ইউএসবি টাইপ-সি ক্যাবলের কিছু সমস্যা! কেন ইউএসবি টাইপ-সি নিয়ে আপনার এতোবেশি উত্তেজিত হওয়া ঠিক নয়?

হাই এন্ড ডিভাইজ গুলোতে ইউএসবি টাইপ-সি কানেক্টর থাকতেই হবে আজকের দিনে, আর মিড বাজেট ফোন গুলোতেও এই কানেক্টর বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে আজকাল! — আর ইউএসবি-সি কিন্তু সত্যিই অসাধারণ, এটি একসাথে ডাটা, পাওয়ার, অডিও, ভিডিও সিগন্যাল সেন্ড করতে পারে। তো এ থেকে বুঝায় যায়, ইউএসবি টাইপ-সি ফিউচার প্রুফ একটি কানেক্টর।

কিন্তু সকল ইউএসবি-সি কিন্তু এক জিনিষ নয়, যতোই এর কানেক্টর দেখতে এক রকমের হোক বা এর ক্যাবল, এদের মধ্যে তুলনা মূলকভাবে অনেক পার্থক্য থাকতে পারে। যদি আপনি প্রথমবারের মতো ইউএসবি-সি ব্যাবহারকারী হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে নিচের এই ব্যাপার গুলো জেনে রাখা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ!


ভুল ইউএসবি-সি ক্যাবল আপনার ডিজাইজকে বাদাম ভাজা বানিয়ে দিতে পারে!

ইউএসবি সি এর পেছনের মূল আইডিয়া হচ্ছে প্রত্যেকটি ডিভাইজে একে ব্যবহার করার। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ডেক্সটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, কম্পিউটার মনিটর, টিভি — ইত্যাদি সকল ডিভাইজে ইউএসবি টাইপ সি ইউজ হতে পারে। কিন্তু বড় ব্যাপারটি হচ্ছে প্রত্যেকটি ইউএসবি টাইপ সি ক্যাবল একই স্ট্যাইলে তৈরি করা হয় না।

সেম পোর্টের সাহায্যে ল্যাপটপ ও চার্জ করা যায় আবার একই পোর্টে স্মার্টফোন ও চার্জ করা যায়। কিন্তু ল্যাপটপ অপারেট করতে বেশি পাওয়ার প্রয়োজনীয় সেখানে মোবাইলে সেই তুলনায় কোন পাওয়ার লাগবে। ভুল ক্যাবল নির্বাচন করার ফলে আপনার ফোনের ইউএসবি পোর্ট সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যেতে পারে বা ডিভাইজের মারাত্মক ক্ষতি ও হয়ে যেতে পারে। এই সমস্যা কিন্তু আগের ইউএসবি ক্যাবলে ছিল না।

তবে এখানে খুব বেশি চিন্তিত হবার কিছু নেই, প্রপার ইউএসবি সি ক্যাবলে বিল্ডইন প্রোটেকশন থাকে, যার ফলে এরকম ক্ষতি থেকে বাঁচা যেতে পারে। কিন্তু খরচ বাঁচাতে গিয়ে অনেক ক্যাবলে সেই সেফটি ফিচার স্কিপ করা হয়, ফলে ভুল ক্যাবল পছন্দ করলে আপনার ডিভাইজ ভেজে চানাচুর হয়ে যেতে পারে!

প্রত্যেকটি ইউএসবি-সি কিন্তু এক জিনিষ নয়

আপনি হয়তো ইউএসবি ৩.১ সম্পর্কে শুনেছেন, যেটা ১০ গিগাবিট/সেকেন্ড স্পীড সমর্থন করে যেটাকে সুপার স্পীড ইউএসবি ও বলা হয়। এখানে একটি কথা পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো, টাইপ-সি শুধু মাত্র একটি কানেক্টর (মানে এটা দেখতে কেমন হবে তার মডেল), এটা কখনোই নির্দেশ করে না এর স্পীড কতো হবে!

যেখানে ইউএসবি ৩.১, ৩.০, ২.১, বা ২.০ হলো ইউএসবি ডাটা ট্র্যান্সফার স্পীড স্ট্যান্ডার্ড। আর ইউএসবি-সি ক্যাবল এই স্ট্যান্ডার্ড গুলোর মধ্যেই কোন একটাকে সমর্থন করে। আপনার ডিভাইজের ইউএসবি-সি হতে পারে সেটা ২.০, বা ৩.০, বা ৩.১ জেনারেশন ১, বা ৩.১ জেনারেশন ২; এবং আপনার টাইপ-সিতে কোন স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হয়েছে তার অনুসারে ডাটা স্পীড রেট কম বা বেশি হতে পারে।

এর মানে হচ্ছে আপনার ফোনে ইউএসবি টাইপ-সি ব্যবহার করা হলেও সেটার স্পীড স্ট্যান্ডার্ড যদি ইউএসবি ২.০ হয়, তবে আপনি পুরাতন ইউএসবি ২.০ এর মতোই ৪৮০মেগাবিট/সেকেন্ড স্পীড পাবেন। তবে হতে পারে আপনার ডিভাইজ ইউএসবি ৩.১ স্ট্যান্ডার্ড সমর্থন করে, কিন্তু এর কোন নিশ্চয়তা নেই টাইপ-সি হলেই হাই স্পীড হবে। আপনার কানেক্টরটি যদি “ফুল ফিচার্ড” হয়ে থাকে তবে অবশ্যই ইউএসবি ৩.১ জেনারেশন ২ সমর্থন করবে এবং টাইপ-সি’র বাকি গুন গুলোর মাক্স অবস্থায় থাকবে। আপনি স্পেসিফিকেশন থেকে চেক করে নিতে পারেন, এটি ফুল ফিচার্ড কিনা।

টাইপ-সি’তে আলাদা আলাদা প্রোটোকল ব্যবহার করা যেতে পারে আর একে বলা হয় অল্টারনেটিভ মুড। এই অবস্থায় মোট ৪টি প্রোটোকল ব্যবহার করা যাবে; ডিসপ্লে পোর্ট (DisplayPort), থান্ডার বোল্ড (THUNDERBOLD), এইচডিএমআই (HDMI), এবং এমএইচএল (MHL)। ডিসপ্লে ইন্টারফেস নিয়ে লেখা আর্টিকেলে প্রথমের সবগুলো নিয়েই আলোচনা করেছি, এখানে নতুন হলো এমএইচএল। এমএইচএল বিশেষ করে ব্যবহার করা হয় স্মার্টফোনকে টিভি’র সাথে কানেক্ট করার জন্য। এবং অবশ্যই আগের মতোই যেকোনো স্ট্যান্ডার্ডের টাইপ-সি ক্যাবল হয়তো এই প্রোটোকল গুলো সমর্থন করবে, আবার নাও করতে পারে। আবার এমনও নয় সকল প্রোটোকল গুলোকে শুধু টাইপ-সি’তেই ব্যবহার করতে হবে, যেখানে এইচডিএমআই এর জন্য আলাদা ক্যাবল রয়েছে এবং এইচডিএমআই ক্যাবল বেশ পপুলার।

তাহলে জাস্ট এমন টাইপ-সি ক্যাবল কিনা ফেলা প্রয়োজন যেটা একসাথে সকল টাইপ-সি ফিচার সমর্থন করবে, তাই না? কিন্তু এখানেও ঝামেলা রয়েছে, আপনি একটি ক্যাবলেই সকল ফিচার পাবেন না, হয়তো কোনটা ৩.১ সমর্থন করবে কিন্তু পাওয়ার ডেলিভারি সমর্থন করবে না, আবার কোনটাতে সকল প্রোটোকল একসাথে থাকবে না, আর এটাও হচ্ছে আরেকটি বিভ্রান্তিকর ব্যাপার। আপনার ডিভাইজ হয়তো সকল ফিচার সমৃদ্ধ হতে পারে, কিন্তু বিভিন্ন কাজের জন্য আপনার বিভিন্ন স্পেসিফিকেশনের ক্যাবল প্রয়োজনীয় হবে। এতে আগের চেয়ে ঝামেলা আরো বেড়ে যাবে।

এখন আপনি যদি জাস্ট চার্জ করা এবং ফাস্ট ডাটা ট্র্যান্সফার করার জন্য টাইপ-সি ব্যবহার করেন, হয়তো বা বেশিরভাগ ক্যাবলেই এই ফিচার গুলো থাকতে পারে। কিন্তু যদি ডিসপ্লে কানেক্ট করার কথা চিন্তা করেন, তবে আপনার ক্যাবলে সেই ডিসপ্লে প্রোটোকল সুবিধাটি নাও থাকতে পারে। এখন বাজারে অনেক ধরনের ক্যাবল রয়েছে এবং কোনটা কোন ক্যাবল সেটার কানেক্টরের চেহারা অথবা প্লাগ দেখেই বোঝা যায়। কিন্তু টাইপ-সি’তে সবকিছু একই রকমের, আপনি দেখবেন আপনার মনিটরে টাইপ-সি পোর্ট আছে আপনি ক্যাবল লাগিয়ে ফেলবেন কিন্তু বুঝতেই পারবেন না কেন ক্যাবল কাজ করছে না। আপনি ক্যাবলের স্পেসিফিকেশন না দেখে কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

আপনার ডিভাইজে শুধু মাত্র ইউএসবি-সি পোর্ট রয়েছে? তাহলে আপনি পরবেন আরেক প্যারায়!

অনেক স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিরা সকল পোর্ট বাদ দিয়ে মোস্ট ইউনিভার্সাল পোর্ট ইউএসবি-সি ব্যবহার করছে শুধু। যেমন- স্মার্টফোনে হেডফোন জ্যাক বাদ দিয়ে ইউএসবি-সি পোর্ট দিয়েই মিউজিক আউটপুট করানোর বাবস্থা করা হচ্ছে। এখন যদি ট্র্যাডিশনাল 3.5mm হেডফোন জ্যাক ইউজ করতে চান সেক্ষেত্রে কনভার্টার ইউজ করতে হবে। যদি একসাথে চার্জ ও হেডফোন দুটোই ইউজ করতে চান, সেক্ষেত্রে আলাদা টাকা খরচ করে ভালো অ্যাডাপ্টার কিনতে হবে।

আবার ধরুন, আপনার নতুন ল্যাপটপে শুধুই ইউএসবি-সি পোর্ট রয়েছে, এরমানে আপনি সরাসরি আপনার পুরাতন পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ, প্রিন্টার, স্ক্যানার ইত্যাদি কানেক্ট করতে পারবেন না। আপনাকে আলাদা ডঙ্গল ইউজ করতে হবে। নানান পুরাতন ইন্টারফেসের জন্য নানান ডঙ্গল আর ক্যাবল কনভার্টার, আর অ্যাডাপ্টার কিনতে কিনতে স্তুপ তৈরি হয়ে যেতে পারে!


ভুল ক্যাবল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে সর্বদা ট্রাস্টেড ব্র্যান্ড থেকে ক্যাবল কিনুন, অথবা আলট্রা সেফ থাকতে জাস্ট ফোনের সাথে পাওয়া ক্যাবলটিই ইউজ করুন। কিছু রিস্ক থাকলেও ইউএসবি-সি একটি ফিউচার প্রুফ টেক এতে কোন সন্দেহ নেই, কিছু জিনিষ মাথায় রাখলে এটি অনেক সুবিধা প্রদান করতে সক্ষম। আর হ্যাঁ, এটা সম্পূর্ণ রিভারসেবল, এর মানে আপনি অন্ধকারে ও মাত্র ১ বার ট্রায় করেই ডিভাইজে ক্যাবল লাগিয়ে ফেলতে পারবেন। পুরাতন ইউএসবির মতো কয়েকবার ফেইলড অ্যাটেম্পট প্রয়োজন পরবে না!

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories