নতুন রাউটার কেনার আগে যেসব বিষয় ভেবে দেখা উচিৎ

গত কয়েক বছরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ইউজার সংখ্যা আগেত থেকে অনেক বেশি হারে বেড়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ ইন্টারনেট ইউজাররাই বাসায় ওয়্যারড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অথবা ওয়াইফাই রাউটারের সাহায্যে ওয়্যারলেস ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করেন। তবে এখন ওয়াইফাই ইন্টারনেট ইউজারদের সংখ্যাই বেশি। ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় আপনি কেমন ইন্টারনেট সার্ভিস পাচ্ছেন, তা আপনার আইএসপি এর ওপরে তো নির্ভর করেই, এছাড়াও আপনার ব্যবহার করা ওয়াইফাই রাউটারটিও এক্ষেত্রে অনেক বড় ভুমিকা পালন করে।

অনেকসময় রাউটারের অনেক সমস্যার কারণে আমরা খারাপ ইন্টারনেট স্পিড পাই এবং এর জন্য আইএসপিকে দোষারোপ করি। তাই নতুন একটি ওয়াইফাই রাউটার কেনার আগে রাউটারের কিছু ফিচারস দেখে এবং বুঝে কেনা উচিত যাতে পরবর্তীতে আপনাকে রাউটারটি কেনার ব্যাপারে রিগ্রেট করতে না হয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক, নতুন রাউটার কেনার আগে কি কি বিষয় আপনার মাথায় রাখা উচিৎ।

ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ড

রাউটার কেনার আগে আপনাকে প্রথমেই রাউটারের হার্ডওয়্যার কতটা আপডেটেড, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। এই পোস্টটি লেখার টাইমে ওয়াইফাই ৬ হচ্ছে সবথেকে আপডেটেড ওয়াইফাই ভার্সন। আপনি যদি আপনার রাউটারটি ফিউচারপ্রুফ করতে চান, তাহলে একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও ওয়াইফাই ৬ সাপোর্টেড রাউটার কেনা উচিৎ। যদিও আপনি কত স্পিড পাবেন তা নির্ভর করে আপনার আইএসপি এর ওপরে এবং আপনার পারচেজ করা প্যাকেজের ওপরে, তবে ওয়াইফাই ৬ অনেক হাই স্পিডের পাশাপাশি ওয়াইফাই ৫ এর তুলনায় কম লেটেন্সি দিতে পারে।

তাছাড়া ওয়াইফাই ৬ সাপোর্টেড রাউটারে আপনি ২.৪ এবং ৫ গিগাহার্জের পাশাপাশি আরও পাওয়ারফুল ৬ গিগাহার্জ ব্যান্ড ব্যবহার করতে পারবেন যার ফলে আপনি আরও স্ট্রং কানেকশন এবং লো লেটেন্সি পাবেন। সাধারনত, আপনি যে রাউটারটি কিনছেন, সেটির বডিতেই স্টিকারে আপনি দেখতে পাবেন যে সেটি কোন ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ড সাপোর্ট করে। ওয়াইফাই ৬ স্ট্যান্ডার্ডের রাউটার না নিতে পারলেও অন্তত চেষ্টা করবেন ওয়াইফাই ৫ স্ট্যান্ডার্ডের রাউটার নিতে।

ওয়াইফাই ব্যান্ড

রাউটার কেনার ক্ষেত্রে আরেকটি ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর হচ্ছে আপনি কত গিগাহার্জ ব্যান্ডের কানেকশন পাবেন এই রাউটারটি থেকে। এটা বোঝার জন্য আপনার ওয়াইফাই ব্যান্ড সম্পর্কে কিছুটা আইডিয়া থাকার দরকার। ২.৪ গিগাহার্জ হচ্ছে সবথেকে পুরনো ওয়াইফাই ব্যান্ড এবং এটি এখন বাজারের যেকোনো বাজেটের সব রাউটারেই আপনি দেখতে পাবেন। ২.৪ গিগাহার্জ সাপোর্টেড রাউটারগুলোর কভারেজ সবথেকে বেশি তবে লেটেন্সি কম এবং নেটওয়ার্ক স্ট্রেংথ একটু কম। অর্থাৎ, ২.৪ গিগাহার্জে আপনি অনেক বড় কভারেজ এরিয়া পেলেও লেটেন্সি কম পাবেন এবং আপনার ওয়াইফাই কানেকশন খুব একটা স্ট্রং হবেনা।

৫ গিগাহার্জ হচ্ছে বর্তমানে মডার্ন ওয়াইফাই ব্যান্ড এবং এটিই এখনকার অধিকাংশ মডার্ন রাউটারেই ব্যবহার করা হয়। এটির কভারেজ এরিয়া ২.৪ গিগাহার্জের তুলনায় কিছুটা কম হলেও এটি ২.৪ গিগাহার্জের তুলনায় কানেকশন কোয়ালিটি এবং লেটেন্সিতে অনেক বড় ইম্প্রুভমেন্ট আনে। আপনার রাউটার এবং আপনার কানেক্টেড ডিভাইস দুটিই যদি ৫ গিগাহার্জ স্পেকট্রাম ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে আপনি কভারেজ কম পেলেও আপনার ডিভাইসে কানেকশন ড্রপ খুবই কম পাবেন এবং লেটেন্সিও অনেক ভালো পাবেন।

তাই এক্ষেত্রে আপনাকে রাউটার নিজের ইউজেসের ওপরে বেজ করে পছন্দ করতে হবে। আপনার যদি লেটেন্সি নিয়ে কোন প্রবলেম না থাকে, তবে আপনার সম্পূর্ণ বাড়ি কভার করবে এমন রাউটার দরকার হয়, সেক্ষেত্রে আপনি ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ডের রাউটারই নিতে চাইবেন। আর যদি স্ট্রং কানেকশন এবং লো লেটেন্সির দরকার হয়, সেক্ষেত্রে একটু কম কভারেজ মেনে নিয়ে ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডের রাউটার নেওয়াটাই ভবিষ্যতের জন্য বেশি ভালো।

কোয়ালিটি অফ সার্ভিস সাপোর্ট (QoS)

এটি আপনি এখনকার প্রায় সব মডার্ন রাউটারেই দেখতে পাবেন, তবে কিছু কিছু রাউটারে এই ফিচারটি নাও থাকতে পারে। Qos নেই এমন একটি রাউটার এখন না কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। QoS মূলত বিভিন্ন টাইপের নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিককে প্রায়োরিটি দেওয়ার একটি সিস্টেম, যা স্মুথ ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্স পাওয়ার জন্য খুবই ইম্পরট্যান্ট। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ইন্টারনেটে একজনের সাথে ভিডিও কলিং করেন এবং একই ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করে আপনার বাসার আরেকজন নেটফ্লিক্সে ভিডিও স্ট্রিম করে, সেক্ষেত্রে আপনার রাউটার নিশ্চিত করবে যে নেটফ্লিক্স স্ট্রিমের তুলনায় আপনার ভিডিও কলটি বেশি প্রায়োরিটি পাচ্ছে। কারণ, এমন সিচুয়েশনে ইন্টারনেটকে অপটিমাইজ না করতে পারলে প্রত্যেক ইউজারই স্লো ইন্টারনেট স্পিড পাবেন।

এই কারণেই রাউটারে QoS থাকা খুবই ইম্পরট্যান্ট। এছাড়া QoS থাকলে আপনি আপনার রাউটারের কনট্রোল প্যনেল থেকে আপনার নিজের ইচ্ছামতো সেটিকে কাস্টোমাইজও করে নিতে পারবেন। যেমন- আপনি যদি গেমার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই চাইবেন যে, অন্যান্য ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের কারনে যেন আপনার অনলাইন গেমের লেটেন্সিতে কোন সমস্যা না হয়। সেক্ষেত্রে আপনি রাউটারের QoS কাস্টোমাইজ করে এমন রুলস সেট করে দিতে পারবেন যাতে আপনার রাউটার সবসময়ের জন্য অনলাইন গেমিংকে টপ প্রায়োরিটি দেয়।

MU-MIMO সাপোর্ট

MU-MIMO হচ্ছে একটি টেকনোলজি যার সাহায্যে একটি রাউটার তার সাথে কানেক্টেড থাকা মাল্টিপল ডিভাইসে একইসাথে একইসময়ে ডাটা সেন্ড করতে পারে এবং রিসিভ করতে পারে। MU-MIMO সাপোর্ট নেই এমন রাউটারে যদি একসাথে একাধিক ইউজার কানেক্টেড থাকেন, তাহলে দুজন ইউজারই ইন্টারনেটে বেশি লেটেন্সি দেখতে পাবেন, যেহেতু রাউটার একসাথে শুধুমাত্র একজন ইউজারকেই সার্ভ করতে পারছে। আরও বেশি ইউজার কানেক্টেড হলে লেটেন্সি আরও বেশি বেড়ে যাবে। তাই স্মুথ ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্স পাওয়ার জন্য রাউটারে MU-MIMO সাপোর্ট থাকা খুবই জরুরী।

তবে যদি আপনি আপনার বাসায় একাই থাকেন এবং শুধুমাত্র একটি ডিভাইসেই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার রাউটারে MU-MIMO সাপোর্ট না থাকলেও হয়তো আপনার তেমন কোন প্রবলেম হবেনা। তবে আপনি একা অথবা বাসার সবাই যেই ইন্টারনেট ব্যবহার করুক না কেন, MU-MIMO সাপোর্ট নেই এমন রাউটার কখনোই ব্যাবহার করা উচিৎ নয়। তাই রাউটার কেনার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে এটিতে MU-MIMO সাপোর্ট আছে কিনা।

মেশ নেটওয়ার্ক সাপোর্ট

মেশ নেটওয়ার্কিং হচ্ছে মাল্টিপল রাউটারকে এমনভাবে সেটাপ করা যাতে সেগুলো একই নাম এবং একই ইনফরমেশন শেয়ার করে। এর ফলে ইউজারা যে সুবিধা পাবেন তা হচ্ছে, একই ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সেটাপের জন্য মাল্টিপল রাউটার ব্যাবহার করায় কভারেজ এরিয়া বাড়বে এবং ইন্টারনেটের রিলায়েবলিটিও বাড়বে। আপনার বাসা যদি অনেক বড় হয় এবং আপনি বাসার দুই বিপরীত দিকে দুটি বা তিনটি রাউটার মেশ নেটওয়ার্কিং হিসেবে সেটাপ করেন, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার বাসার সবদিক থেকেই স্ট্রং ওয়াইফাই সিগন্যাল পাবেন। এর ফলে আপনাকে ভালো স্পিড পাওয়ার জন্য এক রুম থেকে আরেক রুমে ছোটাছুটি করতে হবেনা। এটাই মূলত মেশ নেটওয়ার্কিং এর সুবিধা।

আপনি ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার ব্যবহার করেও এই একইধরনের সুবিধা পেতে পারেন, তবে মাল্টিপল রাউটার ব্যবহার করে মেশ নেটওয়ার্ক তৈরি করা এর জন্য সবথেকে কার্যকরী সল্যুশন। যদি আপনি অনেক ছোট বাসায় থাকেন, তাহলে আপনার মেশ নেটওয়ার্ক নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে, তবে আপনার যদি মনে হয় যে আপনার মেশ নেটওয়ার্ক তৈরি করার প্রয়োজন আছে, সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই চেক করে নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে আপনি যে রাউটারটি কিনছেন, সেটি মেশ নেটওয়ার্কিং সাপোর্ট করে কিনা। কারণ, বাজেট এবং মিডরেঞ্জের অনেক রাউটারই এখনো মেশ নেটওয়ার্কিং সাপোর্ট করেনা।

ইথারনেট এবং ইউএসবি পোর্টের সংখ্যা

এটা একেবারেই কমন সেন্সের ব্যাপার। আপনার বাসায় বা অফিসে আপনি এই রাউটারটি ব্যবহার করে কতগুলো ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন, তার ওপরে বেজ করে আপনাকে ডিসিশন নিতে হবে। আপনি যদি সবগুলো ডিভাইসই ওয়্যারলেসলি ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার রাউটারে বেশি ইথারনেট আউটপুট পোর্টের দরকার হবেনা। তবে আপনার বাসার কিছু কিছু ডিভাইস থাকতে পারে যেখানে আপনি ওয়্যারলেস কানেকশন ব্যবহার না করে ইথারনেট ক্যাবল কানেক্ট করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চাইবেন।

মূলত যেসব ডিভাইসে স্ট্যাবল স্পিড এবং লো লেটেন্সির দরকার হয় সেসব ডিভাইসে ওয়্যারলেস কানেকশন ব্যবহার না করে ওয়্যারড কানেকশন ব্যবহার করাটা বুদ্ধিমানের কাজ। সাধারনত ডেক্সটপে ইথারনেট ক্যাবল ব্যবহার করাটা ভালো অভ্যাস। আপনার বাসায় যদি ২ টি ডেক্সটপ থাকে, আপনার অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিৎ যে, আপনি যে রাউটারটি কিনছেন, সেটিতে অন্তত দুটি ইথারনেট আউটপুট পোর্ট আছে। আবার আপনি যদি আপনার রাউটারে নিজের পার্সোনাল এফটিপি সার্ভার তৈরি করে রাখতে চান, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার রাউটারে এক্সট্রা স্টোরেজ ড্রাইভ যেমন পেনড্রাইভ কিংবা হার্ড ড্রাইভ কানেক্ট করার পোর্ট আছে। বাকিটা অবশ্যই আপনি কমন সেন্স ব্যবহার করে বুঝে নিতে পারবেন।


 

About the author

সিয়াম

3 comments

  • ভালো লাগলো বেশ দারুণ সব খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সুন্দরভাবে বুঝিয়ে আর্টিকেল উপহার দেওয়ার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

  • MU-MIMO and QOS সম্পর্কে জানতে পারলাম। ধন্যবাদ ভাই।

Categories