখতে পারতো না। ফেসবুক তাদের অ্যাডভার্টাইজারদেড় বলে তাদের বিজ্ঞাপন ফেসবুক টার্গেটেড ইউজারদের কাছে পৌঁছায়। এখন ফেসবুক তাদের টার্গেটেড ইউজারদের কিভাবে খুঁজে বের করে? ওয়েল, আপনি ফেসবুকের যতো সার্ভিস ইউজ করেন সবকিছুর উপরেই ফেসবুক ট্র্যাক করে। আপনি কি করছেন, কি কিনছেন, ম্যাসেজ এ কি বলছেন, সবকিছুর উপরে ফেসবুক নজর রেখে বসে আছে।

শুধু কিন্তু তাই নয়, অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যারা ফেসবুক এপিআই ইউজ করে, সে ওয়েবসাইট গুলোতে আপনি কি করছেন সেটাও ফেসবুক ট্র্যাক করে। মানে ইন্টারনেটের অলমোস্ট সকল অ্যাক্টিভিটির উপরে ফেসবুক নজর পেতে বসে রয়েছে। আপনি কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে হয়তো তাদের সার্ভিস সাইনআপ ও করেন নি, কিন্তু সেই ওয়েবসাইট হয়তো ফেসবুকের কমেন্ট প্লাগিন ইউজ করে, সেটার মাধ্যমে ফেসবুক ট্র্যাক করতে পারে আপনি সেই সাইটে কি কি করছেন! আর এই ব্যাপারটা অনেকের কাছেই অস্বচ্ছন্দনীয় হতে পারে।

ফেসবুক ডাটা ব্রিচ

নিয়মিত টেকের সাথে জড়িত থাকলে নিশ্চয় ফেসবুকের বিরাট ডাটা ব্রিচ সম্পর্কে ভুলে যান নি। ফেসবুক আপনার মারাত্মক পরিমাণে তো ডাটা কালেক্ট করেই, সেটা তো এক ভয়ের ব্যাপারই, কিন্তু এর থেকেও আরো ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে ফেসবুক যত্নের সাথে সেই ডাটা গুলোর সুরক্ষা প্রদান করে। আর প্রাইভেসি ও ডাটা সিকিউরিটির কথা বলতে গেলে, ফেসবুক এই ব্যাপারে মারাত্মক অসচেতন বলতেই হবে। কয়েক বছর ধরে প্ল্যাটফর্মটিতে অনেক বড় বড় ডাটা ব্রিচ ঘটেছে। এদের মধ্যে সবচাইতে বড় ডাটা ব্রিচটি হচ্ছে ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকা নামক কোম্পানির মাধ্যমে। এই ডাটা স্ক্যামে কোটি কোটি ইউজার ডাটা লিক হয়েছিলো ফেসবুক থেকে!

ডাটা না হয় স্ক্যাম করে লিক হয়েছে বা হ্যাকার কোনভাবে ফাক খুঁজে ডাটা চুরি করেছে। কিন্তু নিশ্চয় ভুলে যাননি, ফেসবুক ইউজার ডাটা গুলো মানে ইউজার আর পাসওয়ার্ড প্লেইন টেক্সটে সেভ করে রেখেছিল তাদের সার্ভারে। যদিও এই ডাটা গুলো শুধু ফেসবুকের অফিশিয়াল লোকেরা আক্সেস করতে পারতো, কিন্তু তারপরে পাসওয়ার্ড প্লেইন টেক্সটে সেভ করে রাখা বিশাল এক সিকিউরিটি রিস্ক

ফেসবুক আসক্তি

এটা মেনে নিতেই হবে, ফেসবুক মানে বিশাল সময় নষ্ট, অনেকে দেখি খেয়ে না খেয়ে ফেসবুকে এসে পরে থাকে। পোস্ট তৈরি করুক বা না করুক দেখা যায় সর্বদা পরে রয়েছে, নিউজ ফিড স্ক্রল করেই চলেছে। ফেসবুক কে ডিজাইনই করা হয়েছে এমনভাবে যাতে আপনি বেশি বেশি সময় কাটান এখানে। বন্ধুর লেখা কোন পোস্ট বা নিউজ পেজের আপডেট পড়তে পড়তে কখন যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় টেরই পাওয়া যান না।

ফেসবুক আপনার ব্যাস্তব লাইফকে কেড়ে নিয়ে এক প্রকারের ভার্চুয়াল মেশিন বানিয়ে ফেলেছে হয়তো আপনাকে। জীবনের প্রত্যেক মুহূর্ত আর ছবি গুলো শেয়ার না করলে হয়তো আপনি থাকতেই পারেন না। আপনার পোস্ট এ কতো গুলো লাইক আসলো আর বন্ধুর পোস্টে কতো লাইক আসলো এগুলো গুনতেই হয়তো দিন শেষ হয়ে যায় আপনার, সেক্ষেত্রে সময় এসেছে এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসা, লাইফের আসল মজা নেওয়া, বাইরে বের হওয়া, আর সত্যিকার অর্থে জীবনকে উপভোগ করা!

সোশ্যাল ইফেক্ট

ফেসবুক ইউজ করার পরে অনেক ইউজার সহজেই সাইকোলজিক্যাল ভাবে বিরক্ত হয়ে যেতে পারে সাথে হতাশার মধ্যে পরে যেতে পারে। আপনার বন্ধুর লাইফ আপনার থেকে বেশি সুখী, এটা দেখে আপনি হতাশ হতেই পারেন। অনেকে রয়েছে যারা বন্ধুর সুখী লাইফ দেখতে পছন্দ করে, কিন্তু অনেকেরই এর জন্য ঈর্ষা হতে পারে। অনেকেই ব্যাস্তব লাইফে এক আর ফেসবুকে আরেক দেখানোর চেষ্টা করে, নিজের সম্পূর্ণ আলাদা এক পরিচয় বানিয়ে তোলে ফেসবুকে।

আপনার বন্ধুর ফটোতে বেশি লাইক দেখে আপনার মনের মধ্যে হিংসা জাগতে পারে, আপনার উপরে সাইকোলজিক্যাল প্রেসার তৈরি হতে পারে, আমি রাগান্বিত ও বোধ করতে পারেন। অনেকেই আয়নায় দেখিয়ে নিজের দামী ফোনের ফটো ফেসবুকে পোস্ট করে, আপনার ফোন দামী না হওয়ায় আপনার মনের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে, ফেসবুক থেকে অনেক টাইপের সোশ্যাল ইফেক্ট পরতে পারে।


তো এই ছিল ৫টি কারণ, যেগুলোর কারণে আপনি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করতে পারেন। আমি সোজা কোন উত্তর দিচ্ছিনা যে আপনি ডিলিট করবেন কিনা, বা আপনাকে করতেই হবে। কিন্তু অন্তত এই কারণ গুলো জানার পরে নিজে থেকেই হয়তো ভেবে দেখতে পারবেন আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করা উচিৎ হতে পারে কিনা!

Image: Shutterstock.Com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories