বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম দুই প্রযুক্তি জায়ান্ট কম্পানি, গুগল এবং ই-কমার্স সংস্থা অ্যামাজন অফিসিয়াল বাংলাদেশে আসতে চলেছে। ইতমধ্যেই কোম্পানি দুটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) থেকে তাদের ব্যবসায়িক পরিচয় নম্বর (BIN) সংগ্রহ করেছে বলে জানা যাচ্ছে। এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “সোমবার অ্যামাজনকে এবং বৃহস্পতিবার গুগলকে বিআইএন নম্বর দেয়া হয়েছে। যা যথাক্রমে গুগল এশিয়া-প্যাসিফিক পেটি লিমিটেড এবং অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস ইনক নামে নিবন্ধন করেছে।” যার ফলে এই প্রথম দেশের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিত কোন কম্পানি দেশে বিআইএন-এর জন্য নিবন্ধভুক্ত হলো।
এর ফলে কম্পানি দুটি বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ আয় করবে তার থেকে বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাংলাদেশ সরকারকে দেবে, সাথে প্রতি বছর মোট টার্নওভারে রিটার্নও জমা দিতে হবে সংস্থা দুটিকে। বিশ্বের এই বৃহত্তর কোম্পানি দুটির এমন উদ্যোগের ফলে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তি সংক্রান্ত বড় বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের অফিস খোলার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতে পারে। যেমন ২০২০ সালে ফেসবুক বাংলাদেশের এনবিআরের চাপের পরে বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য একটি এজেন্ট নিয়োগ করেছিল। বর্তমানে সংস্থাটির এজেন্ট এইচটিপুল বোর্ডকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করছে, কিন্তু ফেসবুক এখনোও বাংলাদেশের কাছ থেকে তাদের ব্যবসায়িক পরিচয় নম্বর (BIN) সংগ্রহ করে নি।
মূলত গুগল, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি বড় বড় সংস্থা ২০১২ সাল থেকেই বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা নিবন্ধনের চেষ্টা করছিল। এমনকি গুগল এবং অ্যামাজন তাদের নিবন্ধন পাওয়ার জন্য একটি বাংলাদেশী ফার্মের সাথে যোগাযোগ করেছিল, তবে পরে ভ্যাট আইনে জটিলতার মুখে পড়তে হয় সংস্থা দুটিকে। অবশেষে দ্বিগুণ করের কারণে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। বর্তমানে গুগল বিশ্বের প্রায় ৪০ টি দেশে কাজ করে এবং সংস্থাটির গোটা পৃথিবীতে ৪০০ টির বেশি অফিস রয়েছে অপরদিকে অ্যামাজন পৃথিবীর ১১৭ টি দেশে তাদের অফিস পরিচালনা করছে। কম্পানি দুটির ভ্যাট পরিশোধের ব্যপারে কাজী মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, “এ জাতীয় সংস্থার ভ্যাট পরিশোধের দুটি বিকল্প রয়েছে। তারা ভ্যাট প্রদানের জন্য বাংলাদেশে তাদের এজেন্ট নিয়োগ করতে পারে, বা তারা এই প্রক্রিয়াটির জন্য অন্য কোনও বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাও ব্যবহার করতে পারে।”
তবে এক গোপন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, “গুগল ও অ্যামাজন যদিওবা জটিলতার মধ্যে দিয়ে তাদের বিআইএন নম্বর পেয়েছে, তবুও বাংলাদেশে তাদের অফিস স্থাপনে সমস্যা হবে। কারণ বিদ্যমান ভ্যাট আইনের আওতায় যে কোনও প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিক্রয় ডেটা কন্ট্রোলার ব্যবহার এবং রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য ক্রয় অ্যাকাউন্টে সবনিম্ম ৫০০ কোটি টাকা রাখা বাধ্যতামূলক।” অবশেষে এতটুকু বলা যায় যে, গুগল এবং অ্যামাজনের মত টেক জায়ান্ট দেশে আসলে দেশে অনেক কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
No Comment! Be the first one.