৫টি প্রশ্ন, যেগুলোর উত্তর বিজ্ঞানের কাছে নেই!

আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে বসবাস করছি, আর আমাদের জীবনের প্রায় সবকিছুই বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। আর আমরা এটাই আশা রাখি, আমাদের লাইফ এবং এই ইউনিভার্সের সকল প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানের কাছে রয়েছে! — ওয়েল, বিজ্ঞান অনেক কিছু জানলেও অনেক প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান এখনো খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়নি, বা বলতে পারেন বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেতে সক্ষম হননি!

এই আর্টিকেলে এমন ৫টি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেগুলোর উত্তর বর্তমান বিজ্ঞান প্রদান করতে সক্ষম নয়। এরকম আরো হাজারো প্রশ্ন রয়েছে তবে আপাতত এদের মধ্যে ৫টি দিয়েই শুরু করলাম। ভবিষ্যতে হয়তো এগুলোর উত্তর বিজ্ঞান খুঁজে বের করবে, বা কে জানে সত্যি খুঁজে পেতে পারবেও কিনা!


আমরা কেন ঘুমাই?

মানুষ তার জীবনের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ সময় ঘুমিয়ে শেষ করে। শুধু মানুষ নয়, যতো দূর আমরা জানি এই প্ল্যানেটের যতো জীবন্ত প্রাণী রয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই ভার্চুয়ালি ঘুমানোর প্রয়োজন পরে। নিদ্রাহীনতা আপনাকে সাইকো বানিয়ে ফেলতে পারে এবং আপনাকে মেরেও ফেলতে পারে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আপনি যদি বিজ্ঞানকে প্রশ্ন করেন, “আমরা কেন ঘুমাই?” — এর উত্তর বিজ্ঞানের কাছে নেই!

তবে আমরা কেন ঘুমাই, বা এটা কেন প্রয়োজনীয় এর উপরে অনেক মতবাদ রয়েছে, অনেক মতবাদের উপর অনেক বিজ্ঞানীরা নিজেরায় বিশ্বাসী নন। হতে পারে সারাদিন ব্রেন লার্নিং করার পরে কিছু রেস্টের প্রয়োজন পরে যাতে আবার ঠিকঠাক মতো কাজ করতে পারে বা হতে পারে ব্রেইন আপনাকে এটা জোর করেই করিয়ে নেয় কেননা এটা আপনার ব্রেইনের জন্য প্রয়োজনীয়। অনেক বিজ্ঞানীদের মতে আমরা যখন ঘুমিয়ে পরি আমাদের মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশ অফলাইনে চলে যায়।

কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কোন ইঁদুর ঘুমিয়ে পরে তাদের মস্তিষ্কের মধ্যে তখনও সেই নিউরন গুলো থেকে অ্যাক্টিভিটি দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো তারা লাফালাফি করার সময় অ্যাক্টিভ থাকে। আবার বিজ্ঞান এমন কিছু মানুষও খুঁজে পেয়েছে, যারা না ঘুমিয়েও সুস্থ থাকতে পারে। তো বুঝতেই পারছেন, আমরা কেন ঘুমাই, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া অনেক ট্রিকি হতে পারে! ভবিষ্যতের বিজ্ঞানের কাছে হয়তো এর উত্তর থাকেও পারে!

সৌরজগতে মোট গ্রহের সংখ্যা কতো?

যখন প্রশ্ন করা হবে, আমাদের সোলার সিস্টেমে মোট কতোটি গ্রহ রয়েছে? — উত্তরটি দাঁড়াবে; ৮টি! বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, এবং নেপচুন। ওয়েট, কিন্তু আমরা যে ছোট বেলায় পড়ে এসেছি সৌরজগতে মোট ৯টি গ্রহ রয়েছে! এই লিস্টে প্লুটো কোথায়? ওয়েল, রিসেন্টলি প্লুটোর সোলার সিস্টেমের গ্রহ মেম্বারশিপ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

যখন থেকে প্লুটো আর সৌরজগতের গ্রহ নয়, তখন থেকে আমরা জেনেছি, আমাদের সৌরজগতে কতো গুলো গ্রহ রয়েছে এর সংখ্যা বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর পরিবর্তনশীল। যদি বলি আমাদের সৌরজগতে ৮টি গ্রহ রয়েছে, তবে উত্তরটি যথার্থ হবে না, বলতে পারেন এই পর্যন্ত এটি বিজ্ঞানীদের বেস্ট ধারণা মাত্র! প্রকৃতপক্ষে আমাদের সোলার সিস্টেমের বেশিরভাগ অংশই এখনো আবিস্কার করা হয়ে উঠেনি।

সূর্য এবং বুধ গ্রহ পর্যন্ত অংশ অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং নেপচুনের পরের অংশ অনেক বেশিই অন্ধকার, তাই এই অংশ গুলোতে নতুন কিছু আবিস্কার অনেক মুশকিলের কাজ যেখানে আমরা খুব বেশি দেখতেই সম্ভব নই। সব চাইতে বড় কথা হচ্ছে অনেক জ্যোতির্বিদগনের মতে আমাদের সোলার সিস্টেমে আরো একটি সূর্য রয়েছে, হ্যাঁ এটা কিন্তু মজা করে বলিনি। তো বিজ্ঞান এখনো জানে না সৌরজগতে মোট গ্রহের সংখ্যা কতো!

সত্যিই কি এলিয়েনরা রয়েছে?

এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা পৃথিবী ব্যাতিত আলাদা কোন প্ল্যানেটে প্রান খুঁজে পেতে সক্ষম হোননি। অনেক বিজ্ঞানীগণের মতে আমরাই এই সম্পূর্ণ ইউনিভার্সে কেবল একমাত্র ইন্টেলিজেন্ট প্রাণী। কিন্তু ব্যাপারটি অনেক ট্রিকি, কেননা এই মহাবিশ্ব কল্পনার চাইতেও অনেক বৃহৎ আর প্রত্যেক সেকেন্ডে এটি আরো বৃহত্তর হয়েই চলেছে। অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মতে কোনভাবেই কেবল পৃথিবীই এক মাত্র প্রানের উৎস হতে পারে না। তাদের মতে কমপক্ষে ৪০ বিলিয়নেরও বেশি বাসযোগ্য প্ল্যানেট রয়েছে এবং সেগুলো কেবল আমাদের গ্যালাক্সিতেই অবস্থিত।

তো চিন্তা করে দেখুন, এলিয়েন থাকার সুযোগ কতো অংশে বেশি। কিন্তু এলিয়েন তো অনেক দূরের কথা আমাদের পৃথিবীতে ঠিক কতো প্রকারের প্রাণী রয়েছে এরই সঠিক উত্তর বিজ্ঞানের কাছে নেই। বিজ্ঞান এখনো জানে না এই একেক প্রাণী গুলো কিভাবে আলাদা আলাদা পরিবেশে বাস করে। কিভাবে অনেক এক্সট্রিম পরিবেশেও অনেক জীব লাখো বছর ধরে বসবাস করে আসছে, যেখানে মানুষ ১ সেকেন্ড ও টিকতে পারবে না।

তো বুঝতেই পাড়ছেন, যেখানে আমাদের নিজেদের প্ল্যানেটের প্রাণীজগত নিয়েই আমাদের সঠিক ধারণা নেই সেখানে ভিনগ্রহের এলিয়েন খুঁজে পাওয়া, জানা, এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করা কতোটা কঠিন কাজ।

জীবনের শুরু কিভাবে ঘটেছিলো?

এই পৃথিবীতে কিভাবে সর্বপ্রথম প্রানের আবির্ভাব ঘটেছিলো? — এটাই বিজ্ঞানীদের কাছে সবচাইতে রহস্যজনক প্রশ্ন। কিভাবে এক প্রকারের অনু থেকে কোষ আর সেখান থেকে জীবন্ত কিছুর সৃষ্টি হলো? সংক্ষিপ্ত উত্তরটি হচ্ছে আমরা সঠিকভাবে জানি না এটা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো। হতে পারে কয়েক মিলিয়ন বছর পূর্বে এলিয়েনরা পৃথিবীতে কিছু মাইক্রো জীব ফেলে গেছিলো আর আজ সেটা সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেমে পরিণত হয়েছে। অনেকের মতে জীবনের প্রথম উপাদান কোন ধূমকেতু থেকে পৃথিবীতে এসেছিল।

অনেক বিজ্ঞানীদের মতে জীবন জীব বিজ্ঞানের একটি স্বাভাবিক প্রসেস, যদি কোন প্ল্যানেটে জীবন ধারণের প্রধান উপাদান গুলো যেমন- হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে এবং এদের মধ্যে সঠিক কেমিক্যাল রিয়াকশন ঘটে সেক্ষেত্রে জীবনের সৃষ্টি ঘটতে পারে। এই কেমিক্যাল রিয়াকশন থেকে ধীরেধীরে কোষ দেওয়াল এবং ডিএনএ তৈরি হয় আর এভাবেই জীবনের সৃষ্টি ঘটে। বিজ্ঞানীরা এই টপিকের উপরে ল্যাবে এখনো পর্যন্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েই যাচ্ছেন এবং আশা করছেন এক সময় তারা সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে সক্ষম হবেন।

ক্যান্সার থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব?

অনেক বিজ্ঞানীদেরই সন্দেহ রয়েছে আমরা সত্যিই সকল প্রকার ক্যান্সারের আরোগ্য বের করতে কোনদিন সক্ষম হবো কিনা। তবে বছরের পর বছর আমরা এই রোগটিকে আরো ভালো করে জানতে পারছি, ফলে আরো বেটার সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। হয়তো আমরা ক্যান্সার থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে পারবো না, কিন্তু ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে পারবো। আরো ভবিষ্যতে হয়তো বা ক্যান্সার থেকে মুক্তি সম্ভব হতে পারে, তবে সেটা নিশ্চিত নয়!


তো এই ছিল কিছু প্রশ্ন, যেগুলোর উত্তর এখনো বিজ্ঞানের জানা নেই। তাই এগুলোর উত্তর যদি আপনার এখনি চাই, দুঃখিত এগুলো খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না হয়তো। তবে আপনাদের মধ্যে কেউ এর উত্তর গুলো জানলে আমাদের নিচে কমেন্ট করতে পারেন।

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories