উইন্ডোজ ১০ এর নেক্সট জেনারেশন : নতুন যা যা থাকছে

যারা মাইক্রোসফট এবং উইন্ডোজের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখেন তারা হয়তো অলরেডি জানেন যে, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ এর জন্য নতুন একটি আপডেট নিয়ে কাজ করছে, যার কোডনেম দেওয়া হয়েছে উইন্ডোজ ১০ সানভ্যালি আপডেট। মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী বলছেন যে, এটি হতে চলেছে উইন্ডোজের নতুন জেনারেশন। অর্থাৎ, এখন পর্যন্ত এই আপডেটটিই হতে চলেছে উইন্ডোজ ১০ এর জন্য রিলিজ করা সবথেকে বড় আপডেট, যেখানে অনেক নতুন ফিচার অ্যাড করার পাশাপাশি অনেক বড় ধরনের ভিজুয়্যাল চেঞ্জও আনা হচ্ছে।

এই আপডেটটি এতই বড় হতে চলেছে যে, এটি উইন্ডোজ ১১ হবে কিনা সে ব্যাপারেও বেশ কিছু রিউমর শোনা গিয়েছিলো। তবে না, এটিকে উইন্ডোজ ১০ এর জন্যই একটি মেজর আপডেট হিসেবে রিলিজ করা হবে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে। শুধুমাত্র এই আপডেটটি অ্যানাউন্স করা এবং এই আপডেটে নতুন কি কি থাকতে চলেছে সে ব্যাপারে কথা বলার জন্য চলতি মাসের ২৪ তারিখে মাইক্রোসফট একটি ইভেন্টের আয়োজন করেছে। যাইহোক, আপনি যদি এখনো না জেনে থাকেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক, নতুন কি কি মেজর ফিচারস থাকছে উইন্ডোজ ১০ এর আপকামিং আপডেটে।

ইউআই ইমপ্রুভমেন্ট এবং রাউন্ডেড কর্নার

এখন প্রায় সব অপারেটিং সিস্টেমেই ইউজার ইন্টারফেসের সবধরনের এলিমেন্টে রাউন্ডেড কর্নার ব্যাবহার করা হচ্ছে। আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড ১২ এর প্রিভিউ দেখে থাকেন, তাহলে আপনি লক্ষ্য করবেন যে এখানে গুগল আগের তুলনায় ইউআই এলিমেন্টগুলোকে আরো বেশি রাউন্ডেড এজ দিয়েছে। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ম্যাক, উবুন্টু সবজায়গাতেই ইউআই এলিমেন্টে এমন রাউন্ডেড কর্নার ব্যাবহার করা হচ্ছে। এতদিন শুধুমাত্র উইন্ডোজ ১০ এর ইউআইতেই কোনো রাউন্ডেড কর্নার ব্যাবহার করা হয়নি। উইন্ডোজ ১০ এ সবসময়ের জন্য সবকিছুতেই শার্প কর্নার ব্যাবহার করা হয়েছে যা অনেক ইউজাররা পছন্দ করলেও অধিকাংশ ইউজাররাই পছন্দ করতেন না।

তাই উইন্ডোজ ১০ সানভ্যালি আপডেটে আপনি স্টার্ট মেনু থেকে শুরু করে অ্যাকশন সেন্টার, টাইটেল বার, কন্টেক্সট মেনু সবকিছুতেই দেখতে পাবেন রাউন্ডেড কর্নার। শুধুমাত্র এই ছোট্ট ইউআই টুইকটি ইন্সট্যান্টলি উইন্ডোজকে অনেক বেশি মিনিমাল এবং এলিগ্যান্ট লুক এনে দেয়। সত্যি কথা বলতে, এই ছোট্ট ইউআই ইম্প্রুভমেন্টটি মাইক্রোসফটের আরো অনেক আগেই করা উচিত ছিলো। আর আপকামিং আপডেটে স্টার্ট মেনুর পজিশনও কিছুটা চেঞ্জ করা হয়েছে যা রাউন্ডেড কর্নারের সাথে খুবই সুন্দর দেখায়। এটা ব্যাখ্যা করা একটু কঠিন, আপনি নিচের স্ক্রিনশটটি দেখলেই বুঝতে পারবেন এখানে পজিশন চেঞ্জ বলতে কি বোঝানো হয়েছে।

নতুন অ্যাকশন সেন্টার

গত বছর মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ এক্স ভার্সনের জন্য যে মডার্ন এবং মিনিমাল ডিজাইনের নতুন অ্যাকশন সেন্টার তৈরি করেছিলো, তা অধিকাংশ রেগুলার উইন্ডোজ ইউজাররাই পছন্দ করেছিলেন। যদিও মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ এক্স এর প্ল্যান ক্যানসেল করেছে, তবে উইন্ডোজ ১০ এক্সের জন্য ডিজাইন করা এই নতুন অ্যাকশন সেন্টারটি মাইক্রোসফট ক্যানসেল করেনি। এই নতুন ডিজাইনের মিনিমাল অ্যাকশন সেন্টারটির দেখা মিলবে উইন্ডোজ ১০ এর আপকামিং সানভ্যালি আপডেটে। উইন্ডোজ ১০ এর অ্যাকশন সেন্টার সবসময়ের জন্যই স্ক্রিনের রাইট সাইড থেকে ভার্টিক্যালি সম্পূর্ণ স্ক্রিনজুড়ে দেখা যেত।

তবে সানভ্যালি আপডেটে অ্যাকশন সেন্টারটির হাইট কমিয়ে তা ভার্টিক্যালি হাফ স্ক্রিন সাইজ করা হয়েছে, যার কারণে এটি আগের থেকে দেখতে আরও বেশি ভালো লাগে। এছাড়া অ্যাকশন সেন্টারটিতে বেশ কিছু নতুন এলিমেন্টসও যোগ করা হয়েছে, যেমন- মিউজিক কনট্রোল উইজেট। এছাড়াও ডিজাইনে অনেক বেশি ইম্প্রুভমেন্ট আনা হয়েছে। সানভ্যালি আপডেটে উইন্ডোজ ১০ এর অ্যাকশন সেন্টারের সাথে আপনি স্মার্টফোনের নোটিফিকেশন প্যানেলের অনেকটা মিল খুঁজে পাবেন। আর উইন্ডোজের অন্যান্য এলিমেন্টেগুলোর মতো রাউন্ডেড কর্নার তো থাকছেই। উইন্ডোজ ১০ এর অ্যাকশন সেন্টার রিডিজাইন করার মাধ্যমে উইন্ডোজের পূর্ববর্তী অসামঞ্জস্যপূর্ণ ডিজাইন ল্যাংগুয়েজ অনেকটাই ফিক্স করা সম্ভব হবে।

নতুন মাইক্রোসফট স্টোর

 মাইক্রোসফট স্টোর সম্ভবত এতদিন ছিলো উইন্ডোজ ইউজারদের কাছে সবথেকে বেশি অবহেলিত হওয়া উইন্ডোজ অ্যাপ। আমরা সাধারনত কেউি মাইক্রোসফট স্টোর থেকে হাতেগোনা কয়েকটি অ্যাপ ছাড়া আর তেমন কিছুই ইন্সটল করিনা। তবে, উইন্ডোজ ১০ সানভ্যালি আপডেটে মাইক্রোসফট স্টোরকে আগের থেকে অনেকটা বেটার করা হচ্ছে। ইউজার ইন্টারফেস তো আগের থেকে অনেক ইম্প্রুভ করা হচ্ছেই, এছাড়া ইউজার এবং অ্যাপ ডেভেলপারদের জন্যও মাইক্রোসফট স্টোর বেশ কিছু নতুন সুবিধা নিয়ে আসছে। এগুলোই মুলত বেটার ইউজার ইন্টারফেসের থেকে বেশি ইম্পরট্যান্ট ফিচার।

প্রথমত, এখন থেকে ডেভেলপারদেরকে মাইক্রোসফট স্টোরে পাবলিশ করা তাদের অ্যাপস মনেটাইজ করার জন্য মাইক্রোসফটের প্রোভাইড করা অ্যাডসগুলোর ওপরে নির্ভর করতে হবেনা। ডেভেলপাররা এখন থেকে চাইলে তাদের অ্যাপস তাদের নিজেদের ইচ্ছামতো যেকোনো অ্যাড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মনেটাইজ করতে পারবেন। এর ফলে আগের তুলনায় আরও অনেক বেশি ডেভেলপার মাইক্রোসফট স্টোরে তাদের অ্যাপস পাবলিশ করতে চাইবেন।

Concept Design (Not Real Screenshot)

আর আরেকটা ইম্পরট্যান্ট নিউজ হচ্ছে, এখন থেকে ডেভেলপাররা চাইলে সরাসরি তাদের প্যাকেজ করা Win32 অ্যাপস মাইক্রোসফট স্টোরে পাবলিশ করে দিতে পারবেন। এর আগেও ডেভেলপাররা তাদের Win32 অ্যাপস মাইক্রোসফট স্টোরে পাবলিশ করতে পারতেন, তবে সেক্ষেত্রে ডেভেলপারদেরকে তাদের প্রোজেক্টের কোডবেসে কিছুটা চেঞ্জ আনতে হতো। তবে এখন থেকে কোন Win32 অ্যাপস মাইক্রোসফট স্টোরে পাবলিশ করার জন্য ডেভেলপারদেরকে তাদের কোডবেসে ১ লাইন কোডও চেঞ্জ করতে হবেনা। Win32 অ্যাপস মাইক্রোসফট স্টোরে পাবলিশ করা এরপর থেকে জাস্ট কয়েক মিনিট কনফিগারেশনের কাজ হবে।

এর ফলে আমরা ইউজার হিসেবে যে সুবিধা পাবো তা হচ্ছে, আগামীতে আরও অনেক বেশি লেগেসি অ্যাপসকে আমরা উইন্ডোজ স্টোরে এভেইলেবল হতে দেখবো। যেসব অ্যাপস আমরা মাইক্রোসফট স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে পারিনা,যেমন- ফায়ারফক্স, ক্রোম, ভিএস কোড ইত্যাদি, এগুলোও হয়তো আমরা এরপর থেকে মাইক্রোসফট স্টোরে পাবো। ভবিষ্যতে উইন্ডোজ অ্যাপস এবং প্রোগ্রামের জন্য মাইক্রোসফট স্টোরই হতে পারে ওয়ান স্টপ সল্যুশন, ঠিক যেমন অ্যান্ড্রয়েডের জন্য প্লে স্টোর কিংবা আইফোনের জন্য অ্যাপ স্টোর।

নতুন কালারফুল আইকনস

উইন্ডোজ ১০ এর ডিফল্ট আইকন ডিজাইনগুলো উইন্ডোজ ৯৫ এর পর থেকে খুব বেশি চেঞ্জ করা হয়নি। মাঝে মাঝে কয়েকটি উইন্ডোজ ভার্সনে হালকা কিছু চেঞ্জ করা হলেও অধিকাংশ উইন্ডোজ আইকনই অনেক আগে থেকেই একইরকমই আছে। উইন্ডোজ ১০ রিলিজ হওয়ার ৫ বছরের মধ্যেও উইন্ডোজের ডিফল্ট আইকন প্যাক চেঞ্জ করা হয়নি।

তবে উইন্ডোজ ১০ সানভ্যালি আপডেটে উইন্ডোজ ১০ এর চিরপরিচিত সবগুলো আইকনকে মডার্ন এবং কালারফুল লুক দেওয়া হচ্ছে। উইন্ডোজের কনট্রোল প্যানেল আইকন থেকে শুরু করে স্টক অ্যাপস আইকনস, ফাইল এক্সপ্লোরার আইকনস সবজায়গায় আপনি লক্ষ্য করবেন একেবারেই আলাদা আইকন প্যাক, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি কালারফুল এবং প্লেফুল। উইন্ডোজের রিসেন্ট একটি ইনসাইডার বিল্ডে অলরেডি এই নতুন আইকন প্যাকটি যোগ করা হয়েছে। নিচের স্ক্রিনশটটি লক্ষ্য করুন।

 

লিনাক্স জিইউআই অ্যাপস

উইন্ডোজ ১০ এ আরও অনেক আগে থেকেই লিনাক্স সাপোর্ট ছিলো। WSL (Windows Subsystem for Linux) ব্যবহার করে আরও আগে থেকেই উইন্ডোজের ভেতরে ম্যানুয়াল কোন ভার্চুয়াল ম্যাশিন সেটাপ না করেই লিনাক্স সাবসিস্টেম ব্যবহার করার সুযোগ ছিলো। উইন্ডোজ স্টোর থেকেই উবুন্টু সাবসিস্টেম ইন্সটল করে নেওয়ার সুযোগ ছিলো। তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র লিনাক্স সাবসিস্টেম ব্যবহার করে লিনাক্স টার্মিনাল অ্যাক্সেস করার সুযোগ ছিলো।

লিনাক্স বেজড জিইউআই অ্যাপস উইন্ডোজে ব্যবহার করার কোন ন্যাটিভ সল্যুশন ছিলো না। তবে উইন্ডোজ ১০ সানভ্যালি আপডেটে আপনি চাইলে লিনাক্স সাবসিস্টেম ব্যবহার করে লিনাক্স জিইউআই বেজড অ্যাপসগুলোও ইন্সটল করতে পারবেন এবং রান করতে পারবেন। লিনাক্সের অ্যাপসগুলো আপনার উইন্ডোজের ন্যাটিভ অ্যাপসের মতোই বিহেভ করবে এবং আপনি অন্যান্য যেকোনো উইন্ডোজ অ্যাপসের মতো করেই এগুলোকে আপনার অ্যাপস লিস্ট থেকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন এবং আনইন্সটল করতে পারবেন।

 


আমার মতে এই ৫টি ফিচারই হতে চলেছে উইন্ডোজ ১০ সানভ্যালি আপডেটের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মেজর ইম্প্রুভমেন্ট। তবে শুধু এগুলোই নয়, উইন্ডোজ ১০ সানভ্যালি আপডেটে আরও অনেক ছোট ফিচারস আছে যেগুলো নিয়ে বলতে গেলে সারাদিনেও বলে শেষ করা যাবে না। এর মধ্যে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ফিচার হচ্ছে-

  • আরও বেশি বিল্ট-ইন অ্যাপস আনইন্সটল করার সুযোগ।
  • সকল অ্যাপসে ন্যাটিভ এইচডিআর সাপোর্ট।
  • Eco মোড, যা ল্যাপটপে ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে সাহায্য করবে।
  • ব্লুটূথ অডিও ইমপ্রুভমেন্ট এবং AAC সাপোর্ট।
  • … এবং আরও অনেক কিছু! 

আর এখন যেসব ফিচারের ব্যাপারে জানা গিয়েছে, সেগুলোই ফাইনাল ফিচারস নয়। এই উইন্ডোজ ১০ আপডেটের ব্যাপারে মাইক্রোসফট চলতি মাসের ২৪ তারিখে যে ইভেন্টটির আয়োজন করেছে, সেই ইভেন্টে এই আপডেটটির ব্যাপারে আরও অনেক ডিটেইলড ইনফরমেশন  জানা যাবে এবং আরও কিছু নতুন ফিচারের ব্যাপারেও জানা যেতে পারে/


 

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories