সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ গুলোতে কতক্ষণ বেঁচে থাকা সম্ভব?

মহাকাশ সুবিশাল, এর শেষ নেই বললেই চলে, এটা রহস্যজনক আর ভয়াবহ! — তাইতো স্পেস এতোবেশি ভালোলাগে! সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে স্পেস সম্পর্কে আপনি যতোই জানবেন, আপনার কাছে ততোই নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি হবে। আপনি যদি জানতে ভালোবাসেন, আর প্রশ্ন করতে ভালোবাসেন, সেক্ষেত্রে স্পেস নিয়ে পড়াশুনা করা আপনার জন্য সর্বোত্তম প্রমাণিত হতে পারে।

তো চলুন, আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা যাক… সৌরজগতের আলাদা গ্রহ গুলোতে কতক্ষণ বেঁচে থাকা সম্ভব? বা সূর্যে চলে গেলে আপনার কি হতে পারে, অথবা ব্ল্যাকহোলে প্রবেশ করলে কি হবে? সূচনাতে বসে থাকতে আর মোটেও ইচ্ছা করছে না, চলুন দ্রুত আর্টিকেল শুরু করা যাক!


বুধ

তো চলুন এবার সৌরজগতের একেক করে সকল প্ল্যানেট গুলো ভ্রমন করা যাক, তো প্রথমেই চলে আসে বুধ গ্রহ বা যেটাকে মার্কারি গ্রহও বলা হয়। বুধ সূর্যের সবচাইতে কাছের অবস্থিত প্ল্যানেট, মানে বুঝতেই পারছেন এর সার্ফেসে তাপমাত্রা কতোটা বেশি হতে পারে। দিনের বেলায় এতে ৪৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে যেতে পারে এবং রাতের বেলায় সেই তাপমাত্রা ড্রপ করে -১৭০ ডিগ্রীতে নেমে আসতে পারে। বুধের রোটেশন অনেক স্লো, তাই দিন থেকে রাত আর রাত থেকে দিন হতে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। বুধের কোন কোন স্থানে সহনীয় তাপমাত্রা হয়তো পেয়ে যেতে পারেন, বা বিশেষ টাইপের স্পেসসুট বানিয়ে কিছুটা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, কিন্তু তারপরেও বুধ মোটেও বাসের জন্য যোগ্য গ্রহ নয়, কেননা এতে কোনই অক্সিজেন নেই। তো বুধে আপনি মোটামুটি এক মিনিটের মতো টিকে থাকতে পারবেন, তারপরে হয় ঠাণ্ডায় জমে পাথর হয়ে যাবেন, অথবা গরমে গলে বাষ্পে পরিণত হবেন।

যদি তাপমাত্রার কারণে না মরেন, সেক্ষেত্রে সূর্য থেকে আসা রেডিয়েশন আপনাকে তেলে ভাজা বানিয়ে ছাড়বে না হলে অক্সিজেনের অভাবে আরো ভয়াবহ মৃত্যু ঘটতে পারে আপনার। বাফরে, দরকার নেই মার্কারি ভিজিট করবার, চলুন এবার পরবর্তী গ্রহের দিকে এগোনো যাক…

শুক্র

সূর্য থেকে দূরত্ব অনুসারে শুক্র গ্রহ হচ্ছে দ্বিতীয়, একে ভেনাস গ্রহ ও বলা হয়ে থাকে। আমি বিশেষ করে এই গ্রহকে জাহান্নাম বলেই চিনি। সূর্যের নিকটতম গ্রহের নাম বুধ হতে পারে কিন্তু তাপমাত্রার দিকে সবার বাপ হচ্ছে শুক্র গ্রহ। এই গ্রহের বায়ু মণ্ডল এতোটাই বেশি ঘন যে স্পেস থেকে এর সার্ফেস দেখতে পাওয়া যায় না। সম্পূর্ণ গ্রহে রয়েছে বিশাল মোটা স্তরের মেঘ আর সেগুলো সূর্যের তাপ গ্রিনহাউজ ইফেক্টের মাধ্যমে শুক্রেই ধরে রাখে। তাই এই সম্পূর্ণ প্ল্যানেটের সর্বত্র একই রকমের তাপমাত্রা, যেটা ৮৭০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যেতে পারে!

আশা করছি এর তাপমাত্রা থেকেই অনুমান করতে পারছেন, ঠিক কতোক্ষণ টিকতে পারবেন এই গ্রহে। আমার অনুমান অনুসারে ১ সেকেন্ড বা তারও কম সময়ের মধ্যে আপনি শেষ হয়ে যাবেন। তাছাড়া সম্পূর্ণ প্ল্যানেট জুড়ে রয়েছে কার্বনডাই অক্সাইডের রাজত্ব, সাথে এসিড রেইন আপনাকে যেকোনো সময় গলিয়ে মেরে ফেলবে। সাথে এই গ্রহের ঝড়ের যা গতি, কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ গ্রহের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে। তো হ্যাঁ, অবশ্যই শুক্রে যাওয়ার চিন্তা এক মহা দুশ্চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও বিজ্ঞানীদের মতে শুক্র এক সময় পৃথিবীর মতোই ছিল এবং সাইজের দিক থেকে একে পৃথিবীরই বোন বলতে পারেন।

মঙ্গল

মঙ্গলের নাম শুনে কলিজায় জ্বল চলে আসলো তাই না? এই মঙ্গল গ্রহ বা মার্সে পৌঁছানর জন্যই তো আমাদের বিজ্ঞানীরা রাতদিন এক করে কাজ করে চলেছে তাই না? এক অপেক্ষা করুণ পাঠক, মঙ্গল মোটেও উপযোগী কোন জায়গা নয়, বরং এটি আলাদা প্ল্যানেট গুলোর মতোই জাহান্নাম।

এর বায়ুচাপ অত্যন্ত কম হওয়ার জন্য আপনার শরীরের মধ্যের তরল গুলো ধরে রাখা সম্ভব হবে না। তাছাড়া এর ম্যাগনেটিক ফিল্ড অত্যন্ত দুর্বল হওয়ার ফলে সোলার উইন্ড থেকে গ্রহটি মোটেও সুরক্ষিত নয়, এর সর্বত্রই রয়েছে ক্ষতিকর রেডিয়েশন আর আপনি যা থেকে মোটেও লুকাতে পারবেন না। যদিও গ্রহটির গরমকালের তাপমাত্রা কিছুটা মানুষের সহ্যের মধ্যেই, কিন্তু শীতকালে এক সেকেন্ডের মধ্যে জমে পাথর হয়ে যাবেন। তাছাড়া এই গ্রহে মুক্তভাবে নিশ্বাস গ্রহণ করার জন্য অক্সিজেন মজুদ নেই। খুব বেশি হলে ১ মিনিটের কিছুটা সময় হয়তো এতে বেঁচে থাকা সম্ভব, তারপরেও আপনি মরে মঙ্গলেরই একটি অংশে পরিণত হবেন।

বৃহস্পতি

চলুন এবার আমাদের সোলার সিস্টেমের সবচাইতে বড় প্ল্যানেট বৃহস্পতি বা জুপিটার নিয়ে আলোচনা করা যাক। জুপিটারে পৌঁছালে ১ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে প্রচণ্ড শক্তিশালী হ্যারিকেন ঝড় আপনাকে টুকরা টুকরা করে ফেলবে। যতো উন্নতই স্পেসসুট পরিধান করুণ না কেন, কোনই লাভ হবে না।

এটি একটি গ্যাসীয় প্ল্যানেট, বিশেষ করে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের সমন্বয়ে তৈরি, যেখানে কোন সার্ফেস নেই মানে আপনি পা রাখার মতো কোন জায়গা পাবেন না। তবে অনেক বিজ্ঞানীদের মতে গ্রহটির কোর মেটালিক হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত, কিন্তু সেটা অনুমান মাত্র। জুপিটারের ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও রেডিয়েশন এতোবেশি শক্তিশালী যে, আপনাকে নিমিষেই কাবাব বানিয়ে ফেলবে।

শনি

শনি বা স্যাটার্ন আমার সবচাইতে পছন্দের প্ল্যানেট, মানে এর রহস্য জানতে আর এর সুন্দর রিং উপভোগ করতে ভালো লাগে, আর এখানে যাওয়ার কথা বা বসবাস করার কথা মোটেও কল্পনা করিনি কখনো। তারপরেও যদি আমাকে কেউ জোর করে এই প্ল্যানেটে নিয়ে ছেড়ে দেয়, ১ সেকেন্ডের বেশি বাঁচা সম্ভব হবে না।

এটিও একটি গ্যাসীয় প্ল্যানেট, এর মানে এতে কোন সার্ফেস নেই পা রাখার মতো। যদি আপনাকে শনিতে ছেড়ে দেওয়া হয় আপনি এর গ্যাসীয় মেঘে সারাজীবনের মতো ভাসতে থাকবেন যতক্ষণ পর্যন্ত বিশাল শক্তিশালী কোন হ্যারিকেন আপনাকে তছনছ না করে দেয়। সত্যি কথা বলতে আপনাকে চোখ বন্ধ করারও সময় দেবে না শনি, এর মধ্যেই আপনি সম্পূর্ণ মহাকাশীয় ধুলি কণায় পরিণত হয়ে পড়বেন।

ইউরেনাস

ইউরেনাসে ন্যানো সেকেন্ডও টিকতে পারবেন না, এটিও গ্যাসীয় প্ল্যানেট মানে কোন সার্ফেস নেই ল্যান্ড করার জন্য। আরে ভাই ল্যান্ডিং তো পরের কথা যদি ভুলেও এর আশেপাশে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হয় আপনাকে হাইড্রলিক প্রেসের ন্যায় চ্যাপ্টা করে ফেলবে। তবে গ্রহটির উপরি স্তরের গ্রাভিটি অনেকটা আমাদের পৃথিবীর মতোই। শনিগ্রহের মতো এতেও রিং সিস্টেম রয়েছে, যেটা আমার কাছে বেশ অসাধারণ মনে হয়, তবে দূর থেকে সৌন্দর্য দেখেই আমি খুশি, ভিজিট করার কোনই ইচ্ছা নেই সেখানে!

নেপচুন

১ সেকেন্ড, ইয়েস ১ সেকেন্ডের ও কম সময় টিকে থাকা সম্ভব এই গ্রহটিতে। এই বিশেষ গ্রহটির বিশেষ ভয়ংকর ফিচারটি হচ্ছে প্রচণ্ড শক্তিশালী ঝড়, এর ঝড়ের গতি অনেক সময় শব্দের গতি থেকেও বেশি দ্রুতগামী হতে পারে। আমাদের সম্পূর্ণ সোলার সিস্টেমে সবচাইতে দ্রুতগামী ঝড় এখন পর্যন্ত নেপচুনেই খুঁজে পাওয়া গেছে।

সূর্য

সৌরজগতের সকল গ্রহ গুলো ভিজিট করলেন, আর মেইন বসকেই ভিজিট করবেন না, সেটা কিভাবে হতে পারে? সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১ কোটি ডিগ্রী সেলসিয়াসের মতো, এটি একটি গ্যাসীয় বল যেটার লাখ কিলোমিটার দূর দিয়ে গেলেও বাষ্পে পরিণত হওয়া নিশ্চিত।

এতে এক ন্যানো সেকেন্ড ও টিকে থাকা সম্ভব নয়। আপনি কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যেই নো-বডিতে পরিণত হয়ে যাবেন, আপনার কলিজা ফুসফুস সবকিছু রান্না হয়ে বাষ্পে পরিণত হয়ে যাবে, আপনার একটা কোষেরও কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আহ, তো এখন নিজেই চিন্তা করে দেখুন পৃথিবীতে কতো শান্তিতে রয়েছি আমরা। বাকি গ্রহ গুলোতে যাওয়া তো দূরের কথা কল্পনা করতেই ঘাম ছুটে গেলো। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেকটি রশদ এই প্ল্যানেটে ঠিকঠাক ভাবেই মজুদ রয়েছে। বাকি সোলার সিস্টেম জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নয়।

ব্ল্যাকহোল

ব্ল্যাকহোল ভিজিট করতে ভুলেই গেছিলাম জানেন! এই নিয়ে আলোচনা না করেই আর্টিকেলের সমাপ্তি টানতে লেগেছিলাম ভুল করে। যাই হোক, তাত্ত্বিকভাবে স্পেসে ব্ল্যাকহোল হচ্ছে সেই অংশ যেখানে গ্রাভিটির ক্ষমতা এতোই বেশি যে আলো পর্যন্ত পালিয়ে যেতে পারে না। ব্ল্যাকহোলকে স্পেস ভ্যাকুয়াম ক্লিনারও বলতে পারেন, কেননা এর পাশেপাশে যা আসে সব গ্রাস করে নিজের মধ্যে ঢুকে নেয়। অনেক মরা নক্ষত্রও ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়ে গেছে, তাই ব্ল্যাকহোলে ঢুকে পড়লে অন্তত নক্ষত্রের অত্যাধিক তাপমাত্রা সহ্য করতে হবে না।

ব্ল্যাকহোল থেকে কখনোই বের হয়ে আসা সম্ভব নয়, আর সেখানে ঢুকে পড়লে কি ঘটতে পারে সেটা কেউ জানেন না। বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারে নিজেরায় অজ্ঞ। ব্ল্যাকহোল অনেক ইন্টারেস্টিং টপিক, আর অন্য কোন আর্টিকেলের জন্য এই টপিক আর তুলে রাখলাম।


এই আর্টিকেল আরো বিশাল আকারে লিখা যেতো, কিন্তু সময়ের অভাবে সেটা সম্ভব নয়। তবে কথা দিচ্ছি, আমি প্রত্যেকটি গ্রহ নিয়ে আলাদা আলাদা আর্টিকেল লিখবো, সেখানে আরো বিস্তারিত তথ্য যোগ করবার চেষ্টা করবো। আপাতত, আপনার মনের সকল প্রশ্ন নিচে কমেন্ট করে আমাকে জানাতে আরম্ভ করুণ, দেখি কতো গুলোর উত্তর প্রদান করতে সক্ষম হই!

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories