এই জন্যই ইন্টারনেট পাইরেসি বেঁচে থাকবে চিরকাল!

কয়েকমাস আগে যখন HBO এর গেম অফ থ্রোনস এর ফাইনাল সিজন চলছিলো, সে সময়ে পাইরেসির সকল রেকর্ড ব্রেক হয়েছিলো। যখন ছোটতে ইন্টারনেট ইউজ করতাম, ডাউনলোড ছাড়া আর তেমন কিছুই বুঝতাম না ইন্টারনেট সম্পর্কে, জানতাম ইন্টারনেট থেকে সবকিছুই ফ্রীতে ডাউনলোড করা যায়, কিন্তু এটা জানতাম না আমি অবৈধভাবে ইন্টারনেট থেকে মুভি/গান ডাউনলোড করছি! ইন্টারনেট পাইরেসি অনেক পুরাতন এক জিনিষ, নেটফ্লিক্সের মতো স্ট্রিমিং সার্ভিস ও স্পটিফাই এর মতো মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভার আর স্টিমের মতো গেমিং স্টোর গুলো আসার পরে পাইরেসি অনেকটা নিয়ন্ত্রনে এসেছে। এই অনলাইন সাবস্ক্রিপশন নির্ভর সার্ভিস গুলো সত্যিই সুবিধার যেখানে মাসে মাত্র কয়েক ডলার খরচ করলেই পছন্দের সকল কন্টেন্ট পাওয়া যায় এবং ঝামেলা ফ্রীভাবে সেগুলো ফেচ করা যায়।

অ্যামেরিকাতে ক্যাবল টিভি লাইনের সাবস্ক্রাইবার থেকে নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবার বেশি, কিন্তু অপরদিকে টরেন্ট সাইট গুলোতে প্রত্যেকদিন কোটি কোটি ট্র্যাফিকের আনাগোনা হচ্ছে, লাখো কন্টেন্ট পাইরেসির নিচে পরে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? স্ট্রিমিং সার্ভিস গুলোর এতো জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পরেও কেন পাইরেসি বিলুপ্ত হচ্ছে না?

ওয়েল, এই আর্টিকেলে আলোচনা করার চেষ্টা করবো, কেন ইন্টারনেট পাইরেসি কখনোই বন্ধ হবে না! হ্যাঁ, কিছুটা কমতে পারে বাট পাইরেসি কখনোই গায়েব হয়ে যাবে না!


ইন্টারনেট পাইরেসি

মুভি ও মিউজিক পাইরেসি থেকে রক্ষা করার জন্য নেটফ্লিক্স বা স্পটিফাই এর মতো স্ট্রিমিং সার্ভিস গুলো ভালো কাজের প্রমাণিত হয়েছে। আপনি মাসে মাত্র ১০-১৫ ডলারের মতো খরচ করে পছন্দের মুভি বা টিভি সিরিজ গুলো স্ট্রিম করতে পারবেন। যেহেতু এক জায়গা থেকেই অনেক কন্টেন্ট পেয়ে যাবেন এবং অনেক টাইপের ডিভাইজে সেগুলো প্লে করতে পারবেন তাই পাইরেসি কন্টেন্ট নিয়ে ঝামেলা করার চেয়ে এই স্ট্রিমিং সার্ভিস গুলোতে সাইনআপ করে নেওয়া অনেক সহজ ব্যাপার।

সত্যিই বলতে এই সার্ভিস গুলো জনপ্রিয়তা মারাত্মকে চলছে বর্তমানে! শুধু অ্যামেরিকাতেই নয় এশিয়ান দেশ গুলোতেও ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে এই স্ট্রিমিং সার্ভিস গুলোর। ভারতে কয়েক কোটি ইউজার এখন স্ট্রিমিং সার্ভিস ইউজ করে, যেখানে এককালে মানুষ পাইরেসি করে কন্টেন্ট ফেচ করা ছাড়া কিছুই কল্পনা করতো না। এমনকি বাংলাদেশে ও যেভাবে নেটফ্লিক্স ইউজ করছে সবাই আর যেভাবে প্রবণতা বাড়ছে সেটা সত্যিই লক্ষণীয়।

কিন্তু অপরদিকে পাইরেসি মোটেও থেমে নেই, হঠাৎ করে আবার প্রাইরেসি বাড়তে আরম্ভ করেছে, কিন্তু কেন? প্রশ্নের উত্তরটি কয়েকটি বিষয়ের উপরে নির্ভর করছে। প্রথমত এমন কোন সিগন্যাল স্ট্রিমিং সার্ভিস পাবেন না যেখানে পছন্দের সবকিছুই থাকবে। দ্বিতীয়ত সকলের সাবস্ক্রিপশন কেনার মতো ক্ষমতা না থাকা, এমন নয় ১০-১৫ ডলারের জন্য সাবস্ক্রাইব করতে পারছে না ইউজার, মূল কাহিনী হচ্ছে পছন্দের কন্টেন্ট গুলো পেতে হয়তো মাসিক চার্জ ১৫ ডলার থেকে লাফ দিয়ে ৩০-৫০-৭৫ ডলার হয়ে যেতে পারে! কিভাবে? নিচের আলোচনা করছি!

স্ট্রিমিং সার্ভিসের সাথে সমস্যা

আপনি যেকোনো মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিস গ্রহণ করলে যেমন- স্পটিফাই বা ডিজার — সহজেই পছন্দের সকল গান গুলো পেয়ে যাবেন। জনপ্রিয় মিউজিক ট্রিমিং সার্ভিস গুলোতে প্রায় সমান সাইজের লাইব্রেরি রয়েছে আর যেকোনো ভাষার গানই পাওয়া যায়। মানে আপনি যেকোনো একটি সার্ভিস গ্রহণ করলে ব্যাস আর মিউজিকের জন্য কিছুই দরকার পরবে না।

কিন্তু ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস গুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু আলাদা। নেটফ্লিক্সের নিজস্ব অরিজিনলাস রয়েছে যেখানে তারা নিজস্ব কন্টেন্ট তৈরি করে। কিন্তু আলাদা মুভি ও কন্টেন্ট গুলো তারা আলাদা কপিরাইট হোল্ডার থেকে লাইসেন্স নিয়ে ইউজ করে। যখন সাবস্ক্রাইবার তাদের মুভি গুলো ফেচ করে নেটফ্লিক্স সেখান থেকে নিজের কমিশন কাটিং করে লাইসেন্স ফী প্রদান করে। এখন সকল প্রোডিউসার তাদের লাইসেন্স দিতে চায় না, তারা এটা পছন্দ করে না নেটফ্লিক্স বা আলাদা কোন স্ট্রিমিং সার্ভিস লাভের টাকা পকেটে রাখুক।

অনেক প্রোডিউসার চিন্তা করে, আমাদের এতো মুভি ও টিভি সিরিজ রয়েছে তাহলে কেন আলাদা স্ট্রিমিং সার্ভিসের কাছে টাকা ভাগ করবো, এটাই বেস্ট নিজেদের কন্টেন্ট নিয়ে নিজেরায় এক স্ট্রিমিং সার্ভিস খুলে ফেলি। এই জন্যই মার্কেটে এখনো শতশত স্ট্রিমিং সার্ভিস বেরিয়ে পরেছে, আর আপনার পছন্দের কন্টেন্ট গুলো ও ভাগাভাগি হয়ে গেছে নানান স্ট্রিমিং সার্ভিস গুলো সাথে। আপনি হয়তো নেটফ্লিক্স নিয়েছেন, কিন্তু গেম অফ থ্রোনস দেখতে চান, আপনি পারবেন না, আপনাকে HBO এর সার্ভিস সাবস্ক্রাইব করতে হবে। এখন HBO তে আর কিছুই হয়তো দেখার নেই জাস্ট গেম অফ থ্রোনস, এর জন্য আপনাকে মাসিক ১০-১৫ ডলার পে করতে হচ্ছে। এদিকে রয়েছে আরো অ্যামাজন প্রাইম, হুলু। শুধুকি তাই, আমাদের দেশেই কতো স্ট্রিমিং সার্ভিস দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, গ্রামীনফোন তো সারাদিন রাত বাইস্কোপ নিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে। রবি বের করেছে রবি টিভি+ সাথে জি৫কে দেশে এনেছে!

তো আপনার পছন্দের কন্টেন্ট গুলো একসাথে পাওয়ার জন্য আপনাকে অনেক গুলো স্ট্রিমিং সার্ভিস সাবস্ক্রাইব করে রাখতে হবে, মানে মাসে শুধু ১০-১৫ ডলারের গেম নয় এটা, বরং সেটা ৫০-৭০ বা আরো বেশি ডলারের কাম হতে পারে। ঠিক এই কারণেই ক্যাবল টিভি নিজের জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। আপনি মাসিক পে করে ২০০টি চ্যানেলের জন্য যেখানে আপনি মাত্র ১-২ টা চ্যানেল নিয়মিত দেখেন আর বাকি গুলো না দেখেও বিল পে করতে হয়।

এখন হয়তো আপনার কাছে মাসে ১০০ ডলার খরচ করার জন্য ও টাকা রয়েছে, কিন্তু তারপরেও আলাদা আলাদা সার্ভিস সাবস্ক্রাইব করার মানে অনেক গুলো অ্যাপ হ্যান্ডেল করা। এটা সত্যিই পেইন, এর থেকে মানুষ এটাই খুঁজবে এক জায়গা থেকেই যেন সবকিছু খুঁজে পাওয়া যায়, এখন হোক সেটা পাইরেসির মতো অবৈধ, কেনোনা এটা ইজি, রাইট?

পাইরেসি জাস্ট বেশি ইজি

যদিও টরেন্ট শুধুই পাইরেসির জন্য ইউজ হয় না, কিন্তু চিন্তা করে দেখুন এটা কতোটা ইজি! আপনার দুনিয়ার যে কন্টেন্টই প্রয়োজনীয় হোক না কেন কতো সাধারণভাবে এক টরেন্ট সাইট থেকেই সবকিছু খুঁজে পাওয়া সম্ভব। সাথে আপনাকে কোন টাকা ও দিতে হচ্ছে না। আপনি টাকা দিয়ে স্ট্রিমিং সার্ভিস কিনেছেন তাও সেখানে সব কন্টেন্ট নেই, দিনের পরপর আরো বেশি বেশি কোম্পানি আরো নতুন নতুন স্ট্রিমিং সার্ভিস সামনে নিয়ে আসছে, সবাইকে সাবস্ক্রাইব করো, আবার সবার অ্যাপ ডাউনলোড করো, মাসে বহু ডলার খরচ করো, সব সার্ভিস গুলো ম্যানেজ করো — এতো ঝামেলা কে করবে বলুন তো? এর থেকে কি সবাই ইন্টারনেট পাইরেসি অপশনটায় বেঁছে নেবে না?

নতুন কোন মুভি রিলিজ হওয়ার পরে সেটা স্ট্রিমিং সার্ভিস গুলোতে পেতে পেতে কয়েক মাস বা বছর লেগে যায়, তার থেকে এতো এটাই বেটার জাস্ট পাইরেটেড ওয়েবসাইট গুলো থেকে ডাউনলোড করে ইনস্ট্যান্ট দেখে ফেলা। যদিও তার সাথে ফ্রীতে ভাইরাস ও চলে আসে সিস্টেমে, কিন্তু সেটা এক আলাদা গল্প!

আমি ইন্টারনেট পাইরেসি কে সমর্থন জানাচ্ছি না বা উৎসাহিত করছি না। শুধু দেখানোর চেষ্টা করলাম পাইরেসি থেকে কতো সহজেই কন্টেন্ট গুলো পাওয়া যেতে পারে যেটা টাকা খরচ করে সাবস্ক্রিপশন নেওয়ার পরেও অনেক ঝামেলা করতে হয় আর সকল কন্টেন্ট পাওয়া যায় না। আর যেভাবে নতুন নতুন স্ট্রিমিং সার্ভিস বাজারে আসছে, এতে মনে ও হয় না এটা শেষ ও হবে। সুদূর ভবিষ্যৎ এর কথা বলতে পারি না, তবে ইন্টারনেট থেকে যে পাইরেসি শিগ্রই দূর হবে না, এটা নিশ্চিত!

Image: Shutterstock.Com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories