কি ঘটবে, যখন আপনি মরে যাবেন?

তো ঠিক কি ঘটবে যখন আপনার সময় ফুরিয়ে আসবে? ওয়েল, এই প্রশ্নের উত্তর অনেক রকমের হতে পারে, যারা বিজ্ঞান মনস্ক তাদের বিজ্ঞান ভিত্তিক উত্তর সন্তুষ্ট করবে, আর যারা বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী তাদের বিশ্বাস মৃত্যু জাস্ট আরেকটি লাইফের শুরু মাত্র। আজকের দিনেও বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস মৃত্যুর পরেও আলাদা জীবন রয়েছে। আপনি যখন মরে যাবেন তখন থেকে আরেকটি লাইফে প্রবেশ করবেন যেটাকে আফটার লাইফ বা পরকাল বলা হয়।

বেশিরভাগ ধর্ম অনুসারে, মরার পরে দুই টাইপের অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে। আপনি যদি ধর্মের কাজ করে যান বেঁচে থাকতে এবং সত্য নিয়ে সৎ পথে জীবন যাপন করেন তাহলে আপনি স্বর্গে প্রবেশ করবেন। যদি আপনি পাপ করেন, মিথ্যাচার করেন, ধর্মের পথে না থাকেন এবং ক্ষমা না চেয়েই মরে যান সেক্ষেত্রে আপনাকে নরকে যেতে হবে। যেখানে স্বর্গ হচ্ছে আনাবিল শান্তির জগত এবং নরক হলো অফুরন্ত শাস্তির জায়গা।

তো বুঝতেই পাড়ছেন, মরার পরে আপনার সাথে কি ঘটবে এই প্রশ্নের উত্তর একেক বিশ্বাসীর অনুসারে একেক রকমের হতে পারে। কিন্তু চলুন একেবারে প্র্যাকটিক্যাল বিষয় গুলোর উপর ভিত্তি করে এবং বিজ্ঞান এর অনুসারে আলোচনা করা করা যাক, “প্রকৃতপক্ষে কি ঘটবে, যখন আপনি মরে যাবেন?


মরার পরে যা ঘটবে!

অবশ্যই এখানে মরার পরে আপনার সাথে বা আপনার আত্মার সাথে কি ঘটবে এ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করবো না। তবে এখানে আলোচনা করার চেষ্টা করবো মরার পরে আপনার শরীরের সাথে কি ঘটবে সে বিষয় গুলো নিয়ে…

চিকিৎসকগন আপনাকে মৃত বলে ঘোষণা করবেন যখন আপনার ব্রেন থেকে আর কোন ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল পাওয়া যাবে না এবং আপনার হৃদপিণ্ড আর ধকধক করবে না। আপনার ব্রেইন বা ঘিলু সম্পূর্ণ কাজ করা বন্ধ করে দেওয়া মানেই আপনি ডেড। তবে আপনার কার্ডিয়াক মৃত্যুও হতে পারে। কার্ডিয়াক মৃত্যু মানে হচ্ছে আপনার হার্ট বন্ধ হয়ে যাবে এবং আপনার শরীরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু মজার বা আশ্চর্যকর ব্যাপার হচ্ছে, অনেকেই কার্ডিয়াক মৃত্যুর পরেও আবার বেঁচে উঠেছেন এবং তাদের পরবর্তী বক্তব্য অনুসারে তারা সেই সময়ও জেগে ছিলেন এবং তার চারপাশে কি ঘটছিলো বুঝতে পারছিলেন।

অনেকের বক্তব্য অনুসারে, তারা এক আলোর দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন এবং মৃত্যু একেবারেই সন্নিকটে ছিল। যাই হোক, তবে ক্লিনিক্যাল মৃত্যুর পরে আপনি আর জীবনে ফিরে আসতে পারবেন না। তো ধরে নিন, আপনার বায়োলোজিক্যাল মৃত্যু হয়ে গেলো, তো এখন কি হবে?

ওয়েল, আপনার মৃত্যুর পরে ব্যাপারটা মোটেও আর ভালো দাঁড়াবে না। বিশেষ করে আপনার পরিবার বা আত্মীয় শোকে কাতর হয়ে পড়তে পারেন, কিন্তু আপনার আর তাতে কি যায় আসে, আপনি তো মরে শেষ। আপনার মাংসপেশি শিথিল হয়ে যাবে এবং আপনি শেষ পর্যন্ত যে খাবার গুলো চিবিয়েছিলেন সেগুলোর হজম প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আপনার পেটের মধ্যে যে গ্যাস গুলো রয়েছে সেগুলো লিক করতে পারে ফলে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। পাশাপাশি আপনার ব্লাডারে যে মুত্র গুলো সঞ্চিত রয়েছে সেগুলোর ও একই হাল হতে পারে।

যদি আপনি মেয়ে মানুষ হয়ে থাকেন এবং গর্ভবতী হোন সেক্ষেত্রে মরে যাওয়ার পরেও বাচ্চা জন্ম দিতে পারেন, যদিও এরকম কেস অনেক কম দেখা যায়, তবে একে কফিন বার্থ বলা হয়ে থাকে। পেটের মধ্যে থাকা গ্যাস অনেক সময় আপনার বাচ্চাকে ধাক্কা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দিতে পারে, যেখানে আপনার বাচ্চা পুস করার কোন ক্ষমতা থাকবে না।

তো আপনার শরীরের মধ্যের জিনিষ গুলো একবার বেরিয়ে আসার পরে আপনার মুখ থেকেও শব্দ বের হতে শোনা যেতে পারে। যে চিকিৎসকগন এবং নার্সরা মৃতদেহের পাশে কাজ করেন তারা প্রায়ই এব্যাপারে অভিযোগ করেন যে মৃত ব্যাক্তি হতে অস্বাভাবিক শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং অনেক সময় মানুষটি জীবিত রয়েছে এরকম বলেও মনে হতে পারে। তো আপনার থেকেও এরকম শব্দ আসতে পারে, তবে এরমানে এটা নয় আপনার মধ্যে এখনো জান বাকি রয়েছে, এগুলো হতে পারে পেশী সংকোচন এর শব্দ!

তো যেহেতু মরার পরে আপনার শরীরে আর কোন রক্ত চলাচল করবে না, তাই আপনার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে পরবে যেটাকে আপনি ডেথ চিল বলতে পারেন। আপনার শরীর ঠাণ্ডা হতেই থাকবে যতোক্ষণ পর্যন্ত না আপনার চারপাশের তাপমান এবং আপনার শরীরের তাপমান একই না হয়ে যায়। যেহেতু আপনার শরীরে আর রক্ত চলাচল থাকবে না তাই অবশ্যই আপনার কোষ গুলো ভেঙ্গে পরবে ব্যাকটেরিয়া বিস্তার হতে আরম্ভ করবে এবং এর জন্যই আপনার শখের শরীর ধীরেধীরে পচন ধরতে আরম্ভ করবে।

অনেক সময় আপনার মৃত শরীর দেখে মনে হতে পারে আপনার নখ এবং চুল বৃদ্ধি পেতে আরম্ভ করেছে, বাট এটা সত্য নয়। আসলে আপনার ত্বক অপসৃত হয়ে যায় ফলে মনে হতে পারে আপনার চুল এবং আপনার নখ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তো এখন সময় চলে এসেছে আপনাকে কবর দিয়ে দেওয়ার। আপনার ধর্ম অনুসারে আপনাকে বিভিন্নভাবে কবর দেওয়া হতে পারে। যদি আপনাকে মাটিতে সরাসরি দাফন করে দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু গুলো আপনাকে খেতে আরম্ভ করে দেবে, ফলে আপনি পচে গলে যেতে আরম্ভ করবেন। আপনার শরীরের মাংস, চর্বি, ত্বক অনেক পূর্বেই গলে যাবে, যেখানে আপনার হাড় এবং চুল বেশি স্থায়ী হবে। যদি আপনাকে কফিনে করে কবর দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে পচা গলার প্রসেস একটু স্লো হয়ে যেতে পারে।

ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর খাবার হওয়া ছারাও মাটির নিচে আপনি বিভিন্ন পোকামাকড়, উদ্ভিদ, বা পশুর খাদ্যে পরিণত হতে পারেন। অনেক বিশেষজ্ঞগণ’দের মতে মাটির নিচে আপনার ৮-১২ বছরের মতো সময় লেগে যেতে পারে যখন আপনি সম্পূর্ণ কঙ্কালে পরিণত হওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকবেন না। মোটামুটি ৫০ বছর পরে আপনার হাড় হাড্ডি গুলোও মাটির সাথে মিশে যাবে এবং আপনি সম্পূর্ণরুপে এই পৃথিবীর একটি অংশ হয়ে দাঁড়াবেন।

পরকাল

আফটার লাইফ বা পরকাল সম্পূর্ণ বিশ্বাসের উপর এবং এটি একটি ধর্মীয় জিনিষ। বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্নভাবে এই পরকালকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অবশ্যই এই আর্টিকেলে কোনটি সত্য বা কোনটি মিথ্যা সেটা মোটেও বিবেচনা করা হচ্ছে না, তবে আপনি সকল দৃষ্টিভঙ্গির উপর একটি ধারণা লাভ করতে পারবেন।

অনেক ধর্ম অনুসারে আপনি মরার পরে আপনার আত্মা আপনার শরীর থেকে বিভক্ত হয়ে পরে এবং আত্মা বিভিন্ন স্টেজ পার হতে থাকে। ধর্মে অনেক পরকালের অনেক স্টেজ সম্পর্কে আলোচনা করা রয়েছে কিন্তু আমরা সেগুলোর বিস্তারিতর দিকে প্রবেশ করবো না। অনেক ধর্ম অনুসারে প্রত্যেকটি জীবন, আত্মা মৃত্যুর পরে আবার জন্ম গ্রহন করে কিন্তু সেটা অন্য কোন জীবনের রুপে।

অনেক ধর্ম অনুসারে মরার পরে আপনার আত্মাকে বেহেস্তে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে, যেখানে অফুরন্ত খাদ্য এবং সকল প্রকার আরামের ব্যাবস্থা রয়েছে। অনেক ধর্ম অনুসারে বেহেস্তের মধ্যে অনেক সুন্দরি নারি পাওয়া যাবে যারা আপনার সেবা করবেন। আর জাহান্নাম নিয়ে আর কি বলবো, আশা করি আপনাদের সকলেরই ধারণা রয়েছে।


অনেকের মতে, মরার পরে আর কিছুই হবে না আপনি জাস্ট কবরে চলে যাবেন এবং সেখানেই মাটিতে সম্পূর্ণ মিশে যাওয়া পর্যন্ত পরে থাকবেন। তো আপনি কি মনে করেন? মরার পরে আপনার সাথে কি হতে পারে? আপনি কি বিশ্বাস করেন? আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। তবে মরার পরে আপনার শরীরের সাথে কি ঘটবে তার বেসিক আইডিয়া গুলো হয়তো আপনি পেয়েই গেলেন এই আর্টিকেল থেকে! আপনি আরো কিছু যুক্ত করতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন।

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories