৪টি ভয়াবহ ও সবচাইতে ধ্বংসাত্মক টাইপের ম্যালওয়্যার!

নানান টাইপের ম্যালওয়্যার রয়েছে, যদিও ম্যালওয়্যার শব্দটি নিজে থেকেই অনেক ভয়াবহ তাহলে এর নানান টাইপ গুলো আরো কতো মারাত্মক হতে পারে একবার চিন্তা করে দেখুন। ম্যালওয়্যার মূলত এক টাইপের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যেগুলোকে সিস্টেম তছনছ করে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। হ্যাকার’রা বা দেশের সরকার পর্যন্ত নানান টাইপের ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে থাকে, কোন ম্যালওয়্যার জাস্ট র‍্যান্ডম কম্পিউটার গুলোকে আক্রান্ত করে আবার কোন ম্যালওয়্যার গুলোকে বিশেষ কাজের জন্য তৈরি করা হয়।

এই আর্টিকেলে ৪টি ভয়াবহ ও সবচাইতে ধ্বংসাত্মক টাইপের ম্যালওয়্যার নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি, যদিও এদের নিয়ে বিস্তারিত আর্টিকেল পূর্বেও পাবলিশ করেছি, তারপরেও এই এক আর্টিকেল থেকে মোটামুটি ওভারভিউ পাওয়া যেতে পারে!


রুটকিট ম্যালওয়্যার

আলাদা ম্যালওয়্যার গুলো সিস্টেমের এক বিশেষ অংশের ক্ষতি করতে সক্ষম, বা বিশেষ কোন টাস্ক কমপ্লিট করাতে সিস্টেমে প্রবেশ করে। কিন্তু রুটকিট ম্যালওয়্যার সবচাইতে ভয়াবহ, কেননা একটি সিস্টেমকে সম্পূর্ণ রুপে কন্ট্রোল নেওয়ার জন্যই এই জাতীয় ম্যালওয়্যার সিস্টেমে ইঞ্জেক্ট করানো হতে পারে।

সবচাইতে বড় ব্যাপার হচ্ছে, আপনি জানতেও পাবেন না আপনার সিস্টেমে রুটকিট ম্যালওয়্যার রয়েছে, কেননা বিশেষ করে এরা লুকিয়ে থেকে কাজ করতে ওস্তাদ, এমনকি আপনার হাজার টাকার দামী এন্টিভাইরাসও একে ঠিকঠাক মতো ডিটেক্ট করতে অক্ষম হতে পারে। বিশেষভাবে চুরি চুপি করে কাজ করার জন্যই এর আবিস্কার। এই জাতীয় ম্যালওয়্যার থেকে সিস্টেমকে রক্ষা করতে বেশিরভাগ সময়ই হার্ড ড্রাইভ ওয়াইপ করার প্রয়োজন পরে, অপারেটিং সিস্টেম নতুন করে রি-ইন্সটল করতে হয়, আর ট্রাস্টেড মিডিয়া থেকে অপারেটিং সিস্টেম ফাইল ডাউনলোড করা বেস্ট হবে!

র‍্যানসমওয়্যার

র‍্যানসমওয়্যার এর শাব্দিক অর্থ আর এর কাজ একেবারেই সেইম। প্রথমত ভিকটিমের কম্পিউটার এক বিশেষ ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করানো হয় যেটা ঐ কম্পিউটারের সকল ডাটা গুলো এনক্রিপটেড (লক) করিয়ে দেয়, তারপরে ডাটা গুলোকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অর্থের ডিম্যান্ড করা হয়, বিশেষ করে ওয়্যার ট্র্যান্সফার বা বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ চাওয়া হয়ে থাকে।

ইতিহাসে অনেক ভয়াবহ সকল র‍্যানসমওয়্যার অ্যাটাক রয়েছে, যেগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ রিকভার করেছে। তবে কিছু টাইপের র‍্যানসমওয়্যার টাকা প্রদান করা ছাড়াই ফাইল গুলোকে রিকভার করা যেতে পারে, এই আর্টিকেলটি চেক করতে পারেন। তাছাড়া WannaCry র‍্যানসমওয়্যার সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি এবং র‍্যানসমওয়্যারের টাইপ ও এই ধরনের অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

পারসিসট্যান্ট ম্যালওয়্যার

যখন কম্পিউটার ভাইরাস বা যেকোনো ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয় আমাদের প্রধান ভরসা চলে যায় অ্যান্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম গুলোর দিকে। অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল করে স্ক্যান করলেই সকল ম্যালওয়্যার গুলো ধরা পরবে আর সিস্টেম থেকে রিমুভ করা সম্ভব হবে, তাই না? — দুর্ভাগ্যবশত, অ্যাডভান্স পারসিসট্যান্ট ম্যালওয়্যার গুলোকে আপনার অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম গুলো ডিটেক্ট করতে পারে না, এবং এরা রুটকিটের মতো লুকিয়ে থেকে কাজ করতে বিশেষভাবে প্রস্তুত হয়ে থাকে।

এই জাতীয় ম্যালওয়্যার এতোটাই বেশি ভয়াবহ যে, আপনি হয়তো একে সিস্টেম থেকে সম্পূর্ণ রিমুভও করে দিয়েছেন, তারপরেও আপনার ওয়েব ব্রাউজারকে যেতে যেতে কনফিগ করে রেখে যাবে যাতে ম্যালিসিয়াস সাইটে আপনাকে রিডাইরেক্ট করে নিয়ে যায় এবং আবার একই বা আরো ভয়াবহ ম্যালওয়্যার দ্বারা আপনার সিস্টেমকে আক্রান্ত করানো যেতে পারে।

অনেক সময় হার্ড ড্রাইভের ফার্মওয়্যারে এই জাতীয় ম্যালওয়্যার ইন্সটল করানো থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম গুলো ভুলেও ডিটেক্ট করতে পারে না, এবং ম্যালওয়্যার রিমুভ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। আরো বিস্তারিত জানার জন্য এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন; কখন পিসিকে ম্যালওয়্যার মুক্ত করানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে?

ফার্মওয়্যার নির্ভর ম্যালওয়্যার

কিছু টাইপের ম্যালওয়্যার রয়েছে যেগুলো আপনার সিস্টেমের হার্ডওয়্যার ফার্মওয়্যারে সরাসরি ইন্সটল করানো থাকে। যেমন- হার্ড ড্রাইভে, মাদারবোর্ডে, বায়োসে, এমনকি যেকোনো হার্ডওয়্যারেই যুক্ত করানো থাকতে পারে। এই টাইপের ম্যালওয়্যার রিমুভ করানো অসম্ভব, শুধু মাত্র ঐ হার্ডওয়্যার গুলো ফিজিক্যাল ভাবে রিপ্লেস করানোর মাধ্যমেই ম্যালওয়্যার থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে, তবে বুঝতেই পারছেন এটা কতোটা ব্যয়বহুল প্রমাণিত হতে পারে!

ট্র্যাডিশনাল ম্যালওয়্যার স্ক্যানার টুল গুলো আপনার সিস্টেমের ডিভাইজ ফার্মওয়্যার স্ক্যান করার ক্ষমতা রাখে না, তাই এরা সেখানে আরামে বসবাস করতে পারে। আর এদের ডিটেক্ট করে রিমুভ করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাড়ায়।


তো এই ছিল ৪টি ভয়াবহ ও সবচাইতে ধ্বংসাত্মক টাইপের ম্যালওয়্যার — যেগুলো একবার আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করলে কপালে বিরাট দুঃখ রয়েছে। যাইহোক, যেকোনো ম্যালওয়্যারের ধ্বংসলীলা থেকে বাঁচতে অবশ্যই আপানার প্রয়োজনীয় ডাটা গুলোকে ব্যাকআপ রাখতে হবে, সিস্টেম আপ-টু-ডেটেড রাখতে হবে, ভালো মানের একটি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে সাথে একটি সেকেন্ডারি ম্যালওয়্যার স্ক্যানার টুল ব্যবহার করতে হবে, সাথে আমাদের সকল সিকিউরিটি রিলেটেড আর্টিকেল গুলোর সাথে আপডেটেড থাকতে হবে!

প্রত্যেকটি সিস্টেমই হ্যাক হওয়া সম্ভব, তবে মনে রাখবেন, বেশিরভাগ সময়ই আপনার অসচেতনতার কারণেই সিস্টেম হ্যাক হয়!

/Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories