চাঁদের ও কি চাঁদ থাকতে পারে? কেন এমন দেখা যায় না?

একটি চাঁদের কি কোন চাঁদ থাকতে পারে? — এই ইন্টারেস্টিং প্রশ্নটি হয়তো অনেকের মাথায় এসেছে! উত্তরটি হচ্ছে, হ্যাঁ এটা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়, থাকতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে আমাদের সোলার সিস্টেমে কেন এরকমটা দেখতে পাওয়া যায় না? — যদি এটা সম্ভবই হয়, তাহলে কেন কোন উদাহরণ নেই?

চলুন, এই আর্টিকেলে এই উত্তরটিই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি!


চাঁদের উপ-চাঁদ

প্রথমেই আমাদের যেটা মাথায় রাখতে হবে তা হচ্ছে, মহাআকাশস্থ সকল অবজেক্টের একটি মাধ্যাকর্ষণ টান রয়েছে। হোক সেটা ছোট্ট গ্রহাণু, বা দৈত্যাকার নক্ষত্র এমনকি ব্ল্যাকহোলেরও মাধ্যাকর্ষণ টান রয়েছে। কোন অবজেক্টের ভর যতোবেশি হবে এর মাধ্যাকর্ষণ টান ও ততো শক্তিশালী হবে। আরেকভাবে বলতে পারেন বেশি ভর = বেশি গ্রাভিটি

প্রত্যেকটি অবজেক্টের কাছাকাছি এমন একটি এলাকা রয়েছে যেখানে ঐ অবজেক্টের মাধ্যাকর্ষণ টানের প্রভাব আলাদা যেকোনো মহাআকাশস্থ অবজেক্টের চেয়ে অনেক বেশি, ঐ এলাকাকে হিল স্ফেয়ার (Hill Sphere) বলে। আমাদের পৃথিবীর ভর অনুসারে এর হিল স্ফেয়ারের ব্যাসার্ধ ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার। সহজ বাংলায় বললে, এই ১.৫ কিলোমিটারের মধ্যের কোন অবজেক্ট সূর্যের দ্বারা বেশি আকর্ষিত না হয়ে পৃথিবীর দ্বারা বেশি আকর্ষিত হবে। কেননা এই এলাকাতে পৃথিবীরই মাধ্যাকর্ষণ টান বেশি শক্তিশালী।

কিন্তু পৃথিবীর হিল স্ফেয়ারের বাইরে অবশ্যই কোন অবজেক্ট সূর্য দ্বারা বেশি আকর্ষিত হবে, এবং সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে চলে যাবে। যদি পৃথিবী সূর্যের আরো কাছে থাকতো, তবে এর হিল স্ফেয়ার এলাকা আরো ছোট হয়ে যেতো। যদি পৃথিবী সূর্য থেকে আরো দূরে অবস্থান করতো সেক্ষেত্রে এর হিল স্ফেয়ার আরো বড় হতো।

সূর্যেরও নিজস্ব হিল স্ফেয়ার রয়েছে, যেটা সম্পূর্ণ সোলার সিস্টেমকে সূর্যের সিস্টেমে লক করে রেখেছে। সূর্যের হিল স্ফেয়ার সত্যি দৈত্যাকার, এর ব্যাসার্ধ প্রায় ২ আলোকবর্ষ সমান। এখন এই হিল স্ফেয়ারের মধ্যে যেকোনো মহাআকাশস্থ অবজেক্ট অবশ্যই সূর্যকে আকর্ষণ করবে। এই সোলার সিস্টেমে অবস্থিত প্রত্যেকটি অবজেক্ট যেগুলো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, একদিক থেকে বলতে গেলে সবাই-ই সূর্যের চাঁদ।

কিন্তু এই “চাঁদ” বা “স্যাটেলাইট” টার্মটি শুধু গ্রহের চাঁদের জন্য বরাদ্দ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চাঁদের ও কেন প্রাকৃতিক চাঁদ থাকে না?

কারণ…

বেশিরভাগ চাঁদ তাদের অবিভাবক গ্রহের অনেক নিকটে অবস্থিত হয়ে থাকে, এর মানে এই চাঁদ গুলোর হিল স্ফেয়ার অনেক ছোট এলাকার হয়ে থাকে। যদি আমাদের চাঁদকে উদাহরণ সরূপ ধরা হয়, চাঁদের হিল স্ফেয়ার ব্যাসার্ধ মাত্র ৬০ হাজার কিলোমিটার, যেটা পৃথিবী থেকে চাঁদের মোট দূরত্বের ছয় ভাগের এক ভাগ। বৃহস্পতির চাঁদ আইও এর হিল স্ফেয়ার আরো অনেক ছোট, বৃহস্পতির শক্তিশালী গ্রাভিটির কাছে আইও এর হিল স্ফেয়ার কিছুই না।

যেহেতু বেশিরভাগ চাঁদ তাদের অবিভাবক গ্রহের অনেক কাছে অবস্থিত হয়ে থাকে এবং এদের হিল স্ফেয়ার অনেক ছোট হয় তাই আলাদা কোন অবজেক্টকে নিজের মাধ্যাকর্ষণ টানে লক করা অনেক কঠিন হয়ে দাড়ায়। তবে এটা টেকনিক্যালভাবে অসম্ভব কোন ব্যাপার নয় কিন্তু!

তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? — অবশ্যই কোথাও না কোথাও চাঁদের ও উপ-চাঁদ রয়েছে, রাইট? কিন্তু ব্যাপারটা এতোটাও সহজ নয়, আর এই জন্যই এরকম কোন উদাহরণ আমাদের সোলার সিস্টেমে দেখতে পাওয়া যায় না। অনেক চাঁদ তাদের অবিভাবক গ্রহের সাথে টাইডাল ভাবে লকড হয়ে থাকে। টাইডাল লক মানে হচ্ছে, চাঁদের কেবল এক মুখ গ্রহের দিকে হয়ে থাকে, আরেক দিক গ্রহ থেকে দেখা যায় না।

এর ফলে যদি কোন চাঁদ কোন টাইডাল ভাবে লকড অবজেক্টকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে এক সময় এর কক্ষপথ ক্ষয় হয়ে যাবে এবং অবজেক্টটি ক্রাশ করবে। যদিও এই ক্রাশ ঘটতে অনেক সময় লাগবে, তবে আমাদের সোলার সিস্টেমে কোন চাঁদের যদি কোন উপ-চাঁদ থাকতো সেটা অবশ্যই ঐ চাঁদের সাথে ক্রাশ করতো।

এখানে আরেকটি প্রশ্নের জন্ম নিল, তাহলে কেন চাঁদ গুলো গ্রহতে ক্রাশ করে না? — পার্থক্য হচ্ছে, আমাদের সোলার সিস্টেমের কোন প্ল্যানেটই সূর্যের সাথে টাইডাল ভাবে লকড নয়। সূর্য থেকে প্ল্যানেট গুলো নিরাপদ দূরত্বে অবস্থিত তাই এদের চাঁদের স্ট্যাবল কক্ষপথ রয়েছে, যেহেতু প্ল্যানেট গুলোর হিল স্ফেয়ার যথেষ্ট বড় মাপের।


যেহেতু আর্টিকেলটির প্রধান প্রশ্নের অনেকটা পরিস্কার উত্তর দিয়ে দিয়েছি, তাই অঝথা লেখা বড় করে আর লাভ নেই। সায়েন্স টপিক কভার করতে আমার বেশ ভালোই লাগে, যদিও আমার নিজেরই অনেক শেখার বাকি রয়েছে এখনো। যাই হোক, খুব দ্রুতই নতুন কোন সায়েন্স টপিক নিয়ে হাজীর হবো, সেই পর্যন্ত আপনাদের কমেন্ট গুলোর অপেক্ষায় রইলাম।

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories